আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৪৭. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত যাবতীয় দোয়া-জিকির
হাদীস নং: ৩৪৫৫
আন্তর্জাতিক নং: ৩৪৫৫
যখন খানা খাবে তখন কী পড়বে
৩৪৫৫. আহমাদ মানী (রাহঃ) ..... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে আমি ও খালিদ ইবনে ওয়ালীদ (রাযিঃ) মায়মুনা (রাযিঃ) এর ঘরে গেলাম। তিনি আমার কাছে একটি দুধ ভর্তি পাত্র নিয়ে এলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুধ পান করলেন। আমি ছিলাম তার ডান পার্শ্বে আর খালিদ ছিলেন তার বাম পার্শ্বে। নবী (ﷺ) আমাকে বললেনঃ এখন তা পান করার অধিকার তো তোমার, তবে ইচ্ছা করলে তুমি খালিদকে প্রধান্য দিতে পার। আমি বললামঃ আপনার পানের অবশিষ্টের ব্যপারে আমি কাউকে অগ্রাধিকার দিতে প্রস্তুত নই। এরপর রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ কাউকে আল্লাহ তাআলা কোন খাদ্য আহার করালে সে যেন বলেঃ
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ
হে আল্লাহ! তুমি বরকত দাও এতে আর এর চেয়েও ভাল কিছু আমাদের আহার করাও।
আর যাকে আল্লাহ তাআলা দুধ পান করান সে যেন বলেঃ
(اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ)
হে আল্লাহ! আমাদের এতে বরকত দাও এবং তা আরো বেশী করে দাও আমাদের।
তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ খাদ্য ও পানীয় উভয়টির স্থলে যথেষ্ট হতে পারে দুধ ছাড়া এমন কিছু আর নেই।
ইবনে মাজাহ
এ হাদীসটি হাসান। কোন কোন রাবী এ হাদীসটি আলী ইবনে যায়দ (রাহঃ) সূত্রে উমর ইবনে হারমালা (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আবার কেউ কেউ আমর ইবনে হারমালা বলেছেন কিন্তু তা ঠিক নয়।
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ
হে আল্লাহ! তুমি বরকত দাও এতে আর এর চেয়েও ভাল কিছু আমাদের আহার করাও।
আর যাকে আল্লাহ তাআলা দুধ পান করান সে যেন বলেঃ
(اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ)
হে আল্লাহ! আমাদের এতে বরকত দাও এবং তা আরো বেশী করে দাও আমাদের।
তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ খাদ্য ও পানীয় উভয়টির স্থলে যথেষ্ট হতে পারে দুধ ছাড়া এমন কিছু আর নেই।
ইবনে মাজাহ
এ হাদীসটি হাসান। কোন কোন রাবী এ হাদীসটি আলী ইবনে যায়দ (রাহঃ) সূত্রে উমর ইবনে হারমালা (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আবার কেউ কেউ আমর ইবনে হারমালা বলেছেন কিন্তু তা ঠিক নয়।
باب مَا يَقُولُ إِذَا أَكَلَ طَعَامًا
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عُمَرَ، وَهُوَ ابْنُ أَبِي حَرْمَلَةَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ دَخَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَا وَخَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ عَلَى مَيْمُونَةَ فَجَاءَتْنَا بِإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ فَشَرِبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا عَلَى يَمِينِهِ وَخَالِدٌ عَلَى شِمَالِهِ فَقَالَ لِي " الشَّرْبَةُ لَكَ فَإِنْ شِئْتَ آثَرْتَ بِهَا خَالِدًا " . فَقُلْتُ مَا كُنْتُ أُوثِرُ عَلَى سُؤْرِكَ أَحَدًا . ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ أَطْعَمَهُ اللَّهُ الطَّعَامَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ . وَمَنْ سَقَاهُ اللَّهُ لَبَنًا فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ " . وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَيْسَ شَيْءٌ يَجْزِي مَكَانَ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ غَيْرُ اللَّبَنِ " . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَقَدْ رَوَى بَعْضُهُمْ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ عَلِيِّ بْنِ زَيْدٍ فَقَالَ عَنْ عُمَرَ بْنِ حَرْمَلَةَ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ عَمْرُو بْنُ حَرْمَلَةَ وَلاَ يَصِحُّ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্র থেকে প্রথমে পানীয়ের কিছুটা নিয়ে পান করলেন। তারপর ডানদিকের বালকটিকে বললেন-
(এ পানীয় তোমার। তুমি চাইলে এতে খালিদকে অগ্রাধিকার দিতে পার)। নিয়ম হচ্ছে, খাদ্যদ্রব্য বা পানীয় বিতরণকালে শুরুটা মজলিসের সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তির মাধ্যমে করা হবে। তা তিনি মজলিসের যেখানেই অবস্থান করুন। তাকে পরিবেশনের পর এবার তারই ডানদিকে যে হবে তাকে অগ্রাধিকার দেবে। আর সে তার ডানের জনকে। এভাবে শেষ পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে বামদিকের লোকদের তুলনায় ডানদিকের লোকদের অধিকার বেশি, যদিও গুরুত্ব ও মর্যাদায় বামদিকের লোকদের তুলনায় ডানদিকের লোকেরা সাধারণ পর্যায়ের হয়। উক্ত ঘটনায় সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তি তো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি গ্রহণের পর তাঁর ডানে অবস্থান করা ব্যক্তির অধিকারই অগ্রগণ্য। তো তাঁর ডানদিকে ছিলেন একজন বালক। অন্যদিকে বামদিকে ছিলেন হযরত খালিদ রাযি.-এর মতো একজন বয়স্ক ও গণ্যমান্য ব্যক্তি। ইসলামগ্রহণের আগেও নিজ গোত্রে তাঁর বিশেষ মর্যাদা ছিল। ইসলাম সম্মানী লোককে সম্মান জানানোর শিক্ষা দেয়। আবার হযরত খালিদ রাযি. ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন দেরিতে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর একটু মনোরঞ্জনও করতে চেয়েছিলেন। সে কারণেই তিনি পাত্রের অবশিষ্ট পানি হযরত খালিদ রাযি.-কে দিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তা দিতে হলে ডানদিকের বালকের অনুমতি প্রয়োজন। তাই তিনি এ কথা বললেন। অর্থাৎ তুমি যেহেতু ডানদিকে, তাই এতে তোমারই অধিকার বেশি। তবে তুমি চাইলে খালিদের অনুকূলে এ অধিকার ত্যাগও করতে পার।
হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকেও এ জাতীয় এক ঘটনা বর্ণিত আছে। তাতে বলা হয়েছে-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِلَبَنٍ قَدْ شِيبَ بِمَاءٍ وَعَنْ يَمِينِهِ أَعْرَابِيٌّ وَعَنْ شِمَالِهِ أَبُو بَكْرٍ فَشَرِبَ ثُمَّ أَعْطَى الْأَعْرَابِيَّ وَقَالَ الْأَيْمَنَ فَالْأَيْمَنَ
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু দুধ আনা হল। তাতে পানি মেশানো ছিল। তাঁর ডানদিকে ছিল এক বেদুঈন। বামদিকে হযরত আবু বকর সিদ্দীক। তিনি প্রথমে সে দুধ নিজে পান করলেন। তারপর বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেন, ডানদিকের জনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, তারপর যে ব্যক্তি তার ডানে।(সহীহ বুখারী: ৫২১৯; সহীহ মুসলিম: ২০২৯; জামে তিরমিযী: ১৮৯৩)
এ ঘটনায়ও দেখা যাচ্ছে মজলিসের সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তি তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে গ্রহণ করার পর তাঁর ডানের জনকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। যদিও সে একজন বেদুঈনই। সুতরাং প্রথমে সর্বাপেক্ষা সম্মানীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তারপর তার ডানকে। যদিও তার ডানে বামের জনের চেয়ে মর্যাদায় অগ্রগামী ব্যক্তি বিদ্যমান থাকে।
যাহোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার উত্তরে সেই বালক সাহাবী বললেন-
(না, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আপনার কাছ থেকে পাওয়া আমার অংশে আমি কাউকে অগ্রাধিকার দেব না)। অর্থাৎ আপনি আল্লাহ তা'আলার মহান রাসূল। আপনার কাছ থেকে যা পাওয়া যায়, তাতে বরকতই বরকত। আমি ডানদিকে থাকায় যখন এ বরকতপূর্ণ পানীয়ে আমার অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন এ পানীয়তে আমি অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না। তা এ কারণে নয় যে, এটা খুব মজাদার পানীয়। বরং এ কারণে যে, এর থেকে আপনি পান করায় এটা বরকতপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই এতে ছাড় দেওয়া তো বরকতে ছাড় দেওয়ার নামান্তর। তা আমি করতে পারব না।
তিনি বলেছেন, কাউকে অগ্রাধিকার দেব না। অর্থাৎ তিনি যেই হোন। আপন হোক বা পর, কাছের হোক বা দূরের, বয়স্ক হোক বা অল্পবয়স্ক, সম্মানী ব্যক্তি হোন বা সাধারণ ব্যক্তি।
যাহোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে বালকের আবেগ-অনুভূতি ও তাঁর অধিকারের মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অবশিষ্ট খাবার, পানীয় বা অন্য যে-কোনও বস্তু বিতরণকালে সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তারপর তার ডানদিক থেকে বিতরণ করা। এটিই সঠিক আদব।
খ. এ ক্ষেত্রে বামদিকের কাউকে দিতে চাইলে ডানদিকে যারা থাকে তাদের অনুমতি নিতে হবে।
গ. অনেক পরিবেশনকারী মনে করে, তার ডানে যেই হবে তার থেকেই আরম্ভ করা হবে। এটা ভুল কর্মপন্থা। সঠিক পদ্ধতি হলো মজলিসে সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তি যিনি হবেন, প্রথমে তার নিকট যাওয়া এবং তার থেকেই বিতরণ আরম্ভ করা। তারপর তারই ডানদিক থেকে। বিতরণকারীর ডানদিক থেকে নয়।
ঘ. বিতরণের বস্তুটি বরকতপূর্ণ হলে তাতে নিজ অধিকার ত্যাগ না করা দূষণীয় নয়।
ঙ. আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির স্পর্শ দ্বারা বরকত ও কল্যাণ লাভ হয়।
চ. বরকতপূর্ণ বস্তুতে স্বার্থত্যাগের জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তির অনুরোধ রক্ষা না করাটা বেয়াদবি নয়।
ছ. বরকতপূর্ণ বিষয়ে নিজ অধিকার লাভে আগ্রহ প্রকাশ দীনী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশংসনীয়।
জ. নিজের অধীন কারও উপর এমন কোনও ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়, যা দ্বারা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।
(এ পানীয় তোমার। তুমি চাইলে এতে খালিদকে অগ্রাধিকার দিতে পার)। নিয়ম হচ্ছে, খাদ্যদ্রব্য বা পানীয় বিতরণকালে শুরুটা মজলিসের সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তির মাধ্যমে করা হবে। তা তিনি মজলিসের যেখানেই অবস্থান করুন। তাকে পরিবেশনের পর এবার তারই ডানদিকে যে হবে তাকে অগ্রাধিকার দেবে। আর সে তার ডানের জনকে। এভাবে শেষ পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে বামদিকের লোকদের তুলনায় ডানদিকের লোকদের অধিকার বেশি, যদিও গুরুত্ব ও মর্যাদায় বামদিকের লোকদের তুলনায় ডানদিকের লোকেরা সাধারণ পর্যায়ের হয়। উক্ত ঘটনায় সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তি তো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি গ্রহণের পর তাঁর ডানে অবস্থান করা ব্যক্তির অধিকারই অগ্রগণ্য। তো তাঁর ডানদিকে ছিলেন একজন বালক। অন্যদিকে বামদিকে ছিলেন হযরত খালিদ রাযি.-এর মতো একজন বয়স্ক ও গণ্যমান্য ব্যক্তি। ইসলামগ্রহণের আগেও নিজ গোত্রে তাঁর বিশেষ মর্যাদা ছিল। ইসলাম সম্মানী লোককে সম্মান জানানোর শিক্ষা দেয়। আবার হযরত খালিদ রাযি. ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন দেরিতে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর একটু মনোরঞ্জনও করতে চেয়েছিলেন। সে কারণেই তিনি পাত্রের অবশিষ্ট পানি হযরত খালিদ রাযি.-কে দিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তা দিতে হলে ডানদিকের বালকের অনুমতি প্রয়োজন। তাই তিনি এ কথা বললেন। অর্থাৎ তুমি যেহেতু ডানদিকে, তাই এতে তোমারই অধিকার বেশি। তবে তুমি চাইলে খালিদের অনুকূলে এ অধিকার ত্যাগও করতে পার।
হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকেও এ জাতীয় এক ঘটনা বর্ণিত আছে। তাতে বলা হয়েছে-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِلَبَنٍ قَدْ شِيبَ بِمَاءٍ وَعَنْ يَمِينِهِ أَعْرَابِيٌّ وَعَنْ شِمَالِهِ أَبُو بَكْرٍ فَشَرِبَ ثُمَّ أَعْطَى الْأَعْرَابِيَّ وَقَالَ الْأَيْمَنَ فَالْأَيْمَنَ
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু দুধ আনা হল। তাতে পানি মেশানো ছিল। তাঁর ডানদিকে ছিল এক বেদুঈন। বামদিকে হযরত আবু বকর সিদ্দীক। তিনি প্রথমে সে দুধ নিজে পান করলেন। তারপর বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেন, ডানদিকের জনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, তারপর যে ব্যক্তি তার ডানে।(সহীহ বুখারী: ৫২১৯; সহীহ মুসলিম: ২০২৯; জামে তিরমিযী: ১৮৯৩)
এ ঘটনায়ও দেখা যাচ্ছে মজলিসের সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তি তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে গ্রহণ করার পর তাঁর ডানের জনকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। যদিও সে একজন বেদুঈনই। সুতরাং প্রথমে সর্বাপেক্ষা সম্মানীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তারপর তার ডানকে। যদিও তার ডানে বামের জনের চেয়ে মর্যাদায় অগ্রগামী ব্যক্তি বিদ্যমান থাকে।
যাহোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার উত্তরে সেই বালক সাহাবী বললেন-
(না, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আপনার কাছ থেকে পাওয়া আমার অংশে আমি কাউকে অগ্রাধিকার দেব না)। অর্থাৎ আপনি আল্লাহ তা'আলার মহান রাসূল। আপনার কাছ থেকে যা পাওয়া যায়, তাতে বরকতই বরকত। আমি ডানদিকে থাকায় যখন এ বরকতপূর্ণ পানীয়ে আমার অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন এ পানীয়তে আমি অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না। তা এ কারণে নয় যে, এটা খুব মজাদার পানীয়। বরং এ কারণে যে, এর থেকে আপনি পান করায় এটা বরকতপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই এতে ছাড় দেওয়া তো বরকতে ছাড় দেওয়ার নামান্তর। তা আমি করতে পারব না।
তিনি বলেছেন, কাউকে অগ্রাধিকার দেব না। অর্থাৎ তিনি যেই হোন। আপন হোক বা পর, কাছের হোক বা দূরের, বয়স্ক হোক বা অল্পবয়স্ক, সম্মানী ব্যক্তি হোন বা সাধারণ ব্যক্তি।
যাহোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে বালকের আবেগ-অনুভূতি ও তাঁর অধিকারের মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অবশিষ্ট খাবার, পানীয় বা অন্য যে-কোনও বস্তু বিতরণকালে সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তারপর তার ডানদিক থেকে বিতরণ করা। এটিই সঠিক আদব।
খ. এ ক্ষেত্রে বামদিকের কাউকে দিতে চাইলে ডানদিকে যারা থাকে তাদের অনুমতি নিতে হবে।
গ. অনেক পরিবেশনকারী মনে করে, তার ডানে যেই হবে তার থেকেই আরম্ভ করা হবে। এটা ভুল কর্মপন্থা। সঠিক পদ্ধতি হলো মজলিসে সর্বাপেক্ষা সম্মানী ব্যক্তি যিনি হবেন, প্রথমে তার নিকট যাওয়া এবং তার থেকেই বিতরণ আরম্ভ করা। তারপর তারই ডানদিক থেকে। বিতরণকারীর ডানদিক থেকে নয়।
ঘ. বিতরণের বস্তুটি বরকতপূর্ণ হলে তাতে নিজ অধিকার ত্যাগ না করা দূষণীয় নয়।
ঙ. আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির স্পর্শ দ্বারা বরকত ও কল্যাণ লাভ হয়।
চ. বরকতপূর্ণ বস্তুতে স্বার্থত্যাগের জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তির অনুরোধ রক্ষা না করাটা বেয়াদবি নয়।
ছ. বরকতপূর্ণ বিষয়ে নিজ অধিকার লাভে আগ্রহ প্রকাশ দীনী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশংসনীয়।
জ. নিজের অধীন কারও উপর এমন কোনও ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়, যা দ্বারা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
