আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৪৬. কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং: ২৯৫৩
আন্তর্জাতিক নং: ২৯৫৩
সূরা ফাতিহা
২৯৫৩. কুতায়বা (রাহঃ) ...... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার নামাযে উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পাঠ করবে না তার নামায হবে ক্রটিযুক্ত, অসম্পূর্ণ। রাবী আব্দুর রহমান (রাহঃ) বলেন, আমি বললামঃ হে আবু হুরায়রা, আমি তো অনেক সময় ইমামের পেছনে থাকি।

তিনি বললেনঃ হে পারস্য সন্তান, তখন মনে মনে তা পাঠ করবে। আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেনঃ আমি নামায (সূরা ফাতিহা)-কে আমার ও আমার বান্দার মাঝে দুই ভাগে অর্ধাঅর্ধি বিভক্ত করে দিয়েছি। তার অর্ধেক আমার আর অর্ধেক আমার বান্দার। আর আমার বান্দারা যা চাইবে তাই পাবে।
বান্দা নামাযে দাঁড়িয়ে বলেঃ আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

তখন আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।

বান্দা বলেঃ আর রহমানির রাহীম।

আল্লাহ্ বলেনঃ বান্দা আমার ছানা ছিফাত করেছে।

বান্দা বলেঃ মালিকি ইয়াও মিদ্দীন।

আল্লাহ্ বলেনঃ আমার বান্দা আমার মর্যাদা দিয়েছে।

এতটুকু হল আমার। আমার এবং আমার বান্দার মাঝে হল, ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তা’ঈন। সূরার শেষ অংশ হল আমার বান্দার। বান্দা আমার কাছে যা চাইবে তা পাবে।

বান্দা বলেঃ ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম, সীরাতাল্লাযীনা আনআমতা আলাইহিম গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালায্যাল্লীন। ইবনে মাজাহ, মুসলিম

হাদীসটি হাসান। শু’বা ও ইসমাঈল ইবনে জা’ফর প্রমুখ (রাহঃ) ......... আলা ইবনে আব্দুর রহমান ......... আব্দুর রহমান ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইবনে জুরায়জ ও মালিক ইবনে আনাস (রাহঃ) ......... আলা ইবনে আব্দুর রহমান ......... হিশাম ইবনে যোহরার মাওলা আবু’স সাইব ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহয়া ও ইয়াকুব ইবনে সূফইয়ান ফারসী (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি উম্মুল কুরআন পাঠ ছাড়া নামায আদায় করে তার নামায হল ক্রটিযুক্ত, অসম্পূর্ণ। ইসমাঈল ইবনে উওয়ায়স (রাহঃ)-এর রিওয়ায়াতে এর অতিরিক্ত কিছু নেই। আবু যুরআ (রাহঃ)-কে আমি এই হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেন, উভয় হাদীসই সহীহ। তিনি ইবনে আবু উওয়ায়স-তার পিতা আবু উওয়ায়স ......... আলা (রাহঃ) এর রিওয়ায়াতটি দলীল হিসাবে ব্যবহার করেছেন।

আব্দ ইবনে হুমায়দ (রাহঃ) ......... আদী ইবনে হাতিম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর কাছে আসলাম। তিনি তখন মসজিদে বসা ছিলেন। লোকেরা বললঃ ইনি হলেন আদী ইবনে হাতিম। আমি কোনরূপ নিরাপত্তা লাভ বা চুক্তিপত্র সম্পাদন ছাড়াই তাঁর নিকট এসেছিলাম। আমাকে তাঁর সামনে হাযির করা হলে তিনি আমার হাত ধরলেন। এর আগেই তিনি বলেছিলেন, আমি আশা করছি, আল্লাহ্ তাআলা আমার হাতে তাঁর হাত অর্পণ করবেন।

