আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৪২. অনুমতি প্রার্থনা ও বিবিধ শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং: ২৮৫৫
আন্তর্জাতিক নং: ২৮৫৫
ভাষার অলংকরণ ও বিবৃতি।
২৮৫৫. মাহমুদ ইবনে গায়লান (রাহঃ) ..... আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাদের বিরক্তির আশঙ্কায় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) দিনসমূহের মাঝে ওয়াজ-নসীহতের ব্যাপারে আমাদের অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখতেন।
بَابُ مَا جَاءَ فِي الفَصَاحَةِ وَالبَيَانِ
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو أَحْمَدَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَتَخَوَّلُنَا بِالْمَوْعِظَةِ فِي الأَيَّامِ مَخَافَةَ السَّآمَةِ عَلَيْنَا . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، حَدَّثَنِي شَقِيقُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، نَحْوَهُ .
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، حَدَّثَنِي شَقِيقُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، نَحْوَهُ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নসীহত করার জন্য উপযুক্ত সময়ের সন্ধান করতেন- আমাদের বিরক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কায়)। يَتَخَوَّلُنَا শব্দটিকে তিনভাবে পড়া হয়েছে। এক তো خ এর সঙ্গে, এখানে যেমনটা আছে। দ্বিতীয় হল خ এর পরিবর্তে ح এর সঙ্গে يَتَحَوَّلُنَا । আর তৃতীয় হল خ এর সঙ্গেই, তবে শেষে ل এর স্থানে ن অর্থাৎ ا يَتَخَوَّنُنَا
يَتَحَوَّلُ এর মাসদার হল التَّحَوُّلُ। এর অর্থ تَفَقّدُ الْأَحْوَالِ । অর্থাৎ তিনি তাদের অবস্থা খতিয়ে দেখতেন। যখন তাদের মধ্যে উপদেশ শোনার আগ্রহ-উদ্দীপনা থাকত, তখন উপদেশ দিতেন। তবে তারা যাতে বিরক্ত হয়ে না পড়ে, সেজন্য খুব লম্বা-চওড়া নসীহত করতেন না।
يَتَخَوَّنُ এর মাসদার হল اَلتَّخَوُّنُ। এর অর্থও اَلتَّعَهدُ। ইমাম আসমা‘ঈ রহ, শব্দটিকে এভাবেই পড়তেন। মাজমা'উল গারাইব গ্রন্থে আছে, ইমাম আসমা'ঈ রহ. বলেন, আমার ধারণা শব্দটি হবে يَتَخَوَّلُ) يَتَخَوَّنُ নয়)। একবার ইমাম আ‘মাশ রহ. এ হাদীছটি يَتَخَوَّلُ এর সঙ্গে বর্ণনা করলে আবূ আমর ইবনুল ‘আলা রহ. আপত্তি করেন এবং বলেন, শব্দটি হবে يَتَخَوَّنُ। কিন্তু হাদীছটি তিনি তাঁর উস্তাযবর্গের নিকট যেহেতু এভাবেই শুনেছেন, তাই তিনি সে আপত্তি গ্রহণ করেননি। প্রকৃতপক্ষে উভয় শব্দই সহীহ। তবে সাধারণভাবে এটি يَتَخَوَّلُ রূপেই বেশি বর্ণিত।
يَتَخَوَّلُ এর মাসদার (ক্রিয়ামূল) হল اَلتَّخَوُّلُ। এর অর্থ اَلتَّعَهدُ (লক্ষ রাখা, যত্ন নেওয়া, পরিচর্যা করা, তদারকি করা, পরিচালনা করা, সম্পাদন করা)। বলা হয়, خَالَ المَالَ 'সে তার সম্পদের পরিচর্যা করল এবং তার উত্তম বন্দোবস্ত করল'। সুতরাং শব্দটি দ্বারা এ হাদীছে বোঝানো হচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের প্রতি লক্ষ রাখতেন। তাদের দীনী জীবন গঠনের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতেন। তিনি তাদের উত্তম পরিচালনা করতেন। সে হিসেবে শিক্ষাদান ও উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি লক্ষ রাখতেন যাতে তা দ্বারা তাদেরকে উত্তমরূপে গঠন করা যায়। আর সে লক্ষ্যে তিনি প্রতিদিন শিক্ষাদান করতেন না এবং উপর্যুপরি উপদেশও দিতেন না। বরং সময়-সুযোগ ও পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখতেন এবং যখন যা শিক্ষা দেওয়ার বা যখন যে উপদেশ দেওয়ার তা দিতেন।
এটা প্রতিদিন করলে এ আশঙ্কা ছিল যে, তারা বিরক্ত হয়ে পড়বেন। ফলে আগ্রহের সঙ্গে তা গ্রহণ করবেন না। আর এতে করে তাদেরকে উত্তমরূপে গড়ে তোলার যে উদ্দেশ্য ছিল তাও সফল হবে না। উল্টো শুধু শুধুই তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে। একজন মহান শিক্ষকরূপে তিনি তা পসন্দ করতেন না। কুরআন মাজীদে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘তোমাদের যে-কোনও কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু।’ (সূরা তাওবা (৯), আয়াত ১২৮)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শিক্ষার্থী যাতে শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহ না হারায়, সেদিকে লক্ষ রাখাও একজন শিক্ষকের দায়িত্ব। সুতরাং যে আচরণ ও কর্মপন্থা তাদের উৎসাহ ক্ষুণ্ণ করতে পারে, শিক্ষককে অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
খ. শ্রোতা যতটুকু বুঝতে ও মনে রাখতে সক্ষম হবে, সেদিকে লক্ষ রেখেই ওয়াজ-নসীহত করা উচিত।
يَتَحَوَّلُ এর মাসদার হল التَّحَوُّلُ। এর অর্থ تَفَقّدُ الْأَحْوَالِ । অর্থাৎ তিনি তাদের অবস্থা খতিয়ে দেখতেন। যখন তাদের মধ্যে উপদেশ শোনার আগ্রহ-উদ্দীপনা থাকত, তখন উপদেশ দিতেন। তবে তারা যাতে বিরক্ত হয়ে না পড়ে, সেজন্য খুব লম্বা-চওড়া নসীহত করতেন না।
يَتَخَوَّنُ এর মাসদার হল اَلتَّخَوُّنُ। এর অর্থও اَلتَّعَهدُ। ইমাম আসমা‘ঈ রহ, শব্দটিকে এভাবেই পড়তেন। মাজমা'উল গারাইব গ্রন্থে আছে, ইমাম আসমা'ঈ রহ. বলেন, আমার ধারণা শব্দটি হবে يَتَخَوَّلُ) يَتَخَوَّنُ নয়)। একবার ইমাম আ‘মাশ রহ. এ হাদীছটি يَتَخَوَّلُ এর সঙ্গে বর্ণনা করলে আবূ আমর ইবনুল ‘আলা রহ. আপত্তি করেন এবং বলেন, শব্দটি হবে يَتَخَوَّنُ। কিন্তু হাদীছটি তিনি তাঁর উস্তাযবর্গের নিকট যেহেতু এভাবেই শুনেছেন, তাই তিনি সে আপত্তি গ্রহণ করেননি। প্রকৃতপক্ষে উভয় শব্দই সহীহ। তবে সাধারণভাবে এটি يَتَخَوَّلُ রূপেই বেশি বর্ণিত।
يَتَخَوَّلُ এর মাসদার (ক্রিয়ামূল) হল اَلتَّخَوُّلُ। এর অর্থ اَلتَّعَهدُ (লক্ষ রাখা, যত্ন নেওয়া, পরিচর্যা করা, তদারকি করা, পরিচালনা করা, সম্পাদন করা)। বলা হয়, خَالَ المَالَ 'সে তার সম্পদের পরিচর্যা করল এবং তার উত্তম বন্দোবস্ত করল'। সুতরাং শব্দটি দ্বারা এ হাদীছে বোঝানো হচ্ছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের প্রতি লক্ষ রাখতেন। তাদের দীনী জীবন গঠনের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতেন। তিনি তাদের উত্তম পরিচালনা করতেন। সে হিসেবে শিক্ষাদান ও উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি লক্ষ রাখতেন যাতে তা দ্বারা তাদেরকে উত্তমরূপে গঠন করা যায়। আর সে লক্ষ্যে তিনি প্রতিদিন শিক্ষাদান করতেন না এবং উপর্যুপরি উপদেশও দিতেন না। বরং সময়-সুযোগ ও পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখতেন এবং যখন যা শিক্ষা দেওয়ার বা যখন যে উপদেশ দেওয়ার তা দিতেন।
এটা প্রতিদিন করলে এ আশঙ্কা ছিল যে, তারা বিরক্ত হয়ে পড়বেন। ফলে আগ্রহের সঙ্গে তা গ্রহণ করবেন না। আর এতে করে তাদেরকে উত্তমরূপে গড়ে তোলার যে উদ্দেশ্য ছিল তাও সফল হবে না। উল্টো শুধু শুধুই তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে। একজন মহান শিক্ষকরূপে তিনি তা পসন্দ করতেন না। কুরআন মাজীদে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘তোমাদের যে-কোনও কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু।’ (সূরা তাওবা (৯), আয়াত ১২৮)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শিক্ষার্থী যাতে শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহ না হারায়, সেদিকে লক্ষ রাখাও একজন শিক্ষকের দায়িত্ব। সুতরাং যে আচরণ ও কর্মপন্থা তাদের উৎসাহ ক্ষুণ্ণ করতে পারে, শিক্ষককে অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
খ. শ্রোতা যতটুকু বুঝতে ও মনে রাখতে সক্ষম হবে, সেদিকে লক্ষ রেখেই ওয়াজ-নসীহত করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
