আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
২৭. সুন্দর ব্যবহার ও আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষার অধ্যায়
হাদীস নং: ১৯২৭
আন্তর্জাতিক নং: ১৯২৭
এক মুসলিমের জন্য আরেক মুসলিমের সহমর্মিতা।
১৯৩৩। উবাইদ ইবনে আসবাত ইবনে মুহাম্মাদ কুরাশী (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার খিয়ানত করবে না, তার বিষয়ে মিথ্যা বলবে না, তাকে অপমান হতে দিবে না। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের সম্মান, সম্পদ ও রক্ত হারাম। তাকওয়া হল এখানে (অন্তরে)। কোন ব্যক্তির মন্দতার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় দৃষ্টিতে দেখবে।
باب مَا جَاءَ فِي شَفَقَةِ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ بْنُ أَسْبَاطِ بْنِ مُحَمَّدٍ الْقُرَشِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ هِشَامِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَخُونُهُ وَلاَ يَكْذِبُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ عِرْضُهُ وَمَالُهُ وَدَمُهُ التَّقْوَى هَا هُنَا بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْتَقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের কয়েকটি হক উল্লেখ করা হয়েছে। তার আগে অন্তরে চেতনা সঞ্চার করা হয়েছে যে, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। আর সে ভ্রাতৃত্বের দাবি হল তারা এসকল হক সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। কোনও অবস্থায়ই তা নষ্ট করবে না। তার মধ্যে প্রথম হক হচ্ছে একে অন্যের আমানত রক্ষা করা। আমানত নষ্ট করাকে বলা হয় খেয়ানত। খেয়ানত করা কঠিন পাপ। তা মুনাফিকের আলামত। যেহেতু তা কঠিন পাপ ও মুনাফিকী, তাই এর থেকে বিরত থাকা মুসলিম ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য। এ হাদীছে বৈশিষ্ট্য হিসেবেই তা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে-
খেয়ানত না করা
لا يخونه সে তার সঙ্গে খেয়ানত করে না'। অর্থাৎ প্রকৃত মুসলিম অপর মুসলিমের সর্বপ্রকার আমানত সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকে। কোনওভাবেই তার সঙ্গে খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা করে না। তার অগোচরে তার অর্থ-সম্পদের ক্ষতি করে না, তাকে ভুল পরামর্শ দেয় না, তার গোপন কথা প্রকাশ করে না, তার কাছে ভেজাল মাল বিক্রি করে না, তাকে ভুল মাসআলা বলে না, তাদের সামষ্টিক ও সামাজিক দায় দায়িত্বে অনুপযুক্ত লোককে নিয়োগ দান করে না, তার উপর সামাজিক ও সমষ্টিগত যে দায়িত্ব অর্পিত আছে তা পালনে অবহেলা করে না এবং এরকম আরও যেসকল কাজ দ্বারা সমষ্টি বা ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গে খেয়ানত হয়ে যায়, তা থেকে বেঁচে থাকে।
সর্বপ্রকার খেয়ানত থেকে বেঁচে থাকা যখন মুসলিম ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য, তখন প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যকর্তব্য তা থেকে বেঁচে থাকার জন্য পরিপূর্ণরূপে সচেষ্ট থাকা। মূলত এ হাদীছে খেয়ানত না করাকে গুণ ও বিশেষত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হলেও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিষেধ করা। অর্থাৎ তুমি যদি নিজেকে মুসলিম মনে করে থাক, তবে কিছুতেই অপর মুসলিমের সঙ্গে কোনওভাবে খেয়ানত করো না। কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ “হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং জেনেশুনে নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না। সূরা আনফাল (৮), আয়াত ২৭
এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- يطبع المؤمن على الخلال كلها إلا الخيانة والكذب 'মুমিন ব্যক্তির স্বভাবে সব খাসলাতই থাকতে পারে, তবে খেয়ানত ও মিথ্যাবাদিতা নয়।[১]
খেয়ানত না করাটা যেহেতু মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য, তাই নিজে কারও দ্বারা খেয়ানতের শিকার হলে তার সঙ্গেও এটা করার সুযোগ নেই। সর্বাবস্থায় নিজ বিশ্বস্ততা রক্ষা করতে হবে। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- أد الأمانة إلى من ائتمنك، ولا تخن من خانك 'তোমার কাছে যার আমানত আছে, তুমি তাকে তা আদায় করবে। কেউ তোমার সঙ্গে খেয়ানত করলে তুমি কিন্তু তার সঙ্গে খেয়ানত করবে না।[২]
মিথ্যা না বলা
ولا يكذبه 'তাকে মিথ্যা বলে না'। অর্থাৎ কোনও মুসলিমের সঙ্গে মিথ্যা কথা না বলা প্রকৃত মুসলিমের বিশেষত্ব। মুসলিম ব্যক্তি সদা সত্য বলে। সত্য বলা ঈমানের অঙ্গ। মুমিন ও মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ মিথ্যা বলে, তবে তা তার ঈমান ও ইসলামের বিশুদ্ধতা ক্ষুণ্ণ করে। এজন্যই হাদীছে মিথ্যা বলাকে মুনাফিকের আলামত বলা হয়েছে। মুনাফিক ব্যক্তি প্রকাশ্যে নিজেকে মুমিন বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু তার অন্তরে ঈমান থাকে না। মিথ্যা বলা যখন এরূপ ব্যক্তির খাসলাত, তখন কোনও মুমিন ব্যক্তি কিভাবে তা বলতে পারে? সুতরাং এ হাদীছে মিথ্যা না বলাকে অর্থাৎ সত্য বলাকে মুসলিম ব্যক্তির বিশেষত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত এর দ্বারা উদ্দেশ্য মিথ্যা বলতে নিষেধ করা। অর্থাৎ তুমি যদি নিজেকে মুসলিম মনে করে থাক, তবে কিছুতেই মিথ্যা বলো না।
পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা করা
ولا يخذله সে তাকে অসহায় ছেড়ে দেয় না'। অর্থাৎ যেসকল বৈধ ক্ষেত্রে তার সাহায্য প্রয়োজন, সেসকল ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই সাহায্য করে বৈধ ক্ষেত্রে সাহায্য করা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ- وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ “তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না।সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ২
অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছেঃ- وَإِنِ اسْتَنْصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ “হাঁ, দ্বীনের কারণে তারা তোমাদের সাহায্য চাইলে (তাদেরকে) সাহায্য করা তোমাদের অবশ্যকর্তব্য। সূরা আনফাল (৮), আয়াত ৭২
কোনও মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করা একটি বড় নেক আমল। এ নেক আমলের বিনিময়ে আখেরাতের পুরস্কারের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সাহায্য করার সুসংবাদ আছে। অপরদিকে সাহায্য করার শক্তি-ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সাহায্য না করা একটি কঠিন গুনাহ। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের পরিপন্থী। এ গুনাহে লিপ্ত হলে কেবল আখেরাতেই নয়; দুনিয়ায়ও তার অশুভ পরিণাম ভোগের আশঙ্কা রয়েছে। হাদীছ শরীফে সেরকম সতর্কবাণীও করা হয়েছে। হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি. ও হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ما من امرئ مسلم يخذل امرأ مسلما في موضع تنتهك فيه حرمته وينتقص فيه من عرضه إلا خذله الله في موطن يحب فيه نصرته، وما من امرئ ينصر مسلما في موضع ينتقص فيه من عرضه وينتهك فيه من حرمته إلا نصره الله في موطن يحب فيه نصرته “যে-কোনও মুসলিম ব্যক্তি এমন স্থানে অপর কোনও মুসলিম ব্যক্তির সাহায্য করা হতে বিরত থাকে, যেখানে তার সম্মান নষ্ট করা হয় ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়, আল্লাহ তাআলা এমন স্থানে তার সাহায্য করা হতে বিরত থাকবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে। অপরদিকে যে-কোনও মুসলিম ব্যক্তি এমন স্থানে অপর কোনও মুসলিম ব্যক্তির সাহায্য করে, যেখানে তার সম্মান নষ্ট করা হয় ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়, আল্লাহ তাআলা এমন স্থানে তার সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে।[৩]
হযরত সাহল ইব্ন সা'দ রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من أذل عنده مؤمن فلم ينصره وهو يقدر على أن ينصره أذله الله على رؤوس الخلائق يوم القيامة 'যার সামন কোনও মুমিন ব্যক্তির অবমাননা করা হয় আর সে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তার সাহায্য না করে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন সমস্ত মাখলুকের সামনে তাকে লাঞ্ছিত করবেন।[৪]
হযরত ইমরান ইব্ন হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন من نصر أخاه بالغيب وهو يستطيع نصره، نصره الله في الدنيا والآخرة 'যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সাহায্য করে এবং সে তার সাহায্য করার ক্ষমতাও রাখে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার সাহায্য করবেন।[৫]
উল্লেখ্য, মানুষের সাহায্য কখনও দুনিয়াবী বিষয়েও প্রয়োজন হয় এবং কখনও প্রয়োজন হয় দীনী বিষয়েও। দুনিয়াবী বিষয়ে, যেমন মজলুম ব্যক্তির প্রয়োজন তার থেকে জুলুম প্রতিহত করা, অসুস্থ ব্যক্তির প্রয়োজন তার চিকিৎসা ও সেবা করা, অভুক্ত লোকের প্রয়োজন তার ক্ষুধা মেটানোর ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। আর দীনী বিষয়ে সাহায্যের দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেখানে কুরআন শিক্ষা বা দীনী ইলম শিক্ষার ব্যবস্থা নেই সেখানে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া, কাউকে সঠিক মাসআলা জানা না থাকায় ভুল আমল করতে দেখলে তাকে সঠিক মাসআলা শেখানো, কেউ সঠিক মাসআলা বলে বিপদের সম্মুখীন হলে তার পাশে দাঁড়ানো ও তাকে সমর্থন করা ইত্যাদি।
দীনী সাহায্যের প্রয়োজন দুনিয়াবী সাহায্যের প্রয়োজন অপেক্ষা কোনও অংশেই কম নয়; বরং এর গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। কেননা কাউকে পার্থিব সাহায্য না করলে তাতে সে হয়তো দু'দিনের দুনিয়ায় কষ্টের সম্মুখীন হবে। পক্ষান্তরে যার দীনী সাহায্যের প্রয়োজন, তাকে যদি যথাযথ সাহায্য করা না হয়, তবে তার পরিণামে সে পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে ক্ষতির কোনও সীমা নেই এবং সেখানে তার কোনও প্রতিকারেরও ব্যবস্থা নেই। কাজেই মানুষের দীনী সাহায্যের ক্ষেত্রে কিছুতেই শিথিলতা করা উচিত নয়।
যাই হোক, মুসলিম ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী অপর মুসলিমের এ উভয়রকম সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া এবং কাউকে দীনী ও দুনিয়াবী কোনও ক্ষেত্রেই নিঃসঙ্গ ও অসহায় ছেড়ে না দেওয়া। কাউকে সেরকম ছেড়ে না দেওয়াকে এ হাদীছে মুসলিম ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে। বোঝানো উদ্দেশ্য তুমি প্রকৃত মুসলিম হয়ে থাকলে অপর মুসলিমের দিকে দীনী ও দুনিয়াবী উভয়রকমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। কোনও মুসলিমকে অসহায় ছেড়ে দেবে না।
একে অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তাদান
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- كل المسلم على المسلم حرام عرضه وماله ودمه ‘এক মুসলিমের সবই অপর মুসলিমের উপর হারাম তার মান-সম্ভ্রম, তার ধন-সম্পদ ও তার রক্ত'। হাদীছের এ অংশে আমাদেরকে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। তা এই যে, ঈমান ও ইসলামের কারণে এক মুসলিমের সবকিছুই নিরাপদ হয়ে যায়। তার কোনও কিছুতেই অন্যায় হস্তক্ষেপ করা কারও জন্য বৈধ নয়।
এতে প্রথমে 'সবকিছুই হারাম বলার পর তার ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে তার মান-সম্ভ্রম, তার ধন-সম্পদ ও তার রক্ত। অর্থাৎ এ তিনটিই হচ্ছে তার সবকিছু। প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের মূল বিষয় এ তিনটিই তার জান, তার মাল ও তার ইজ্জত। জান বা রক্ত হচ্ছে তার অস্তিত্ব, মাল ও সম্পদ তার অস্তিত্ব রক্ষার উপকরণ আর ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য, যা দ্বারা অন্যান্য জীবজন্তু হতে তার পার্থক্য নিরূপিত হয়। অস্তিত্ব সকল জীবেরই আছে। কোনও না কোনও ধরনের মালও তাদের আছে। কিন্তু ইজ্জত-সম্মান কেবল মানুষেরই বিশেষত্ব। এর দ্বারা তার মানবিক অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ইজ্জত-সম্মানবিহীন মানুষ পশুতুল্য। তাই ইসলাম মানুষের ইজ্জত-সম্মানকে তার অস্তিত্ব ও সম্পদের সমান মর্যাদা দিয়েছে। এর প্রত্যেকটিকেই অন্যদের জন্য হারাম ও মর্যাদাপূর্ণ করেছে, যা ক্ষুণ্ণ করা কারও জন্য জায়েয নয়। কারও প্রতি এমন কোনও আচরণ করা জায়েয নয়, যা দ্বারা তার সম্মানের হানি হতে পারে। কারও অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করা বা তাতে কোনওরকম খেয়ানত করা সম্পূর্ণ অবৈধ। এমনিভাবে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, শারীরিক আঘাত করা বা কোনও অঙ্গহানি ঘটানো কঠিন পাপ ও নাজায়েয।
প্রকৃতপক্ষে অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা রক্ষা করা তাকওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব। যার মধ্যে আল্লাহভীতি আছে, কেবল সেই অন্যের এ তিন বিষয়ের উপর আঘাত করা হতে বিরত থাকতে পারে। যার মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি নেই, তার দ্বারা কোনও না কোনওভাবে অন্যের হক নষ্ট হয়েই যায়। হয়তো সে শারীরিকভাবে কাউকে কষ্ট দেবে, কিংবা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করবে অথবা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অন্যের ইজ্জত-সম্মানের উপর আঘাত করবে। এর প্রত্যেকটিই কঠিন পাপ। এ পাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেকের কর্তব্য তাকওয়ার অধিকারী হওয়া। তাকওয়ার এ গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা
التقوى هاهنا 'তাকওয়া এখানে। অর্থাৎ মুসলিম ব্যক্তির এই যে তিনটি বিষয় তোমাদের সকলের জন্য হারাম, তোমরা এর উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে পারবে কেবল তখনই, যখন তোমাদের অন্তরে তাকওয়া থাকবে। তাকওয়া ও আল্লাহভীতি হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচার প্রাণশক্তি। তাই তোমাদের কর্তব্য এ শক্তি অর্জনে সচেষ্ট থাকা। অপর এক হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- إن في الجسد لمضغة، إذا صلحت صلح الجسد كله وإذا فسدت فسد الجسد كله، ألا وهي القلب “নিশ্চয়ই শরীরের ভেতর একটি মাংসপিণ্ড আছে। তা যখন ঠিক থাকে তখন সবটা শরীরই ঠিক থাকে, আর তা যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন সবটা শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। শোন, তা হচ্ছে অন্তকরণ।[৬]
অন্তকরণ ঠিক থাকার অর্থ তাতে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি থাকা। তাতে আল্লাহভীতি থাকলেই হাত, পা, চোখ, কান ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক থাকে অর্থাৎ তা দ্বারা কোনও পাপকর্ম সংঘটিত হয় না। মুত্তাকী ব্যক্তি কারও সঙ্গে খেয়ানত করে না, মিথ্যা কথা বলে না এবং তার সাহায্যের হাত গুটিয়ে রাখে না। সে অপর মুসলিমের জান, মাল ও ইজ্জতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। ফলে তার দ্বারা কেউ শারীরিকভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয় না। সে অন্যায়ভাবে কারও অর্থ-সম্পদ গ্রাস করে না। এরূপ ব্যক্তির দ্বারা কারও সম্মানহানিরও আশঙ্কা থাকে না।
التقوى هاهنا বলে এদিকেও ইঙ্গিত করা হতে পারে যে, তাকওয়া ও পরহেযগারী যেহেতু অন্তরের বিষয়, তাই কে প্রকৃত মুত্তাকী ও পরহেযগার তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আর আল্লাহর কাছে মানুষের মর্যাদা নিরূপিত হয় তাকওয়ার দ্বারা। ইরশাদ হয়েছেঃ- إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ‘প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান সেই, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী। সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ১৩
এক বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছেঃ- المسلمون إخوة، لا فضل لأحد على أحد إلا بالتقوى “সমস্ত মুসলিম ভাই ভাই। একজনের উপর অন্যজনের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয় কেবলই তাকওয়ার দ্বারা।[৭]
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ- من أكرم الناس ‘শ্রেষ্ঠতম মানুষ কে’? তিনি উত্তর দেন- أتقاهم لله 'যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি ভয় করে।[৮]
তো মানুষের প্রকৃত মর্যাদা যেহেতু তাকওয়া দ্বারা নির্ণিত হয়, আর কারও তাকওয়ার মাত্রা যেহেতু আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না, তাই হতে পারে কেউ কাউকে টাকা-পয়সা, বিদ্যা-বুদ্ধি ও পেশিশক্তিতে দুর্বল দেখে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না, তার দৃষ্টিতে সে নিজের তুলনায় নিম্নস্তরের লোক, ফলে তার জান, মাল ও ইজ্জতের প্রতি তার কোনও শ্রদ্ধা নেই। শ্রদ্ধা না থাকায় তার প্রতি তার দ্বারা বিভিন্নভাবে জুলুম অবিচার হয়ে যায় এবং এটাকে সে বিশেষ কিছু মনেও করে না। তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদীছ তাকে সতর্ক করছে যে, তুমি যাকে অশ্রদ্ধাবশে জুলুম-নিপীড়ন করছ, হতে পারে তার অন্তরে তাকওয়ার পরহেযগারী বেশি থাকায় আল্লাহ তাআলার কাছে তার মর্যাদাও তোমার চেয়ে অনেক বেশি। সে নিজ তাকওয়া দ্বারা আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদাবান সাব্যস্ত হয়েছে। এমনকি সে আল্লাহর ওলী ও বন্ধু হয়ে গেছে। বাহ্যিক শান-শওকত না থাকায় আল্লাহর এ ওলীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন করে তুমি তো নিজের উপর গযব ডেকে আনছ। এক হাদীছে কুদসীতে আছেঃ- من عادى لي وليا آذنته بالحرب “যে ব্যক্তি আমার ওলীর সঙ্গে দুশমনী করে, তার সঙ্গে আমার যুদ্ধ।[৯]
কোনও মুসলিমকে তুচ্ছ মনে না করা
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন এক ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ গণ্য করবে'। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার কোনও মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ গণ্য করে সে নেহাৎ মন্দ। কিভাবে কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে তুচ্ছ গণ্য করা যেতে পারে, যখন আল্লাহ তাআলা তাকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এর মধ্যকার যাবতীয় বিষয়কে তার সেবায় নিয়োজিত করে দিয়েছেন, তাকে মুসলিম, মুমিন ও বান্দা নামে অভিহিত করেছেন এবং তার স্বজাতীয়দের মধ্য থেকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম বান্দা তথা নবী-রাসূল মনোনীত করেছেন? কিছুতেই তা করা যায় না। তা করা অহংকারেরই নামান্তর। অহংকার করা কঠিন পাপ। হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- الكبر بطر الحق وغمط الناس “অহংকার হচ্ছে সত্য প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।[১০]
অহংকারের পরিণাম জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্ক করেনঃ- لا يدخل الجنة من كان في قلبه مثقال ذرة من كبر 'যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।[১১]
তাকওয়াই যখন মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি, তখন কাউকে ছোট মনে করার সুযোগ কই? কেউ টাকা-পয়সার কমতি দ্বারা ছোট হয়ে যায় না। ছোট হয় না চেহারা সুরতের ঘাটতি দ্বারাও। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেনঃ- إن الله لا ينظر إلى صوركم وأموالكم ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم 'আল্লাহ তোমাদের চেহারা-সুরত ও অর্থ-সম্পদ দেখেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল।[১২]
তিনি যখন অন্তর ও আমল দেখেন, চেহারা-সুরত ও অর্থ-সম্পদ নয়, তখন কর্তব্য নিজ অন্তর ও আমল ভালো করার সাধনায় লিপ্ত থাকা। অন্যের চেহারা-সুরত ও সম্পদের কমতি দেখে ধোঁকায় পড়া উচিত নয়। হযরত বিলাল হাবশী রাযি. হযরত আতা ইব্ন আবী রাবাহ রহ. এবং এরকম হাজারও আল্লাহওয়ালা দুনিয়া ও আখেরাতের মর্যাদা কুঁড়িয়েছিলেন অন্তরের তাকওয়া ও বিশুদ্ধ আমল দ্বারাই। চেহারা সুরত ও অর্থ-সম্পদে তারা লাখও মানুষের চেয়ে পেছনে ছিলেন। সে পেছনে থাকাটা আল্লাহর কাছে তাদের এগিয়ে থাকা ও মর্যাদালাভে বাধা হয়নি। এখনও তা কারও জন্য বাধা নয়। কাজেই কাউকে এ ক্ষেত্রে পেছনে দেখলে সে-যে তাকওয়া পরহেযগারী দ্বারা আমার চেয়ে এগিয়ে নয় তা কী করে বলা যাবে? সে এগিয়ে থাকা ব্যক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিজেকেই ধোঁকা দেওয়ার নামান্তর।
