আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৪৬. কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং: ৩০৫৯
আন্তর্জাতিক নং: ৩০৫৯
সূরা আল-মাইদা
৩০৫৯. হাসান ইবনে আহমদ ইবনে আবু শু’আয়ব হাররানী (রাহঃ) ..... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا شَهَادَةُ بَيْنِكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ) হে মুমিনগণ! তোমাদের কারো যখন মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন ওসীয়ত করার সময় তোমাদের মধ্যে সাক্ষী রাখবে ন্যায়নিষ্ঠ দুই জন (৫ঃ ১০৬) আয়াত প্রসঙ্গে তামীমে দারী (রাযিঃ) বলেনঃ এ ক্ষেত্রে আমি এবং আদী ইবনে বাদদা ছাড়া অন্য কারো উপর এ আয়াত প্রযোজ্য নয়।

এরা (তামীম ও আদী) উভয়েই ছিলেন খৃষ্টান। ইসলামের পূর্বে তারা সিরিয়ায় ব্যবসার জন্য যাতায়াত করতেন। একবার তারা ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়া গেলেন। বুদায়ল ইবনে আবু মারইয়াম নামক বানু সাহমের এক জন আযাদকৃত দাস তাদের কাছে তেজারতির (ব্যবসার) উদ্দেশ্যে এলেন। তাঁর সাথে রূপার একটি পান পাত্র ছিল। তিনি এটি বাদশাহর (নিকট বিক্রির) উদ্দেশ্যে এনেছিলেন। এটিই ছিল তাঁর তেজারতির সর্বোৎকৃষ্ট বস্ত। তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি তখন তাদের কাছে ওসীয়ত করেন এবং (তাঁর মৃত্যু হলে) তাঁর রেখে যাওয়া মালপত্র তার পরিবার-পরিজনের কাছে পৌঁছে দিতে উভয়কে অনুরোধ জানান। তামীম (রাযিঃ) বলেনঃ তিনি মারা গেলে আমরা পানপাত্রটি নিয়ে গিয়ে এক হাজার দিরহামে বিক্রি করে আমি ও আদী ইবনে বাদ্দা দুই জনে তা ভাগ করে নিলাম। পরে আমরা যখন তাঁর পরিজনের নিকট ফিরে এলাম, তখন আমাদের নিকট রক্ষিত জিনিসপত্র তাদেরকে বুঝিয়ে দিলাম। কিন্তু তারা ঐ পানপাত্রটি না পেয়ে এই বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চাইল। আমরা বললামঃ যা দিয়েছি তা ছাড়া তিনি আর কিছু রেখে যান নি এবং তা ছাড়া আমাদের কাছেও তিনি অন্য কিছু রেখে যান নি।

তামীম (রাযিঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর মদীনা আগমনের পর যখন আমি ইসলাম গ্রহণ করি তখন ঐ অপরাধ থেকে মুক্তির চিন্তা করে তাঁর পরিবারের লোকদের কাছে আসি এবং মূল ব্যাপারটি তাদের জানাই। তাদেরকে পাঁচশত দিরহাম ফেরত দেই আর বলি যে, আমার সঙ্গীর কাছেও এ পরিবাণ রয়েছে, তারা তখন বিষয়টি নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর কাছে এল। তিনি তাদের কাছে প্রমাণ তলব করলেন। তারা কোন সাক্ষী পেল না। তিনি তখন তাদের ধর্মের যে বিষয়ের কসম খেলে গুরুত্ব হয় সে বিষয়ের মাধ্যমে আদীকে কসম দিতে ঐ পরিবারের লোকদের নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আদী (নিজেকে নিরপরাধ বলে) কসম খায়। এতদপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا شَهَادَةُ بَيْنِكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ إِلَى قَوْلِهِ : أَوْ يَخَافُوا أَنْ تُرَدَّ أَيْمَانٌ بَعْدَ أَيْمَانِهِمْ

এরপর আমর ইবনে আস (রাযিঃ) এবং অন্য একজন ব্যক্তি সাক্ষ্য দিতে উঠলেন। শেষে আদী ইবনে বাদদা থেকে পাঁচশ দিরহাম উসুল করা হল।

