আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ১৪৯
৮০- সন্তানহারার মাহাত্ম্য
১৪৯। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, একদা এক রমণী নবী করীম (ﷺ)-এর খেদমতে হাযির হইয়া আরয করিল ঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তাে আপনার মজলিসে পারি না; আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করিয়া দিন যেদিন আমরা আপনার খেদমতে হাযির হইতে পারিব । ফরমাইলেন ঃ আচ্ছা, অমুকের ঘরে তােমাদের জন্য (অমুক দিন) নির্দিষ্ট রহিল। তাঁহার সেই নির্ধারিত দিনের উপদেশসমূহের মধ্যে এ কথাটিও ছিল ঃ তােমাদের মধ্যকার যে স্ত্রী-লােক তিনটি সন্তানের মৃত্যুতেও (সাওয়াবের আশায়) ধৈর্যধারণ করিবে, সে অবশ্যই বেহেশতে যাইবে। একটি মহিলা বলিয়া উঠিল ? আর যদি দুইটি সন্তান মারা যায় ? ফরমাইলেন ঃ হ্যাঁ, দুইটি সন্তানের মৃত্যু হইলেও। এই হাদীসের একজন রাবী সুহায়ল হাদীসের ব্যাপারে অনেক কড়াকড়ি অবলম্বন করিতেন এবং অত্যন্ত যত্নসহকারে হাদীস মুখস্থ রাখিতেন এবং তাহার দরবারে কাহারও হাদীস লিখিবার সাধ্য ছিল না।
بَابُ فَضْلِ مَنْ مَاتَ لَهُ الْوَلَدُ
حَدَّثَنَا عَلِيٌّ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُهَيْلُ بْنُ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّا لاَ نَقْدِرُ عَلَيْكَ فِي مَجْلِسِكَ، فَوَاعِدْنَا يَوْمًا نَأْتِكَ فِيهِ، فَقَالَ: مَوْعِدُكُنَّ بَيْتُ فُلاَنٍ، فَجَاءَهُنَّ لِذَلِكَ الْوَعْدِ، وَكَانَ فِيمَا حَدَّثَهُنَّ: مَا مِنْكُنَّ امْرَأَةٌ يَمُوتُ لَهَا ثَلاَثٌ مِنَ الْوَلَدِ، فَتَحْتَسِبَهُمْ، إِلاَّ دَخَلَتِ الْجَنَّةَ، فَقَالَتِ امْرَأَةٌ: أَوِ اثْنَانِ؟ قَالَ: أَوَِ اثْنَانِ كَانَ سُهَيْلٌ يَتَشَدَّدُ فِي الْحَدِيثِ وَيَحْفَظُ، وَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ يَقْدِرُ أَنْ يَكْتُبَ عِنْدَهُ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এবিষয়ে নসীহতের শব্দ বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে এসেছে। অধিকাংশ হাদীসে এই সুসংবাদ নাবালক সন্তানের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। তা এ কারণে যে, শিশুসন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা বেশি থাকে। এ বয়সে তারা বাবা-মায়ের অবাধ্যতা করতে পারে না। ফলে তাদের প্রতি বাবা-মা'র মনে কোনও কষ্ট থাকে না। এ অবস্থায় তাদের মৃত্যু হলে বাবা-মা'র মনে শোকতাপ খুব বেশি লাগে। ফলে ধৈর্যধারণ কঠিন হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও যদি ধৈর্যধারণ করে, তবে তারা আল্লাহ তা'আলার কাছে অপরিমিত পুরস্কারের উপযুক্ত হয়ে যায়।
কেউ কেউ বলেন, ছেলেমেয়ে যদি সুসন্তান হয়, তবে বড় হওয়ার পর তারা মা-বাবার আনুগত্য করে, তাদের খেদমত করে এবং নানাভাবে তাদের উপকারে আসে। কাজেই শিশুসন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করলে যখন বিপুল ছাওয়াব পাওয়া যায়, তখন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করলে অধিকতর ছাওয়াবের আশা রয়েছে।
