আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ৯০
৫০- শিশুদিগকে চুম্বন
৯০। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেন ঃ জনৈক বেদুইন নবী করীম (ﷺ) এর খেদমতে আসিয়া বলিলঃ “আপনারা কি শিশুদেরকে চুম্বন দেন ? কই , আমরা তাে শিশুদের চুম্বন দেই না।” তখন নবী করীম (ﷺ) ফরমাইলেন ঃ আল্লাহ্ তা'আলা যদি তােমার অন্তর হইতে দয়ামায়া একান্তই তুলিয়া নেন, তবে আমার হাতে কী করার আছে হে।
بَابُ قُبْلَةِ الصِّبْيَانِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: أَتُقَبِّلُونَ صِبْيَانَكُمْ؟ فَمَا نُقَبِّلُهُمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: أَوَ أَمْلِكُ لَكَ أَنْ نَزَعَ اللَّهُ مِنْ قَلْبِكَ الرَّحْمَةَ؟.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আবূ ইয়া'লা তার মুসনাদ গ্রন্থে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি.-এর সূত্রে একটি হাদীছ উল্লেখ করেছেন। তাতে উয়াইনা ইব্ন হিস্ন আল-ফাযারী রাযি. সম্পর্কে আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি হযরত হাসান রাযি. ও হুসাইন রাযি.-কে চুমু দিচ্ছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এদেরকে চুমু খাচ্ছেন, অথচ আমার দশটি সন্তান আছে, যাদের কাউকে কখনও চুমু দেইনি।[১]
এরকম একটি ঘটনা কায়স ইব্ন আসিম তামীমী রাযি. সম্পর্কেও বর্ণিত আছে, যা আবুল ফারাজ আল-আসবাহানী তার 'আল আগানী' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছিলেনঃ- فهل إلا أن تنزع الرحمة منك؟ অর্থাৎ শিশুদের চুমু না খাওয়ার কারণ কি তোমার অন্তর থেকে রহমত তুলে নিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কিছু?[২]
এসব বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় একইরকম ঘটনা একাধিকবার ঘটেছিল। অর্থাৎ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সচরাচরই তাঁর প্রিয় নাতি-নাতনি ও অন্যান্য শিশুদের চুমু দিতেন। কিন্তু আরবে এর রেওয়াজ না থাকায় যখন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত লোকজন এটা দেখত, তখন তারা আশ্চর্য হয়ে যেত এবং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, যা বিভিন্ন সূত্রে হাদীছ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে।
যাহোক, এসব বর্ণনা দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে, শিশুদের চুমু দেওয়া অন্তরে আল্লাহ তাআলার দেওয়া রহমত ও দয়ামায়ারই প্রকাশ। কাজেই কেউ শিশুকে চুমু না দিলে সেটা তার অন্তরে দয়ামায়া না থাকার আলামত। তোমরা যখন তোমাদের শিশুদের চুমু দাও না বলে স্বীকার করছ, তখন বোঝা যাচ্ছে তোমাদের অন্তরে দয়ামায়া নেই, আল্লাহ তাআলা তোমাদের অন্তর থেকে তা তুলে নিয়েছেন। আর অন্তর দয়ামায়াশূন্য হয়ে যাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। এরূপ লোক কেবল যে শিশুদের চুমু দেয় না তাই নয়; তারা আরও অনেক গুরুতর অন্যায়-অপরাধ করতে পারে। ফলে তারা আল্লাহ তাআলার রহমত থেকেও বঞ্চিত হয়ে যায়। তোমাদের যাতে সে পরিণতি না হয়, সেজন্য তোমাদের কর্তব্য অন্তরে দয়ামায়ার গুণ অর্জনের জন্য সাধনা করা। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا تنزع الرحمة إلا من شقي দয়ামায় তুলে নেওয়া হয় কেবল হতভাগার অন্তর থেকেই'।[৩]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর রাযি. হতে বর্ণিত অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- إن أبعد الناس من الله القلب القاسي আল্লাহ (-এর রহমত) থেকে সর্বাপেক্ষা দূরে কঠোরপ্রাণ মানুষ'।[৪]
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আদর-সোহাগ করে শিশুদের চুমু দেওয়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
খ. শিশুদেরকে আদর-সোহাগ করা অন্তরস্থ রহমতের প্রকাশ।
গ. দীন সম্পর্কিত কোনও বিষয় অভিনব মনে হলে সে সম্পর্কে বিজ্ঞজনকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত।
[১] ফাতহুল বারী, খ. ১০, পৃ. ৫২৮; মুসনাদ আবূ ইয়া'লা, হাদীছ নং ৫৯৮৩
[২] ফাতহুল বারী, খ, ১০, পৃ. ৫২৮
