আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল
হাদীস নং: ৩৩৬৪
আন্তর্জাতিক নং: ৩৬২৩ - ৩৬২৪
২০৭৫. ইসলাম আগমনের পর নবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৩৩৬৪। আবু নু‘আইম (রাহঃ) .... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম (ﷺ)- এর চলার ভঙ্গিতে চলতে চলতে ফাতিমা (রাযিঃ) আমাদের নিকট আগমন করলেন। তাঁকে দেখে নবী কারীম (ﷺ) বললেন, আমার স্নেহের কন্যাকে অনেক অনেক মোবারকবাদ। তারপর তাঁকে তাঁর ডানপাশে অথবা বামপাশে (রাবির সন্দেহ) বসালেন এবং তাঁর সাথে চুপিচুপি (কি যেন) কথা বললেন। তখন তিনি (ফাতিমা) (রাযিঃ) কেঁদে দিলেন। আমি (আয়েশা (রাযিঃ)) তাকে বললাম কাঁদছেন কেন? নবী কারীম (ﷺ) পুনরায় চুপিচুপি তাঁর সাথে কথা বললেন। তিনি (ফাতিমা (রাযিঃ)) এবার হেঁসে উঠলেন। আমি (আয়িশা (রাযিঃ)) বললাম, আজকের মত দুঃখ ও বেদনার সাথে সাথে আনন্দ ও খুশী আমি আর কখনো দেখিনি। আমি তাঁকে (ফাতিমা (রাযিঃ))- কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি (নবী (ﷺ)) কি বলেছিলেন?
তিনি উত্তর দিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর গোপন কথাকে প্রকাশ করবো না। পরিশেষে নবী কারীম (ﷺ)- এর ইন্তিকাল হয়ে যাওয়ার পর আমি তাঁকে (আবার) জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বলেছিলেন? তিনি বললেন, তিনি (নবী কারীম (ﷺ) প্রথমবার আমাকে বলেছিলেন, জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) প্রতিবছর একবার আমার সঙ্গে পরস্পর কুরআন পাঠ করতেন, এ বছর দু’বার এরূপ পড়ে শুনিয়েছেন। আমার মনে হয় আমার বিদায় কাল ঘনিয়ে এসেছে এবং এরপর আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। দ্বিতীয়বার বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতবাসি মহিলাদের অথবা মু’মিন মহিলাদের তুমি সরদার (নেত্রী) হবে। এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম।
তিনি উত্তর দিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর গোপন কথাকে প্রকাশ করবো না। পরিশেষে নবী কারীম (ﷺ)- এর ইন্তিকাল হয়ে যাওয়ার পর আমি তাঁকে (আবার) জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বলেছিলেন? তিনি বললেন, তিনি (নবী কারীম (ﷺ) প্রথমবার আমাকে বলেছিলেন, জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) প্রতিবছর একবার আমার সঙ্গে পরস্পর কুরআন পাঠ করতেন, এ বছর দু’বার এরূপ পড়ে শুনিয়েছেন। আমার মনে হয় আমার বিদায় কাল ঘনিয়ে এসেছে এবং এরপর আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। দ্বিতীয়বার বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতবাসি মহিলাদের অথবা মু’মিন মহিলাদের তুমি সরদার (নেত্রী) হবে। এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম।
باب عَلاَمَاتِ النُّبُوَّةِ فِي الإِسْلاَمِ
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّاءُ، عَنْ فِرَاسٍ، عَنْ عَامِرٍ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ أَقْبَلَتْ فَاطِمَةُ تَمْشِي، كَأَنَّ مِشْيَتَهَا مَشْىُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " مَرْحَبًا بِابْنَتِي ". ثُمَّ أَجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ، ثُمَّ أَسَرَّ إِلَيْهَا حَدِيثًا، فَبَكَتْ فَقُلْتُ لَهَا لِمَ تَبْكِينَ ثُمَّ أَسَرَّ إِلَيْهَا حَدِيثًا فَضَحِكَتْ فَقُلْتُ مَا رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ فَرَحًا أَقْرَبَ مِنْ حُزْنٍ، فَسَأَلْتُهَا عَمَّا قَالَ. فَقَالَتْ مَا كُنْتُ لأُفْشِيَ سِرَّ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى قُبِضَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلْتُهَا فَقَالَتْ أَسَرَّ إِلَىَّ " إِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ يُعَارِضُنِي الْقُرْآنَ كُلَّ سَنَةٍ مَرَّةً، وَإِنَّهُ عَارَضَنِي الْعَامَ مَرَّتَيْنِ، وَلاَ أُرَاهُ إِلاَّ حَضَرَ أَجَلِي، وَإِنَّكِ أَوَّلُ أَهْلِ بَيْتِي لَحَاقًا بِي ". فَبَكَيْتُ فَقَالَ " أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ ـ أَوْ نِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ ". فَضَحِكْتُ لِذَلِكَ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় ফাতিমা হেঁটে হেঁটে এগিয়ে আসলেন। তার চলনভঙ্গি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলনভঙ্গি থেকে একটুও আলাদা ছিল না। তিনি যখন তাকে দেখলেন, তাকে স্বাগত জানালেন এবং বললেন, আমার কন্যাকে স্বাগতম। তারপর তিনি তাকে নিজের ডানে বা বামে বসালেন। তারপর চুপিসারে কিছু বললেন। তাতে ফাতিমা প্রচণ্ডভাবে কেঁদে উঠলেন। তিনি যখন তাঁর অস্থিরতা লক্ষ করলেন, পুনরায় চুপিসারে কিছু বললেন। তাতে ফাতিমা হেসে দিলেন। আমি তাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের মাঝখানে বিশেষভাবে তোমাকে চুপিসারে কিছু বললেন। তাও তুমি কাঁদলে! তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে গেলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছিলেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন কথা প্রকাশ করতে পারব না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গেলে আমি ফাতিমাকে বললাম, তোমার উপর আমার যে হক আছে তার দোহাই দিয়ে বলছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছিলেন তা অবশ্যই আমাকে বলো। তিনি বললেন, হাঁ, এখন তা বলা যায়। প্রথমবার যে তিনি চুপিসারে আমাকে কিছু বলেছিলেন তখন আমাকে জানিয়েছিলেন যে, জিবরীল প্রতি বছর তাঁর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন এক–দু'বার পেশ করতেন। কিন্তু এ সময় (এক রমযানেই) তাঁর সামনে তা দু'বার পেশ করেছেন। তাই আমার মনে হচ্ছে আমার মৃত্যু কাছে এসে গেছে। সুতরাং তুমি আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্য ধরো। কেননা আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রবর্তী। এ কথায় আমি কেঁদে দিলাম, যে কান্না আপনি দেখেছেন। তিনি যখন আমার অস্থিরতা লক্ষ করলেন, পুনরায় চুপিসারে আমার সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, হে ফাতিমা! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি মুমিন নারীদের, কিংবা তিনি বলেছিলেন, তুমি এ উম্মতের নারীদের নেত্রী হবে? এ কথায় আমি হেসে দিলাম, যে হাসি আপনি দেখেছেন।
এ হাদীছটিতে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছোট মেয়ে হযরত ফাতিমা রাযি. কেমন ছিলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কতটা ভালোবাসতেন এবং আখিরাতে তিনি কতটা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন হবেন, এসব বিষয় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন তিনি বলেন-
مَا تُخطئ مِشْيَتُهَا مِنْ مِشْيَةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ شَيْئًا (তার চলনভঙ্গি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলনভঙ্গি থেকে একটুও আলাদা ছিল না)। অপর এক বর্ণনায় হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন-
مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَشْبَهَ سَمْتًا وَدَلًّا وَهَدْيًا بِرَسُولِ اللَّهِ فِي قِيَامِهَا وَقُعُودِهَا مِنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» قَالَتْ: «وَكَانَتْ إِذَا دَخَلَتْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ إِلَيْهَا فَقَبَّلَهَا وَأَجْلَسَهَا فِي مَجْلِسِهِ، وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ عَلَيْهَا قَامَتْ مِنْ مَجْلِسِهَا فَقَبَّلَتْهُ وَأَجْلَسَتْهُ فِي مَجْلِسِهَا، فَلَمَّا مَرِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَتْ فَاطِمَةُ فَأَكَبَّتْ عَلَيْهِ فَقَبَّلَتْهُ
