আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৪৬. কুরআনের তাফসীর অধ্যায়
হাদীস নং: ৩০৫৭
আন্তর্জাতিক নং: ৩০৫৭
সূরা আল-মাইদা
৩০৫৭. আহমদ ইবনে মানী’ (রাহঃ) ....... আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হে লোক সকল! তোমরা এই আয়াত পাঠ করে থাক যে, (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لاَ يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ) হে মু’মিনগণ, তোমাদের নিজেদের সংশোধন করাই তোমাদের কর্তব্য। তোমরা যদি হিদায়তের উপর থাক, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না (৫ঃ ১০৫)। অথচ আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষ যখন কোন জালিমকে দেখে আর তার হাত ধরে যদি তাকে নিবৃত না করে তবে আশঙ্কা যে, অচিরেই আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে ব্যাপক আযাবে নিপতিত করবেন।
হাদীসটি হাসান-সহীহ। একাধিক রাবী এটি ইসমাঈল ইবনে আবু খালিদ (রাহঃ) সূত্রে মারফু’ হিসাবে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। কোন কোন রাবী ইসমাঈল ..... কায়স (রাহঃ) সূত্রে আবু বকর (রাযিঃ) এর বক্তব্য রূপে এটি রিওয়ায়াত করেছেন। তাঁরা এটি মারফু’ করেন নি।
হাদীসটি হাসান-সহীহ। একাধিক রাবী এটি ইসমাঈল ইবনে আবু খালিদ (রাহঃ) সূত্রে মারফু’ হিসাবে অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন। কোন কোন রাবী ইসমাঈল ..... কায়স (রাহঃ) সূত্রে আবু বকর (রাযিঃ) এর বক্তব্য রূপে এটি রিওয়ায়াত করেছেন। তাঁরা এটি মারফু’ করেন নি।
بَابٌ: وَمِنْ سُورَةِ الْمَائِدَةِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي خَالِدٍ، عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ، أَنَّهُ قَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُونَ هَذِهِ الآيَةَ : ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لاَ يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ ) وَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا ظَالِمًا فَلَمْ يَأْخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ مِنْهُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَقَدْ رَوَاهُ غَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ نَحْوَ هَذَا الْحَدِيثِ مَرْفُوعًا وَرَوَى بَعْضُهُمْ عَنْ إِسْمَاعِيلَ عَنْ قَيْسٍ عَنْ أَبِي بَكْرٍ قَوْلَهُ وَلَمْ يَرْفَعُوهُ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ বর্ণনায় হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. যে আয়াত উল্লেখ করেছেন, বাহ্যদৃষ্টিতে তা দ্বারা বোঝা যায়- কেউ যদি নিজে শরী'আতের আদেশ-নিষেধ মেনে চলে তবে তার মুক্তির জন্য সেটাই যথেষ্ট, অন্যে কী করল না করল তা দেখার প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ এ আয়াতটি দ্বারা সে অর্থই বুঝেছিল। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি, তাদের সে ধারণা ভুল সাব্যস্ত করেন এবং হাদীছ দ্বারা এ আয়াতটির প্রকৃত অর্থ তাদেরকে বুঝিয়ে দেন।
তিনি যে হাদীছ উল্লেখ করেছেন তাতে স্পষ্টই বলা হয়েছে- জালেমকে তার জুলুমের কাজে বাধা না দেওয়া হলে যারা জুলুম করে এবং যারা জুলুম করে না আল্লাহ তা'আলা তাদের সকলকেই শাস্তিদান করবেন। জালেমকে শাস্তিদান করবেন তার জুলুমের কারণে আর অন্যদেরকে শাস্তিদান করবেন জুলুমে বাধা না দিয়ে নীরবদর্শক হয়ে থাকার কারণে। বোঝা গেল জুলুমে বাধা দান করা ফরয ও অবশ্যকর্তব্য। এর আগে যতগুলো হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলোতেই সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করাকে জরুরি সাব্যস্ত করা হয়েছে।
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি, হাদীছটির উল্লেখ দ্বারা বোঝাতে চাচ্ছেন যে, তোমরা আসলে আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করছ। এক বর্ণনায় আছে, তিনি তাদেরকে এ কথাও বলেছিলেন যে-
وَتَضَعُونَهَا غَيْرَ مَوْضِعِهَا
এবং তোমরা একে ভুল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছ। মুসনাদে আহমান, হাদীছ নং ১৬
বস্তুত সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করা অবশ্যই জরুরি এবং সাধ্যমত এটা করতেই হবে। আয়াতটির বক্তব্য এর পরিপন্থী নয়। আয়াতে বোঝানো হচ্ছে যে, তোমরা নিজেরা সৎকর্মে প্রতিষ্ঠিত ও অসৎকর্ম হতে বিরত থেকে যারা সৎকর্ম করে না তাদেরকে যদি সৎকর্ম করতে বল এবং যারা অসৎকর্ম করে তাদেরকে সাধ্যমত বাধাদান কর আর তা সত্ত্বেও তারা তা থেকে ফিরে না আসে, তবে তাদের এ বিপথগামিতা দ্বারা তোমাদের কোনও ক্ষতি হবে না, যেহেতু তোমরা তোমাদের কর্তব্য পালন করেছ।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও অন্যায়-অসৎকাজে বাধা দেওয়ার আবশ্যিকতা বোঝা যায়।
খ. এর দ্বারা জানা যায় যে, হাদীছ কুরআন মাজীদের ব্যাখ্যা। কুরআন মাজীদের কোনও আয়াতে কোনও বিষয় অস্পষ্ট থাকলে হাদীছে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাই কুরআন বোঝার জন্য হাদীছের দ্বারস্থ হওয়া জরুরি।
গ. যারা কুরআন ও হাদীছের যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না তাদের উচিত নয় নিজে নিজে কোনও আয়াত বা হাদীছের ব্যাখ্যা করতে যাওয়া বা তাদের নিজেদের যা বুঝে আসে তা নিয়ে বসে থাকা। তাদের কর্তব্য আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে নিজেদের বুঝ সঠিক না ভুল—তা তাদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া।
ঘ. এটা উলামায়ে কিরামের দায়িত্ব যে, তারা যদি কাউকে কুরআন-হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা করতে দেখেন, তবে সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করবেন এবং মানুষের মধ্যে তা প্রচার হয়ে গেলে মানুষকেও সে ব্যাপারে সাবধান করে দেবেন। সে ক্ষেত্রে মানুষের কর্তব্য তাদের সমালোচনা না করে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করে নেওয়া, যেহেতু তারা তাদের ওপর অর্পিত যিম্মাদারীই পালন করেছেন।
তিনি যে হাদীছ উল্লেখ করেছেন তাতে স্পষ্টই বলা হয়েছে- জালেমকে তার জুলুমের কাজে বাধা না দেওয়া হলে যারা জুলুম করে এবং যারা জুলুম করে না আল্লাহ তা'আলা তাদের সকলকেই শাস্তিদান করবেন। জালেমকে শাস্তিদান করবেন তার জুলুমের কারণে আর অন্যদেরকে শাস্তিদান করবেন জুলুমে বাধা না দিয়ে নীরবদর্শক হয়ে থাকার কারণে। বোঝা গেল জুলুমে বাধা দান করা ফরয ও অবশ্যকর্তব্য। এর আগে যতগুলো হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলোতেই সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করাকে জরুরি সাব্যস্ত করা হয়েছে।
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি, হাদীছটির উল্লেখ দ্বারা বোঝাতে চাচ্ছেন যে, তোমরা আসলে আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করছ। এক বর্ণনায় আছে, তিনি তাদেরকে এ কথাও বলেছিলেন যে-
وَتَضَعُونَهَا غَيْرَ مَوْضِعِهَا
এবং তোমরা একে ভুল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছ। মুসনাদে আহমান, হাদীছ নং ১৬
বস্তুত সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করা অবশ্যই জরুরি এবং সাধ্যমত এটা করতেই হবে। আয়াতটির বক্তব্য এর পরিপন্থী নয়। আয়াতে বোঝানো হচ্ছে যে, তোমরা নিজেরা সৎকর্মে প্রতিষ্ঠিত ও অসৎকর্ম হতে বিরত থেকে যারা সৎকর্ম করে না তাদেরকে যদি সৎকর্ম করতে বল এবং যারা অসৎকর্ম করে তাদেরকে সাধ্যমত বাধাদান কর আর তা সত্ত্বেও তারা তা থেকে ফিরে না আসে, তবে তাদের এ বিপথগামিতা দ্বারা তোমাদের কোনও ক্ষতি হবে না, যেহেতু তোমরা তোমাদের কর্তব্য পালন করেছ।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও অন্যায়-অসৎকাজে বাধা দেওয়ার আবশ্যিকতা বোঝা যায়।
খ. এর দ্বারা জানা যায় যে, হাদীছ কুরআন মাজীদের ব্যাখ্যা। কুরআন মাজীদের কোনও আয়াতে কোনও বিষয় অস্পষ্ট থাকলে হাদীছে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাই কুরআন বোঝার জন্য হাদীছের দ্বারস্থ হওয়া জরুরি।
গ. যারা কুরআন ও হাদীছের যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না তাদের উচিত নয় নিজে নিজে কোনও আয়াত বা হাদীছের ব্যাখ্যা করতে যাওয়া বা তাদের নিজেদের যা বুঝে আসে তা নিয়ে বসে থাকা। তাদের কর্তব্য আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে নিজেদের বুঝ সঠিক না ভুল—তা তাদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া।
ঘ. এটা উলামায়ে কিরামের দায়িত্ব যে, তারা যদি কাউকে কুরআন-হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা করতে দেখেন, তবে সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করবেন এবং মানুষের মধ্যে তা প্রচার হয়ে গেলে মানুষকেও সে ব্যাপারে সাবধান করে দেবেন। সে ক্ষেত্রে মানুষের কর্তব্য তাদের সমালোচনা না করে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করে নেওয়া, যেহেতু তারা তাদের ওপর অর্পিত যিম্মাদারীই পালন করেছেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
