আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

২৬. বিভিন্ন পানীয়ের বিধান ও পান করার আদব

হাদীস নং: ১৮৮৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৮৮৪
পাত্রে কিছু পানের সময় শ্বাস ফেলা।
১৮৯০। কুতায়বা ও ইউসুফ ইবনে হাম্মাদ (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) পাত্রে কিছু পানের সময় তিন বার শ্বাস নিতেন এবং বলতেনঃ এ হলো অধিক সাচ্ছন্দ্য বোধক তৃপ্তিদায়ক। ইবনে মাজাহ ৩৪১৬, মুসলিম

এ হাদীসটি হাসান। হিশাম আদ-দাসতাওয়াঈ এটিকে আবু আসিম-আনাস (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

আযরা ইবনে ছাবিত (রাহঃ) এটিকে ছুমামা-আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (ﷺ) পাত্রে কিছু পানের সময় তিনবার শ্বাস নিতেন। আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী (রাহঃ) আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) পাত্রে কিছু পানের সময় তিনবার শ্বাস নিতেন।

এ হাদীসটি হাসান।
باب مَا جَاءَ فِي التَّنَفُّسِ فِي الإِنَاءِ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، وَيُوسُفُ بْنُ حَمَّادٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي عِصَامٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الإِنَاءِ ثَلاَثًا وَيَقُولُ " هُوَ أَمْرَأُ وَأَرْوَى " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ . وَرَوَاهُ هِشَامٌ الدَّسْتَوَائِيُّ عَنْ أَبِي عِصَامٍ عَنْ أَنَسٍ .
وَرَوَى عَزْرَةُ بْنُ ثَابِتٍ، عَنْ ثُمَامَةَ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الإِنَاءِ ثَلاَثًا .
حَدَّثَنَا بِذَلِكَ مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ حَدَّثَنَا عَزْرَةُ بْنُ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيُّ عَنْ ثُمَامَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الإِنَاءِ ثَلاَثًا . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারা পানি পান করার আদব জানা যায়। হাদীছ দ্বারা জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করার সময় পাত্রের বাইরে তিনবার নিঃশ্বাস ফেলতেন। অর্থাৎ তিনি তিন শ্বাসে পানি পান করতেন। অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নিঃশ্বাসে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন এবং এভাবে পানি পান করা যে ভালো নয় তা বোঝানোর জন্য একে উটের পানি পান করার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি হুকুম করেছেন, তোমরা দুই-তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কেন তিন শ্বাসে পানি পান করতেন এবং আমাদেরকেও কেন এভাবে পান করতে হুকুম দিয়েছেন? এর উত্তর হলো-
كانَ رَسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وَسَلَّمَ يَتَنَفَّسُ في الشَّرَابِ ثَلَاثًا، ويقولُ: إنَّه أَرْوَى وَأَبْرَأُ وَأَمْرَأُ. قالَ أَنَسٌ: فأنَا أَتَنَفَّسُ في الشَّرَابِ ثَلَاثًا
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করায় তিনবার দম ফেলতেন। তিনি বলতেন, এটা বেশি তৃপ্তিদায়ক, পিপাসার কষ্ট বেশি নিবারণকারী (অথবা রোগ-ব্যাধি থেকে বেশি নিরাপদ কিংবা এক নিঃশ্বাসে পান করার কষ্ট থেকে নিরাপদ) এবং গলাধঃকরণে সহজতর। হযরত আনাস রাযি. বলেন, আমিও পানি পান করায় তিনবার দম ফেলি।’ (সহীহ মুসলিম: ২০২৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৪১৭৬; জামে' তিরমিযী: ১৮৮৪; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭২০৫)

এর দ্বারা তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করার কারণ জানা গেল। এক নিঃশ্বাসে পানি পান করলে অনেক সময় গলায় পানি আটকে যায়। তাতে অনেক কষ্ট হয়। কখনও তা মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পক্ষান্তরে দুই-তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করাটা সহজ। গলায় আটকা পড়ার ভয় থাকে না। তাতে পানি পান করাটা তৃপ্তিকর হয়। এতে পান করার কষ্ট না থাকায় তৃষ্ণার্ত শরীর জুড়ায় ভালো।

আমরা যদি দুই-তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করি, তবে তাতে পানি পান করাটা নিরাপদ ও আরামদায়ক তো হবেই, সেইসঙ্গে সুন্নতের অনুসরণ করার কারণে ছাওয়াবও পাওয়া যাবে। দুনিয়ারও লাভ, আখিরাতেরও লাভ। এভাবে সুন্নতের অনুসরণ মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়জগতের পক্ষেই কল্যাণকর হয়।

উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই-তিন নিঃশ্বাসে পান করার হুকুম দিয়েছেন বটে, কিন্তু তিনি নিজে পান করতেন তিন নিঃশ্বাসে। 'তিন' সংখ্যা বিজোড়। আল্লাহ তা'আলা বিজোড় সংখ্যা পসন্দ করেন। তাই তিন নিঃশ্বাসে পান করাই উত্তম।

অন্য হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করার শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতে আদেশ করেছেন। পানি আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নি'আমত। এছাড়া জীবনই চলে না। তাই আল্লাহর দেওয়া এ মহা নি'আমত তাঁর নামেই পান করা উচিত। এবং তাঁর শোকর আদায়ের লক্ষ্যে শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলাও বাঞ্ছনীয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. তিন নিঃশ্বাসে পান করা পানি পানের একটি আদব। আমরা সুন্নতের অনুসরণার্থে এ আদব অবশ্যই মেনে চলব।

খ. পানি পান করার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে হবে।

গ. পানি পান করা শেষ হলে আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায়ের জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ১৮৮৪ | মুসলিম বাংলা