সুতরাং কোনও অন্ধ, খঞ্জ, বিকলাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গকে শারীরিক ত্রুটির কারণে তুচ্ছ মনে করার কোনও সুযোগ নেই। কোনও গরীব বা অশিক্ষিতকেও ছোট মনে করার অবকাশ নেই। এমনকি কোনও পাপীকেও নিজের চেয়ে ক্ষুদ্র ভাবার বৈধতা নেই। এরা সকলেই সহানুভূতি ও সহমর্মিতা পাওয়ার হকদার। এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না। তাই পাপীর ক্ষেত্রে কর্তব্য দরদী মন নিয়ে তাকে পাপ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা, পাপের কারণে তাকে ঘৃণা করা নয়। শারীরিক বা কর্মগত ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে কারও প্রতি অপ্রীতিকর আচার-আচরণ বাঞ্ছনীয় নয়। তারা বয়সে বড় হলে তো শ্রদ্ধাই তাদের প্রাপ্য। বয়সে ছোট হলে তারা স্নেহের পাত্র। যদি তারা সমবয়সী হয়, তবে তাদের প্রতি ভাইয়ের মত আচরণই সমীচীন।
ইয়াহইয়া ইব্ন মুআয রহ, বড় সুন্দর বলেছেন- তোমার কাছ থেকে মুমিন ব্যক্তির প্রাপ্য তিনটি : তুমি তার উপকার করতে না পারলে অন্তত ক্ষতি করবে না; তাকে আনন্দ দিতে না পারলে অন্তত দুঃখ দেবে না; তার প্রশংসা করতে না পারলে অন্তত নিন্দা করবে না।
এ হাদীছের সারকথা হচ্ছে, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য সে কোনও মুসলিম ভাইয়ের গীবত করবে না, তার নিন্দা করে বেড়াবে না, তার নামে অপবাদ দেবে না, তাকে গালমন্দ করবে না, তাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না, তার দোষ খুঁজে বেড়াবে না এবং তার কোনও দোষ-ত্রুটি জানলে তা অন্যের কাছে গেয়ে বেড়াবে না; বরং প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমকে নিজের চেয়ে উৎকৃষ্ট গণ্য করবে। বয়সে যে ছোট তাকে উত্তম মনে করবে এ কারণে যে, সে হয়তো গুনাহ করেইনি অথবা তারচে' কম করেছে, বড়কে এ কারণে যে, সে তারচে বেশি ইবাদত-বন্দেগী করেছে। আলেমকে উৎকৃষ্ট মনে করবে তার ইলমের কারণে আর বে-আলেমকে এ কারণে যে, সে গুনাহ করে ফেলেছে অজ্ঞতার কারণে, জেনেশুনে নয়। আমি আলেম হয়ে থাকলে জেনেশুনে কত পাপ করি, যা তুলনামূলকভাবে বেশি অন্যায়। এমনকি কাফের ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তো শেষটায় ঈমান ও তাওবার সম্ভাবনা আছে। তাকেইবা ঘৃণা করার অবকাশ কই? আসল ধর্তব্য তো শেষ অবস্থাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের শেষ অবস্থা শুভ করুন ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করুন, আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমরা প্রত্যেক মুসলিমকেই নিজের ভাই মনে করব।
খ. আমরা কারও আমানতের খেয়ানত করব না।
গ. কোনও অবস্থায়ই কারও সঙ্গে মিথ্যা বলব না।
ঘ. কোনও মুসলিম ব্যক্তির কোনও সাহায্য প্রয়োজন হলে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অবশ্যই তার সে সাহায্য করবে, কাউকে অসহায় অবস্থায় পরিত্যাগ করবে না।
ঙ. মুসলিম ব্যক্তির জান, মাল ও ইজ্জতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। এ তিনটির কোনও ক্ষেত্রেই কারও প্রতি জুলুম করব না।
চ. সর্বদা নিজেকে মুত্তাকী-পরহেযগাররূপে গড়ে তোলার সাধনায় লিপ্ত থাকব।
ছ. কখনও কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করব না।
[১] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২১৭০; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৫৬০৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২০৮২৮; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৪৬৯; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৯০৯
[২] সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৫৩৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১২৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৪২৪; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭৬০; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২১৩০২; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৮৭৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২১৫০; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ১৮৩৮
[৩] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬৩৬৮; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৮৮৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬৮২; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭২২৬; তাবারানী, আল- মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৭৩৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৫৩২
[৪] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৯৮৫; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫৫৫৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭২২৭
[৫] বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬৮৫; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭২৩৩; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৩৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৫২৯; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৮৮৮
[৬] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৫৯৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৯৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৩৭৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২২০০৩; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১০৪০০
[৭] তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৫৪৭; দ্রষ্টব্য : মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৮৪
[৮] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৩৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৩৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৫৬৮; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৬৪৮
[৯] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৫০২, সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৪৭; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৩৯৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১২৪৭
[১০] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪০৯২; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৯৯; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪৬৬; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৬৪৭৯; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৭৮২
[১১] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪০৯১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৯৮; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৯১৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২২৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৭৮২
[১২] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৮২৭; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৪১৪৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৯৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯৯৯৪; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪১৫০
খেয়ানত না করা
لا يخونه সে তার সঙ্গে খেয়ানত করে না'। অর্থাৎ প্রকৃত মুসলিম অপর মুসলিমের সর্বপ্রকার আমানত সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকে। কোনওভাবেই তার সঙ্গে খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা করে না। তার অগোচরে তার অর্থ-সম্পদের ক্ষতি করে না, তাকে ভুল পরামর্শ দেয় না, তার গোপন কথা প্রকাশ করে না, তার কাছে ভেজাল মাল বিক্রি করে না, তাকে ভুল মাসআলা বলে না, তাদের সামষ্টিক ও সামাজিক দায় দায়িত্বে অনুপযুক্ত লোককে নিয়োগ দান করে না, তার উপর সামাজিক ও সমষ্টিগত যে দায়িত্ব অর্পিত আছে তা পালনে অবহেলা করে না এবং এরকম আরও যেসকল কাজ দ্বারা সমষ্টি বা ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গে খেয়ানত হয়ে যায়, তা থেকে বেঁচে থাকে।
সর্বপ্রকার খেয়ানত থেকে বেঁচে থাকা যখন মুসলিম ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য, তখন প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যকর্তব্য তা থেকে বেঁচে থাকার জন্য পরিপূর্ণরূপে সচেষ্ট থাকা। মূলত এ হাদীছে খেয়ানত না করাকে গুণ ও বিশেষত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হলেও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিষেধ করা। অর্থাৎ তুমি যদি নিজেকে মুসলিম মনে করে থাক, তবে কিছুতেই অপর মুসলিমের সঙ্গে কোনওভাবে খেয়ানত করো না। কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ “হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং জেনেশুনে নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না। সূরা আনফাল (৮), আয়াত ২৭
এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- يطبع المؤمن على الخلال كلها إلا الخيانة والكذب 'মুমিন ব্যক্তির স্বভাবে সব খাসলাতই থাকতে পারে, তবে খেয়ানত ও মিথ্যাবাদিতা নয়।[১]
খেয়ানত না করাটা যেহেতু মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য, তাই নিজে কারও দ্বারা খেয়ানতের শিকার হলে তার সঙ্গেও এটা করার সুযোগ নেই। সর্বাবস্থায় নিজ বিশ্বস্ততা রক্ষা করতে হবে। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- أد الأمانة إلى من ائتمنك، ولا تخن من خانك 'তোমার কাছে যার আমানত আছে, তুমি তাকে তা আদায় করবে। কেউ তোমার সঙ্গে খেয়ানত করলে তুমি কিন্তু তার সঙ্গে খেয়ানত করবে না।[২]
মিথ্যা না বলা
ولا يكذبه 'তাকে মিথ্যা বলে না'। অর্থাৎ কোনও মুসলিমের সঙ্গে মিথ্যা কথা না বলা প্রকৃত মুসলিমের বিশেষত্ব। মুসলিম ব্যক্তি সদা সত্য বলে। সত্য বলা ঈমানের অঙ্গ। মুমিন ও মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ মিথ্যা বলে, তবে তা তার ঈমান ও ইসলামের বিশুদ্ধতা ক্ষুণ্ণ করে। এজন্যই হাদীছে মিথ্যা বলাকে মুনাফিকের আলামত বলা হয়েছে। মুনাফিক ব্যক্তি প্রকাশ্যে নিজেকে মুমিন বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু তার অন্তরে ঈমান থাকে না। মিথ্যা বলা যখন এরূপ ব্যক্তির খাসলাত, তখন কোনও মুমিন ব্যক্তি কিভাবে তা বলতে পারে? সুতরাং এ হাদীছে মিথ্যা না বলাকে অর্থাৎ সত্য বলাকে মুসলিম ব্যক্তির বিশেষত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত এর দ্বারা উদ্দেশ্য মিথ্যা বলতে নিষেধ করা। অর্থাৎ তুমি যদি নিজেকে মুসলিম মনে করে থাক, তবে কিছুতেই মিথ্যা বলো না।
পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা করা
ولا يخذله সে তাকে অসহায় ছেড়ে দেয় না'। অর্থাৎ যেসকল বৈধ ক্ষেত্রে তার সাহায্য প্রয়োজন, সেসকল ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই সাহায্য করে বৈধ ক্ষেত্রে সাহায্য করা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ- وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ “তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না।সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ২
অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছেঃ- وَإِنِ اسْتَنْصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ “হাঁ, দ্বীনের কারণে তারা তোমাদের সাহায্য চাইলে (তাদেরকে) সাহায্য করা তোমাদের অবশ্যকর্তব্য। সূরা আনফাল (৮), আয়াত ৭২
কোনও মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করা একটি বড় নেক আমল। এ নেক আমলের বিনিময়ে আখেরাতের পুরস্কারের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সাহায্য করার সুসংবাদ আছে। অপরদিকে সাহায্য করার শক্তি-ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সাহায্য না করা একটি কঠিন গুনাহ। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের পরিপন্থী। এ গুনাহে লিপ্ত হলে কেবল আখেরাতেই নয়; দুনিয়ায়ও তার অশুভ পরিণাম ভোগের আশঙ্কা রয়েছে। হাদীছ শরীফে সেরকম সতর্কবাণীও করা হয়েছে। হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি. ও হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- ما من امرئ مسلم يخذل امرأ مسلما في موضع تنتهك فيه حرمته وينتقص فيه من عرضه إلا خذله الله في موطن يحب فيه نصرته، وما من امرئ ينصر مسلما في موضع ينتقص فيه من عرضه وينتهك فيه من حرمته إلا نصره الله في موطن يحب فيه نصرته “যে-কোনও মুসলিম ব্যক্তি এমন স্থানে অপর কোনও মুসলিম ব্যক্তির সাহায্য করা হতে বিরত থাকে, যেখানে তার সম্মান নষ্ট করা হয় ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়, আল্লাহ তাআলা এমন স্থানে তার সাহায্য করা হতে বিরত থাকবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে। অপরদিকে যে-কোনও মুসলিম ব্যক্তি এমন স্থানে অপর কোনও মুসলিম ব্যক্তির সাহায্য করে, যেখানে তার সম্মান নষ্ট করা হয় ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়, আল্লাহ তাআলা এমন স্থানে তার সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে।[৩]