কারও শিশুসন্তান মারা গেলে কেন সে জান্নাত লাভ করবে, সে সম্পর্কে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إِيَّاهُمْ (তাদের প্রতি নিজ রহমতের গুণে)। অর্থাৎ শোকে-দুঃখে সবর করার কারণে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি দয়ার আচরণ করবেন আর সেজন্যই তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। কেউ কেউ বাক্যটির অর্থ করেছেন- তাদের প্রতি (অর্থাৎ সন্তানদের) প্রতি তার (অর্থাৎ পিতার) রহমতের গুণে। অর্থাৎ সন্তানের প্রতি পিতার যে গভীর মায়া-মমতা আর তা সত্ত্বেও সেই সন্তানের মৃত্যুতে সে ধৈর্যের পরিচয় দেয়, এ কারণে আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাত দান করবেন। বলাবাহুল্য, সন্তানের প্রতি পিতা অপেক্ষা মায়ের মায়া-মমতা অনেক বেশি। সুতরাং মা যদি সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করে, তবে তার জান্নাতলাভের সম্ভাবনা আরও বেশি।
কোন কোন হাদীসে তিনটি সন্তানের কথা বলা হয়েছে, কোন কোন হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, দুটি সন্তানের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। এমনকি কোনও কোনও হাদীছ দ্বারা জানা যায়, একটি নাবালক সন্তানের মৃত্যুতেও ধৈর্যধারণ করলে তার পিতা-মাতাকে জান্নাত দান করা হবে।
আবূ হাসসান নামে এক তাবি'ঈ বলেন, আমি আবু হুরায়রা রাযি.-কে বললাম, আমার দু'টি পুত্র মারা গেছে। আপনি কি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনও হাদীছ আমাকে শোনাবেন, যাতে করে মৃতদের বিষয়ে আমরা মনে প্রশান্তি পেতে পারি? তিনি বললেন, হাঁ, শোনো-
صِغَارُهُمْ دَعَامِيصُ الْجَنَّةِ, يَتَلَقَّى أَحَدُهُمْ أَبَاهُ, أَوْ قَالَ: أَبَوَيْهِ, فَيَأْخُذُ بِثَوْبِهِ, أَوْ قَالَ: بِيَدِهِ, كَمَا آخُذُ أَنَا بِصَنِفَةِ ثَوْبِكَ هَذَا, فَلاَ يَتَنَاهَى, أَوْ قَالَ: فَلاَ يَنْتَهِي, حَتَّى يُدْخِلَهُ اللهُ وَأَبَاهُ الْجَنَّةَ
'মুমিনদের শিশুরা জান্নাতের ক্ষুদ্র জীব। তাদের একেকজন তাদের বাবা কিংবা বাবা-মা'কে স্বাগত জানাবে। সে তার কাপড় বা হাত ধরবে, যেমন এই আমি তোমার এই কাপড়টির প্রান্ত ধরছি। তারপর সে আর থামবে না, যাবৎ না আল্লাহ তার পিতাকে জান্নাতে প্রবেশ করান’। (সহীহ মুসলিম: ২৬৩৫; মুসনাদুল বাযযার: ৯৫৪৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৭১৪২)
প্রকাশ থাকে যে, শোকতাপে সবর দ্বারা যেসব গুনাহ মাফ হয় তা আল্লাহ তা'আলার হক সম্পর্কিত গুনাহ। যেসব গুনাহের সম্পর্ক বান্দার হকের সঙ্গে, তার বেলায় বান্দার পক্ষ থেকেও মাফ পাওয়া জরুরি। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা এটা প্রমাণিত। তাছাড়া সাধারণভাবে কবীরা গুনাহের ক্ষেত্রেও ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য তাওবা জরুরি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সন্তানের মৃত্যুতে শোক যতই গভীর হোক, তথাপি মুমিন নর-নারীর উচিত ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া। তাতে জান্নাতলাভের আশা থাকে।
খ. সন্তানের মৃত্যু বাহ্যত কঠিন মসিবত হলেও প্রকৃতপক্ষে পিতা-মাতার পক্ষে তা রহমতস্বরূপ। এটা চিন্তা করলে ধৈর্যধারণ সহজ হয়।
গ. মুমিনদের শিশুসন্তান জান্নাতবাসী হবে।
কেউ কেউ বলেন, ছেলেমেয়ে যদি সুসন্তান হয়, তবে বড় হওয়ার পর তারা মা-বাবার আনুগত্য করে, তাদের খেদমত করে এবং নানাভাবে তাদের উপকারে আসে। কাজেই শিশুসন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করলে যখন বিপুল ছাওয়াব পাওয়া যায়, তখন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করলে অধিকতর ছাওয়াবের আশা রয়েছে।
