আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

২৭. সুন্দর ব্যবহার ও আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষার অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯৩৩
আন্তর্জাতিক নং: ১৯৩৩
ভাইয়ের প্রতি সমবেদনা।
১৯৩৯। আহমাদ ইবনে মানী‘ (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাযিঃ) যখন মদীনায় আগমন করেন তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর এবং সা‘দ ইবনের রাবী (রাযিঃ)-এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দেন। তখন সা‘দ (রাযিঃ) তাকে বললেন, আসুন, আমার সম্পদ আপনাকে দুই ভাগে ভাগ করে দেই। আমার দুইজন স্ত্রী রয়েছে। একজনকে তালাক দিয়ে দেই; ইদ্দত শেষ হওয়ার পর আপনি তাকে বিয়ে করে নিবেন। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহ আপনার সম্পদে এবং পরিবার-পরিজনে বরকত দিন। আমাকে বাজারটি দেখিয়ে দিন। লোকেরা তাকে বাজার দেখিয়ে দিল। তিনি সেদিনই লাভ স্বরূপ কিছু পনির ও ঘি নিয়ে ঘরে ফিরলেন। পরবর্তীতে একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর গায়ে যাফরান নির্মিত সুগন্ধির হলদে দাগ দেখতে পেয়ে বললেন, কি ব্যাপার? তিনি বললেন, জনৈক আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কি মোহরানা দিয়েছ? তিনি বললেন, খর্জুর বীচি। বর্ণনাকারী হুমায়দের রিওয়ায়াতে আছে, খর্জুর বীচির ওজন পরিমাণ স্বর্ণ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, একটি বকরী হলেও ওলীমা কর।
باب مَا جَاءَ فِي مُوَاسَاةِ الأَخِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لَمَّا قَدِمَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ الْمَدِينَةَ آخَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَيْنَهُ وَبَيْنَ سَعْدِ بْنِ الرَّبِيعِ فَقَالَ لَهُ هَلُمَّ أُقَاسِمْكَ مَالِي نِصْفَيْنِ وَلِي امْرَأَتَانِ فَأُطَلِّقُ إِحْدَاهُمَا فَإِذَا انْقَضَتْ عِدَّتُهَا فَتَزَوَّجْهَا . فَقَالَ بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ دُلُّونِي عَلَى السُّوقِ . فَدَلُّوهُ عَلَى السُّوقِ فَمَا رَجَعَ يَوْمَئِذٍ إِلاَّ وَمَعَهُ شَيْءٌ مِنْ أَقِطٍ وَسَمْنٍ قَدِ اسْتَفْضَلَهُ فَرَآهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَعْدَ ذَلِكَ وَعَلَيْهِ وَضَرٌ مِنْ صُفْرَةٍ فَقَالَ " مَهْيَمْ " . قَالَ تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ . قَالَ " فَمَا أَصْدَقْتَهَا " . قَالَ نَوَاةً . قَالَ حُمَيْدٌ أَوْ قَالَ وَزْنَ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ . فَقَالَ " أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . قَالَ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَزْنُ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ وَزْنُ ثَلاَثَةِ دَرَاهِمَ وَثُلُثٍ . وَقَالَ إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ وَزْنُ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ وَزْنُ خَمْسَةِ دَرَاهِمَ . سَمِعْتُ إِسْحَاقَ بْنَ مَنْصُورٍ يَذْكُرُ عَنْهُمَا هَذَا .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ওলীমা বলা হয় ওই দাওয়াতের অনুষ্ঠানকে, যা বিবাহের পর ছেলের বাড়িতে করা হয়ে থাকে। এটা করা সুন্নত। হযরত আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাযি. বিবাহ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে হুকুম করলেন أولم ولو بشاة “তুমি ওলীমা কর, যদিও একটি ছাগল দ্বারা হয়।২৯৫
ওলীমার অনুষ্ঠান যখন সুন্নত, তখন সামর্থ্য অনুযায়ী এটা করা উচিত। আর এটা যেহেতু সুন্নত, তখন করাও উচিত সুন্নতের মর্যাদা রক্ষা করে শরীআতবিরোধী কোনও কর্মকাণ্ড তাতে যুক্ত করা বাঞ্ছনীয় নয়। ওলীমার অনুষ্ঠান যদি শরীআতবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত হয়, তবে তার দাওয়াত কবুল করা চাই। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন إذا دعي أحدكم إلى الوليمة فليأتها ‘তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হলে সে যেন তাতে আসে।২৯৬

ওলীমার দাওয়াত কবুল করা জরুরি কেবল তখনই, যখন তাতে আপত্তিকর কিছু না থাকে। যদি তাতে আপত্তিকর কিছু থাকে, তখন তা কবুল করা জরুরি নয়। ইদানীংকার অধিকাংশ দাওয়াতই এমন, যাতে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। সুন্নত দাওয়াতকেও নানারকম পাপাচারে পঙ্কিল করে ফেলা হয়েছে। ওলীমার দাওয়াত সুন্নত। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ ওলীমার অনুষ্ঠান সহীহ পন্থায় হয় না। তাতে গানবাদ্য থাকে, পর্দার পরিবর্তে থাকে পর্দাহীনতার প্রতিযোগিতা, নারী-পুরুষ একই জায়গায় বসে খাওয়া-দাওয়া করা হয়, থাকে উপহারের প্রদর্শনী ও উপহার লেনদেনের সামাজিক বাধ্যবাধকতা, এছাড়াও নানারকম অনুচিত উপসর্গ। দীনদার ব্যক্তির এ জাতীয় দাওয়াতে যাওয়ার কোনও উপায় থাকে না। তাদের বরং না যাওয়াই উচিত। হাঁ, যদি সেখানে গিয়ে আপত্তিকর বিষয়গুলো অপসারণ করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে ভিন্ন কথা। আগেও এরকম শর্ত দেওয়া যেতে পারে যে, অনুষ্ঠানে আপত্তিকর কিছু করা চলবে না। তারপর যাওয়ার পর যদি দেখা যায় যথাযথভাবে কথা রাখা হয়নি, তবে কোনও কিছুর পরওয়া না করে ফিরে আসবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ছবিযুক্ত পর্দা দেখে নিজ ঘরেই ঢোকা হতে বিরত থেকেছিলেন। একবার মেয়ে-জামাতা হযরত ফাতিমা রাযি. ও হযরত আলী রাযি.-এর বাড়ি থেকেও ফিরে এসেছিলেন। একবার হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. এক দাওয়াতে গিয়ে দেখতে পান দেওয়ালে পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কেন অর্থের এ অপচয়, এ কারণে তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাঁরা আমাদের আদর্শ। তাঁদের পথে চলাতেই সঠিক সমাজগঠন ও সমাজ সংস্কারে সফলতা নির্ভর করে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওলীমা করা সুন্নত।

খ. সামর্থ্য অনুযায়ী ওলীমা করা উচিত।

২৯৫. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২০৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১০৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৩৫১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৬৮৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১০৪১০; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১৫৯

২৯৬. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫১৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৭৩৬; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৫৭৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫২৯৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৫১৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩১৩
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ১৯৩৩ | মুসলিম বাংলা