হযরত সাহল ইব্ন সা'দ রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من أذل عنده مؤمن فلم ينصره وهو يقدر على أن ينصره أذله الله على رؤوس الخلائق يوم القيامة 'যার সামন কোনও মুমিন ব্যক্তির অবমাননা করা হয় আর সে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তার সাহায্য না করে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন সমস্ত মাখলুকের সামনে তাকে লাঞ্ছিত করবেন।[৪]
হযরত ইমরান ইব্ন হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন من نصر أخاه بالغيب وهو يستطيع نصره، نصره الله في الدنيا والآخرة 'যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সাহায্য করে এবং সে তার সাহায্য করার ক্ষমতাও রাখে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার সাহায্য করবেন।[৫]
উল্লেখ্য, মানুষের সাহায্য কখনও দুনিয়াবী বিষয়েও প্রয়োজন হয় এবং কখনও প্রয়োজন হয় দীনী বিষয়েও। দুনিয়াবী বিষয়ে, যেমন মজলুম ব্যক্তির প্রয়োজন তার থেকে জুলুম প্রতিহত করা, অসুস্থ ব্যক্তির প্রয়োজন তার চিকিৎসা ও সেবা করা, অভুক্ত লোকের প্রয়োজন তার ক্ষুধা মেটানোর ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। আর দীনী বিষয়ে সাহায্যের দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেখানে কুরআন শিক্ষা বা দীনী ইলম শিক্ষার ব্যবস্থা নেই সেখানে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া, কাউকে সঠিক মাসআলা জানা না থাকায় ভুল আমল করতে দেখলে তাকে সঠিক মাসআলা শেখানো, কেউ সঠিক মাসআলা বলে বিপদের সম্মুখীন হলে তার পাশে দাঁড়ানো ও তাকে সমর্থন করা ইত্যাদি।
দীনী সাহায্যের প্রয়োজন দুনিয়াবী সাহায্যের প্রয়োজন অপেক্ষা কোনও অংশেই কম নয়; বরং এর গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। কেননা কাউকে পার্থিব সাহায্য না করলে তাতে সে হয়তো দু'দিনের দুনিয়ায় কষ্টের সম্মুখীন হবে। পক্ষান্তরে যার দীনী সাহায্যের প্রয়োজন, তাকে যদি যথাযথ সাহায্য করা না হয়, তবে তার পরিণামে সে পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে ক্ষতির কোনও সীমা নেই এবং সেখানে তার কোনও প্রতিকারেরও ব্যবস্থা নেই। কাজেই মানুষের দীনী সাহায্যের ক্ষেত্রে কিছুতেই শিথিলতা করা উচিত নয়।
যাই হোক, মুসলিম ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী অপর মুসলিমের এ উভয়রকম সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া এবং কাউকে দীনী ও দুনিয়াবী কোনও ক্ষেত্রেই নিঃসঙ্গ ও অসহায় ছেড়ে না দেওয়া। কাউকে সেরকম ছেড়ে না দেওয়াকে এ হাদীছে মুসলিম ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে। বোঝানো উদ্দেশ্য তুমি প্রকৃত মুসলিম হয়ে থাকলে অপর মুসলিমের দিকে দীনী ও দুনিয়াবী উভয়রকমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। কোনও মুসলিমকে অসহায় ছেড়ে দেবে না।
একে অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তাদান
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- كل المسلم على المسلم حرام عرضه وماله ودمه ‘এক মুসলিমের সবই অপর মুসলিমের উপর হারাম তার মান-সম্ভ্রম, তার ধন-সম্পদ ও তার রক্ত'। হাদীছের এ অংশে আমাদেরকে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। তা এই যে, ঈমান ও ইসলামের কারণে এক মুসলিমের সবকিছুই নিরাপদ হয়ে যায়। তার কোনও কিছুতেই অন্যায় হস্তক্ষেপ করা কারও জন্য বৈধ নয়।
এতে প্রথমে 'সবকিছুই হারাম বলার পর তার ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে তার মান-সম্ভ্রম, তার ধন-সম্পদ ও তার রক্ত। অর্থাৎ এ তিনটিই হচ্ছে তার সবকিছু। প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের মূল বিষয় এ তিনটিই তার জান, তার মাল ও তার ইজ্জত। জান বা রক্ত হচ্ছে তার অস্তিত্ব, মাল ও সম্পদ তার অস্তিত্ব রক্ষার উপকরণ আর ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য, যা দ্বারা অন্যান্য জীবজন্তু হতে তার পার্থক্য নিরূপিত হয়। অস্তিত্ব সকল জীবেরই আছে। কোনও না কোনও ধরনের মালও তাদের আছে। কিন্তু ইজ্জত-সম্মান কেবল মানুষেরই বিশেষত্ব। এর দ্বারা তার মানবিক অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ইজ্জত-সম্মানবিহীন মানুষ পশুতুল্য। তাই ইসলাম মানুষের ইজ্জত-সম্মানকে তার অস্তিত্ব ও সম্পদের সমান মর্যাদা দিয়েছে। এর প্রত্যেকটিকেই অন্যদের জন্য হারাম ও মর্যাদাপূর্ণ করেছে, যা ক্ষুণ্ণ করা কারও জন্য জায়েয নয়। কারও প্রতি এমন কোনও আচরণ করা জায়েয নয়, যা দ্বারা তার সম্মানের হানি হতে পারে। কারও অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করা বা তাতে কোনওরকম খেয়ানত করা সম্পূর্ণ অবৈধ। এমনিভাবে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, শারীরিক আঘাত করা বা কোনও অঙ্গহানি ঘটানো কঠিন পাপ ও নাজায়েয।
প্রকৃতপক্ষে অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা রক্ষা করা তাকওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব। যার মধ্যে আল্লাহভীতি আছে, কেবল সেই অন্যের এ তিন বিষয়ের উপর আঘাত করা হতে বিরত থাকতে পারে। যার মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি নেই, তার দ্বারা কোনও না কোনওভাবে অন্যের হক নষ্ট হয়েই যায়। হয়তো সে শারীরিকভাবে কাউকে কষ্ট দেবে, কিংবা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করবে অথবা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অন্যের ইজ্জত-সম্মানের উপর আঘাত করবে। এর প্রত্যেকটিই কঠিন পাপ। এ পাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেকের কর্তব্য তাকওয়ার অধিকারী হওয়া। তাকওয়ার এ গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা
التقوى هاهنا 'তাকওয়া এখানে। অর্থাৎ মুসলিম ব্যক্তির এই যে তিনটি বিষয় তোমাদের সকলের জন্য হারাম, তোমরা এর উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে পারবে কেবল তখনই, যখন তোমাদের অন্তরে তাকওয়া থাকবে। তাকওয়া ও আল্লাহভীতি হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচার প্রাণশক্তি। তাই তোমাদের কর্তব্য এ শক্তি অর্জনে সচেষ্ট থাকা। অপর এক হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- إن في الجسد لمضغة، إذا صلحت صلح الجسد كله وإذا فسدت فسد الجسد كله، ألا وهي القلب “নিশ্চয়ই শরীরের ভেতর একটি মাংসপিণ্ড আছে। তা যখন ঠিক থাকে তখন সবটা শরীরই ঠিক থাকে, আর তা যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন সবটা শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। শোন, তা হচ্ছে অন্তকরণ।[৬]
অন্তকরণ ঠিক থাকার অর্থ তাতে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি থাকা। তাতে আল্লাহভীতি থাকলেই হাত, পা, চোখ, কান ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক থাকে অর্থাৎ তা দ্বারা কোনও পাপকর্ম সংঘটিত হয় না। মুত্তাকী ব্যক্তি কারও সঙ্গে খেয়ানত করে না, মিথ্যা কথা বলে না এবং তার সাহায্যের হাত গুটিয়ে রাখে না। সে অপর মুসলিমের জান, মাল ও ইজ্জতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। ফলে তার দ্বারা কেউ শারীরিকভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয় না। সে অন্যায়ভাবে কারও অর্থ-সম্পদ গ্রাস করে না। এরূপ ব্যক্তির দ্বারা কারও সম্মানহানিরও আশঙ্কা থাকে না।
التقوى هاهنا বলে এদিকেও ইঙ্গিত করা হতে পারে যে, তাকওয়া ও পরহেযগারী যেহেতু অন্তরের বিষয়, তাই কে প্রকৃত মুত্তাকী ও পরহেযগার তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আর আল্লাহর কাছে মানুষের মর্যাদা নিরূপিত হয় তাকওয়ার দ্বারা। ইরশাদ হয়েছেঃ- إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ‘প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান সেই, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী। সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ১৩
এক বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছেঃ- المسلمون إخوة، لا فضل لأحد على أحد إلا بالتقوى “সমস্ত মুসলিম ভাই ভাই। একজনের উপর অন্যজনের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয় কেবলই তাকওয়ার দ্বারা।[৭]
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ- من أكرم الناس ‘শ্রেষ্ঠতম মানুষ কে’? তিনি উত্তর দেন- أتقاهم لله 'যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি ভয় করে।[৮]
তো মানুষের প্রকৃত মর্যাদা যেহেতু তাকওয়া দ্বারা নির্ণিত হয়, আর কারও তাকওয়ার মাত্রা যেহেতু আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না, তাই হতে পারে কেউ কাউকে টাকা-পয়সা, বিদ্যা-বুদ্ধি ও পেশিশক্তিতে দুর্বল দেখে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না, তার দৃষ্টিতে সে নিজের তুলনায় নিম্নস্তরের লোক, ফলে তার জান, মাল ও ইজ্জতের প্রতি তার কোনও শ্রদ্ধা নেই। শ্রদ্ধা না থাকায় তার প্রতি তার দ্বারা বিভিন্নভাবে জুলুম অবিচার হয়ে যায় এবং এটাকে সে বিশেষ কিছু মনেও করে না। তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদীছ তাকে সতর্ক করছে যে, তুমি যাকে অশ্রদ্ধাবশে জুলুম-নিপীড়ন করছ, হতে পারে তার অন্তরে তাকওয়ার পরহেযগারী বেশি থাকায় আল্লাহ তাআলার কাছে তার মর্যাদাও তোমার চেয়ে অনেক বেশি। সে নিজ তাকওয়া দ্বারা আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদাবান সাব্যস্ত হয়েছে। এমনকি সে আল্লাহর ওলী ও বন্ধু হয়ে গেছে। বাহ্যিক শান-শওকত না থাকায় আল্লাহর এ ওলীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন করে তুমি তো নিজের উপর গযব ডেকে আনছ। এক হাদীছে কুদসীতে আছেঃ- من عادى لي وليا آذنته بالحرب “যে ব্যক্তি আমার ওলীর সঙ্গে দুশমনী করে, তার সঙ্গে আমার যুদ্ধ।[৯]
কোনও মুসলিমকে তুচ্ছ মনে না করা
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন এক ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ গণ্য করবে'। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার কোনও মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ গণ্য করে সে নেহাৎ মন্দ। কিভাবে কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে তুচ্ছ গণ্য করা যেতে পারে, যখন আল্লাহ তাআলা তাকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এর মধ্যকার যাবতীয় বিষয়কে তার সেবায় নিয়োজিত করে দিয়েছেন, তাকে মুসলিম, মুমিন ও বান্দা নামে অভিহিত করেছেন এবং তার স্বজাতীয়দের মধ্য থেকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম বান্দা তথা নবী-রাসূল মনোনীত করেছেন? কিছুতেই তা করা যায় না। তা করা অহংকারেরই নামান্তর। অহংকার করা কঠিন পাপ। হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- الكبر بطر الحق وغمط الناس “অহংকার হচ্ছে সত্য প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।[১০]
অহংকারের পরিণাম জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্ক করেনঃ- لا يدخل الجنة من كان في قلبه مثقال ذرة من كبر 'যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।[১১]
তাকওয়াই যখন মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি, তখন কাউকে ছোট মনে করার সুযোগ কই? কেউ টাকা-পয়সার কমতি দ্বারা ছোট হয়ে যায় না। ছোট হয় না চেহারা সুরতের ঘাটতি দ্বারাও। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেনঃ- إن الله لا ينظر إلى صوركم وأموالكم ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم 'আল্লাহ তোমাদের চেহারা-সুরত ও অর্থ-সম্পদ দেখেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল।[১২]
তিনি যখন অন্তর ও আমল দেখেন, চেহারা-সুরত ও অর্থ-সম্পদ নয়, তখন কর্তব্য নিজ অন্তর ও আমল ভালো করার সাধনায় লিপ্ত থাকা। অন্যের চেহারা-সুরত ও সম্পদের কমতি দেখে ধোঁকায় পড়া উচিত নয়। হযরত বিলাল হাবশী রাযি. হযরত আতা ইব্ন আবী রাবাহ রহ. এবং এরকম হাজারও আল্লাহওয়ালা দুনিয়া ও আখেরাতের মর্যাদা কুঁড়িয়েছিলেন অন্তরের তাকওয়া ও বিশুদ্ধ আমল দ্বারাই। চেহারা সুরত ও অর্থ-সম্পদে তারা লাখও মানুষের চেয়ে পেছনে ছিলেন। সে পেছনে থাকাটা আল্লাহর কাছে তাদের এগিয়ে থাকা ও মর্যাদালাভে বাধা হয়নি। এখনও তা কারও জন্য বাধা নয়। কাজেই কাউকে এ ক্ষেত্রে পেছনে দেখলে সে-যে তাকওয়া পরহেযগারী দ্বারা আমার চেয়ে এগিয়ে নয় তা কী করে বলা যাবে? সে এগিয়ে থাকা ব্যক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিজেকেই ধোঁকা দেওয়ার নামান্তর।
সুতরাং কোনও অন্ধ, খঞ্জ, বিকলাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গকে শারীরিক ত্রুটির কারণে তুচ্ছ মনে করার কোনও সুযোগ নেই। কোনও গরীব বা অশিক্ষিতকেও ছোট মনে করার অবকাশ নেই। এমনকি কোনও পাপীকেও নিজের চেয়ে ক্ষুদ্র ভাবার বৈধতা নেই। এরা সকলেই সহানুভূতি ও সহমর্মিতা পাওয়ার হকদার। এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না। তাই পাপীর ক্ষেত্রে কর্তব্য দরদী মন নিয়ে তাকে পাপ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা, পাপের কারণে তাকে ঘৃণা করা নয়। শারীরিক বা কর্মগত ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে কারও প্রতি অপ্রীতিকর আচার-আচরণ বাঞ্ছনীয় নয়। তারা বয়সে বড় হলে তো শ্রদ্ধাই তাদের প্রাপ্য। বয়সে ছোট হলে তারা স্নেহের পাত্র। যদি তারা সমবয়সী হয়, তবে তাদের প্রতি ভাইয়ের মত আচরণই সমীচীন।
