আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৪৮. নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল

হাদীস নং: ৩৮৫৬
আন্তর্জাতিক নং: ৩৮৫৬
পরিচ্ছেদ : সাহল ইবন সা'দ (রাযিঃ)-এর ফযীলত
৩৮৫৬। মুহাম্মাদ ইব্‌ন আব্দুল্লাহ ইবন বুযায়গ (রাহঃ)... সাহল ইবন সা'দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি খন্দক খুঁড়ছিলেন। আমরা মাটি বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। একবার আমাদের পার্শ্ব দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন । তিনি তখন বলছিলেন : হে আল্লাহ্! আখিরাতের জীবনই তো জীবন, তুমি (গুনাহ্ মাফ করে দাও আনসার ও মুহাজিরদের।

হাদীসটি হাসান-সাহীহ। এ সূত্রে গারীব। আবু হাযিম (রাহঃ)-এর নাম হল সালামা ইবন দীনার আরাজ যাহিদ।

এ বিষয়ে আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
بَابُ مَنَاقِبِ سهل بن سعد رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بَزِيعٍ قال: حَدَّثَنَا الفُضَيْلُ بْنُ سُلَيْمَانَ قال: حَدَّثَنَا أَبُو حَازِمٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَحْفِرُ الخَنْدَقَ وَنَحْنُ نَنْقُلُ التُّرَابَ وَيَمُرُّ بِنَا فَقَالَ: «اللَّهُمَّ لَا عَيْشَ إِلَّا عَيْشَ الْآخِرَهْ، فَاغْفِرْ لِلْأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ» هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الوَجْهِ " وَأَبُو حَازِمٍ اسْمُهُ: سَلَمَةُ بْنُ دِينَارٍ الأَعْرَجُ الزَّاهِدُ قال: وفى الباب عن أنس بن مالك

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিকবার বলেছেন। সর্বপ্রথম বলেছেন হিজরী ৪র্থ সনে আহযাবের যুদ্ধকালে পরিখা খননের সময়। সাহাবীগণের সঙ্গে তিনি নিজেও বিপুল উদ্যমে খননকার্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি যখন তাদের ক্লান্তশ্রান্ত অবস্থা দেখতে পান, তখন তিনি উচ্চ আওয়াজে বলে ওঠেন
اللهم لا عيش إلا عيش الآخرة (হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন)।
এর দ্বারা তিনি সাহাবীদের অন্তরে এভাবে প্রাণশক্তি যোগাচ্ছিলেন যে, দেখ দুনিয়ার এ কষ্ট স্থায়ী কিছু নয়। দুনিয়া যেমন ক্ষণস্থায়ী, তেমনি এর কষ্ট-ক্লেশও ক্ষণস্থায়ী। তোমরা এ কষ্ট করছ আল্লাহর জন্য। একদিন এ কষ্ট থাকবে না। কিন্তু এর পুরস্কারস্বরূপ অনন্ত অসীম আখিরাতে তোমরা অফুরন্ত সুখ-শান্তি ভোগ করতে পারবে।

পরিখা খননের কষ্টকালে যেমন তিনি এ বাক্যটি উচ্চারণ করেছিলেন, তেমনি পরম আনন্দের এক পরিবেশেও তিনি এ কথাটি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। তা বিদায় হজ্জের সময় আরাফার দিন। আরাফাতের বিশাল বিস্তৃত ময়দানে লক্ষাধিক ভক্ত-অনুরক্ত সাহাবীর সমাবেশে তাঁর সমুচ্চ উচ্চারণ ছিল- لبيك ان العيش عيش الآخرة (আমরা হাজির, হে আল্লাহ আমরা হাজির। নিশ্চয়ই আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন)। যেমন আল্লাহ বলছেন
وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ
'বস্তুত আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যটির মাধ্যমে যেন উম্মতকে সতর্ক করছেন, দুনিয়ার কোনও সফলতা, সমৃদ্ধি কিংবা অন্য কোনও আনন্দদায়ক বস্তু অর্জিত হয়ে যাওয়ায় তোমরা খুশিতে মেতে যেয়ো না। কারণ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সবই ক্ষণস্থায়ী। স্থায়ী সুখ ও আনন্দ কেবল আখিরাতেই আছে। তাই আসল লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত আখিরাতের সফলতা। সর্বাবস্থায় সে চিন্তা-চেতনা অন্তরে জাগ্রত রেখো।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

দুনিয়ার সুখ-দুঃখ, আরাম-কষ্ট কোনও অবস্থায়ই আখিরাতের কথা ভুলে যেতে নেই। সর্বাবস্থায় মন-মস্তিষ্কে এ চেতনা জাগ্রত রাখা চাই যে, আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। তাই সে জীবনে মুক্তিলাভ করাই হবে জীবনের আসল লক্ষ্যবস্তু।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ৩৮৫৬ | মুসলিম বাংলা