আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৬. যুহদ-দুনিয়া বিমুখতার বর্ণনা

হাদীস নং: ২৩৪৪
আন্তর্জাতিক নং: ২৩৪৪
আল্লাহর উপর ভরসা করা।
২৩৪৭. আলী ইবনে সাঈদ কিন্দী (রাহঃ) ...... উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা যদি আল্লাহর উপর যথাযথ তাওয়াক্কুল করতে পারতে তবে তোমরাও অবশ্যই রিযক পেতে যেমন পাখিরা রিযক পেয়ে থাকে। ওরা সকালে খালি পেটে যায় বের হয়ে যায় আর বিকালে ফিরে আসে ভরপেটে।
باب فِي التَّوَكُّلِ عَلَى اللَّهِ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الْكِنْدِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ حَيْوَةَ بْنِ شُرَيْحٍ، عَنْ بَكْرِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ هُبَيْرَةَ، عَنْ أَبِي تَمِيمٍ الْجَيْشَانِيِّ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَوْ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَوَكَّلُونَ عَلَى اللَّهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزِقْتُمْ كَمَا تُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُو خِمَاصًا وَتَرُوحُ بِطَانًا " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ . وَأَبُو تَمِيمٍ الْجَيْشَانِيُّ اسْمُهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَالِكٍ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

তাওয়াক্কুলের অর্থ ও ব্যাখ্যা

তাওয়াক্কুল-এর অর্থ নির্ভর করা। বিশেষ অর্থে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতাকে তাওয়াক্কুল বলে। পরিভাষায় তাওয়াক্কুল বলা হয় নিজ শক্তি-সামর্থ্য, চেষ্টা ও ব্যবস্থাপনার উপর থেকে নির্ভরশীলতা ছিন্ন করে পরম মনিব আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা ও শক্তির উপর নির্ভরশীল হওয়াকে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্বজ্ঞানী বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তবে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন ইমাম তাবারী রহ.।তিনি বলেন তাওয়াক্কুল অর্থ- আল্লাহর প্রতি নির্ভর করা ও আল্লাহ তা'আলার ফয়সালাই কার্যকর হয় এ বিশ্বাসের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মোতাবেক খাদ্য, পানীয় ও জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য আসবাব-উপকরণ অর্জনের চেষ্টা করা এবং শত্রু থেকে আত্মরক্ষায় সচেষ্ট থাকা।
প্রকাশ থাকে যে, তাওয়াক্কুলের স্থান বান্দার অন্তর। আসবাব-উপকরণ অবলম্বন করা বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ। এটা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থি নয়- যদি অন্তরে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা দৃঢ় থাকে এবং বিশ্বাস থাকে যে, হবে সেটাই যা আল্লাহর ফয়সালা; আমি চেষ্টা পরিশ্রম করছি কেবল এ কারণে যে, তা করা আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর ফয়সালা ছাড়া আমার চেষ্টা পরিশ্রম কোনও সুফল বয়ে আনার ক্ষমতা রাখে না। আবার বিনা চেষ্টা-পরিশ্রমে কোনওকিছু দান করাও আল্লাহর নীতি নয়, যদিও তা দান করার ক্ষমতা আল্লাহ তা'আলার আছে।
সারকথা, তাওয়াক্কুল হচ্ছে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চেষ্টা পরিশ্রম করা এবং তার ফলাফলের ব্যাপারে আল্লাহর প্রতি নির্ভর করা। প্রথমটি আল্লাহর আনুগত্য আর দ্বিতীয়টি তাঁর প্রতি ঈমান। তাওয়াক্কুল এ দুইয়ের সমন্বিত রূপ।
চেষ্টা-পরিশ্রম ছাড়া কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা করার নাম তাওয়াক্কুল নয়; বরং এটা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করার নামান্তর। আবার আল্লাহর প্রতি ভরসা না করে কেবল চেষ্টা-পরিশ্রমকেই সবকিছু মনে করা বেঈমানী কাজ। প্রকৃত সত্য এর মাঝখানে। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি নির্ভরও করতে হবে এবং শরী'আত মোতাবেক চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে।
একবার এক সাহাবী জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি উটটি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করব (যে, আল্লাহ তা'আলা এটি হেফাজত করবেন), নাকি আগে বাঁধব তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করব? তিনি বললেন, আগে এটি বাঁধ, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর। এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াক্কুল কী তা বুঝিয়ে দিলেন।
হযরত সাহল তুসতারী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি চেষ্টা-পরিশ্রমকে আপত্তিকর মনে করে, সে মূলত নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকার উপরই আপত্তি করে। আর যে ব্যক্তি তাওয়াক্কুলের উপর আপত্তি করে, সে যেন ঈমানের উপরই আপত্তি তোলে।
হযরত ফুযায়ল ইব্ন 'ইয়ায রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেউ যদি নিজ ঘরে বসে থাকে আর মনে করে সে আল্লাহর প্রতি ভরসা করেছে, ফলে তার রিযিক তার কাছে এসে যাবে, তবে কি এটা ঠিক হবে? তিনি বললেন, সে যদি আল্লাহর প্রতি পুরোপুরি আস্থা রেখে এভাবে বসে থাকে, তবে আল্লাহ তার ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ করবেন। কিন্তু এটা নিয়ম নয়। আল্লাহর কোনও নবী এমন করেননি। নবীগণ শ্রম খেটেছেন। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও পরিশ্রম করে উপার্জন করেছেন। কাজ করেছেন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. ও উমর ফারূক রাযি.। তাঁরা এমন বলেননি যে, আমরা বসে থাকলাম, আল্লাহ আমাদের খাওয়াবেন।
বস্তুত তাওয়াক্কুল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র। আর কামাইরোজগার তাঁর সুন্নত। উভয়টিই অবলম্বন করতে হবে। এর মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা।


হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছের প্রধান বিষয় আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল ও নির্ভরতা। বান্দার উচিত সকল কাজে আল্লাহরই উপর নির্ভর করা, আসবাব-উপকরণের উপর নয়।

খ. দীনী কাজে ইখলাসের সঙ্গে মেহনত করে যাওয়াই আমাদের কাজ। ফলাফল আল্লাহর উপর ন্যস্ত করা উচিত। তা একান্তই আল্লাহর কাজ। কাঙ্ক্ষিত ফল দেখতে না পাওয়ার অর্থ মেহনত ব্যর্থ যাওয়া নয়। মেহনতের পরকালীন পুরস্কার অবশ্যই পাওয়া যাবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ২৩৪৪ | মুসলিম বাংলা