ইয়াহইয়া ইব্ন মুআয রহ, বড় সুন্দর বলেছেন- তোমার কাছ থেকে মুমিন ব্যক্তির প্রাপ্য তিনটি : তুমি তার উপকার করতে না পারলে অন্তত ক্ষতি করবে না; তাকে আনন্দ দিতে না পারলে অন্তত দুঃখ দেবে না; তার প্রশংসা করতে না পারলে অন্তত নিন্দা করবে না।
এ হাদীছের সারকথা হচ্ছে, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য সে কোনও মুসলিম ভাইয়ের গীবত করবে না, তার নিন্দা করে বেড়াবে না, তার নামে অপবাদ দেবে না, তাকে গালমন্দ করবে না, তাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না, তার দোষ খুঁজে বেড়াবে না এবং তার কোনও দোষ-ত্রুটি জানলে তা অন্যের কাছে গেয়ে বেড়াবে না; বরং প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমকে নিজের চেয়ে উৎকৃষ্ট গণ্য করবে। বয়সে যে ছোট তাকে উত্তম মনে করবে এ কারণে যে, সে হয়তো গুনাহ করেইনি অথবা তারচে' কম করেছে, বড়কে এ কারণে যে, সে তারচে বেশি ইবাদত-বন্দেগী করেছে। আলেমকে উৎকৃষ্ট মনে করবে তার ইলমের কারণে আর বে-আলেমকে এ কারণে যে, সে গুনাহ করে ফেলেছে অজ্ঞতার কারণে, জেনেশুনে নয়। আমি আলেম হয়ে থাকলে জেনেশুনে কত পাপ করি, যা তুলনামূলকভাবে বেশি অন্যায়। এমনকি কাফের ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তো শেষটায় ঈমান ও তাওবার সম্ভাবনা আছে। তাকেইবা ঘৃণা করার অবকাশ কই? আসল ধর্তব্য তো শেষ অবস্থাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের শেষ অবস্থা শুভ করুন ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করুন, আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমরা প্রত্যেক মুসলিমকেই নিজের ভাই মনে করব।
খ. আমরা কারও আমানতের খেয়ানত করব না।
গ. কোনও অবস্থায়ই কারও সঙ্গে মিথ্যা বলব না।
ঘ. কোনও মুসলিম ব্যক্তির কোনও সাহায্য প্রয়োজন হলে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অবশ্যই তার সে সাহায্য করবে, কাউকে অসহায় অবস্থায় পরিত্যাগ করবে না।
ঙ. মুসলিম ব্যক্তির জান, মাল ও ইজ্জতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। এ তিনটির কোনও ক্ষেত্রেই কারও প্রতি জুলুম করব না।
চ. সর্বদা নিজেকে মুত্তাকী-পরহেযগাররূপে গড়ে তোলার সাধনায় লিপ্ত থাকব।
ছ. কখনও কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করব না।
[১] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২১৭০; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৫৬০৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২০৮২৮; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৪৬৯; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৯০৯
[২] সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৫৩৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১২৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৪২৪; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭৬০; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২১৩০২; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৮৭৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২১৫০; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ১৮৩৮
[৩] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬৩৬৮; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৮৮৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬৮২; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭২২৬; তাবারানী, আল- মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৭৩৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৫৩২
[৪] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৯৮৫; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫৫৫৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭২২৭
[৫] বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬৮৫; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭২৩৩; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৩৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৫২৯; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৮৮৮
[৬] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৫৯৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৯৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৩৭৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২২০০৩; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১০৪০০
[৭] তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৫৪৭; দ্রষ্টব্য : মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৮৪
[৮] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৩৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৩৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৫৬৮; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৬৪৮
[৯] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৫০২, সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৪৭; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৩৯৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১২৪৭
[১০] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪০৯২; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৯৯; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪৬৬; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৬৪৭৯; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৭৮২
[১১] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪০৯১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৯৮; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৯১৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২২৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৭৮২
[১২] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৮২৭; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৪১৪৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৯৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯৯৯৪; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪১৫০
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
