আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৪৬. কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
হাদীস নং: ৩১৪৯
আন্তর্জাতিক নং: ৩১৪৯
সূরা কাহফ
৩১৪৯. ইবনে আবু উমর (রাহঃ) ..... সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাযিঃ)-কে বললামঃ নাওফ বিকালী বলেন যে, বনু ইসরাঈলী নবী মুসা খাযিরের সঙ্গে সাক্ষাতকারী মুসা এক নন। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বললেনঃ আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। আমি উবাই ইবনে কা’ব (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেনঃ একদিন মুসা বনু ইসরাঈলের মাঝে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী?
তিনি বললেনঃ আমি।
আল্লাহ্ তাআলার দিকে বিষয়টি সোপর্দ না করায় তিনি তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হন। তিনি তাঁর কাছে ওহী পাঠালেন, দুই সাগরের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে সে তোমার চেয়ে বড় জ্ঞানী।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে পরওয়ারদিগার, আমি কি উপায়ে তাঁর সাক্ষাত পেতে পারি?
তিনি বললেনঃ একটি থলের মধ্যে একটি মাছ নাও। যেখানে গিয়ে মাছটি হারিয়ে যাবে সে স্থানেই সে আছে। তারপর তিনি রওয়ানা হলেন। সঙ্গে তাঁর খাদেম ইউশা’ ইবনে নূনও চললেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) মাছটি একটি থলেতে রাখলেন। তিনি ও তাঁর খাদিম চলতে চলতে একটি চটানের কাছে এসে পৌঁছে মুসা ও তার খাদিম ঘুমিয়ে পড়েন। তখন থলের ভিতর মাছটি নড়ে চড়ে থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে পড়ে যায়। আল্লাহ্ তাআলা চলার পথে পানির ধারা বন্ধ করে দিলেন। ফলে সেটি একটি তাকের মত হয়ে যায়।
মাছটির জন্য এটি একটি সুড়ঙ্গেরা মত হয়ে পড়ে আর মুসা ও তাঁর খাদেমের জন্য এক বিস্ময়কর বস্ত হয়ে দাঁড়ায়।
এরপর তাঁরা বাকী দিন ও রাত্রিভর চলতে থাকেন। মুসার সাথী তাঁকে মাছের বিষয়টি বলতে ভুলে যান। সকাল হলে মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর খাদিমকে বললেনঃ আমাদের সকালের খাবার নিয়ে আস। এই সফরে আমরা বেশ ক্লান্তি অনুভব করছি।
নবী (ﷺ) বললেনঃ নির্দেশিত স্থানটি অতিক্রম করা পর্যন্ত তাঁরা কোন ক্লান্তি বোধ করেননি।
খাদিম বললেনঃ হায়, আপনি কি জানেন আমরা যখন চটানে আশ্রয় মাছের তখনকার ব্যাপারটি তো আমি ভুলে গিয়েছি। সে কথা বলতে শয়তান ছাড়া আর কেউ আমাকে ভুলিয়ে দেয়নি। এটি সাগরে এক আশ্চর্যজনক ভাবে পথ ধরে চলে গেছে।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ সেটাই তো ছিল উদ্দীষ্ঠ স্থান। অনন্তর উভয়েই তাঁরা পদচি‎হ্ন ধরে পেছনে ফিরে আসলেন।
সুফিয়ান (রাহঃ) বলেন, লোকদের ধারণা সেই চটানের পাশে ছিল সঞ্জীবনী ঝর্ণা। কোন মৃতের গায়ে এর পানি লাগলেই তা জীবিত হযে উঠে। ঐ মাছটির কিছু অংশ খাওয়া হয়েছিল। এতদসত্ত্বেও এর উপর উক্ত পানির ফোটা পড়লেই সেটি জীবিত হয়ে উঠে।
নবী (ﷺ) বলেন, তাঁরা পদচি‎হ্ন অনুসরণ করে পাথরটির কাছে ফিরে এলেন। সেখানে এসে কাপড় ঘোমটা দিয়ে আবৃত এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করলেন। লোকটি বললেনঃ এই যমীনে সালাম কোথা হতে!
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আমি মুসা। লোকটি বললেনঃ বনু ইসরাঈলের মুসা? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বললেনঃ হে মুসা, আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন ধরনের জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত, আল্লাহ্ তাআলা যা আপনাকে শিখিয়েছেন। আমি তা জানি না। আর আমিও আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এক জ্ঞান লাভ করেছি যা তিনি আমাকে শিখিয়েছেন। তা আপনি জানেন না।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আপনি আমাকে শিক্ষা দিবেন- এই শর্তে আমি আপনার সঙ্গে আমি চলতে পারি কি?