(আবু ঈসা বলেন) হাদীসটি গারীব। এর সনদ বিশুদ্ধ নয়। যে আবুন নযর-এর সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আমার মতে তিনি হলেন মুহাম্মাদ ইবনুস সাইব কালবী। তাঁর কুনিয়াত হল আবুন নযর। হাদীস বিশেজ্ঞগণ তাঁকে পরিত্যাগ করেছেন। তাঁর তাফসীরের একটি গ্রন্থও আছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (রাহঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ মুাহাম্মাদ ইবনে সাইব কালবীর কুনিয়াত হল আবুন নযর। উম্মে হানী (রাযিঃ)-এর মাওলা আবু সালিহ (রাহঃ) সূত্রে সালিম আবুন নযর মাদীনীর কোন রিওয়ায়াত আছে বলে আমাদের জানা নেই। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে সংক্ষিপ্তভাবে এই বিষয়ে অন্য সূত্রেও হাদীস বর্ণিত আছে।
بَابٌ: وَمِنْ سُورَةِ الْمَائِدَةِ
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي شُعَيْبٍ الْحَرَّانِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْحَرَّانِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِي النَّضْرِ، عَنْ بَاذَانَ، مَوْلَى أُمِّ هَانِئٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ، فِي هَذِهِ الآيَةِ : ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا شَهَادَةُ بَيْنِكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ ) قَالَ بَرِئَ مِنْهَا النَّاسُ غَيْرِي وَغَيْرَ عَدِيِّ بْنِ بَدَّاءٍ وَكَانَا نَصْرَانِيَّيْنِ يَخْتَلِفَانِ إِلَى الشَّامِ قَبْلَ الإِسْلاَمِ فَأَتَيَا الشَّامَ لِتِجَارَتِهِمَا وَقَدِمَ عَلَيْهِمَا مَوْلًى لِبَنِي سَهْمٍ يُقَالُ لَهُ بُدَيْلُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ بِتِجَارَةٍ وَمَعَهُ جَامٌ مِنْ فِضَّةٍ يُرِيدُ بِهِ الْمَلِكَ وَهُوَ عُظْمُ تِجَارَتِهِ فَمَرِضَ فَأَوْصَى إِلَيْهِمَا وَأَمَرَهُمَا أَنْ يُبَلِّغَا مَا تَرَكَ أَهْلَهُ قَالَ تَمِيمٌ فَلَمَّا مَاتَ أَخَذْنَا ذَلِكَ الْجَامَ فَبِعْنَاهُ بِأَلْفِ دِرْهَمٍ ثُمَّ اقْتَسَمْنَاهُ أَنَا وَعَدِيُّ بْنُ بَدَّاءٍ فَلَمَّا قَدِمْنَا إِلَى أَهْلِهِ دَفَعْنَا إِلَيْهِمْ مَا كَانَ مَعَنَا وَفَقَدُوا الْجَامَ فَسَأَلُونَا عَنْهُ فَقُلْنَا مَا تَرَكَ غَيْرَ هَذَا وَمَا دَفَعَ إِلَيْنَا غَيْرَهُ قَالَ تَمِيمٌ فَلَمَّا أَسْلَمْتُ بَعْدَ قُدُومِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ تَأَثَّمْتُ مِنْ ذَلِكَ فَأَتَيْتُ أَهْلَهُ فَأَخْبَرْتُهُمُ الْخَبَرَ وَأَدَّيْتُ إِلَيْهِمْ خَمْسَمِائَةِ دِرْهَمٍ وَأَخْبَرْتُهُمْ أَنَّ عِنْدَ صَاحِبِي مِثْلَهَا فَأَتَوْا بِهِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَهُمُ الْبَيِّنَةَ فَلَمْ يَجِدُوا فَأَمَرَهُمْ أَنْ يَسْتَحْلِفُوهُ بِمَا يُعْظَمُ بِهِ عَلَى أَهْلِ دِينِهِ فَحَلَفَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ : ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا شَهَادَةُ بَيْنِكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ ) إِلَى قَوْلِهِ : ( أَوْ يَخَافُوا أَنْ تُرَدَّ أَيْمَانٌ بَعْدَ أَيْمَانِهِمْ ) . فَقَامَ عَمْرُو بْنُ الْعَاصِ وَرَجُلٌ آخَرُ فَحَلَفَا فَنُزِعَتِ الْخَمْسُمِائَةِ دِرْهَمٍ مِنْ عَدِيِّ بْنِ بَدَّاءٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَلَيْسَ إِسْنَادُهُ بِصَحِيحٍ . وَأَبُو النَّضْرِ الَّذِي رَوَى عَنْهُ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ هَذَا الْحَدِيثَ هُوَ عِنْدِي مُحَمَّدُ بْنُ السَّائِبِ الْكَلْبِيُّ يُكْنَى أَبَا النَّضْرِ وَقَدْ تَرَكَهُ أَهْلُ الْحَدِيثِ وَهُوَ صَاحِبُ التَّفْسِيرِ سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ يَقُولُ مُحَمَّدُ بْنُ السَّائِبِ الْكَلْبِيُّ يُكْنَى أَبَا النَّضْرِ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَلاَ نَعْرِفُ لِسَالِمٍ أَبِي النَّضْرِ الْمَدَنِيِّ رِوَايَةً عَنْ أَبِي صَالِحٍ مَوْلَى أُمِّ هَانِئٍ وَقَدْ رُوِيَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ شَيْءٌ مِنْ هَذَا عَلَى الاِخْتِصَارِ مِنْ غَيْرِ هَذَا الْوَجْهِ .
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ৩০৫৯ | মুসলিম বাংলা