কারও শিশুসন্তান মারা গেলে কেন সে জান্নাত লাভ করবে, সে সম্পর্কে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إِيَّاهُمْ (তাদের প্রতি নিজ রহমতের গুণে)। অর্থাৎ শোকে-দুঃখে সবর করার কারণে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি দয়ার আচরণ করবেন আর সেজন্যই তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। কেউ কেউ বাক্যটির অর্থ করেছেন- তাদের প্রতি (অর্থাৎ সন্তানদের) প্রতি তার (অর্থাৎ পিতার) রহমতের গুণে। অর্থাৎ সন্তানের প্রতি পিতার যে গভীর মায়া-মমতা আর তা সত্ত্বেও সেই সন্তানের মৃত্যুতে সে ধৈর্যের পরিচয় দেয়, এ কারণে আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাত দান করবেন। বলাবাহুল্য, সন্তানের প্রতি পিতা অপেক্ষা মায়ের মায়া-মমতা অনেক বেশি। সুতরাং মা যদি সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ করে, তবে তার জান্নাতলাভের সম্ভাবনা আরও বেশি।
কোন কোন হাদীসে তিনটি সন্তানের কথা বলা হয়েছে, কোন কোন হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, দুটি সন্তানের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। এমনকি কোনও কোনও হাদীছ দ্বারা জানা যায়, একটি নাবালক সন্তানের মৃত্যুতেও ধৈর্যধারণ করলে তার পিতা-মাতাকে জান্নাত দান করা হবে।
আবূ হাসসান নামে এক তাবি'ঈ বলেন, আমি আবু হুরায়রা রাযি.-কে বললাম, আমার দু'টি পুত্র মারা গেছে। আপনি কি এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনও হাদীছ আমাকে শোনাবেন, যাতে করে মৃতদের বিষয়ে আমরা মনে প্রশান্তি পেতে পারি? তিনি বললেন, হাঁ, শোনো-
صِغَارُهُمْ دَعَامِيصُ الْجَنَّةِ, يَتَلَقَّى أَحَدُهُمْ أَبَاهُ, أَوْ قَالَ: أَبَوَيْهِ, فَيَأْخُذُ بِثَوْبِهِ, أَوْ قَالَ: بِيَدِهِ, كَمَا آخُذُ أَنَا بِصَنِفَةِ ثَوْبِكَ هَذَا, فَلاَ يَتَنَاهَى, أَوْ قَالَ: فَلاَ يَنْتَهِي, حَتَّى يُدْخِلَهُ اللهُ وَأَبَاهُ الْجَنَّةَ
'মুমিনদের শিশুরা জান্নাতের ক্ষুদ্র জীব। তাদের একেকজন তাদের বাবা কিংবা বাবা-মা'কে স্বাগত জানাবে। সে তার কাপড় বা হাত ধরবে, যেমন এই আমি তোমার এই কাপড়টির প্রান্ত ধরছি। তারপর সে আর থামবে না, যাবৎ না আল্লাহ তার পিতাকে জান্নাতে প্রবেশ করান’। (সহীহ মুসলিম: ২৬৩৫; মুসনাদুল বাযযার: ৯৫৪৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৭১৪২)
প্রকাশ থাকে যে, শোকতাপে সবর দ্বারা যেসব গুনাহ মাফ হয় তা আল্লাহ তা'আলার হক সম্পর্কিত গুনাহ। যেসব গুনাহের সম্পর্ক বান্দার হকের সঙ্গে, তার বেলায় বান্দার পক্ষ থেকেও মাফ পাওয়া জরুরি। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা এটা প্রমাণিত। তাছাড়া সাধারণভাবে কবীরা গুনাহের ক্ষেত্রেও ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য তাওবা জরুরি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সন্তানের মৃত্যুতে শোক যতই গভীর হোক, তথাপি মুমিন নর-নারীর উচিত ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া। তাতে জান্নাতলাভের আশা থাকে।
খ. সন্তানের মৃত্যু বাহ্যত কঠিন মসিবত হলেও প্রকৃতপক্ষে পিতা-মাতার পক্ষে তা রহমতস্বরূপ। এটা চিন্তা করলে ধৈর্যধারণ সহজ হয়।
গ. মুমিনদের শিশুসন্তান জান্নাতবাসী হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
