আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৪০. ঈমানের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৬১২
আন্তর্জাতিক নং: ২৬১২
ঈমানের পরিপূর্ণতা এবং এর হ্রাস-বৃদ্ধি।
২৬১৩. আহমদ ইবনে মানী’ আল-বাগদাদী (রাহঃ) ...... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ ঈমানের দিক থেকে পরিপূর্ণ মু’মিন ব্যক্তি হল সে ব্যক্তি যার আখলাক ও চরিত্র সুন্দর এবং যে ব্যক্তি স্বীয় পরিবারের প্রতি অধিক দয়ার্দ্র।

এই বিষয়ে আবু হুরায়রা ও আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। হাদীসটি হাসান। আবু কিলাবা (রাহঃ) আয়িশা (রাযিঃ) থেকে সরাসরি হাদীস শুনেছেন বলে আমাদের জানা নেই। আবু কিলাবা (রাহঃ) আয়িশা (রাযিঃ) এর দুধ ভাই আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইয়াযীদ-এর বরাতে আয়িশা (রাযিঃ) থেকে অন্যান্য হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। আবু কিলাবা (রাহঃ) এর নাম হল আব্দুল্লাহ্ ইবনে যায়দ আল-জারমী (রাহঃ)।

ইবনে আবু উমর (রাহঃ) বর্ণনা করেন যে, সুফিয়ান ইবনে উওয়ায়না (রাহঃ) বলেন, আইয়ুব আস-সিখতিয়ানী (রাহঃ) আবু কিলাবা (রাহঃ) এর আলোচনার প্রসঙ্গে বলেছেন। আল্লাহর কসম, তিনি ছিলেন, প্রজ্ঞাবান ফকীহগণের একজন।
باب مَا جَاءَ فِي اسْتِكْمَالِ الإِيمَانِ وَزِيَادَتِهِ وَنُقْصَانِهِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، حَدَّثَنَا خَالِدٌ الْحَذَّاءُ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَأَلْطَفُهُمْ بِأَهْلِهِ " . وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَلاَ نَعْرِفُ لأَبِي قِلاَبَةَ سَمَاعًا مِنْ عَائِشَةَ . وَقَدْ رَوَى أَبُو قِلاَبَةَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ رَضِيعٌ لِعَائِشَةَ عَنْ عَائِشَةَ غَيْرَ هَذَا الْحَدِيثِ وَأَبُو قِلاَبَةَ اسْمُهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ الْجَرْمِيُّ . حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ قَالَ ذَكَرَ أَيُّوبُ السَّخْتِيَانِيُّ أَبَا قِلاَبَةَ فَقَالَ كَانَ وَاللَّهِ مِنَ الْفُقَهَاءِ ذَوِي الأَلْبَابِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে বলা হয়েছে- أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيْمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا (ঈমানের দিক থেকে সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আখলাক-চরিত্র সবচেয়ে ভালো)। অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ আখলাক-চরিত্রওয়ালাকে সর্বাপেক্ষা পরিপূর্ণ মুসলিম বলা হয়েছে। আখলাক-চরিত্র হচ্ছে মানুষের স্বভাবগত এক ক্ষমতা, যা মানুষকে প্রশংসনীয় কাজে উৎসাহ যোগায় ও ভদ্রোচিত আচরণে উদ্বুদ্ধ করে। হাসান বসরী রহ. বলেন, উত্তম চরিত্রের হাকীকত হল মানুষের উপকার করা, তাদেরকে কষ্টদান থেকে বিরত থাকা এবং প্রসন্ন মুখে সাক্ষাত করা। ইমাম বাজী রহ.-এর মতে চরিত্র সুন্দর হওয়ার অর্থ যারা তার সঙ্গে ওঠাবসা করে বা সাক্ষাত করতে আসে, তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা, সহনশীল আচরণ করা ও মায়া-মমতা প্রকাশ করা, শিক্ষাদানে সবর অবলম্বন করা এবং ছোট-বড় সকলের সঙ্গে মহব্বত ও ভালোবাসা বজায় রাখা।
ভালো আখলাক-চরিত্র অনেকের জন্মগতভাবেই থাকে। আবার কাউকে এটা চেষ্টা-সাধনা দ্বারা অর্জন করতে হয়।
এ হাদীছে পূর্ণাঙ্গ মুমিনের বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে উত্তম আখলাকওয়ালা হওয়া। এর দ্বারা বোঝা যায় আখলাক-চরিত্র উন্নত করাই শ্রেষ্ঠ আমল। আবার অন্যান্য হাদীছে আরও বিভিন্ন আমলকে শ্রেষ্ঠ সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। স্থান-কাল-পাত্রভেদে আমল-আখলাকের মান-মর্যাদায় পার্থক্য হতে পারে। ইসলামের সূচনাকালে জিহাদ ছিল শ্রেষ্ঠতম আমল। কারণ তখন এটা ছিল ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও স্থিতির বড় উপায়। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত, দান-সদাকা অপেক্ষা নামায শ্রেষ্ঠ। কিন্তু যখন মন্দা ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন দান-সদাকার ফযীলত অনেক বেড়ে যায়। আখলাক-চরিত্রের বিষয়টাও এরকমই। ক্ষেত্রবিশেষে এর গুরুত্ব অন্যসব আমলকে ছাপিয়ে যায়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ আমাদেরকে আখলাক-চরিত্র উন্নত করার উৎসাহ যোগায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)