আদী (রাযিঃ) বলেন, তিনি আমাকে নিয়ে উঠে চললেন। পথে একটি বালকসহ এক মহিলা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করে। তারা বললঃ আপনার কাছে আমাদের একটু দরকার ছিল। তাদের প্রয়োজন সমাধা না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর তিনি আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে তাঁর ঘরে এলেন। একটি বালিকা একটি গদি বিছিয়ে দিল। তিনি তাতে বসলেন আর আমি তাঁর সামনে বসলাম। তখন তিনি আল্লাহর হামদ ও ছানা পাঠ করলেন। এরপর বললেনঃ আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ আছে বলে তুমি কি জান? আদী বলেন, আমি বললামঃ না।

এরপর তিনি আরো কিছুক্ষণ কা বলে পরে বললেন: তুমি’আল্লাহু আকবার’ এই কথা বলা থেকে ভাগছ। আল্লাহর চেয়েও বড় কিছু আছে বলে তুমি কি জানো?

আমি বললামঃ না। তিনি বললেনঃ ইয়াহুদীরা তো আল্লাহর অভিশপ্ত জাতি আর নাসারারা হল পথভ্রষ্ট।

আমি বললামঃ আমি তো একজন একনিষ্ঠ মুসলিম। আমি দেখলাম তাঁর চেহারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। এরপর তাঁর নির্দেশে আমাকে জনৈক আনসারীর বাড়িতে মেহমান হিসাবে রাখা হয়। দিনের দুই প্রান্তে আমি তাঁর খেদমতে এসে হাজির হতাম। একদিন বিকালে তাঁর কাছে হাযির ছিলাম। এমন সময় সাদা-কাল ডোরাকাটা রেশমী পোশাকে একদল লোক এল। নবী (ﷺ) নামায আদায় করলেন এবং দাঁড়িয়ে এদের সাহায্য করার জন্য লোকদের উৎসাহিত করলেন। বললেনঃ একসা’, অর্ধসা’, একমুষ্ঠি বা মুষ্ঠির অংশ হলেও তা দান করে জাহান্নামের আগুনের তাপ থেকে তোমরা নিজেদের রক্ষা কর; একটা খেজুর বা খেজুরের অংশ দিয়ে হলেও। কেননা আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাত হবে। আমি তোমাদের যা বলছি তিনি তোমাদের তা বলবেনঃ আমি কি তোমাকে কান ও চোখ দেই নি? সে বলবেঃ অবশ্যই।

আল্লাহ্ বলবেনঃ তোমাকে কি আমি সম্পদ ও সন্তান দেইনি?

আল্লাহ্ বলবেনঃ তোমার নিজের জন্যে অগ্রে কি পাঠিয়ে এসেছ?

সে তার সামনের দিকে তাকাবে। তার পেছনে, ডানে এবং বামে তাকাবে। কিন্তু সে জাহান্নামের ভীষণ উত্তাপ থেকে নিজেকে রক্ষার কিছু পাবে না।

সুতরাং তোমরা একটা খেজুরে অংশও দান করে হলে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের রক্ষা কর। তা যদি না পাও, তবে ভাল কথার মাধ্যমে হলেও তা কর। কারণ, আমি তোমাদের ব্যাপারে উপবাসের আশঙ্কা করি না। আল্লাহ্ তোমাদের সাহায্য করবেন। তিনি তোমাদের প্রচুর দান করবেন। এমনটি উষ্ট্রারোহিণী কোন মহিলা ইয়াছরিব (মদীনা) ও হেরার মাঝে বহু সফর করবে কিন্তু সে তার বাহনের কিছু চুরির কোন আশঙ্কা করবে না। আদী (রাযিঃ) বলেন, আমি মনে মনে বললামঃ তাহলে কবীলার চোরগুলো তখন যাবে কোথায়?

হাদীসটি হাসান-গারীব। সিমাক ইবনে হারব (রাহঃ) এর রিওয়ায়াত ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছূ জানা নেই। শু’বা (রাহঃ) সিমাক ইবনে হারব-আব্বাদ ইবনে হুবায়শ-আদী ইবনে হাতীম (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে দীর্ঘ হাদীসটি বর্ণনা করেন।
بَابٌ: وَمِنْ سُورَةِ فَاتِحَةِ الكِتَابِ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ صَلَّى صَلاَةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ فَهِيَ خِدَاجٌ غَيْرُ تَمَامٍ " . قَالَ قُلْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ إِنِّي أَحْيَانًا أَكُونُ وَرَاءَ الإِمَامِ . قَالَ يَا ابْنَ الْفَارِسِيِّ فَاقْرَأْهَا فِي نَفْسِكَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " قَالَ اللَّهُ تَعَالَى قَسَمْتُ الصَّلاَةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ فَنِصْفُهَا لِي وَنِصْفُهَا لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ يَقُومُ الْعَبْدُ فَيَقْرَأُ : (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ) فَيَقُولُ اللَّهُ حَمِدَنِي عَبْدِي فَيَقُولُ : (الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ) فَيَقُولُ اللَّهُ أَثْنَى عَلَىَّ عَبْدِي فَيَقُولُ : ( مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ) فَيَقُولُ مَجَّدَنِي عَبْدِي وَهَذَا لِي وَبَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي : (إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ) وَآخِرُ السُّورَةِ لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ يَقُولُ : (اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ) " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَقَدْ رَوَى شُعْبَةُ وَإِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ وَغَيْرُ وَاحِدٍ عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ هَذَا الْحَدِيثِ . وَرَوَى ابْنُ جُرَيْجٍ وَمَالِكُ بْنُ أَنَسٍ عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِي السَّائِبِ مَوْلَى هِشَامِ بْنِ زُهْرَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ هَذَا .

وَرَوَى ابْنُ أَبِي أُوَيْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي وَأَبُو السَّائِبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ هَذَا . أَخْبَرَنَا بِذَلِكَ مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى النَّيْسَابُورِيُّ وَيَعْقُوبُ بْنُ سُفْيَانَ الْفَارِسِيُّ قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي أُوَيْسٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ حَدَّثَنِي أَبِي وَأَبُو السَّائِبِ مَوْلَى هِشَامِ بْنِ زُهْرَةَ وَكَانَا جَلِيسَيْنِ لأَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ صَلَّى صَلاَةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ فَهِيَ خِدَاجٌ غَيْرُ تَمَامٍ " . وَلَيْسَ فِي حَدِيثِ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي أُوَيْسٍ أَكْثَرُ مِنْ هَذَا . وَسَأَلْتُ أَبَا زُرْعَةَ عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ فَقَالَ كِلاَ الْحَدِيثَيْنِ صَحِيحٌ . وَاحْتَجَّ بِحَدِيثِ ابْنِ أَبِي أُوَيْسٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ الْعَلاَءِ .

أَخْبَرَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَعْدٍ، أَنْبَأَنَا عَمْرُو بْنُ أَبِي قَيْسٍ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، عَنْ عَبَّادِ بْنِ حُبَيْشٍ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، قَالَ أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ جَالِسٌ فِي الْمَسْجِدِ فَقَالَ الْقَوْمُ هَذَا عَدِيُّ بْنُ حَاتِمٍ . وَجِئْتُ بِغَيْرِ أَمَانٍ وَلاَ كِتَابٍ فَلَمَّا دَفَعْتُ إِلَيْهِ أَخَذَ بِيَدِي وَقَدْ كَانَ قَالَ قَبْلَ ذَلِكَ إِنِّي لأَرْجُو أَنْ يَجْعَلَ اللَّهُ يَدَهُ فِي يَدِي قَالَ فَقَامَ بِي فَلَقِيَتْهُ امْرَأَةٌ وَصَبِيٌّ مَعَهَا . فَقَالاَ إِنَّ لَنَا إِلَيْكَ حَاجَةً فَقَامَ مَعَهُمَا حَتَّى قَضَى حَاجَتَهُمَا ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي حَتَّى أَتَى بِي دَارَهُ فَأَلْقَتْ لَهُ الْوَلِيدَةُ وِسَادَةً فَجَلَسَ عَلَيْهَا وَجَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ " مَا يُفِرُّكَ أَنْ تَقُولَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ فَهَلْ تَعْلَمُ مِنْ إِلَهٍ سِوَى اللَّهِ " . قَالَ قُلْتُ لاَ . قَالَ ثُمَّ تَكَلَّمَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ " إِنَّمَا تَفِرُّ أَنْ تَقُولَ اللَّهُ أَكْبَرُ وَتَعْلَمُ أَنَّ شَيْئًا أَكْبَرُ مِنَ اللَّهِ " . قَالَ قُلْتُ لاَ قَالَ " فَإِنَّ الْيَهُودَ مَغْضُوبٌ عَلَيْهِمْ وَإِنَّ النَّصَارَى ضُلاَّلٌ " . قَالَ قُلْتُ فَإِنِّي جِئْتُ مُسْلِمًا . قَالَ فَرَأَيْتُ وَجْهَهُ تَبَسَّطَ فَرَحًا قَالَ ثُمَّ أَمَرَ بِي فَأُنْزِلْتُ عِنْدَ رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ جَعَلْتُ أَغْشَاهُ آتِيهِ طَرَفَىِ النَّهَارِ قَالَ فَبَيْنَا أَنَا عِنْدَهُ عَشِيَّةً إِذْ جَاءَهُ قَوْمٌ فِي ثِيَابٍ مِنَ الصُّوفِ مِنْ هَذِهِ النِّمَارِ قَالَ فَصَلَّى وَقَامَ فَحَثَّ عَلَيْهِمْ ثُمَّ قَالَ " وَلَوْ صَاعٌ وَلَوْ بِنِصْفِ صَاعٍ وَلَوْ بِقَبْضَةٍ وَلَوْ بِبَعْضِ قَبْضَةٍ يَقِي أَحَدُكُمْ وَجْهَهُ حَرَّ جَهَنَّمَ أَوِ النَّارِ وَلَوْ بِتَمْرَةٍ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَقِي اللَّهَ وَقَائِلٌ لَهُ مَا أَقُولُ لَكُمْ أَلَمْ أَجْعَلْ لَكَ سَمْعًا وَبَصَرًا فَيَقُولُ بَلَى . فَيَقُولُ أَلَمْ أَجْعَلْ لَكَ مَالاً وَوَلَدًا فَيَقُولُ بَلَى . فَيَقُولُ أَيْنَ مَا قَدَّمْتَ لِنَفْسِكَ فَيَنْظُرُ قُدَّامَهُ وَبَعْدَهُ وَعَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ لاَ يَجِدُ شَيْئًا يَقِي بِهِ وَجْهَهُ حَرَّ جَهَنَّمَ لِيَقِ أَحَدُكُمْ وَجْهَهُ النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ فَإِنِّي لاَ أَخَافُ عَلَيْكُمُ الْفَاقَةَ فَإِنَّ اللَّهَ نَاصِرُكُمْ وَمُعْطِيكُمْ حَتَّى تَسِيرَ الظَّعِينَةُ فِيمَا بَيْنَ يَثْرِبَ وَالْحِيرَةِ أَكْثَرُ مَا تَخَافُ عَلَى مَطِيَّتِهَا السَّرَقَ " . قَالَ فَجَعَلْتُ أَقُولُ فِي نَفْسِي فَأَيْنَ لُصُوصُ طَيِّئٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ . وَرَوَى شُعْبَةُ عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ عَنْ عَبَّادِ بْنِ حُبَيْشٍ عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الْحَدِيثَ بِطُولِهِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

শেষাংশের ব্যাখ্যাঃ

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে বলেছেন। জাহান্নাম পাপীদের ঠিকানা। সেখানে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তার প্রধান শাস্তিالنار (আগুন)। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা বার বার মানুষকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং এর থেকে বাঁচার তাগিদ দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ- فاتقوا النار التي وقودها الناس والحجارة অর্থ : তোমরা বাঁচ ওই আগুন থেকে, যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর। জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধ পালন করা। অর্থাৎ সৎকর্ম করতে থাকা ও অসৎকর্ম পরিহার করে চলা। সৎকর্ম আছে বিভিন্ন রকম, যেমন পূর্বের হাদীছসমূহ দ্বারা আমরা জানতে পেরেছি। তার মধ্যে একটা সৎকর্ম বলা হয়েছে আল্লাহর পথে দান-সদাকা করা।

এ হাদীছেও প্রধানত সদাকার কথাই বলা হয়েছে যে, একটা খেজুরের একটি অংশ সদাকা করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচ। এর দ্বারা সর্বনিম্ন সামর্থ্যের কথা বোঝানো হয়েছে। কারও অবস্থা যদি এমন হয় যে, সে কোনও ক্ষুধার্তকে একটা মাত্র খেজুর দেওয়ারও সামর্থ্য রাখে না, অর্থাৎ দেওয়ার মত একটা খেজুরও তার কাছে নেই, একটা খেজুরের অর্ধেক মাত্র আছে, তবে সে সে অর্ধেকটুকুই দিয়ে দেবে। আল্লাহ তা'আলা মানুষের দানের অঙ্ক দেখেন না। তিনি দেখেন তার মন। অর্থাৎ তার মনে দেওয়ার ইচ্ছা আছে কি না। যদি দেওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী যা দেবে তা-ই আল্লাহর কাছে মূল্যবান। তাকেই আল্লাহ তার জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে কবূল করে নেবেন।

এরপর বলা হয়েছে যদি কারও অর্ধেকটুকু দেওয়ারও ক্ষমতা না থাকে, তবে তার যে আর জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোনও উপায় রইল না এমন নয়, সে এর জন্য অন্য কোনও উপায় অবলম্বন করতে পারে। সেরকম একটি উপায় হচ্ছে উত্তম কথা বলা।পূর্বে আমরা জানতে পেরেছি উত্তম কথা বলাও সদাকাতুল্য। অর্থাৎ এর দ্বারাও সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং যে ব্যক্তি দান-সদাকা করার সামর্থ্য রাখে না, সে যদি উত্তম কথা বলে, তবে এর মাধ্যমেও সে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারবে।

উত্তম কথা অতি ব্যাপক। এর মধ্যে যেমন কুরআন তিলাওয়াত ও যিকর-তাসবীহ ইত্যাদি রয়েছে, তেমনি মানুষকে সুপরামর্শ দেওয়া, সৎকাজের আদেশ করা, অসৎকাজে নিষেধ করা, বৈধ সুপারিশ করা, দীনী ইলম শেখানো, শোকার্তকে সান্ত্বনা দেওয়া ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ভালো ও মন্দ কোনও আমলকেই অবহেলা করতে নেই। আখিরাতে সবই নিজ চোখে দেখতে পাওয়া যাবে এবং তার পুরোপুরি প্রতিফলও দেওয়া হবে।

খ. দান-সদাকা জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি উপায়। কাজেই যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব দান-সদাকা করা উচিত।

গ. নিতান্ত গরীব ব্যক্তি যদি অতি সামান্য কিছুও দান করে, তবে তাও তার জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ হতে পারে। কাজেই সামান্য বলে তাকে তুচ্ছ মনে করতে নেই।

ঘ. উত্তম কথা বলাও যেহেতু জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়, তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত যথাসম্ভব ভালো ভালো কথা বলতে সচেষ্ট থাকা এবং কোনও অবস্থাতেই কোনও মন্দ কথা না বলা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ২৯৫৩ | মুসলিম বাংলা