[৩] সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৯৪২; সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯২২; মুসনাদে আহমদ, হাদীছ নং ৮০০১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৬২; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৩৭৪; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬৪৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৫৩৯, বাগাবী, শারহুস-সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৫১
[৪] জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪১১; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৬০০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ৩১৮৭৯
এরকম একটি ঘটনা কায়স ইব্ন আসিম তামীমী রাযি. সম্পর্কেও বর্ণিত আছে, যা আবুল ফারাজ আল-আসবাহানী তার 'আল আগানী' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছিলেনঃ- فهل إلا أن تنزع الرحمة منك؟ অর্থাৎ শিশুদের চুমু না খাওয়ার কারণ কি তোমার অন্তর থেকে রহমত তুলে নিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কিছু?[২]
এসব বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় একইরকম ঘটনা একাধিকবার ঘটেছিল। অর্থাৎ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সচরাচরই তাঁর প্রিয় নাতি-নাতনি ও অন্যান্য শিশুদের চুমু দিতেন। কিন্তু আরবে এর রেওয়াজ না থাকায় যখন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত লোকজন এটা দেখত, তখন তারা আশ্চর্য হয়ে যেত এবং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, যা বিভিন্ন সূত্রে হাদীছ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে।
যাহোক, এসব বর্ণনা দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে, শিশুদের চুমু দেওয়া অন্তরে আল্লাহ তাআলার দেওয়া রহমত ও দয়ামায়ারই প্রকাশ। কাজেই কেউ শিশুকে চুমু না দিলে সেটা তার অন্তরে দয়ামায়া না থাকার আলামত। তোমরা যখন তোমাদের শিশুদের চুমু দাও না বলে স্বীকার করছ, তখন বোঝা যাচ্ছে তোমাদের অন্তরে দয়ামায়া নেই, আল্লাহ তাআলা তোমাদের অন্তর থেকে তা তুলে নিয়েছেন। আর অন্তর দয়ামায়াশূন্য হয়ে যাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। এরূপ লোক কেবল যে শিশুদের চুমু দেয় না তাই নয়; তারা আরও অনেক গুরুতর অন্যায়-অপরাধ করতে পারে। ফলে তারা আল্লাহ তাআলার রহমত থেকেও বঞ্চিত হয়ে যায়। তোমাদের যাতে সে পরিণতি না হয়, সেজন্য তোমাদের কর্তব্য অন্তরে দয়ামায়ার গুণ অর্জনের জন্য সাধনা করা। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا تنزع الرحمة إلا من شقي দয়ামায় তুলে নেওয়া হয় কেবল হতভাগার অন্তর থেকেই'।[৩]
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর রাযি. হতে বর্ণিত অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- إن أبعد الناس من الله القلب القاسي আল্লাহ (-এর রহমত) থেকে সর্বাপেক্ষা দূরে কঠোরপ্রাণ মানুষ'।[৪]
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আদর-সোহাগ করে শিশুদের চুমু দেওয়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
খ. শিশুদেরকে আদর-সোহাগ করা অন্তরস্থ রহমতের প্রকাশ।
গ. দীন সম্পর্কিত কোনও বিষয় অভিনব মনে হলে সে সম্পর্কে বিজ্ঞজনকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত।
[১] ফাতহুল বারী, খ. ১০, পৃ. ৫২৮; মুসনাদ আবূ ইয়া'লা, হাদীছ নং ৫৯৮৩
[২] ফাতহুল বারী, খ, ১০, পৃ. ৫২৮
[৩] সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৯৪২; সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯২২; মুসনাদে আহমদ, হাদীছ নং ৮০০১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৬২; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৩৭৪; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬৪৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৫৩৯, বাগাবী, শারহুস-সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৫১
[৪] জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪১১; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৬০০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ৩১৮৭৯
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