আমি বিনয়-নম্রতা, আচার-আচরণ ও আখলাক-চরিত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ফাতিমার চেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কাউকে দেখিনি। তার ওঠাবসা ছিল হুবহু তাঁর মতো। তিনি যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন, তখন তিনি উঠে তার দিকে এগিয়ে যেতেন, তাকে চুমু দিতেন এবং নিজের জায়গায় তাকে বসাতেন। অনুরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও যখন তার কাছে যেতেন, তখন তিনি উঠে তাঁর দিকে এগিয়ে যেতেন, তাঁকে চুম্বন করতেন এবং তাঁকে নিজের জায়গায় বসাতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসুস্থ অবস্থায় তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এসে তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়লেন এবং তাঁকে চুম্বন করলেন। (জামে' তিরমিযী: ৩৮৭২; সুনানে আবূ দাউদ: ৫২১৭; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা : ৮৩১১; সহীহ ইবন হিব্বান: ৬৯৫৩; মুসনাদে আহমাদ: ৭১২১; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭৭১৫)
أَنَّ جِبْرِيلَ كَانَ يُعَارِضُهُ الْقُرْآنَ فِي كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ (জিবরীল প্রতি বছর তার কাছে সম্পূর্ণ কুরআন এক-দু'বার পেশ করতেন)। এখানে 'দুবার' কথাটি সঠিক নয়। সম্ভবত কোনও এক বর্ণনাকারীর দ্বারা ভুলক্রমে এ শব্দটি যুক্ত হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিবছর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম সারা বছর যে পরিমাণ কুরআন নাযিল করা হত, রমাযান মাসে তার পুরোটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে একবার পেশ করতেন। অর্থাৎ একসঙ্গে সবটা পড়ে শোনাতেন। ওফাতের আগের বছর পর্যন্ত প্রতি রমাযানে একবার এটা হত। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয়, সে বছরই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এ কাজটি দু'বার করেছিলেন। অর্থাৎ এ পর্যন্ত কুরআন মাজীদের যতটুকু নাযিল হয়েছে, তার সবটা তাঁকে দু'বার পড়ে শুনিয়েছেন। এর দ্বারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারেন যে, এটাই হয়তো তাঁর জীবনের শেষ রমাযান, এর পর আর কোনও রমাযান তিনি পাবেন না। সে কথাই তিনি হযরত ফাতিমা রাযি.-এর কাছে ব্যক্ত করেছেন। সেইসঙ্গে তাঁর ওফাতে যেন হযরত ফাতিমা রাযি. শোকে দিশেহারা না হয়ে পড়েন, সেজন্য তাঁকে তাকওয়া অবলম্বন ও ধৈর্যধারণের অসিয়ত করেছেন। কিন্তু অচিরেই তিনি পিতৃহারা হয়ে পড়বেন, প্রিয় মহান পিতা তাঁকে ছেড়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করবেন, এ পূর্বাভাস তিনি সইতে পারছিলেন না। সুতরাং তাঁর বুকের ভার লাঘবের উদ্দেশ্যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সুসংবাদ শোনান-
أمَا تَرْضَيْنَ أنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ المُؤُمِنِينَ، أَوْ سَيَّدَةَ نِساءِ هذِهِ الأُمَّةِ ؟ (তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি মুমিন নারীদের, কিংবা তিনি বলেছিলেন, তুমি এ উম্মতের নারীদের নেত্রী হবে)? এর দ্বারা বোঝা যায় এ উম্মতের নারীদের মধ্যে হযরত ফাতিমা রাযি, সকলের সেরা। কিন্তু এক বর্ণনায় আছে-
أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ، خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ ، وَفَاطِمَة بِنْتُ مُحَمَّدٍ ﷺ وَمَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ، وَآسِيَة بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَة فِرْعَوْنَ.
