আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

২৪. পোশাক-পরিচ্ছদের বিধান

হাদীস নং: ১৭৭০
আন্তর্জাতিক নং: ১৭৭০
স্বর্ণের দাঁত বাধান।
১৭৭৬। আহমাদ ইবনে মানী‘ (রাহঃ) ......... আরফাজা ইবনে আসআদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী আমলে কুলাব যুদ্ধের সময় আমার নাকে আঘাত লাগে। তখন আমি একটি রূপার নাক বাঁধিয়ে নেই। কিন্তু তা দুর্গন্ধ ময় হয়ে পড়ে। এতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে একটি স্বর্ণের নাক বানিয়ে নিতে নির্দেশ দেন।



আলী ইবনে হুজর (রাহঃ) ......... আবুল আশহাব (রাহঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। এই হাদীসটি হাসান। আব্দুর রহমান ইবনে তারাফা (রাহঃ) এর রিওয়ায়াত হিসাবে এটিকে আমরা জানি। আব্দুর রহমান ইবনে তারাফা (রাহঃ) থেকে সালম ইবনে জারীর (রাহঃ) ও আবুল আশহাব-আব্দুর রহমান ইবনে তারাফা (রাহঃ) এর অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

একাধিক আলিম থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা স্বর্ণের দাঁত বাঁধিয়েছিলেন। এই হাদীসটি তাদের পক্ষে দলীল স্বরূপ। আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী (রাহঃ) বলেন, সালম ইবনে ওয়াযীর বলা অমূলক বরং ইবনে জারীর ঠিক। রাবী আবু সাঈদ সানআনীর নাম হল মুহাম্মাদ ইবনে মুইয়াসসির।


আবু কুরায়ব (রাহঃ) ......... আবুল মালীহ তাঁর পিতা উসামা ইবনে উমায়র (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) হিংস্র প্রাণীর চামড়া ফরাস হিসাবে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।

মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ......... আবু মালীহ তাঁর পিতা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) হিংস্র প্রাণীর চামড়া ব্যবহার নিষেধ করেছেন।

রাবী সাঈদ ইবনে আবু আরূবা ছাড়া আর কেউ সনদে “আবুল মালীহ তার পিতা থেকে” কথাটির উল্লেখ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই।
باب مَا جَاءَ فِي شَدِّ الأَسْنَانِ بِالذَّهَبِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ هَاشِمِ بْنِ الْبَرِيدِ، وَأَبُو سَعْدٍ الصَّغَانِيُّ عَنْ أَبِي الأَشْهَبِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ طَرَفَةَ، عَنْ عَرْفَجَةَ بْنِ أَسْعَدَ، قَالَ أُصِيبَ أَنْفِي يَوْمَ الْكُلاَبِ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَاتَّخَذْتُ أَنْفًا مِنْ وَرِقٍ فَأَنْتَنَ عَلَىَّ فَأَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ أَتَّخِذَ أَنْفًا مِنْ ذَهَبٍ .
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ بَدْرٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ يَزِيدَ الْوَاسِطِيُّ، عَنْ أَبِي الأَشْهَبِ، نَحْوَهُ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ طَرَفَةَ . وَقَدْ رَوَى سَلْمُ بْنُ زَرِيرٍ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ طَرَفَةَ نَحْوَ حَدِيثِ أَبِي الأَشْهَبِ . وَقَدْ رُوِيَ عَنْ غَيْرِ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنَّهُمْ شَدُّوا أَسْنَانَهُمْ بِالذَّهَبِ وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ حُجَّةٌ لَهُمْ . وَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ سَلْمُ بْنُ رَزِينٍ وَهُوَ وَهَمٌ وَأَبُو سَعْدٍ الصَّغَانِيُّ اسْمُهُ مُحَمَّدُ بْنُ مُيَسَّرٍ .

حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، وَمُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي عَرُوبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ جُلُودِ السِّبَاعِ أَنْ تُفْتَرَشَ .

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ جُلُودِ السِّبَاعِ .

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ، أَنَّهُ كَرِهَ جُلُودَ السِّبَاعِ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَلاَ نَعْلَمُ أَحَدًا قَالَ عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ، عَنْ أَبِيهِ، غَيْرَ سَعِيدِ بْنِ أَبِي عَرُوبَةَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর চামড়াকে বিছানা বানাতে কিংবা পশুর পিঠে বিছিয়ে তার উপর সওয়ার হতে নিষেধ করা হয়েছে। সেকালে অনারবরা এটা করত। এটা এক রকম অহমিকা। বিলাসিতাও বটে। অহংকারী লোক মানুষকে দেখানোর জন্য এ জাতীয় বিলাসিতা সেকালেও করত, এখনও করে থাকে। গৌরব দেখানো ভালো নয়। বিলাসিতাও পসন্দনীয় নয়। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে নিষেধ করে দিয়েছেন যে, তারা যেন বাঘ বা অন্য কোনও হিংস্র পশুর চামড়াকে বিছানা বানিয়ে তার উপর না বসে কিংবা তাতে সওয়ার না হয় অর্থাৎ তা দ্বারা সওয়ারীর জিন না বানায়। সারকথা একজন মুমিনের দৃষ্টি থাকবে সর্বদা আখিরাতের দিকে। কীভাবে আখিরাতের মুক্তিলাভ হতে পারে, তার যাবতীয় কাজকর্ম সে লক্ষ্যেই সম্পাদিত হবে। সে ভোগ-বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে আখিরাত থেকে উদাসীন হবে না। তার পোশাক-আশাক ও অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রী হবে সাদামাটা। এসব বস্তু অতিরিক্ত দামি বা বিলাসিতাপূর্ণ হলে অন্তরে তার প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে এগুলো মানুষের সেবক থাকে না, উল্টো মানুষ এর সেবক হয়ে যায়। এভাবে মানুষ আখিরাত থেকে উদাসীন হয়ে এসব সামগ্রী সংগ্রহ ও এর সেবাযত্নে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যা কিনা মানবসৃষ্টির উদ্দেশ্যেরও পরিপন্থি এবং দুনিয়ার বস্তুসামগ্রী সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

মুমিনদের উচিত সর্বপ্রকার বিলাসসামগ্রী ও অহমিকাজনক বস্তুর ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ১৭৭০ | মুসলিম বাংলা