লোকটি বললেনঃ আপনি কিছূতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না। আর যে বিষয়ে আপনার জ্ঞানায়ত্ব নয় সে বিসয়ে আপনি কেমন করে ধৈর্যধারণ করবেন?
তিনি বললেনঃ ইনশাআল্লাহ্! আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না।
খাযির বললেনঃ আপনি যদি আমার সাথে চলতে চান তবে কোন বিষয়ে আপনি আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যতক্ষণ না আমি নিজে সে সম্বন্ধে আপনাকে বলি (১৮ : ৬২-৭০)। মুসা বললেন, আচ্ছা।
খাযির এবং মুসা সাগরের তীর দিয়ে হেঁটে চললেন। তাঁদের পাশ দিয়ে একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা তাতে তুলে নেয়ার জন্য নৌকার লোকদের সঙ্গে আলাপ করলেন। তারা খাযির (আলাইহিস সালাম)-কে চিনতে পেরে পারিশ্রমিক ছাড়াই তাদের উভয়কে তুলে নিল। এরপর খাযির (গোপনে) নৌকার একটি তক্তার দিকে লক্ষ্য করে তা সরিয়ে ফেললেন।
মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে বললেনঃ বিনা পারিশ্রমিকে এরা আমাদের বহন করল আর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি এটি বিদীর্ণ করে দিলেন! আপনি এক গুরুতর কাজ করলেন।
খাযির বললেনঃ আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না?
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ মেহেরবাণী করে আমার ভুলের জন্য আমাকে ধরবেন না এবং আমার বিষয়ে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।
এরপর তাঁরা নৌকা থেকে নামলেন। তাঁরা তীর দিয়ে হেঁটে চলছিলেন। এমন সময় দেখেন কতকগুলো বালকের সাথে একটি বালক খেলছে। খাযির (আলাইহিস সালাম) সেই বালকটির মাথা ধরে তার ঘাড় মটকে তাকে হত্যা করে ফেললেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেনঃ আপনি কি একটি নিষ্পাপ বালককে কোন প্রাণ হত্যার বিনিময় ব্যতীতই হত্যা করে ফেললেন! আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।
খাযির (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না?
নবী (ﷺ) বলেন, এই আপত্তি প্রথমটির তুলনায় কঠোরতর।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না। আমার পক্ষ থেকে ওযর গ্রহণে আপনি চরমে পৌছে গিয়েছেন।
এরপর তাঁরা উভয়েই চলতে চলতে এক জনপদবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদের নিকট খাবার চাইলেন।
কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। এরপর মুসা ও খাযির তাদের একটা পতনোন্মুখ দেওয়াল ঝুঁকে পড়েছে দেখতে পেলেন। খাযির সেটিকে তাঁর হাত দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ এমন এক সম্প্রদায়! এদের কাছে আমরা এলাম কিন্তু তারা আমাদের কোনরূপ মেহমানদারী করল না এবং আমাদের খাওয়ালো না। আপনি ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।
খাযির (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ এখানেই আপনার ও আমার মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হল। যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি আমি সেগুলোর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ্ তাআলা মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপর রহম করুন। আমাদের মনোবঞ্ছা ছিল, তিনি যদি ধৈর্যধারণ করতেন তাহলে তাঁদের আরো বহু বিষয় আমাদের কাছে বিবৃত করা হতো।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির কিনারে বসে সাগরে এক ঠোকর মারল। তখন খাযির (আলাইহিস সালাম) মুসা (আলাইহিস সালাম)-কে বললেনঃ সাগর থেকে এই চড়ুইটি যতটুযকু পানি আহরণ করতে পেরেছে আপনার এবং আমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় সে পরিমাণ ছাড়া আহরণ করতে পারেনি। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাহঃ) বলেন, ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) পাঠ করতেনঃ
قَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهُ إِلاَّ الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا
আরো পাঠ করতেনঃ (ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا)।
তিনি বললেনঃ আমি।
আল্লাহ্ তাআলার দিকে বিষয়টি সোপর্দ না করায় তিনি তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হন। তিনি তাঁর কাছে ওহী পাঠালেন, দুই সাগরের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে সে তোমার চেয়ে বড় জ্ঞানী।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে পরওয়ারদিগার, আমি কি উপায়ে তাঁর সাক্ষাত পেতে পারি?
তিনি বললেনঃ একটি থলের মধ্যে একটি মাছ নাও। যেখানে গিয়ে মাছটি হারিয়ে যাবে সে স্থানেই সে আছে। তারপর তিনি রওয়ানা হলেন। সঙ্গে তাঁর খাদেম ইউশা’ ইবনে নূনও চললেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) মাছটি একটি থলেতে রাখলেন। তিনি ও তাঁর খাদিম চলতে চলতে একটি চটানের কাছে এসে পৌঁছে মুসা ও তার খাদিম ঘুমিয়ে পড়েন। তখন থলের ভিতর মাছটি নড়ে চড়ে থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে পড়ে যায়। আল্লাহ্ তাআলা চলার পথে পানির ধারা বন্ধ করে দিলেন। ফলে সেটি একটি তাকের মত হয়ে যায়।
মাছটির জন্য এটি একটি সুড়ঙ্গেরা মত হয়ে পড়ে আর মুসা ও তাঁর খাদেমের জন্য এক বিস্ময়কর বস্ত হয়ে দাঁড়ায়।
এরপর তাঁরা বাকী দিন ও রাত্রিভর চলতে থাকেন। মুসার সাথী তাঁকে মাছের বিষয়টি বলতে ভুলে যান। সকাল হলে মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর খাদিমকে বললেনঃ আমাদের সকালের খাবার নিয়ে আস। এই সফরে আমরা বেশ ক্লান্তি অনুভব করছি।
নবী (ﷺ) বললেনঃ নির্দেশিত স্থানটি অতিক্রম করা পর্যন্ত তাঁরা কোন ক্লান্তি বোধ করেননি।
খাদিম বললেনঃ হায়, আপনি কি জানেন আমরা যখন চটানে আশ্রয় মাছের তখনকার ব্যাপারটি তো আমি ভুলে গিয়েছি। সে কথা বলতে শয়তান ছাড়া আর কেউ আমাকে ভুলিয়ে দেয়নি। এটি সাগরে এক আশ্চর্যজনক ভাবে পথ ধরে চলে গেছে।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ সেটাই তো ছিল উদ্দীষ্ঠ স্থান। অনন্তর উভয়েই তাঁরা পদচি‎হ্ন ধরে পেছনে ফিরে আসলেন।
সুফিয়ান (রাহঃ) বলেন, লোকদের ধারণা সেই চটানের পাশে ছিল সঞ্জীবনী ঝর্ণা। কোন মৃতের গায়ে এর পানি লাগলেই তা জীবিত হযে উঠে। ঐ মাছটির কিছু অংশ খাওয়া হয়েছিল। এতদসত্ত্বেও এর উপর উক্ত পানির ফোটা পড়লেই সেটি জীবিত হয়ে উঠে।
নবী (ﷺ) বলেন, তাঁরা পদচি‎হ্ন অনুসরণ করে পাথরটির কাছে ফিরে এলেন। সেখানে এসে কাপড় ঘোমটা দিয়ে আবৃত এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করলেন। লোকটি বললেনঃ এই যমীনে সালাম কোথা হতে!
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আমি মুসা। লোকটি বললেনঃ বনু ইসরাঈলের মুসা? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বললেনঃ হে মুসা, আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন ধরনের জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত, আল্লাহ্ তাআলা যা আপনাকে শিখিয়েছেন। আমি তা জানি না। আর আমিও আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এক জ্ঞান লাভ করেছি যা তিনি আমাকে শিখিয়েছেন। তা আপনি জানেন না।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আপনি আমাকে শিক্ষা দিবেন- এই শর্তে আমি আপনার সঙ্গে আমি চলতে পারি কি?
লোকটি বললেনঃ আপনি কিছূতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না। আর যে বিষয়ে আপনার জ্ঞানায়ত্ব নয় সে বিসয়ে আপনি কেমন করে ধৈর্যধারণ করবেন?
