আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৪২. অনুমতি প্রার্থনা ও বিবিধ শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৬৯০
আন্তর্জাতিক নং: ২৬৯০
অনুমতি প্রার্থনা তিনবার।
২৬৯০. সুফিয়ান ইবনে ওয়াকী (রাহঃ) ...... আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু মুসা একবার উমর (রাযিঃ) এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। বললেনঃ আসসালামু আলাইকুম আমি কি প্রবেশ করতে পারি?

উমর (রাযিঃ) নিজে নিজে বললেনঃ একবার হল। আবু মুসা (রাযিঃ) কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। পরে বললেনঃ আসসালামু আলাইকুম, আমি কি আসতে পারি?

উমর (রাযিঃ) নিজে নিজে বললেনঃ দু’বার হল।

আবু মুসা (রাযিঃ) কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। পরে বললেনঃ আসসালামু আলাইকুম, আমি কি আসতে পারি?

উমর (রাযিঃ) নিজে নিজে বললেনঃ তিনবার হল।

এরপর আবু মুসা (রাযিঃ) ফিরে গেলেন। উমর (রাযিঃ) দ্বাররক্ষীকে বললেনঃ ও কি করেছে? দ্বাররক্ষী বললঃ তিনি ফিরে গেছেন।

উমর (রাযিঃ) বললেনঃ তাকে ডেকে নিয়ে এস। তিনি যখন আসলেন। উমর (রাযিঃ) বললেনঃ তুমি এ কি করলে?

আবু মুসা (রাযিঃ) বললেনঃ (এ-ই তো) সুন্নত।

উমর (রাযিঃ) বললেনঃ তাই সুন্নত? আল্লাহর কসম, এই বিষয়ে তোমাকে অবশ্যই কোন দলীল বা প্রমাণ পেশ করতে হবে। নইলে তোমাকে আমি একটি একটা কিছু করব।

আবু সাঈদ (রাযিঃ) বললেনঃ আবু মুসা (রাযিঃ) আমাদের কাছে এলেন। তখন আমরা কয়েকজন আনসারী সাথী সেখানে বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে আনসার সম্প্রদায়! তোমরা কি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর হাদীস সম্পর্কে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী অবগত নও? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কি এ কথা বলেন নি যে, অনুমতি চাওয়া তিনবার? এর মধ্যে যদি তোমাকে অনুমতি দেওয়া হয়। (তবে তো ভালই) নইলে তুমি ফিরে যাবে।

উপস্থিত লোকেরা তাঁর সঙ্গে কৌতুক করতে লাগল। আবু সাঈদ (রাযিঃ) বলেনঃ এরপর আমি তাঁর দিকে মাথা তুলে বললামঃ এ ব্যাপারে আপনার যদি কোন শাস্তি হয় তবে আমিও আপনার শরীক। অনন্তর তিনি উমর (রাযিঃ) এর কাছে এলেন এবং এ ব্যাপারে তাঁকে অবহিত করলেন। তখন উমর (রাযিঃ) বললেনঃ এ সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। - বুখারি ও মুসলিম

এই বিষয়ে আলী সা’দ (রাযিঃ) এর আযাদকৃত দাসী উম্মু তারিক (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। হাদীসটি হাসান-সহীহ। জুরায়রী (রাহঃ) এর নাম হল সাঈদ ইবনে ইয়াস। তাঁর কুনিয়াত হল আবু মাসউদ। (তিনি ছাড়া) অন্যরাও আবু নযরা (রাহঃ) থেকে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবু নযরা আব্দী (রাহঃ) এর নাম হল মুনযির ইবনে মালিক ইবনে কুতাআ।
باب مَا جَاءَ فِي الاِسْتِئْذَانِ ثَلاَثَةً
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ اسْتَأْذَنَ أَبُو مُوسَى عَلَى عُمَرَ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ قَالَ عُمَرُ وَاحِدَةٌ . ثُمَّ سَكَتَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ قَالَ عُمَرُ ثِنْتَانِ . ثُمَّ سَكَتَ سَاعَةً فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ فَقَالَ عُمَرُ ثَلاَثٌ . ثُمَّ رَجَعَ فَقَالَ عُمَرُ لِلْبَوَّابِ مَا صَنَعَ قَالَ رَجَعَ . قَالَ عَلَىَّ بِهِ . فَلَمَّا جَاءَهُ قَالَ مَا هَذَا الَّذِي صَنَعْتَ قَالَ السُّنَّةَ . قَالَ السُّنَّةَ وَاللَّهِ لَتَأْتِيَنِّي عَلَى هَذَا بِبُرْهَانٍ أَوْ بِبَيِّنَةٍ أَوْ لأَفْعَلَنَّ بِكَ . قَالَ فَأَتَانَا وَنَحْنُ رُفْقَةٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ أَلَسْتُمْ أَعْلَمَ النَّاسِ بِحَدِيثِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَلَمْ يَقُلْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الاِسْتِئْذَانُ ثَلاَثٌ فَإِنْ أُذِنَ لَكَ وَإِلاَّ فَارْجِعْ " . فَجَعَلَ الْقَوْمُ يُمَازِحُونَهُ قَالَ أَبُو سَعِيدٍ ثُمَّ رَفَعْتُ رَأْسِي إِلَيْهِ فَقُلْتُ فَمَا أَصَابَكَ فِي هَذَا مِنَ الْعُقُوبَةِ فَأَنَا شَرِيكُكَ . قَالَ فَأَتَى عُمَرَ فَأَخْبَرَهُ بِذَلِكَ فَقَالَ عُمَرُ مَا كُنْتُ عَلِمْتُ بِهَذَا . وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ وَأُمِّ طَارِقٍ مَوْلاَةِ سَعْدٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَالْجُرَيْرِيُّ اسْمُهُ سَعِيدُ بْنُ إِيَاسٍ يُكْنَى أَبَا مَسْعُودٍ وَقَدْ رَوَى هَذَا غَيْرُهُ أَيْضًا عَنْ أَبِي نَضْرَةَ وَأَبُو نَضْرَةَ الْعَبْدِيُّ اسْمُهُ الْمُنْذِرُ بْنُ مَالِكِ بْنِ قُطَعَةَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ২৬৯০ | মুসলিম বাংলা