আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৬. যুহদ-দুনিয়া বিমুখতার বর্ণনা

হাদীস নং: ২৪১০
আন্তর্জাতিক নং: ২৪১০
যবানের হিফাযত।
২৪১৩. সুওয়ায়াদ ইবনে নসর (রাহঃ) ..... সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ ছাকাফী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, এমন একটি বিষয়ের কথা আমাকে বলুন যা আমি দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে পারি।

তিনি বললেনঃ তুমি বল, আমার রব হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ, তারপর এতে দৃঢ় হয়ে থেকো।

রাবী বলেন আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার বিষয়ে সবচেয়ে বেশী কিসের আশঙ্কা আপনি করেন?

তিনি তার জিহ্বা ধরলেন এরপর বললেনঃ এটির।
باب مَا جَاءَ فِي حِفْظِ اللِّسَانِ
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مَاعِزٍ، عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الثَّقَفِيِّ، قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ حَدِّثْنِي بِأَمْرٍ أَعْتَصِمُ بِهِ . قَالَ " قُلْ رَبِّيَ اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقِمْ " . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَخْوَفُ مَا تَخَافُ عَلَىَّ فَأَخَذَ بِلِسَانِ نَفْسِهِ ثُمَّ قَالَ " هَذَا " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الثَّقَفِيِّ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি দ্বারা ইস্তিকামাতের গুরুত্ব বোঝা যায়। হযরত সুফয়ান ইবন 'আব্দুল্লাহ রাখি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দীন ও শরী'আত সম্পর্কে এমন কোনও পূর্ণাঙ্গ কথা জানতে চেয়েছেন, যা দীনের যাবতীয় বিষয় শামিল করবে এবং এমন স্পষ্ট হবে যে, সে সম্পর্কে অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন পড়বে না। তাঁর সে জিজ্ঞাসার উত্তরেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংক্ষিপ্ত এ বাণীটি পেশ করেন। তিনি এতে দু'টি কথা বলেছেন।
প্রথমে বলেছেন- বল, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। অর্থাৎ তুমি তোমার ঈমানকে নবায়ন কর। তুমি যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখ সে কথা বার বার স্মরণ কর, হৃদয়মনে তা জাগ্রত করে তোল এবং মুখেও তা উচ্চারণ কর। সেইসঙ্গে 'হাদীছে জিবরীল'-এর ভেতর ঈমানের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে সেদিকেও লক্ষ রাখ।
তারপর বলেছেন- ‘এর উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাক।' ঈমানের উপর ইস্তিকামাতের সাথে থাকা বা তার উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকার মানে শরী'আতের যাবতীয় আদেশ ঠিক সেইভাবে মানা, যেভাবে তা মানতে বলা হয়েছে। তাতে কোনওরকম কমবেশি না করা, কোনও একদিকে সরে না যাওয়া এবং কোনওরকম বাড়াবাড়ি ও শৈথিল্যের শিকার না হওয়া। সেইসঙ্গে যা-কিছু নিষেধ করা হয়েছে তা থেকেও পরিপূর্ণরূপে বেঁচে থাকা।
নিঃসন্দেহে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ হাদীছ। এতে শব্দ কম হলেও এর অর্থ অতিব্যাপক । গোটা ইসলামই এর মধ্যে এসে গেছে। ইসলাম সম্পর্কে যাদের জানা আছে তারা একটু লক্ষ করলেই এ হাদীছের গভীরতা ও ব্যাপকতা বুঝতে পারে। এ সংক্ষিপ্ত হাদীছ তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম স্মরণ করিয়ে দেয়। এ হাদীছটি স্মরণ করলেই পূর্ব ইসলামের ছবি তাদের অন্তরে ভেসে ওঠে। তারা বুঝতে পারে এর মানে হচ্ছে পরিপূর্ণরূপে ইসলামের মধ্যে দাখিল হয়ে যাওয়া। সুতরাং স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে হযরত সুফয়ান ইবন 'আব্দুল্লাহ রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যে অনুরোধ রেখেছিলেন, এ সংক্ষিপ্ত বাণীর মাধ্যমে তা পূরণ হয়ে গেছে। হাদীছটির গভীরতা ও ব্যাপকতার প্রতি লক্ষ করেই 'উলামায়ে কিরাম বলেন, এটি ওই অল্পসংখ্যক হাদীছসমূহের অন্যতম, সমগ্র ইসলাম যার মধ্যে কেন্দ্রীভূত। শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাব্বীর আহমাদ ‘উছমানী রহ. বলেন,
এটি অত্যন্ত সারগর্ভ হাদীছসমূহের একটি। ইসলামের মৌলিক ও শাখাগত যাবতীয় বিষয় এর মধ্যে শামিল রয়েছে। ইসলামের সর্বপ্রধান মৌলিক বিষয় হচ্ছে তাওহীদ। امنت بالله -এর মধ্যে রয়েছে সেই তাওহীদের বাণী । তারপর ثم استقم এর মধ্যে এসে গেছে গোটা শরী'আত। কেননা ইস্তিকামাত হচ্ছে সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নাম। এর মধ্যে অন্তর ও বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কিত সকল বিধান চলে আসে...।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা তাওহীদের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই আমার রব্বু— এটা ইসলামের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মূল ভিত্তি। প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য সদাসর্বদা এ বিশ্বাস সম্পর্কে সচেতন থাকা।

খ. ঈমানের পর ইস্তিকামাত তথা ঈমানের দাবি অনুযায়ী শরী'আতের যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনে চলাই হওয়া উচিত একজন মু'মিনের একমাত্র লক্ষ্যবস্তু । এ হাদীছ সে শিক্ষাই আমাদের দান করে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান