আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৮- নবীগণের আঃ আলোচনা

হাদীস নং: ৩১৮৯
আন্তর্জাতিক নং: ৩৪৩০
২০৩৯. মহান আল্লাহর বাণীঃ আপনি তাদের নিকট এক জনপদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন। যখন তাদের নিকট রাসুলগণ এসেছিলেন (৩৬ঃ ১৩) মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন, فَعَزَّزْنَا অর্থ আমি শক্তিশালী করলাম। আর ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, طَائِرُكُمْ অর্থ তোমাদের বিপদসমূহ।
৩১৮৯। হুদাবা ইবনে খালিদ (রাহঃ) .... মালিক ইবনে সা‘সাআ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) সাহাবাগণের কাছে মিরাজের রাত্রি সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, অনন্তর তিনি (জিবরাঈল) আমাকে নিয়ে উপরে চললেন, এমনকি দ্বিতীয় আকাশে এসে পৌছলেন এবং দরজা খুলতে বললেন, জিজ্ঞাসা করা হল কে? উত্তর দিলেন, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল। আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ(ﷺ)। জিজ্ঞাসা করা হলো তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। এরপর আমরা যখন সেখানে পৌছলাম তখন সেখানে ইয়াহয়া এবং ঈসা (আলাইহিমুস সালাম)- কে দেখলাম। তারা উভয়ে খালাত ভাই ছিলেন। জিবরাঈল বললেন, এরা হলেন, ইয়াহয়া এবং ঈসা। তাদেরকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম দিলাম। তাঁরাও সালামের জবাব দিলেন। তারপর তাঁরা বললেন, নেক ভাই এবং নেক নবীর প্রতি মারহাবা।
بَابُ {وَاضْرِبْ لَهُمْ مَثَلًا أَصْحَابَ القَرْيَةِ} [يس: 13] الآيَةَ {فَعَزَّزْنَا} [يس: 14]: قَالَ مُجَاهِدٌ شَدَّدْنَا وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ طَائِرُكُمْ مَصَائِبُكُمْ

بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {ذِكْرُ رَحْمَةِ رَبِّكَ عَبْدَهُ زَكَرِيَّاءَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ نِدَاءً خَفِيًّا قَالَ
رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا} إِلَى قَوْلِهِ: {لَمْ نَجْعَلْ لَهُ مِنْ قَبْلُ سَمِيًّا} قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ مِثْلاً. يُقَالُ رَضِيًّا مَرْضِيًّا عُتِيًّا عَصِيًّا يَعْتُو {قَالَ رَبِّ أَنَّى يَكُونُ لِي غُلاَمٌ} إِلَى قَوْلِهِ: {ثَلاَثَ لَيَالٍ سَوِيًّا} وَيُقَالُ صَحِيحًا، {فَخَرَجَ عَلَى قَوْمِهِ مِنَ الْمِحْرَابِ فَأَوْحَى إِلَيْهِمْ أَنْ سَبِّحُوا بُكْرَةً وَعَشِيًّا}، {فَأَوْحَى} فَأَشَارَ {يَا يَحْيَى خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ} إِلَى قَوْلِهِ: {وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا}، {حَفِيًّا} لَطِيفًا {عَاقِرًا} الذَّكَرُ وَالأُنْثَى سَوَاءٌ
3430 - حَدَّثَنَا هُدْبَةُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ: أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَهُمْ عَنْ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ " ثُمَّ صَعِدَ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الثَّانِيَةَ فَاسْتَفْتَحَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا يَحْيَى وَعِيسَى وَهُمَا ابْنَا خَالَةٍ، قَالَ: هَذَا يَحْيَى وَعِيسَى فَسَلِّمْ عَلَيْهِمَا، فَسَلَّمْتُ فَرَدَّا، ثُمَّ قَالاَ: مَرْحَبًا بِالأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইসরা ও মি'রাজের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে বায়তুল মাকদিসে গমন করেন। সেখানে নবীগণকে নিয়ে নামায পড়েন। তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁকে নিয়ে এক এক করে সাত আসমান পাড়ি দেন। প্রত্যেক আসমানে পৌঁছলে সে আসমানের দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করে, কে? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি জিবরীল। তারপর জিজ্ঞেস করে, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দেন, মুহাম্মাদ। এভাবে প্রত্যেকবার তিনি পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের নাম বলেছেন। বলেননি যে, আমি। নাম বলতে গিয়েও নিজের সুপরিচিত নাম 'জিবরীল' বলেছেন। অন্য কোনও নাম নয়। তাঁর এছাড়া আরও নাম আছে, যেমন আর-রূহুল আমীন, রূহুল কুদ্‌স। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় দিতে গিয়েও তিনি তাঁর সুপরিচিত নাম 'মুহাম্মাদ' উল্লেখ করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও আরও বহু নাম আছে, যেমন আহমাদ, আল-মাহী, আল-হাশির, আল-আকিব ইত্যাদি। তাঁর কুনয়াত বা উপনাম হল আবুল কাসিম। তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন। তিনি সায়্যিদুল বাশার। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসবের কোনওটিই না বলে উভয় প্রসিদ্ধ ও পরিচিত নামই বলেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল ঘরের ভেতর থেকে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তাকে যে নামে সবাই চেনে সেই নাম বলেই পরিচয় দিতে হবে। 'আমি' বলা কিংবা এমন কোনও নাম বা উপাধি বলাও ঠিক নয়, যা বললে জিজ্ঞাসাকারী তাকে ভালোভাবে চিনতে পারবে না। পরিচয় জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যই তো চিনতে পারা। যা বললে সে চিনতে পারবে না, তা বলার ফায়দা কী? তাতে বরং ঝামেলাই বাড়ে। কথা বেশি বলতে হয়, সময়ও নষ্ট হয়।

অনেক সময় বাক্তি বড় হলে নিজ নাম বলতে আত্মসম্মানে বাধে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বড় মাখলূক আর কে আছে? তাঁদেরই যখন পরিচয় দিতে গিয়ে নিজ নাম বলতে কুণ্ঠাবোধ হয়নি, তখন অন্যদের কেন এতে আপত্তি লাগবে? অকপটে নিজ নাম উচ্চারণ করার দ্বারা কেবল পরিচয়দানই সহজ হয় না; এটা বিনয়েরও পরিচায়ক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।

খ. আকাশ সাতটি। এতেও বিশ্বাস রাখতে হবে।

গ. প্রত্যেক আকাশে উপরে ওঠার দরজা আছে। আছে দরজার প্রহরীও। একেক ফিরিশতাকে আল্লাহ তা'আলা একেক দরজার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।

ঘ. দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ সদা সতর্ক ও সচেতন। দায়িত্বপালনে তাদের দ্বারা কখনও কোনও ত্রুটি হয় না।

ঙ. কারও দরজায় পৌঁছলে নিজের নাম-পরিচয় দেওয়া কর্তব্য।

চ. পরিচয় দিতে গিয়ে সবাই যে নামে চেনে সেটাই বলা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৩১৮৯ | মুসলিম বাংলা