আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ১৫
৭- পিতামাতার অবাধ্যতা।
১৫। হযরত আব্দুর রহমান ইবন আবু বকরা (রাযিঃ) তাঁহার পিতার প্রমুখাৎ বর্ণনা করেন ঃ একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইলেন ঃ আমি কি তােমাদিগকে কবীরা গােনাহ্ সম্পর্কে অবগত করিব ? এ কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন। সাহাবাগণ আরয করিলেন ঃ আলবৎ, ইয়া রাসূলাল্লাহ!

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন ফরমাইলেনঃ আল্লাহর সহিত শরীক সাব্যস্ত করা (শিরক) এবং পিতামাতার অবাধ্যতা-এ কথা বলিয়া তিনি হেলান দেওয়া অবস্থা হইতে সােজা হইয়া বসিলেন এবং বলিলেন, “এবং মিথ্যা বলা” তিনি এ কথাটি পুনঃ পুনঃ বলিতেছিলেন। তখন আমি মনে মনে বলিতেছিলাম হায়। যদি
নবী করীম (ﷺ) এবার ক্ষান্ত হইতেন।
بَابُ عُقُوقِ الْوَالِدَيْنِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْفَضْلِ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا الْجُرَيْرِيُّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ‏:‏ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم‏:‏ أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ‏؟‏ ثَلاَثًا، قَالُوا‏:‏ بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ‏:‏ الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ، مَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْتُ‏:‏ لَيْتَهُ سَكَتَ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে যেগুলো বেশি বড় গুনাহ, সেরকম কয়েকটি গুনাহ উল্লেখ করা হয়েছে। বোঝা গেল মৌলিকভাবে গুনাহ দুই প্রকার- সগীরা গুনাহ (ছোট গুনাহ) ও কবীরা গুনাহ (বড় গুনাহ)। আবার বড় গুনাহের মধ্যেও কিছু আছে অধিকতর বড়।

কেউ কেউ সগীরা গুনাহ'র অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। তাদের মতে সব গুনাহই কবীরা। কিন্তু কুরআন-হাদীছের ভাষ্যের প্রতি লক্ষ করলে তা সঠিক মনে হয় না। কেননা কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবেই কবীরা গুনাহ'র উল্লেখ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا ‘তোমাদেরকে যেই বড় বড় গুনাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে, তোমরা যদি তা পরিহার করে চল, তবে আমি নিজেই তোমাদের ছোট ছোট গুনাহ তোমাদের থেকে মিটিয়ে দেব এবং তোমাদেরকে এক মর্যাদাপূর্ণ স্থানে দাখিল করব।

আরও ইরশাদ হয়েছে الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ “সেইসব লোককে, যারা বড়-বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে, অবশ্য কদাচিৎ পিছলে পড়লে সেটা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক প্রশস্ত ক্ষমাশীল।

এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় কতক গুনাহ ছোটও আছে। তবে এ কথা সত্য যে, ছোট গুনাহকে তাচ্ছিল্য করলে তখন আর তা ছোট থাকে না। কেননা এটা আল্লাহ তাআলার প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনের নামান্তর।

কবীরা গুনাহ কাকে বলে, উলামায়ে কেরাম তা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে সব ব্যাখ্যারই সারকথা একই। তা এই যে, কুরআন ও হাদীছে যেসকল গুনাহকে কবীরা গুনাহ, জুলুম, ধ্বংসাত্মক ইত্যাদি গুরুতরতাজ্ঞাপক বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে কিংবা যেসব অপরাধ সম্পর্কে কঠিন শাস্তির সতর্কবাণী ঘোষিত হয়েছে সেগুলো কবীরা গুনাহ।

ইমামুল হারামায়ন রহ. বলেন, যেসকল অপরাধ দীনের প্রতি ব্যক্তির বিশেষ তোয়াক্কা না থাকা এবং দীনদারীতে তার ঘাটতি থাকার ইঙ্গিত বহন করে সেগুলোই কবীরা গুনাহ।

কোন্ কোন্ অপরাধ কবীরা গুনাহ এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের অনেকেই পৃথক কিতাব লিখেছেন। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ হলো মুহাক্কিক শিহাবুদ্দীন আহমাদ ইবন হাজার হায়তামী রহ.-এর লেখা আয-যাওয়াজির ‘আন ইকতিরাফিল কাবাইর।

আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা
(আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা)। এর দ্বারা বোঝানে উদ্দেশ্য সর্বপ্রকার কুফরী কর্ম। যেমন আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব অস্বীকার করা, দেব-দেবীর পূজা করা, আল্লাহর দেওয়া দীন প্রত্যাখ্যান করা, নবী-রাসূলকে অমান্য করা, কুরআন মাজীদকে আল্লাহ তাআলার কালাম বলে স্বীকার না করা ইত্যাদি।

যে ব্যক্তি শিরকে লিপ্ত হয় এবং মুশরিক অবস্থায় মারা যায়, তার পরিণাম স্থায়ী জাহান্নামবাস। তাকে কখনও ক্ষমা করা হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এ বিষয়কে ক্ষমা করেন না যে, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করা হবে। এর চেয়ে নিচের যে-কোনও বিষয়ে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে, সে এক গুরুতর পাপে লিপ্ত হলো।

আরও ইরশাদ হয়েছে إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ 'নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরীক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম।

পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা
পিতা-মাতার আনুগত্য করাকে যেমন بر বলে, তেমনি তাদের অবাধ্যতা করাকে عقوق বলে। এ শব্দটির উৎপত্তি عق থেকে। এর অর্থ ছিন্ন করা, বিরোধিতা করা। সন্তানের যেসকল আচার-আচরণ দ্বারা পিতা-মাতার অমর্যাদা হয় এবং তারা কষ্ট পায়, পরিভাষায় তাকে عقوق বলা হয়ে থাকে। এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের কবীরা গুনাহ। পিতা মাতার প্রতি এরূপ আচরণকারী সন্তানকে عاق বলা হয়। যে-কোনও সন্তানের পক্ষে এটি অত্যন্ত মন্দ বিশেষণ। কোনও সন্তানের প্রতি যাতে এ বিশেষণ আরোপিত না হয়, তাই তার কর্তব্য সর্বাবস্থায় পিতা-মাতাকে খুশি রাখার চেষ্টা করা এবং শরীআতবিরোধী নয় এমন যাবতীয় বিষয়ে পিতা-মাতার অনুগত থাকা।

عقوق الوالدين(পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা)। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী করার পরই পিতা-মাতার আনুগত্য করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের পর সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফরয হলো পিতা-মাতার আনুগত্য করা। তা দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই এটাও বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী না করা তথা কুফরীকর্ম করা সবচে' ভয়ংকর পাপ এবং তার পরপরই গুরুতর পাপ হলো পিতা-মাতার অবাধ্যতা। অপর এক হাদীছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন ثلاثة لا ينظر الله عز وجل إليهم يوم القيامة: العاق لوالديه، والمرأة المترجلة والديوث، وثلاثة لا يدخلون الجنة : العاق لوالديه، والمدمن على الخمر، والمنان بما أعطى 'তিন ব্যক্তি এমন, যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন (রহমতের) দৃষ্টি দেবেন না- পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষের বেশধারী নারী ও স্ত্রীকে বেপর্দায় ছেড়ে দেওয়া পুরুষ। এবং তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না- পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী ও দান করার পর তা নিয়ে খোটা দানকারী।

মিথ্যা বলা
বস্তুত মিথ্যা বলা একটি সামাজিক অপরাধ। এটা সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে। হাদীসে আছে এর প্রতি বাড়তি গুরুত্বারোপের জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি বলার সময় নিজ ভাবভঙ্গির পরিবর্তন করেছিলেন। এর আগে তিনি হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু এ কথাটি বলার সময় তিনি সোজা হয়ে বসেন, যাতে শ্রোতার উপর স্বতন্ত্র প্রভাব পড়ে এবং তারা মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার মন্দত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। এমনকি তিনি এ উপলব্ধিকে তাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেওয়ার জন্য কথাটির বার বার পুনরাবৃত্তিও করতে থাকেন। বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন فما زال يكررها ، حتى قلنا : ليته سكت (তিনি এ কথা বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আহা! তিনি যদি ক্ষান্ত হতেন!)। তাঁরা তাঁর ক্ষান্ত হয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন তাঁর প্রতি মমত্ববশত। তাঁরা লক্ষ করছিলেন কথাটির একাধারে পুনরাবৃত্তি করে যাওয়ায় তাঁর যথেষ্ট মানসিক ও দৈহিক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে কোনও কথার বার বার পুনরাবৃত্তি ক্লান্তিকর বটে। এটা মুখ ও জবানের পক্ষে যথেষ্ট কষ্টদায়ক হয়ে থাকে। সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কষ্ট অসহনীয় বোধ হচ্ছিল। সন্দেহ নেই এটি তাঁদের গভীর নবীপ্রেমের পরিচায়ক। এর দ্বারা তাঁর প্রতি তাঁদের আদব রক্ষার প্রযত্নও উপলব্ধি করা যায়।

আরও কয়েকটি মহাপাপ
প্রকাশ থাকে যে, কবীরা গুনাহ কেবল এগুলোই নয়; আরও আছে। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে اجتنبوا السبع الموبقات، قالوا: يا رسول الله وما هنّ؟ قال: الشرك بالله، والسحر وقتل النفس التي حرم الله إلا بالحق، وأكل الربا، وأكل مال اليتيم، والتولي يوم الزحف، وقذف المحصنات المؤمنات الغافلات “তোমরা ধ্বংসাত্মক সাতটি কর্ম হতে বাঁচ। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা; জাদু করা; আল্লাহ যাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন তাকে হত্যা করা, অবশ্য ন্যায়সঙ্গতভাবে হলে (অর্থাৎ শরীআতের বিধান মোতাবেক হলে) ভিন্ন কথা; সুদ খাওয়া; ইয়াতীমের সম্পদ গ্রাস করা; যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা এবং সরলা চরিত্রবর্তী মুমিন নারীর প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ দেওয়া।
অপর এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন إن من أكبر الكبائر استطالة المرء في عرض رجل مسلم بغير حق، ومن الكبائر السبتان بالسبة 'সবচে বড় কবীরা গুনাহ হলো অন্যায়ভাবে মুসলিম ভাইয়ের সম্মানের উপর আঘাত করা। এক গালির বদলে দুই গালি দেওয়াও মহাপাপ।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'ঊদ রাযি. বর্ণিত একটি হাদীছে আছে قلت: فأي الكبائر أكبر؟ قال: «أن تجعل لله ندا وهو خلقك»، قلت: ثم أي؟ قال: «أن تقتل ولدك من أجل أن يأكل معك»، قلت: ثم أي؟ قال: «ثم أن تزاني بحليلة جارك»، ثم تلا رسول اللہ ﷺ وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا » 'আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন্ কবীরা গুনাহ অধিকতর বড়? তিনি বললেন, যে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অন্য কাউকে তাঁর সমকক্ষ বানানো। জিজ্ঞেস করলাম, তারপর? তিনি বললেন, নিজ সন্তানকে এ কারণে হত্যা করা যে, সে তোমার সঙ্গে খাওয়ায় শরীক হবে। জিজ্ঞেস করলাম, তারপর? তিনি বললেন, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা। এই বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করলেন— وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনও মাবুদের ইবাদত করে না এবং আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে বধ করে না এবং তারা ব্যভিচার করে না। যে ব্যক্তিই এরূপ করবে তাকে তার গুনাহের (শাস্তির) সম্মুখীন হতে হবে' –সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৮

বিভিন্ন হাদীছে আরও কিছু গুনাহকে কবীরা গুনাহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে কবীরা গুনাহ অনেকগুলোই আছে। তা সত্ত্বেও এ হাদীছে কেবল এগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে। এটা ইসলামী শিক্ষার একটি পদ্ধতি যে, কোনও বিষয়েরই সবগুলো কথা একসঙ্গে বলা হয় না, যাতে শ্রোতার কাছে চাপবোধ না হয়। বরং ব্যক্তি ও স্থান অনুযায়ী যখন যা প্রয়োজন বোধ হত, তখন সে সম্পর্কে শিক্ষাদান করতেন।

উল্লেখ্য, বড় গুনাহগুলো পৃথকভাবে উল্লেখ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য এছাড়া আর কিছুই নয় যে, আমরা যেন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে এগুলো থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছে বড় যে গুনাহগুলো উল্লেখ করা হলো, আমাদেরকে অবশ্যই তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

খ. শিরক ও কুফরের পর পিতা-মাতার অবাধ্যতা সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহগুলোর একটি।

গ. মিথ্যা কথা বলা অত্যন্ত ভয়ানক পাপ। এর থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন