আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৭১
৩৭- মুশরিক আত্মীয়ের সহিত সদ্ব্যবহার ও উপহার দেওয়া
৭১। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবন উমর (রাযিঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত উমর (রাযিঃ) একটি বহুমূল্য কারুকার্য খচিত জামা দেখিতে পাইয়া রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলিলেন ঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি উহা খরিদ করিয়া নিন ! জুমু'আর দিন এবং বাহিরের প্রতিনিধি দল আসিলে তাহাদের সহিত সাক্ষ্যাঙ্কালে আপনি উহা পারিবেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফরমাইলেন ঃ “হে উমর ! উহা সেই সব লােকে পরিবে, যাহাদের পরকাল বলিতে কিছু নাই।” অতঃপর (পরবর্তী কোন এক সময়) অনুরূপ কিছু বহুমূল্য কারুকার্য খচিত জামা নবী করীম (ﷺ)-এর খেদমতে উপঢৌকন স্বরূপ আসিল। তিনি তাহার একটা হযরত উমরের কাছে উপহার স্বরূপ পাঠাইয়া দিলেন। উমর (রাযিঃ) তাহা নিয়া দৌড়াইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খেদমতে উপস্থিত হইলেন এবং বলিলেন ঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনি উহা আমার কাছে পাঠাইলেন, অথচ আপনি ইতিপূর্বে এ সম্পর্কে যাহা যাহা বলিয়াছেন, তাহা আমি শুনিয়াছি। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফরমাইলেন ঃ তুমি পরিধান করার জন্য আমি তােমাকে উহা উপহার দেই নাই, বরং এই জন্য দিয়াছি যে, তুমি উহা বিক্রয় করিয়া ফেলিবে অথবা কাহাকেও ( তােমার পক্ষ হইতে উপহার স্বরূপ) পরাইয়া দিবে। উমর (রাযিঃ) তাহার এক বৈপিত্রেয় মুশরিক ভাইকে উহা উপহার স্বরূপ প্রদান করিলেন।
بَابُ صِلَةِ ذِي الرَّحِمِ الْمُشْرِكِ وَالْهَدِيَّةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلاَمٍ، قَالَ‏:‏ أَخْبَرَنَا عَبْدَةُ، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَأَى عُمَرُ حُلَّةً سِيَرَاءَ فَقَالَ‏:‏ يَا رَسُولَ اللهِ، لَوِ اشْتَرَيْتَ هَذِهِ، فَلَبِسْتَهَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَلِلْوُفُودِ إِذَا أَتَوْكَ، فَقَالَ‏:‏ يَا عُمَرُ، إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ، ثُمَّ أُهْدِيَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنْهَا حُلَلٌ، فَأَهْدَى إِلَى عُمَرَ مِنْهَا حُلَّةً، فَجَاءَ عُمَرُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ‏:‏ يَا رَسُولَ اللهِ، بَعَثْتَ إِلَيَّ هَذِهِ، وَقَدْ سَمِعْتُكَ قُلْتَ فِيهَا مَا قُلْتَ، قَالَ‏:‏ إِنِّي لَمْ أُهْدِهَا لَكَ لِتَلْبَسَهَا، إِنَّمَا أَهْدَيْتُهَا إِلَيْكَ لِتَبِيعَهَا أَوْ لِتَكْسُوَهَا، فَأَهْدَاهَا عُمَرُ لأَخٍ لَهُ مِنْ أُمِّهِ مُشْرِكٍ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)

কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।

হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।

খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন