আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৪৬. কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৩৬২
আন্তর্জাতিক নং: ৩৩৬২
সূরা আন-নসর
৩৩৬২. আব্দ ইবনে হুমায়দ (রাহঃ) ..... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ উমর (রাযিঃ) সাহাবীদের সঙ্গে আমাকেও জিজ্ঞাসা করতেন। একদিন আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাযিঃ) তাকে বললেনঃ আপন একেও জিজ্ঞাসা করেন অথচ এর মত আমাদেরই সন্তান রয়েছে।
উমর (রাযিঃ) তখন তাকে বললেনঃ সে কে আপনি তা ভাল করে জানেন। তারপর তিনি তাকে (إذا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ) আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন।
শেষে আমি বললাম এতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ওফাতের ঈঙ্গিত রয়েছে। যা তাকে জানানো হয়েছে। এরপর তিনি সূরাটি শেষে পর্যন্ত তেলওয়াত করলেন। উমর (রাযিঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তুমি যা জান এ বিষয়ে আমি এর চেয়ে বেশী কিছু জানি না।
উমর (রাযিঃ) তখন তাকে বললেনঃ সে কে আপনি তা ভাল করে জানেন। তারপর তিনি তাকে (إذا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ) আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন।
শেষে আমি বললাম এতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ওফাতের ঈঙ্গিত রয়েছে। যা তাকে জানানো হয়েছে। এরপর তিনি সূরাটি শেষে পর্যন্ত তেলওয়াত করলেন। উমর (রাযিঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তুমি যা জান এ বিষয়ে আমি এর চেয়ে বেশী কিছু জানি না।
بَاب وَمِنْ سُورَةِ الْفَتْحِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رضى الله عنهما قَالَ كَانَ عُمَرُ يَسْأَلُنِي مَعَ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ أَتَسْأَلُهُ وَلَنَا بَنُونَ مِثْلُهُ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ إِنَّهُ مِنْ حَيْثُ تَعْلَمُ فَسَأَلَهُ عَنْ هَذِهِ الآيَةِ : ( إذا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ ) فَقُلْتُ إِنَّمَا هُوَ أَجَلُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَعْلَمَهُ إِيَّاهُ وَقَرَأَ السُّورَةَ إِلَى آخِرِهَا فَقَالَ لَهُ عُمَرُ وَاللَّهِ مَا أَعْلَمُ مِنْهَا إِلاَّ مَا تَعْلَمُ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، بِهَذَا الإِسْنَادِ نَحْوَهُ إِلاَّ أَنَّهُ قَالَ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ أَتَسْأَلُهُ وَلَنَا ابْنٌ مِثْلُهُ . هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، بِهَذَا الإِسْنَادِ نَحْوَهُ إِلاَّ أَنَّهُ قَالَ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ أَتَسْأَلُهُ وَلَنَا ابْنٌ مِثْلُهُ . هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত উমর রাযি.-এর নিয়ম ছিল কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে বিশিষ্ট সাহাবীদের সঙ্গে মাশওয়ারা করতেন। যে সকল সাহাবী বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, অন্য সাহাবীদের উপর তাদের বিশেষ মর্যাদা ছিল। তাই তাঁর পরামর্শ সভায় সাধারণত তারাই থাকতেন। অনেক সময় তিনি তাদের বাইরে এমন কাউকেও রাখতেন, যিনি জ্ঞানগরিমায় তাদের সমপর্যায়ের হতেন। তিনি তাকওয়া-পরহেযগারী ও দীনের জ্ঞানবুঝকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এ ক্ষেত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. অনেকের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন, যদিও তিনি বয়সে ছিলেন তরুণ। তিনি তরুণ হওয়া সত্ত্বেও হযরত ‘উমর রাযি.-এর পরামর্শসভায় প্রবীণদের সাথে বসার সুযোগ পেতেন।
এ কারণে প্রবীণ সাহাবীদের কারও কারও অন্তরে প্রশ্ন দেখা দেয়। তাদেরও যোগ্য যোগ্য পুত্র আছে, যারা ইবন 'আব্বাস রাযি.-এর সমবয়সী। ইবন 'আব্বাস রাযি, যদি এই বিশেষ সম্মান পান, তারা কেন পাবে না? হয়তো এ কারণে তাদের মনে কিছুটা কষ্টও ছিল, যেমনটা হাদীছের ভাষা দ্বারা বোঝা যায়। এ কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক।
সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতা আল্লাহপ্রদত্ত বিষয়। প্রত্যেকেই কামনা করে তার সন্তান কল্যাণকর সব বিষয়ে অন্যদের ছাড়িয়ে যাক। অন্ততপক্ষে অন্যদের সমপর্যায়ে তো থাকুক। হযরত উমর রাযি.-এর শাসনকার্য কোনও দুনিয়াদারী বিষয় ছিল না। তা ছিল নবুওয়াতী তরীকার খেলাফত, যা উচ্চপর্যায়ের দীনদারী। কাজেই এ কাজে তাঁর কোনও সহযোগিতা করতে পারা অনেক বড় ছাওয়াবের ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। সে সৌভাগ্যে ইবন 'আব্বাস রাযি.-এর মত আমার পুত্রও অংশগ্রহণের সুযোগ পাক, এ কামনা যে- কোনও সাহাবীর অন্তরেই থাকা স্বাভাবিক। সে সুযোগ না পেলে যদি মনে কষ্ট আসে তা কিছু দোষের কথা নয়। বরং মনেপ্রাণে সম্পূর্ণরূপে আখিরাতমুখী সুমহান সাহাবায়ে কিরামের অবস্থান থেকে এরূপ কষ্টকে প্রশংসার দৃষ্টিতেই দেখতে হবে।
এতদ্সত্ত্বেও লক্ষণীয় ব্যাপার হল, তারা মনের কষ্ট মনেই চাপা দিয়ে রেখেছেন, পরস্পর রেষারেষিতে লিপ্ত হননি। খলিফার আনুগত্য এবং উম্মতের ঐক্যকেই তারা সবকিছুর উপরে রেখেছেন। তাই দেখা যাচ্ছে তাদের পুত্রদেরকে সুযোগদান না করার কারণে তারা প্রতিবাদী তো হনইনি, এমনকি যাদের সুযোগ্য পুত্র আছে, সেরকম কোনও সাহাবীর মুখ থেকে অনুযোগ প্রকাশ পায়নি।
‘আমাদেরও তো তার মত পুত্র আছে'- এ কথাটি যিনি বলেছিলেন তার নিজের এরকম পুত্র ছিল না। হাদীছের বর্ণনাসমূহ অনুসন্ধান করলে জানা যায় এ অনুযোগটি করেছিলেন ‘আশারায়ে মুবাশশারার অন্যতম বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ‘আব্দুর রহমান ইবন “আওফ রাযি.। হযরত ইবন 'আব্বাস রাযি.-এর সমবয়সী কোনও পুত্র তাঁর ছিল না। কাজেই অনুযোগটিও তাঁর নিজের জন্য ছিল না। সম্ভবত তিনি আঁচ করেছিলেন, যাদের এ বয়সী পুত্র আছে তাদের কোনও পুত্র ইবন 'আব্বাস রাযি.-এর মত সুযোগ না পাওয়ার কারণে তাদের মনে কষ্ট থেকে থাকবে। তাই তিনি তাদের পক্ষ হয়ে প্রশ্নটি তোলেন, যাতে হযরত উমর রাযি. কী কারণে হযরত ইবন 'আব্বাস রাযি.-কে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন তা পরিষ্কার হয়ে যায় আর এভাবে ওই সকল সাহাবীর মনের কষ্টও দূর হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! এটা হযরত আব্দুর রহমান ইবন 'আওফ রাযি.-এর কতই না বিচক্ষণতার পরিচায়ক এবং এর মাধ্যমে তিনি সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা, বিশেষত নেতৃপর্যায়ের লোকদের মধ্যকার সম্প্রীতি রক্ষার কী শিক্ষণীয় কর্মপন্থা আমাদের জন্য রেখে গেছেন!
এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, মুহাজিরগণ হযরত 'উমর ফারূক রাযি.-কে বলেছিলেন, আপনি যেমন 'আব্বাসের পুত্রকে ডাকেন তেমনি আমাদের পুত্রদেরকে ডাকতে পারেন না? এ বর্ণনায় বিশেষ কোনও সাহাবীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। সাধারণভাবে বলা হয়েছে- মুহাজিরগণ। হযরত 'উমর ফারূক রাযি.-এর মজলিসে যারা বসতেন তারা কেবল মুহাজির ছিলেন না, অনেক আনসারী সাহাবীও ছিলেন। তা সত্ত্বেও অনুযোগকারী হিসেবে আনসারদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। আবার মুহাজিরদের মধ্যেও সুনির্দিষ্টভাবে নাম পাওয়া যায় কেবল হযরত আব্দুর রহমান ইবন 'আওফ রাযি.-এর। এর দ্বারা অনুমান করা যায়, প্রকৃতপক্ষে অনুযোগকারী তিনি একাই ছিলেন আর তিনি নিজে যেহেতু মুহাজির ছিলেন, তাই তাঁর অনুযোগকেই মুহাজিরদের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। তিনি কেন অভিযোগ করেছিলেন সে ব্যাখ্যা উপরে দেওয়া হয়েছে।
হযরত উমর রাযি. বিশেষভাবে হযরত ইবন 'আব্বাস রাযি.-কে কেন ডাকেন, সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন- انه من حيث علمتم (এ যুবক কোথা থেকে গড়া তা তোমরা জান)। অর্থাৎ তিনি নবীগৃহের একজন। তাঁর খালা ছিলেন উম্মুল মু'মিনীন হযরত মায়মূনা বিনতুল হারিছ রাযি.। এই সুবাদে নবীগৃহে ছিল তাঁর অবাধ যাতায়াত। দিনে যাতায়াত তো ছিলই, সেখানে রাত্রিযাপনও করতেন। সে তো এমন এক গৃহ, যেখানে নবুওয়াতী ‘ইলমের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। সুস্থ-সঠিক চিন্তাভাবনার চর্চা হয় । নিজ চোখে জ্ঞান ও হিকমতের প্রবাহ দেখতে পান। পিতা হযরত আব্বাস রাযি. ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোক। জন্মগতভাবে পিতৃগুণ তাঁর মধ্যেও নিহিত ছিল। তার উপর তিনি অমিত সম্ভাবনা নিয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমত করারও সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত খেদমতে সন্তুষ্ট হয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জন্য দু'আও করেছিলেন- “হে আল্লাহ! আপনি একে দীনের গভীর জ্ঞানবিদ্যা দান করুন এবং আপনার কিতাবের ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ শিক্ষা দিন।” জন্মগত প্রতিভা তো ছিলই, সেইসঙ্গে যুক্ত হল এই খাস দু'আ। শুরু হল হযরত "আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি.-এর 'ইলম ও হিকমতের স্ফুরণ। একপর্যায়ে তিনি 'হিবরুল-উম্মাহ' বা উম্মতের মহাপণ্ডিতে পরিণত হলেন। বস্তুত 'ইলম ও হিকমত অর্জনের সাথে তাঁর বেড়ে উঠাটা সম্পন্ন হয়েছিল নবীগৃহেই। সেদিকেই ইঙ্গিত করে হযরত উমর ফারূক রাযি. বলেছিলেন- এ যুবক কোথা থেকে গড়া তা তোমরা জান।
হযরত উমর রাযি, তাঁর এ মন্তব্যের সত্যতা সকলের সামনে প্রমাণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিলেন। সুতরাং তিনি তাঁর মজলিসে উপস্থিত বিভাজনদেরকে সূরা নাসরের মর্মবস্তু জিজ্ঞেস করলেন। এ সূরায় যে বলা হয়েছে-
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَ الْفَتْحُ ...
(যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং মানুষকে দেখবে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে, তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাসবীহ পাঠ করবে এবং তাঁর কাছে ইস্তিগফার করবে। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবুলকারী।)
এর দ্বারা মূলত কোন্ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে? একেকজন একেক মত প্রকাশ করলেন, কিন্তু তিনি কারও ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। সবশেষে হযরত ইবন “আব্বাস রাযি.-কে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কী বল? তিনি বললেন, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
(যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন মনে করবে এটা তোমার মৃত্যুর আলামত।
হযরত ‘উমর রাযি. তাঁর এ ব্যাখ্যা পসন্দ করলেন এবং বললেন, এর দ্বারা আমিও তা-ই বুঝেছি, যা তুমি বলছ। উপস্থিত কোনও সাহাবী এর প্রতিবাদ করেননি। তার মানে তারাও এ ব্যাখ্যাকে সঠিক বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। এভাবে তাদের সামনে হযরত ইবন ‘আব্বাস রাযি.-এর 'ইলমী যোগ্যতা প্রমাণ হয়ে যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, মক্কা বিজয় হওয়া এবং মানুষের দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করাটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের আলামাত কিভাবে হল?
উত্তর এই যে, তাঁর দুনিয়ায় আগমনের উদ্দেশ্য ছিল দীনের পূর্ণতাবিধান ও তার পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা। মক্কাবিজয় ও মানুষের দলে দলে ইসলামগ্রহণ দ্বারা সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেছে। মক্কা মুকাররামা যেন দুনিয়ায় আল্লাহ তা'আলার পাঠানো দীনের রাজধানী। আরবের বিভিন্ন গোত্র এর দিকে তাকিয়ে ছিল। যখন এ পবিত্র ভূমি ইসলামের অধীনে এসে যায়, তখন তাদের প্রতীক্ষার দিন শেষ হয়ে গেল। এবার তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ শুরু করে দিল। একপর্যায়ে সম্পূর্ণ আরব উপদ্বীপ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিল। অতঃপর বিদায় হজ্জে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঘোষণা করে দেওয়া হল-
اليَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
অর্থ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নি'আমত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) পসন্দ করে নিলাম। সূরা মায়িদা, আয়াত ৩
তো যখন ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করল এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ ইসলামের ছায়ায় এসে গেল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইহজগতে থাকার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেল। যে উদ্দেশ্যে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেছে। এখন বিশ্বব্যাপী এ দ্বীনকে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর উম্মতের। তাঁর যখন ইহলোকে থাকার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে, তখন তাঁর কাজ কেবল আখিরাতের প্রস্তুতিগ্রহণ। এ সূরায় সে কথাই বলা হয়েছে যে, মক্কাবিজয় এবং মানুষের দলে দলে ইসলামগ্রহণ হল তোমার মৃত্যুর আলামত। সুতরাং এখন আখিরাতের প্রস্তুতিস্বরূপ বেশি বেশি আল্লাহর হাম্দ ও তাসবীহতে রত হও এবং বেশি বেশি ইস্তিগফার কর।
কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, এ সূরা নাযিলের পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব বেশি বেশি পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছের প্রধান শিক্ষা এই যে, যখন কারও বার্ধক্য এসে যায় তখন তার অবশ্যকর্তব্য হয়ে যায় সম্পূর্ণরূপে আখিরাতমুখী হয়ে যাওয়া এবং বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফারে রত হয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
খ. এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, অনেক সময় তরুণ ব্যক্তিও জ্ঞানগরিমায় প্রবীণদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গ. কোনও তরুণ জ্ঞানগরিমায় এগিয়ে থাকলে প্রবীণদের উচিত তার মূল্যায়ন করা। তরুণ হওয়ার কারণে তাকে অবহেলা করা কিছুতেই উচিত নয়।
ঘ. ইলমী খান্দানের ছেলে-মেয়েদের জন্য খান্দানের 'ইলমী পরিবেশ অনেক বড় নিআমত। তাদের উচিত এ নি'আমতের শোকর আদায় করা এবং সে শোকরের দাবি অনুযায়ী ‘ইলম ও আমলে অন্যদের তুলনায় বেশি যত্নবান থাকা।
এ কারণে প্রবীণ সাহাবীদের কারও কারও অন্তরে প্রশ্ন দেখা দেয়। তাদেরও যোগ্য যোগ্য পুত্র আছে, যারা ইবন 'আব্বাস রাযি.-এর সমবয়সী। ইবন 'আব্বাস রাযি, যদি এই বিশেষ সম্মান পান, তারা কেন পাবে না? হয়তো এ কারণে তাদের মনে কিছুটা কষ্টও ছিল, যেমনটা হাদীছের ভাষা দ্বারা বোঝা যায়। এ কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক।
সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতা আল্লাহপ্রদত্ত বিষয়। প্রত্যেকেই কামনা করে তার সন্তান কল্যাণকর সব বিষয়ে অন্যদের ছাড়িয়ে যাক। অন্ততপক্ষে অন্যদের সমপর্যায়ে তো থাকুক। হযরত উমর রাযি.-এর শাসনকার্য কোনও দুনিয়াদারী বিষয় ছিল না। তা ছিল নবুওয়াতী তরীকার খেলাফত, যা উচ্চপর্যায়ের দীনদারী। কাজেই এ কাজে তাঁর কোনও সহযোগিতা করতে পারা অনেক বড় ছাওয়াবের ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। সে সৌভাগ্যে ইবন 'আব্বাস রাযি.-এর মত আমার পুত্রও অংশগ্রহণের সুযোগ পাক, এ কামনা যে- কোনও সাহাবীর অন্তরেই থাকা স্বাভাবিক। সে সুযোগ না পেলে যদি মনে কষ্ট আসে তা কিছু দোষের কথা নয়। বরং মনেপ্রাণে সম্পূর্ণরূপে আখিরাতমুখী সুমহান সাহাবায়ে কিরামের অবস্থান থেকে এরূপ কষ্টকে প্রশংসার দৃষ্টিতেই দেখতে হবে।
এতদ্সত্ত্বেও লক্ষণীয় ব্যাপার হল, তারা মনের কষ্ট মনেই চাপা দিয়ে রেখেছেন, পরস্পর রেষারেষিতে লিপ্ত হননি। খলিফার আনুগত্য এবং উম্মতের ঐক্যকেই তারা সবকিছুর উপরে রেখেছেন। তাই দেখা যাচ্ছে তাদের পুত্রদেরকে সুযোগদান না করার কারণে তারা প্রতিবাদী তো হনইনি, এমনকি যাদের সুযোগ্য পুত্র আছে, সেরকম কোনও সাহাবীর মুখ থেকে অনুযোগ প্রকাশ পায়নি।
‘আমাদেরও তো তার মত পুত্র আছে'- এ কথাটি যিনি বলেছিলেন তার নিজের এরকম পুত্র ছিল না। হাদীছের বর্ণনাসমূহ অনুসন্ধান করলে জানা যায় এ অনুযোগটি করেছিলেন ‘আশারায়ে মুবাশশারার অন্যতম বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ‘আব্দুর রহমান ইবন “আওফ রাযি.। হযরত ইবন 'আব্বাস রাযি.-এর সমবয়সী কোনও পুত্র তাঁর ছিল না। কাজেই অনুযোগটিও তাঁর নিজের জন্য ছিল না। সম্ভবত তিনি আঁচ করেছিলেন, যাদের এ বয়সী পুত্র আছে তাদের কোনও পুত্র ইবন 'আব্বাস রাযি.-এর মত সুযোগ না পাওয়ার কারণে তাদের মনে কষ্ট থেকে থাকবে। তাই তিনি তাদের পক্ষ হয়ে প্রশ্নটি তোলেন, যাতে হযরত উমর রাযি. কী কারণে হযরত ইবন 'আব্বাস রাযি.-কে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন তা পরিষ্কার হয়ে যায় আর এভাবে ওই সকল সাহাবীর মনের কষ্টও দূর হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! এটা হযরত আব্দুর রহমান ইবন 'আওফ রাযি.-এর কতই না বিচক্ষণতার পরিচায়ক এবং এর মাধ্যমে তিনি সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা, বিশেষত নেতৃপর্যায়ের লোকদের মধ্যকার সম্প্রীতি রক্ষার কী শিক্ষণীয় কর্মপন্থা আমাদের জন্য রেখে গেছেন!
এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, মুহাজিরগণ হযরত 'উমর ফারূক রাযি.-কে বলেছিলেন, আপনি যেমন 'আব্বাসের পুত্রকে ডাকেন তেমনি আমাদের পুত্রদেরকে ডাকতে পারেন না? এ বর্ণনায় বিশেষ কোনও সাহাবীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। সাধারণভাবে বলা হয়েছে- মুহাজিরগণ। হযরত 'উমর ফারূক রাযি.-এর মজলিসে যারা বসতেন তারা কেবল মুহাজির ছিলেন না, অনেক আনসারী সাহাবীও ছিলেন। তা সত্ত্বেও অনুযোগকারী হিসেবে আনসারদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। আবার মুহাজিরদের মধ্যেও সুনির্দিষ্টভাবে নাম পাওয়া যায় কেবল হযরত আব্দুর রহমান ইবন 'আওফ রাযি.-এর। এর দ্বারা অনুমান করা যায়, প্রকৃতপক্ষে অনুযোগকারী তিনি একাই ছিলেন আর তিনি নিজে যেহেতু মুহাজির ছিলেন, তাই তাঁর অনুযোগকেই মুহাজিরদের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। তিনি কেন অভিযোগ করেছিলেন সে ব্যাখ্যা উপরে দেওয়া হয়েছে।
হযরত উমর রাযি. বিশেষভাবে হযরত ইবন 'আব্বাস রাযি.-কে কেন ডাকেন, সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন- انه من حيث علمتم (এ যুবক কোথা থেকে গড়া তা তোমরা জান)। অর্থাৎ তিনি নবীগৃহের একজন। তাঁর খালা ছিলেন উম্মুল মু'মিনীন হযরত মায়মূনা বিনতুল হারিছ রাযি.। এই সুবাদে নবীগৃহে ছিল তাঁর অবাধ যাতায়াত। দিনে যাতায়াত তো ছিলই, সেখানে রাত্রিযাপনও করতেন। সে তো এমন এক গৃহ, যেখানে নবুওয়াতী ‘ইলমের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। সুস্থ-সঠিক চিন্তাভাবনার চর্চা হয় । নিজ চোখে জ্ঞান ও হিকমতের প্রবাহ দেখতে পান। পিতা হযরত আব্বাস রাযি. ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোক। জন্মগতভাবে পিতৃগুণ তাঁর মধ্যেও নিহিত ছিল। তার উপর তিনি অমিত সম্ভাবনা নিয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমত করারও সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত খেদমতে সন্তুষ্ট হয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জন্য দু'আও করেছিলেন- “হে আল্লাহ! আপনি একে দীনের গভীর জ্ঞানবিদ্যা দান করুন এবং আপনার কিতাবের ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ শিক্ষা দিন।” জন্মগত প্রতিভা তো ছিলই, সেইসঙ্গে যুক্ত হল এই খাস দু'আ। শুরু হল হযরত "আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি.-এর 'ইলম ও হিকমতের স্ফুরণ। একপর্যায়ে তিনি 'হিবরুল-উম্মাহ' বা উম্মতের মহাপণ্ডিতে পরিণত হলেন। বস্তুত 'ইলম ও হিকমত অর্জনের সাথে তাঁর বেড়ে উঠাটা সম্পন্ন হয়েছিল নবীগৃহেই। সেদিকেই ইঙ্গিত করে হযরত উমর ফারূক রাযি. বলেছিলেন- এ যুবক কোথা থেকে গড়া তা তোমরা জান।
হযরত উমর রাযি, তাঁর এ মন্তব্যের সত্যতা সকলের সামনে প্রমাণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিলেন। সুতরাং তিনি তাঁর মজলিসে উপস্থিত বিভাজনদেরকে সূরা নাসরের মর্মবস্তু জিজ্ঞেস করলেন। এ সূরায় যে বলা হয়েছে-
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَ الْفَتْحُ ...
(যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং মানুষকে দেখবে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে, তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাসবীহ পাঠ করবে এবং তাঁর কাছে ইস্তিগফার করবে। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবুলকারী।)
এর দ্বারা মূলত কোন্ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে? একেকজন একেক মত প্রকাশ করলেন, কিন্তু তিনি কারও ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। সবশেষে হযরত ইবন “আব্বাস রাযি.-কে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কী বল? তিনি বললেন, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
(যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন মনে করবে এটা তোমার মৃত্যুর আলামত।
হযরত ‘উমর রাযি. তাঁর এ ব্যাখ্যা পসন্দ করলেন এবং বললেন, এর দ্বারা আমিও তা-ই বুঝেছি, যা তুমি বলছ। উপস্থিত কোনও সাহাবী এর প্রতিবাদ করেননি। তার মানে তারাও এ ব্যাখ্যাকে সঠিক বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। এভাবে তাদের সামনে হযরত ইবন ‘আব্বাস রাযি.-এর 'ইলমী যোগ্যতা প্রমাণ হয়ে যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, মক্কা বিজয় হওয়া এবং মানুষের দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করাটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের আলামাত কিভাবে হল?
উত্তর এই যে, তাঁর দুনিয়ায় আগমনের উদ্দেশ্য ছিল দীনের পূর্ণতাবিধান ও তার পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা। মক্কাবিজয় ও মানুষের দলে দলে ইসলামগ্রহণ দ্বারা সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেছে। মক্কা মুকাররামা যেন দুনিয়ায় আল্লাহ তা'আলার পাঠানো দীনের রাজধানী। আরবের বিভিন্ন গোত্র এর দিকে তাকিয়ে ছিল। যখন এ পবিত্র ভূমি ইসলামের অধীনে এসে যায়, তখন তাদের প্রতীক্ষার দিন শেষ হয়ে গেল। এবার তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ শুরু করে দিল। একপর্যায়ে সম্পূর্ণ আরব উপদ্বীপ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিল। অতঃপর বিদায় হজ্জে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঘোষণা করে দেওয়া হল-
اليَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
অর্থ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নি'আমত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) পসন্দ করে নিলাম। সূরা মায়িদা, আয়াত ৩
তো যখন ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করল এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ ইসলামের ছায়ায় এসে গেল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইহজগতে থাকার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেল। যে উদ্দেশ্যে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেছে। এখন বিশ্বব্যাপী এ দ্বীনকে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর উম্মতের। তাঁর যখন ইহলোকে থাকার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে, তখন তাঁর কাজ কেবল আখিরাতের প্রস্তুতিগ্রহণ। এ সূরায় সে কথাই বলা হয়েছে যে, মক্কাবিজয় এবং মানুষের দলে দলে ইসলামগ্রহণ হল তোমার মৃত্যুর আলামত। সুতরাং এখন আখিরাতের প্রস্তুতিস্বরূপ বেশি বেশি আল্লাহর হাম্দ ও তাসবীহতে রত হও এবং বেশি বেশি ইস্তিগফার কর।
কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, এ সূরা নাযিলের পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব বেশি বেশি পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছের প্রধান শিক্ষা এই যে, যখন কারও বার্ধক্য এসে যায় তখন তার অবশ্যকর্তব্য হয়ে যায় সম্পূর্ণরূপে আখিরাতমুখী হয়ে যাওয়া এবং বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফারে রত হয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
খ. এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, অনেক সময় তরুণ ব্যক্তিও জ্ঞানগরিমায় প্রবীণদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গ. কোনও তরুণ জ্ঞানগরিমায় এগিয়ে থাকলে প্রবীণদের উচিত তার মূল্যায়ন করা। তরুণ হওয়ার কারণে তাকে অবহেলা করা কিছুতেই উচিত নয়।
ঘ. ইলমী খান্দানের ছেলে-মেয়েদের জন্য খান্দানের 'ইলমী পরিবেশ অনেক বড় নিআমত। তাদের উচিত এ নি'আমতের শোকর আদায় করা এবং সে শোকরের দাবি অনুযায়ী ‘ইলম ও আমলে অন্যদের তুলনায় বেশি যত্নবান থাকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