তিনি বললেনঃ ইনশাআল্লাহ্! আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না।
খাযির বললেনঃ আপনি যদি আমার সাথে চলতে চান তবে কোন বিষয়ে আপনি আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যতক্ষণ না আমি নিজে সে সম্বন্ধে আপনাকে বলি (১৮ : ৬২-৭০)। মুসা বললেন, আচ্ছা।
খাযির এবং মুসা সাগরের তীর দিয়ে হেঁটে চললেন। তাঁদের পাশ দিয়ে একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা তাতে তুলে নেয়ার জন্য নৌকার লোকদের সঙ্গে আলাপ করলেন। তারা খাযির (আলাইহিস সালাম)-কে চিনতে পেরে পারিশ্রমিক ছাড়াই তাদের উভয়কে তুলে নিল। এরপর খাযির (গোপনে) নৌকার একটি তক্তার দিকে লক্ষ্য করে তা সরিয়ে ফেললেন।
মুসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে বললেনঃ বিনা পারিশ্রমিকে এরা আমাদের বহন করল আর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি এটি বিদীর্ণ করে দিলেন! আপনি এক গুরুতর কাজ করলেন।
খাযির বললেনঃ আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না?
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ মেহেরবাণী করে আমার ভুলের জন্য আমাকে ধরবেন না এবং আমার বিষয়ে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।
এরপর তাঁরা নৌকা থেকে নামলেন। তাঁরা তীর দিয়ে হেঁটে চলছিলেন। এমন সময় দেখেন কতকগুলো বালকের সাথে একটি বালক খেলছে। খাযির (আলাইহিস সালাম) সেই বালকটির মাথা ধরে তার ঘাড় মটকে তাকে হত্যা করে ফেললেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেনঃ আপনি কি একটি নিষ্পাপ বালককে কোন প্রাণ হত্যার বিনিময় ব্যতীতই হত্যা করে ফেললেন! আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।
খাযির (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না?
নবী (ﷺ) বলেন, এই আপত্তি প্রথমটির তুলনায় কঠোরতর।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না। আমার পক্ষ থেকে ওযর গ্রহণে আপনি চরমে পৌছে গিয়েছেন।
এরপর তাঁরা উভয়েই চলতে চলতে এক জনপদবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদের নিকট খাবার চাইলেন।
কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। এরপর মুসা ও খাযির তাদের একটা পতনোন্মুখ দেওয়াল ঝুঁকে পড়েছে দেখতে পেলেন। খাযির সেটিকে তাঁর হাত দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
মুসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ এমন এক সম্প্রদায়! এদের কাছে আমরা এলাম কিন্তু তারা আমাদের কোনরূপ মেহমানদারী করল না এবং আমাদের খাওয়ালো না। আপনি ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।
খাযির (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ এখানেই আপনার ও আমার মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হল। যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি আমি সেগুলোর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ্ তাআলা মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপর রহম করুন। আমাদের মনোবঞ্ছা ছিল, তিনি যদি ধৈর্যধারণ করতেন তাহলে তাঁদের আরো বহু বিষয় আমাদের কাছে বিবৃত করা হতো।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির কিনারে বসে সাগরে এক ঠোকর মারল। তখন খাযির (আলাইহিস সালাম) মুসা (আলাইহিস সালাম)-কে বললেনঃ সাগর থেকে এই চড়ুইটি যতটুযকু পানি আহরণ করতে পেরেছে আপনার এবং আমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় সে পরিমাণ ছাড়া আহরণ করতে পারেনি। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাহঃ) বলেন, ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) পাঠ করতেনঃ
قَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهُ إِلاَّ الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا
আরো পাঠ করতেনঃ (ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا)।
بَابٌ: وَمِنْ سُورَةِ الكَهْفِ
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، قَالَ قُلْتُ لاِبْنِ عَبَّاسٍ إِنَّ نَوْفًا الْبِكَالِيَّ يَزْعُمُ أَنَّ مُوسَى صَاحِبَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَيْسَ بِمُوسَى صَاحِبِ الْخَضِرِ قَالَ كَذَبَ عَدُوُّ اللَّهِ سَمِعْتُ أُبَىَّ بْنَ كَعْبٍ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " قَامَ مُوسَى خَطِيبًا فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ فَسُئِلَ أَىُّ النَّاسِ أَعْلَمُ فَقَالَ أَنَا أَعْلَمُ . فَعَتَبَ اللَّهُ عَلَيْهِ إِذْ لَمْ يَرُدَّ الْعِلْمَ إِلَيْهِ فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ أَنَّ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي بِمَجْمَعِ الْبَحْرَيْنِ هُوَ أَعْلَمُ مِنْكَ قَالَ مُوسَى أَىْ رَبِّ فَكَيْفَ لِي بِهِ فَقَالَ لَهُ احْمِلْ حُوتًا فِي مِكْتَلٍ فَحَيْثُ تَفْقِدُ الْحُوتَ فَهُوَ ثَمَّ فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقَ مَعَهُ فَتَاهُ وَهُوَ يُوشَعُ بْنُ نُونٍ وَيُقَالُ يُوسَعُ فَحَمَلَ مُوسَى حُوتًا فِي مِكْتَلٍ فَانْطَلَقَ هُوَ وَفَتَاهُ يَمْشِيَانِ حَتَّى إِذَا أَتَيَا الصَّخْرَةَ فَرَقَدَ مُوسَى وَفَتَاهُ فَاضْطَرَبَ الْحُوتُ فِي الْمِكْتَلِ حَتَّى خَرَجَ مِنَ الْمِكْتَلِ فَسَقَطَ فِي الْبَحْرِ قَالَ وَأَمْسَكَ اللَّهُ عَنْهُ جِرْيَةَ الْمَاءِ حَتَّى كَانَ مِثْلَ الطَّاقِ وَكَانَ لِلْحُوتِ سَرَبًا وَكَانَ لِمُوسَى وَلِفَتَاهُ عَجَبًا فَاَنْطَلَقَا بَقِيَّةَ يَوْمِهِمَا وَلَيْلَتِهِمَا وَنُسِّيَ صَاحِبُ مُوسَى أَنْ يُخْبِرَهُ فَلَمَّا أَصْبَحَ مُوسَى قَالَ لِفَتَاهُ: (آتِنَا غَدَاءَنَا لَقَدْ لَقِينَا مِنْ سَفَرِنَا هَذَا نَصَبًا ) قَالَ وَلَمْ يَنْصَبْ حَتَّى جَاوَزَ الْمَكَانَ الَّذِي أُمِرَ بِهِ : (قَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهُ إِلاَّ الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا ) قَالَ مُوسَى : ( ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا ) قَالَ فَكَانَا يَقُصَّانِ آثَارَهُمَا . قَالَ سُفْيَانُ يَزْعُمُ نَاسٌ أَنَّ تِلْكَ الصَّخْرَةَ عِنْدَهَا عَيْنُ الْحَيَاةِ وَلاَ يُصِيبُ مَاؤُهَا مَيِّتًا إِلاَّ عَاشَ . قَالَ وَكَانَ الْحُوتُ قَدْ أُكِلَ مِنْهُ فَلَمَّا قَطَرَ عَلَيْهِ الْمَاءُ عَاشَ . قَالَ فَقَصَّا آثَارَهُمَا حَتَّى أَتَيَا الصَّخْرَةَ فَرَأَى رَجُلاً مُسَجًّى عَلَيْهِ بِثَوْبٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ مُوسَى فَقَالَ أَنَّى بِأَرْضِكَ السَّلاَمُ قَالَ أَنَا مُوسَى . قَالَ مُوسَى بَنِي إِسْرَائِيلَ قَالَ نَعَمْ . قَالَ يَا مُوسَى إِنَّكَ عَلَى عِلْمٍ مِنْ عِلْمِ اللَّهِ عَلَّمَكَهُ اللَّهُ لاَ أَعْلَمُهُ وَأَنَا عَلَى عِلْمٍ مِنْ عِلْمِ اللَّهِ عَلَّمَنِيهِ لاَ تَعْلَمُهُ فَقَالَ مُوسَى : ( هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِّمَنِي مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا * قَالَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا * وَكَيْفَ تَصْبِرُ عَلَى مَا لَمْ تُحِطْ بِهِ خُبْرًا * قَالَ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ صَابِرًا وَلاَ أَعْصِي لَكَ أَمْرًا ) قَالَ لَهُ الْخَضِرُ : (فَإِنِ اتَّبَعْتَنِي فَلاَ تَسْأَلْنِي عَنْ شَيْءٍ حَتَّى أُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ ذِكْرًا ) قَالَ نَعَمْ فَانْطَلَقَ الْخَضِرُ وَمُوسَى يَمْشِيَانِ عَلَى سَاحِلِ الْبَحْرِ فَمَرَّتْ بِهِمَا سَفِينَةٌ فَكَلَّمَاهُ أَنْ يَحْمِلُوهُمَا فَعَرَفُوا الْخَضِرَ فَحَمَلُوهُمَا بِغَيْرِ نَوْلٍ فَعَمَدَ الْخَضِرُ إِلَى لَوْحٍ مِنْ أَلْوَاحِ السَّفِينَةِ فَنَزَعَهُ فَقَالَ لَهُ مُوسَى قَوْمٌ حَمَلُونَا بِغَيْرِ نَوْلٍ عَمَدْتَ إِلَى سَفِينَتِهِمْ فَخَرَقْتَهَا : ( لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا إِمْرًا * قَالَ أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا * قَالَ لاَ تُؤَاخِذْنِي بِمَا نَسِيتُ وَلاَ تُرْهِقْنِي مِنْ أَمْرِي عُسْرًا ) ثُمَّ خَرَجَا مِنَ السَّفِينَةِ فَبَيْنَمَا هُمَا يَمْشِيَانِ عَلَى السَّاحِلِ وَإِذَا غُلاَمٌ يَلْعَبُ مَعَ الْغِلْمَانِ فَأَخَذَ الْخَضِرُ بِرَأْسِهِ فَاقْتَلَعَهُ بِيَدِهِ فَقَتَلَهُ فَقَالَ لَهُ مُوسَى : ( أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا نُكْرًا * قَالَ أَلَمْ أَقُلْ لَكَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا ) قَالَ وَهَذِهِ أَشَدُّ مِنَ الأُولَى : ( قَالَ إِنْ سَأَلْتُكَ عَنْ شَيْءٍ بَعْدَهَا فَلاَ تُصَاحِبْنِي قَدْ بَلَغْتَ مِنْ لَدُنِّي عُذْرًا * فَانْطَلَقَا حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ يَنْقَضَّ ) يَقُولُ مَائِلٌ فَقَالَ الْخَضِرُ بِيَدِهِ هَكَذَا : ( فَأَقَامَهُ ) فَقَالَ لَهُ مُوسَى قَوْمٌ أَتَيْنَاهُمْ فَلَمْ يُضَيِّفُونَا وَلَمْ يُطْعِمُونَا : ( إِنْ شِئْتَ لاَتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا * قَالَ هَذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ سَأُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِعْ عَلَيْهِ صَبْرًا ) قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَرْحَمُ اللَّهُ مُوسَى لَوَدِدْنَا أَنَّهُ كَانَ صَبَرَ حَتَّى يَقُصَّ عَلَيْنَا مِنْ أَخْبَارِهِمَا " . قَالَ وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الأُولَى كَانَتْ مِنْ مُوسَى نِسْيَانٌ - قَالَ وَجَاءَ عُصْفُورٌ حَتَّى وَقَعَ عَلَى حَرْفِ السَّفِينَةِ ثُمَّ نَقَرَ فِي الْبَحْرِ فَقَالَ لَهُ الْخَضِرُ مَا نَقَصَ عِلْمِي وَعِلْمُكَ مِنْ عِلْمِ اللَّهِ إِلاَّ مِثْلَ مَا نَقَصَ هَذَا الْعُصْفُورُ مِنَ الْبَحْرِ " . قَالَ سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ وَكَانَ يَعْنِي ابْنَ عَبَّاسٍ يَقْرَأُ وَكَانَ أَمَامَهُمْ مَلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ صَالِحَةٍ غَصْبًا وَكَانَ يَقْرَأُ وَأَمَّا الْغُلاَمُ فَكَانَ كَافِرًا . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَرَوَاهُ الزُّهْرِيُّ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ رَوَاهُ أَبُو إِسْحَاقَ الْهَمْدَانِيُّ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . قَالَ أَبُو عِيسَى سَمِعْتُ أَبَا مُزَاحِمٍ السَّمَرْقَنْدِيَّ يَقُولُ سَمِعْتُ عَلِيَّ بْنَ الْمَدِينِيِّ يَقُولُ حَجَجْتُ حَجَّةً وَلَيْسَ لِي هِمَّةٌ إِلاَّ أَنْ أَسْمَعَ مِنْ سُفْيَانَ يَذْكُرُ فِي هَذَا الْحَدِيثِ الْخَبَرَ حَتَّى سَمِعْتُهُ يَقُولُ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ وَقَدْ كُنْتُ سَمِعْتُ هَذَا مِنْ سُفْيَانَ مِنْ قَبْلِ ذَلِكَ وَلَمْ يَذْكُرْ فِيهِ الْخَبَرَ .