জান্নাতী নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল খাদীজা বিনত খুওয়ায়লিদ, ফাতিমা বিনত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, মারয়াম বিনত ইমরান এবং ফিরআওনের স্ত্রী আসিয়া বিনত মুযাহিম। (নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৮২৯৭; মুসনাদে আহমাদ: ২৬৬৮; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ২৭২২; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার ১৪৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৭০১০; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ১১৯২৮; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৮৩৬)
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
فَضْلُ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيدِ عَلَى سَائِرِ الطَّعَامِ
সকল নারীর উপর আয়েশার শ্রেষ্ঠত্ব সকল খাবারের উপর ছারীদ (ঝোল মাংসের সাথে রুটি টুকরো টুকরো করে মিশিয়ে প্রস্তুত করা খাদ্য)-এর শ্রেষ্ঠত্বতুল্য। (সহীহ বুখারী: ৩৪৩৩; সহীহ মুসলিম: ২৪৪৬; জামে' তিরমিযী: ৩৮৮৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ৩২৮০; সুনানে নাসাঈ ৩৯৪৭; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৩৬৭০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৭১১৩: তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬০; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৬৪৮৩; সুনানে দারিমী: ২১১৩)
মূলত হযরত মারয়াম রাযি., হযরত আসিয়া রাযি., হযরত খাদীজা রাযি., হযরত ফাতিমা রাযি. ও হযরত আয়েশা রাযি.- এ পাঁচজনই নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এঁদের মধ্যে কারচে' কে শ্রেষ্ঠ, তা নির্ণয় করা কঠিন। প্রত্যেকেরই বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
একেক দিক থেকে একেকজন উচ্চমর্যাদার অধিকারী। কিন্তু সামগ্রিকভাবে অন্যদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়ার অকাট্য কোনও দলীল নেই। তাই তা দেওয়ার কোনও প্রয়োজনও নেই, যেহেতু এটা আকীদার কোনও বিষয় নয়। আমরা এঁদের প্রত্যেককেই মনেপ্রাণে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধাভক্তি করি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. হযরত ফাতিমা রাযি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতি আদরের কন্যা। আমরা তাঁকে সহ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারও কন্যাকেই ভালোবাসি ও ভালোবাসব।
খ. পিতার উচিত কন্যার আগমনে তাকে স্বাগত জানানো ও আনন্দ প্রকাশ করা।
গ. পিতা যখন কন্যার বাড়িতে আসে, তখন কন্যারও কর্তব্য আনন্দ প্রকাশ করা ও তাকে স্বাগত জানানো।
ঘ. স্নেহ-মমতার প্রকাশস্বরূপ কন্যাকে চুম্বন করা সুন্নত। অনুরূপ শ্রদ্ধা-ভক্তির নিদর্শনস্বরূপ পিতাকে চুম্বন করাও সুন্নত।
ঙ. কোনও পিতা যদি স্ত্রীদের উপস্থিতিতে সন্তানকে কোনও গোপন কথা বলে, তাতে স্ত্রীদের মনঃক্ষুণ্ণ হওয়া উচিত নয়। কেননা পিতা-সন্তানের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা থাকতেই পারে, যা স্ত্রীদের জানার প্রয়োজন নেই।
চ. কাউকে কোনও গোপন কথা বললে তার জন্য তা আমানতস্বরূপ। তা কিছুতেই ফাঁস করা জায়েয নয়। তবে তার গোপনীয়তা যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হয়, তবে সে মেয়াদের পর তা প্রকাশ করাতে কোনও দোষ নেই।
ছ. পিতার মৃত্যুর পর সন্তানগণ যাতে সবরের পরিচয় দেয় এবং তাকওয়া-পরহেযগারীর সঙ্গে চলে, সে সম্পর্কে পিতার অসিয়ত করে যাওয়া উচিত।
জ. বিশেষ কোনও কথার কারণে প্রিয়জন দুঃখ পেলে বা শোকার্ত হয়ে পড়লে তাকে সান্ত্বনামূলক এমন কোনও কথা বলা উচিত, যাতে সে আনন্দ বোধ করে।চ
ঝ. পিতার সম্মানার্থে সৎমা'কে মায়ের মর্যাদা দিতে হবে।
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় ফাতিমা হেঁটে হেঁটে এগিয়ে আসলেন। তার চলনভঙ্গি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলনভঙ্গি থেকে একটুও আলাদা ছিল না। তিনি যখন তাকে দেখলেন, তাকে স্বাগত জানালেন এবং বললেন, আমার কন্যাকে স্বাগতম। তারপর তিনি তাকে নিজের ডানে বা বামে বসালেন। তারপর চুপিসারে কিছু বললেন। তাতে ফাতিমা প্রচণ্ডভাবে কেঁদে উঠলেন। তিনি যখন তাঁর অস্থিরতা লক্ষ করলেন, পুনরায় চুপিসারে কিছু বললেন। তাতে ফাতিমা হেসে দিলেন। আমি তাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের মাঝখানে বিশেষভাবে তোমাকে চুপিসারে কিছু বললেন। তাও তুমি কাঁদলে! তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে গেলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছিলেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন কথা প্রকাশ করতে পারব না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গেলে আমি ফাতিমাকে বললাম, তোমার উপর আমার যে হক আছে তার দোহাই দিয়ে বলছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছিলেন তা অবশ্যই আমাকে বলো। তিনি বললেন, হাঁ, এখন তা বলা যায়। প্রথমবার যে তিনি চুপিসারে আমাকে কিছু বলেছিলেন তখন আমাকে জানিয়েছিলেন যে, জিবরীল প্রতি বছর তাঁর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন এক–দু'বার পেশ করতেন। কিন্তু এ সময় (এক রমযানেই) তাঁর সামনে তা দু'বার পেশ করেছেন। তাই আমার মনে হচ্ছে আমার মৃত্যু কাছে এসে গেছে। সুতরাং তুমি আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্য ধরো। কেননা আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রবর্তী। এ কথায় আমি কেঁদে দিলাম, যে কান্না আপনি দেখেছেন। তিনি যখন আমার অস্থিরতা লক্ষ করলেন, পুনরায় চুপিসারে আমার সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, হে ফাতিমা! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি মুমিন নারীদের, কিংবা তিনি বলেছিলেন, তুমি এ উম্মতের নারীদের নেত্রী হবে? এ কথায় আমি হেসে দিলাম, যে হাসি আপনি দেখেছেন।
এ হাদীছটিতে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছোট মেয়ে হযরত ফাতিমা রাযি. কেমন ছিলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কতটা ভালোবাসতেন এবং আখিরাতে তিনি কতটা উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন হবেন, এসব বিষয় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন তিনি বলেন-
مَا تُخطئ مِشْيَتُهَا مِنْ مِشْيَةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ شَيْئًا (তার চলনভঙ্গি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলনভঙ্গি থেকে একটুও আলাদা ছিল না)। অপর এক বর্ণনায় হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন-
مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَشْبَهَ سَمْتًا وَدَلًّا وَهَدْيًا بِرَسُولِ اللَّهِ فِي قِيَامِهَا وَقُعُودِهَا مِنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» قَالَتْ: «وَكَانَتْ إِذَا دَخَلَتْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ إِلَيْهَا فَقَبَّلَهَا وَأَجْلَسَهَا فِي مَجْلِسِهِ، وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ عَلَيْهَا قَامَتْ مِنْ مَجْلِسِهَا فَقَبَّلَتْهُ وَأَجْلَسَتْهُ فِي مَجْلِسِهَا، فَلَمَّا مَرِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَتْ فَاطِمَةُ فَأَكَبَّتْ عَلَيْهِ فَقَبَّلَتْهُ
আমি বিনয়-নম্রতা, আচার-আচরণ ও আখলাক-চরিত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ফাতিমার চেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কাউকে দেখিনি। তার ওঠাবসা ছিল হুবহু তাঁর মতো। তিনি যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন, তখন তিনি উঠে তার দিকে এগিয়ে যেতেন, তাকে চুমু দিতেন এবং নিজের জায়গায় তাকে বসাতেন। অনুরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও যখন তার কাছে যেতেন, তখন তিনি উঠে তাঁর দিকে এগিয়ে যেতেন, তাঁকে চুম্বন করতেন এবং তাঁকে নিজের জায়গায় বসাতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসুস্থ অবস্থায় তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এসে তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়লেন এবং তাঁকে চুম্বন করলেন। (জামে' তিরমিযী: ৩৮৭২; সুনানে আবূ দাউদ: ৫২১৭; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা : ৮৩১১; সহীহ ইবন হিব্বান: ৬৯৫৩; মুসনাদে আহমাদ: ৭১২১; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭৭১৫)
أَنَّ جِبْرِيلَ كَانَ يُعَارِضُهُ الْقُرْآنَ فِي كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ (জিবরীল প্রতি বছর তার কাছে সম্পূর্ণ কুরআন এক-দু'বার পেশ করতেন)। এখানে 'দুবার' কথাটি সঠিক নয়। সম্ভবত কোনও এক বর্ণনাকারীর দ্বারা ভুলক্রমে এ শব্দটি যুক্ত হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিবছর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম সারা বছর যে পরিমাণ কুরআন নাযিল করা হত, রমাযান মাসে তার পুরোটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে একবার পেশ করতেন। অর্থাৎ একসঙ্গে সবটা পড়ে শোনাতেন। ওফাতের আগের বছর পর্যন্ত প্রতি রমাযানে একবার এটা হত। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয়, সে বছরই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এ কাজটি দু'বার করেছিলেন। অর্থাৎ এ পর্যন্ত কুরআন মাজীদের যতটুকু নাযিল হয়েছে, তার সবটা তাঁকে দু'বার পড়ে শুনিয়েছেন। এর দ্বারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারেন যে, এটাই হয়তো তাঁর জীবনের শেষ রমাযান, এর পর আর কোনও রমাযান তিনি পাবেন না। সে কথাই তিনি হযরত ফাতিমা রাযি.-এর কাছে ব্যক্ত করেছেন। সেইসঙ্গে তাঁর ওফাতে যেন হযরত ফাতিমা রাযি. শোকে দিশেহারা না হয়ে পড়েন, সেজন্য তাঁকে তাকওয়া অবলম্বন ও ধৈর্যধারণের অসিয়ত করেছেন। কিন্তু অচিরেই তিনি পিতৃহারা হয়ে পড়বেন, প্রিয় মহান পিতা তাঁকে ছেড়ে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করবেন, এ পূর্বাভাস তিনি সইতে পারছিলেন না। সুতরাং তাঁর বুকের ভার লাঘবের উদ্দেশ্যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সুসংবাদ শোনান-
أمَا تَرْضَيْنَ أنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ المُؤُمِنِينَ، أَوْ سَيَّدَةَ نِساءِ هذِهِ الأُمَّةِ ؟ (তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি মুমিন নারীদের, কিংবা তিনি বলেছিলেন, তুমি এ উম্মতের নারীদের নেত্রী হবে)? এর দ্বারা বোঝা যায় এ উম্মতের নারীদের মধ্যে হযরত ফাতিমা রাযি, সকলের সেরা। কিন্তু এক বর্ণনায় আছে-
أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ، خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ ، وَفَاطِمَة بِنْتُ مُحَمَّدٍ ﷺ وَمَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ، وَآسِيَة بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَة فِرْعَوْنَ.
জান্নাতী নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল খাদীজা বিনত খুওয়ায়লিদ, ফাতিমা বিনত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, মারয়াম বিনত ইমরান এবং ফিরআওনের স্ত্রী আসিয়া বিনত মুযাহিম। (নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৮২৯৭; মুসনাদে আহমাদ: ২৬৬৮; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ২৭২২; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার ১৪৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৭০১০; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ১১৯২৮; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৮৩৬)
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
فَضْلُ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيدِ عَلَى سَائِرِ الطَّعَامِ
সকল নারীর উপর আয়েশার শ্রেষ্ঠত্ব সকল খাবারের উপর ছারীদ (ঝোল মাংসের সাথে রুটি টুকরো টুকরো করে মিশিয়ে প্রস্তুত করা খাদ্য)-এর শ্রেষ্ঠত্বতুল্য। (সহীহ বুখারী: ৩৪৩৩; সহীহ মুসলিম: ২৪৪৬; জামে' তিরমিযী: ৩৮৮৭; সুনানে ইবন মাজাহ: ৩২৮০; সুনানে নাসাঈ ৩৯৪৭; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৩৬৭০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৭১১৩: তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৬০; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৬৪৮৩; সুনানে দারিমী: ২১১৩)
মূলত হযরত মারয়াম রাযি., হযরত আসিয়া রাযি., হযরত খাদীজা রাযি., হযরত ফাতিমা রাযি. ও হযরত আয়েশা রাযি.- এ পাঁচজনই নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এঁদের মধ্যে কারচে' কে শ্রেষ্ঠ, তা নির্ণয় করা কঠিন। প্রত্যেকেরই বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
একেক দিক থেকে একেকজন উচ্চমর্যাদার অধিকারী। কিন্তু সামগ্রিকভাবে অন্যদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়ার অকাট্য কোনও দলীল নেই। তাই তা দেওয়ার কোনও প্রয়োজনও নেই, যেহেতু এটা আকীদার কোনও বিষয় নয়। আমরা এঁদের প্রত্যেককেই মনেপ্রাণে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধাভক্তি করি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. হযরত ফাতিমা রাযি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতি আদরের কন্যা। আমরা তাঁকে সহ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারও কন্যাকেই ভালোবাসি ও ভালোবাসব।
খ. পিতার উচিত কন্যার আগমনে তাকে স্বাগত জানানো ও আনন্দ প্রকাশ করা।
গ. পিতা যখন কন্যার বাড়িতে আসে, তখন কন্যারও কর্তব্য আনন্দ প্রকাশ করা ও তাকে স্বাগত জানানো।
ঘ. স্নেহ-মমতার প্রকাশস্বরূপ কন্যাকে চুম্বন করা সুন্নত। অনুরূপ শ্রদ্ধা-ভক্তির নিদর্শনস্বরূপ পিতাকে চুম্বন করাও সুন্নত।
ঙ. কোনও পিতা যদি স্ত্রীদের উপস্থিতিতে সন্তানকে কোনও গোপন কথা বলে, তাতে স্ত্রীদের মনঃক্ষুণ্ণ হওয়া উচিত নয়। কেননা পিতা-সন্তানের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা থাকতেই পারে, যা স্ত্রীদের জানার প্রয়োজন নেই।
চ. কাউকে কোনও গোপন কথা বললে তার জন্য তা আমানতস্বরূপ। তা কিছুতেই ফাঁস করা জায়েয নয়। তবে তার গোপনীয়তা যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হয়, তবে সে মেয়াদের পর তা প্রকাশ করাতে কোনও দোষ নেই।
ছ. পিতার মৃত্যুর পর সন্তানগণ যাতে সবরের পরিচয় দেয় এবং তাকওয়া-পরহেযগারীর সঙ্গে চলে, সে সম্পর্কে পিতার অসিয়ত করে যাওয়া উচিত।
জ. বিশেষ কোনও কথার কারণে প্রিয়জন দুঃখ পেলে বা শোকার্ত হয়ে পড়লে তাকে সান্ত্বনামূলক এমন কোনও কথা বলা উচিত, যাতে সে আনন্দ বোধ করে।চ
ঝ. পিতার সম্মানার্থে সৎমা'কে মায়ের মর্যাদা দিতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
