আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৭৬
৪১- যে ব্যক্তি এক বা একাধিক কণ্যা সন্তান প্রতিপালন কর
৭৬। হযরত উব্বা ইবন আমির (রাযিঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ যাহার তিনটি কন্যা সন্তান আছে এবং সে তাহার ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করে (তাহাদিগকে বােঝাস্বরূপ মনে করে না) এবং তাহাদিগকে সাধ্যানুসারে ভাল (খাওয়ায়) পরায়, উহারা তাহার জন্য দোযখের আগুন হইতে রক্ষাকারী অন্তরাল হইবে।
بَابُ مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ أَوْ وَاحِدَةً
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ يَزِيدَ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا حَرْمَلَةُ بْنُ عِمْرَانَ أَبُو حَفْصٍ التُّجِيبِيُّ، عَنْ أَبِي عُشَّانَةَ الْمَعَافِرِيِّ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ‏:‏ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ‏:‏ مَنْ كَانَ لَهُ ثَلاَثُ بَنَاتٍ، وَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ، وَكَسَاهُنَّ مِنْ جِدَتِهِ، كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে কন্যাসন্তানকে লালন-পালন করার ফযীলত বলা হয়েছে।
লালন-পালন বলতে কেবল ভাত-কাপড় যোগানোই বোঝায় না। তার ইহজীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ তো করতেই হবে, সেইসঙ্গে তার পরকালীন জীবন যাতে সাফল্যমণ্ডিত হয় সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি। এর জন্য কর্তব্য তাকে জরুরি দীনী ইলম শিক্ষা দেওয়া। অর্থাৎ একজন মুসলিম নারী হিসেবে তার যা-কিছু করণীয় তা সবই তাকে শিক্ষা দেওয়া চাই। যেমন আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগী, হালাল-হারামের মাসাইল, উত্তম আখলাক-চরিত্র, স্বামী ও সন্তানের প্রতি কর্তব্য, আত্মীয়-স্বজনের হক ইত্যাদি।
কন্যাসন্তান লালন-পালনের এ ফযীলত দ্বারা ধারণা পাওয়া যায় ইসলামে কন্যাসন্তানের কী মর্যাদা। ইসলামের আগে তার এ মর্যাদা ছিল না। কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়া পিতার পক্ষে লাঞ্ছনাকর গণ্য হত। তাই জন্ম নেওয়ামাত্র তাকে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতেও ফেলা হত। কাউকে তার কন্যাসন্তান জন্মের সংবাদ দেওয়া হলে তার পক্ষে তা চরম বিব্রতকর মনে হত। কুরআন মাজীদে সে চিত্র এভাবে আঁকা হয়েছে-

وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ (58) يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ (59)

‘যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তান ( জন্মগ্রহণ)-এর সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে মনে মনে দুঃখ-ক্লিষ্ট হয়। সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে মানুষ থেকে লুকিয়ে বেড়ায় (এবং চিন্তা করে), হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে, নাকি তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে। জেনে রেখ, তারা যে সিদ্ধান্ত স্থির করে তা অতি মন্দ!২৯৮
ইসলাম তার অনুসারীদেরকে এ গ্লানি থেকে মুক্ত করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে কন্যাসন্তানের জন্ম লাঞ্ছনাকর নয়; বরং মর্যাদাকর। তার দ্বারা পিতামাতার পক্ষে জান্নাতের পথ সুগম হয়; বরং জান্নাতের উচ্চমর্যাদা লাভ হয়। হাদীছে কেবল একটি কন্যাসন্তান নয় একাধিক কন্যাসন্তানের প্রতিও আগ্রহ প্রদান করা হয়েছে। দীনের সহীহ বুঝ যাদের মধ্যে নেই তারা একটি কন্যাসন্তানের জন্মেও মন খারাপ করে ফেলে।
এ ফযীলত নিজের কন্যাকে লালন-পালন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বোন, ভাতিজী, নাতনী বা এরকম যে-কোনও দুই মেয়েকে লালন-পালন করলেও এ ফযীলত অর্জিত হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছাকাছি জান্নাতে থাকা বড়ই সৌভাগ্যের ব্যাপার। সুতরাং এ সৌভাগ্য অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের উচিত অত্যন্ত মায়া-মমতার সাথে মেয়েদের লালন-পালন করা এবং কোনওক্রমেই মেয়ে হল বলে তাদেরকে অবহেলা ও অগ্রাহ্য না করা।

২৯৮. সূরা নাহল (১৬), আয়াত ৫৮-৫৯
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান