আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৪৭. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত যাবতীয় দোয়া-জিকির

হাদীস নং: ৩৪৫২
আন্তর্জাতিক নং: ৩৪৫২
রাগান্বিত হলে কী পড়বে
৩৪৫২. মাহমুদ ইবনে গায়লান (রাহঃ) ..... মুআয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ) এর সম্মুখে দুই ব্যক্তি পরস্পর গালিগালাজ করছিল। এমনকি একজনের চেহারায় ত্রেুাধের আভাস ফুঠে উঠে। তখন নবী (ﷺ) বললেনঃ আমি এমন একটা কালিমা জানি যদি সে পাঠ করে তবে তার ত্রেুাধ প্রশমিত হয়ে যাবে। তা হলঃ (أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ)

বুখারি, মুসলিম

এই বিষয়ে সুলাইমান ইবনে সূরাদ (রাযিঃ) থেকেও হাদীসটি বর্ণিত আছে। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ......... সুফায়ান (রাহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। হাদীসটি মুরসাল।

আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রাহঃ) সারাসরি মুআয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) থেকে কোন হাদীস শুনেন নি। মু’আয (রাযিঃ) মারা যান উমর (রাযিঃ) এর খিলাফতকালে (১৮হিঃ)। আর উমর (রাযিঃ) যখন শহিদ হন তখন আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়লা ছয় বছর বয়সের শিশু মাত্র।

শু’বাও এটি হাকাম সূত্রে আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রাহঃ) থেকে কোন হাদীস শুনেন নি। আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রাহঃ) উমর (রাযিঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি তাকে দেখেছেনও। আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রাহঃ) এর কুনিয়াত আবু ঈসা। আর আবু লায়লা (রাহঃ) এর নাম হল ইয়াসার। আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ আমি নবী (ﷺ) এর একশত বিশজন আনসারী সাহাবীকে পেয়েছি।
باب مَا يَقُولُ عِنْدَ الْغَضَبِ
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، رضى الله عنه قَالَ اسْتَبَّ رَجُلاَنِ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى عُرِفَ الْغَضَبُ فِي وَجْهِ أَحَدِهِمَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنِّي لأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ غَضَبُهُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ " .
حَدَّثَنَا بُنْدَارٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، عَنْ سُفْيَانَ، بِهَذَا الإِسْنَادِ نَحْوَهُ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدٍ قَالَ وَهَذَا حَدِيثٌ مُرْسَلٌ . عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي لَيْلَى لَمْ يَسْمَعْ مِنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ مَاتَ مُعَاذٌ فِي خِلاَفَةِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَقُتِلَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي لَيْلَى غُلاَمٌ ابْنُ سِتِّ سِنِينَ وَهَكَذَا رَوَى شُعْبَةُ عَنِ الْحَكَمِ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى وَقَدْ رَوَى عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي لَيْلَى عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَرَآهُ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي لَيْلَى يُكْنَى أَبَا عِيسَى وَأَبُو لَيْلَى اسْمُهُ يَسَارٌ وَرُوِيَ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى قَالَ أَدْرَكْتُ عِشْرِينَ وَمِائَةً مِنَ الأَنْصَارِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে দুই ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা পরস্পর গালাগালি করছিল, তাদের নাম সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। প্রশ্ন হতে পারে, সাহাবী হয়েও তাঁরা এরকম অসমীচীন কাজ কেন করছিলেন? উত্তর হল, হতে পারে তাঁরা নওমুসলিম ছিলেন ও ইসলামী আদব-কায়দা তাঁরা পুরোপুরি শিখে উঠেননি। হঠাৎ করেই জীবনে আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে, এমনটা সকলের ক্ষেত্রে আশা করা যায় না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যের বদৌলতে রাতারাতি পরিবর্তন অধিকাংশের জীবনেই ঘটেছিল। তবে স্বভাবগত কাঠিন্যের কারণে কারও কারও পরিবর্তনে কিছুটা সময়ও লেগেছিল, বিশেষত যারা বেদুঈন সাহাবী ছিলেন। কিছুটা সময় লাগলেও একপর্যায়ে তাদের জীবনে যে পরিবর্তন আসে, সে কারণে নিঃসন্দেহে তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে আছেন। তাঁদের আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল প্রথমদিকে কারও কারও দ্বারা ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে গেলেও সতর্ক করার পর তাওবা করতে ও নিজেদের সংশোধনে মনোযোগী হতে বিলম্ব করতেন না।

যাহোক যে দু'জনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল, তাদের একজনের ক্রোধের মাত্রা ছিল খুব বেশি। রাগে চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং গলার রগ ফুলে উঠেছিল। অতিরিক্ত রাগের ক্ষেত্রে অনেকেরই এমন হতে দেখা যায়। এরূপ রাগে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তখন এমন এমন কাণ্ড করে বসে, যা দ্বারা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। সেরকম ক্ষতিকর কাজ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আগেই রাগ সংবরণ করে ফেলা চাই। এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সংবরণের উপায় শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছে-

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

এর অর্থ 'আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি।
আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, অন্তরে ক্রোধ সঞ্চারে শয়তানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। ক্রুদ্ধ অবস্থায় হিতাহিত জ্ঞান লোপ পাওয়ার কারণে শয়তান তাকে দিয়ে তার কাঙ্ক্ষিত সব কাজ করিয়ে নিতে পারে। তাই শয়তান ক্রোধ সঞ্চারে উস্কানি দেয় এবং তা যাতে বাড়তে থাকে সেই চেষ্টা চালায়। ‘আউযুবিল্লাহ’ পাঠ বা আল্লাহর আশ্রয়গ্রহণ এমনই এক অস্ত্র, যা ধারণ করলে শয়তান পালাতে বাধ্য হয় এবং তার প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।

অপর এক হাদীছে রাগ নিবারণের জন্য ওযু করতে বলা হয়েছে। তার তাৎপর্য এই যে, শয়তান আগুনের সৃষ্টি। তার কারসাজিতেই ব্যক্তির অন্তরে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে। ওযূ করলে সে আগুনে পানি ঢালা হয়। ফলে রাগ নিভে যায়। তাছাড়া ওযূ করার দ্বারা ক্রোধের বিষয় থেকে ব্যক্তির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, যেহেতু ওযূ করতে কিছুটা সময় খরচ হয় এবং আলাদা আলাদাভাবে একেকটি অঙ্গ ধোওয়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। ততক্ষণে রাগ প্রশমিত হয়ে যায়। এছাড়াও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাগের সময় দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়। বসা থাকলে শুয়ে পড়। তাতেও রাগ না দূর হলে ওযূ করে দু' রাক'আত নামায পড়। এসব ব্যবস্থা অবলম্বনের পর নিতান্ত হতভাগা ছাড়া আর কারও রাগ বাকি থাকতে পারে না।

রাগ দমনের জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতকিছু শিক্ষা এজন্যই দিয়েছেন যে, পূর্বে যেমনটা বলা হয়েছে ক্রুদ্ধ ব্যক্তি কাণ্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে যে-কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে ফেলতে পারে, যার প্রতিকার সারা জীবনেও সম্ভব হয় না। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে হাদীছের শিক্ষা অনুযায়ী আমল করে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের তাওফীক দান করুন- আমীন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছেও রাগে ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

খ. রাগে যেহেতু শয়তানের ভূমিকা থাকে, তাই রাগ উঠলে ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়া উচিত।

গ. ওযূ করাও রাগ নিবারণের পক্ষে সহায়ক।

ঘ. এ হাদীছ দ্বারা ইসলামী শিক্ষার পূর্ণাঙ্গতা উপলব্ধি করা যায়। রাগ প্রশমিত করার জন্যও ইসলাম কী কার্যকরী শিক্ষা দান করেছে!
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান