আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

২৪. পোশাক-পরিচ্ছদের বিধান

হাদীস নং: ১৭৬৭
আন্তর্জাতিক নং: ১৭৬৭
নতুন কাপড় পরিধানের দুআ প্রসঙ্গে।
১৭৭৩। সুওয়ায় ইবনে নসর (রাহঃ) ......... আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন নতুন কাপড় বানাতেন তখন এটির নাম নিতেন। যেমন, পাগড়ী বা কামীস বা চাদর, এরপর বলতেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيهِ أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ

হে আল্লাহ তোমার সকল প্রশংসা। তুমি আমাকে এটি পরিধান করিয়েছ। আমি তোমার কাছে এর কল্যাণ এবং যে জন্য এটিকে তৈরী করা হয়েছে সে মঙ্গল চাই। আর এর অমঙ্গল এবং যে জন্য এটিকে তৈরী করা হয়েছে সে অকল্যাণ থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই।

এই বিষয়ে উমর ও ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে।

হিশাম ইবনে ইউনুস আল-কুফী (রাহঃ) ......... জুরায়রী (রাহঃ) থেকেও অনূরূপ বর্ণিত আছে। এই হাদীসটি হাসান
باب مَا يَقُولُ إِذَا لَبِسَ ثَوْبًا جَدِيدًا
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ سَعِيدٍ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهِ عِمَامَةً أَوْ قَمِيصًا أَوْ رِدَاءً ثُمَّ يَقُولُ " اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيهِ أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ عُمَرَ وَابْنِ عُمَرَ .
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ يُونُسَ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا الْقَاسِمُ بْنُ مَالِكٍ الْمُزَنِيُّ، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، نَحْوَهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

পোশাক আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় এক নি'আমত। বান্দার কোনও যোগ্যতা ও অধিকার ছাড়াই আল্লাহ তা'আলা নিজ অনুগ্রহে এটা দান করেন। তাই বান্দার কর্তব্য এর জন্য আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা। যে-কোনও নি'আমত আল্লাহ তা'আলার হুকুম মোতাবেক ব্যবহার করলে তা বান্দার জন্য কল্যাণকর হয়। অন্যথায় তা বহুবিধ অকল্যাণের কারণ হয়ে থাকে। তাই নি'আমত ব্যবহারকালে আল্লাহ তা'আলার কাছে সে নি'আমতের কল্যাণ লাভ করা ও অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকার জন্য দু'আও করা উচিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নি'আমত ভোগকালীন যেসকল দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন, তার ভেতর একইসঙ্গে উল্লিখিত শোকর ও প্রার্থনা দু'টিই বিদ্যমান রয়েছে। পোশাক পরিধানকালীন যে দু'আ এ হাদীছটিতে শেখানো হয়েছে, তাও এর ব্যতিক্রম নয়।

দু'আটির প্রথম বাক্য হল-
اَللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيْهِ (হে আল্লাহ! তোমারই সমস্ত প্রশংসা। তুমিই এটি আমাকে পরিয়েছ)। অর্থাৎ এই জামা, লুঙ্গি, পায়জামা, টুপি কিংবা চাদর তুমিই আমাকে দান করেছ। এটা পাওয়ার কোনও অধিকার আমার ছিল না। এমন কোনও যোগ্যতাও ছিল না, যদ্দরুন এটা আমি পেতে পারি। এটা নিতান্তই নিজ মেহেরবানিতে তুমি এটা আমাকে দান করেছ। তুমি না দিলে এটা আমি পেতাম না। সুতরাং হে আল্লাহ! এর জন্য আমি তোমার কৃতজ্ঞতা জানাই।

দু'আটির দ্বিতীয় বাক্য হল- أَسْأَلكَ خَيْرَهُ (আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি এর কল্যাণ)। অর্থাৎ এ পোশাক যেন আমার শীত বা তাপ নিবারণের কাজে আসে। এটা যেন আমার শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হয়।

দু'আটির তৃতীয় বাক্য হল- وَخَيْرٌ مَا صُنْعَ لَهُ (এবং যেজন্য এটি তৈরি করা হয়েছে তারও কল্যাণ)। অর্থাৎ এ পোশাক যেন আমি শরী'আতসম্মতভাবে ব্যবহার করি। এটা পরে আমি যেন তোমার ইবাদত-আনুগত্য করি ও সৎকর্মে লিপ্ত থাকি।

দু'আটির চতুর্থ বাক্য হল- وَأَعَوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ (আর আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি এর অনিষ্ট থেকে)। অর্থাৎ এ পোশাক যেন কোনওভাবেই আমার শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয় কিংবা অন্য কোনওভাবে বিপদের কারণ না হয়।

দু'আটির সর্বশেষ বাক্য হল- وَشَرٌ مَا صُنْعَ لَهُ (এবং যেজন্য এটি তৈরি করা হয়েছে তারও অনিষ্ট থেকে)। অর্থাৎ এ পোশাক পরে আমি যেন তোমার অকৃতজ্ঞতা না করি এবং অহংকার-অহমিকার শিকার না হই। এ পোশাক পরে আমি যেন কোনও পাপকর্মে লিপ্ত না হই কিংবা এ পোশাক যেন আমার কোনও পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পক্ষে সহায়ক না হয়।

প্রকাশ থাকে যে, এ হাদীছে যদিও দু'আটি নতুন কাপড় পরিধানের বেলায় পড়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কোনও বর্ণনায় সাধারণভাবে কাপড় পড়ার দু’আ হিসেবে এটি উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই নতুন-পুরোনো যে-কোপড় পরার দু'আ সময়ই এ দু'আটি প্রযোজ্য।

উল্লেখ্য, হাদীছগ্রন্থসমূহে এ দু'আটি ছাড়া পোশাক পরার অন্য দু'আও বর্ণিত আছে। যেমন এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-:
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أُوَارِي بِهِ عَوْرَتِي، وَأَتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي، ثُمَّ عَمَدَ إِلَى الثَّوْبِ الَّذِي أَخْلَقَ فَتَصَدَّقَ بِهِ كَانَ فِي كَنَفِ اللَّهِ، وَفِي حِفْظِ اللَّهِ، وَفِي ستْرِ اللَّهِ حَيًّا وَمَيِّتًا

যে ব্যক্তি কোনও নতুন কাপড় পরে আর বলে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أُوَارِي بِهِ عَوْرَتِي، وَأَتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এমন কাপড় পরিয়েছেন, যা দ্বারা আমি আমার সতর ঢাকি এবং আমি আমার ইহজীবনে নিজেকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করি)

তারপর পুরোনো কাপড়টি সদাকা করে যায়, সে জীবিত ও মৃত অবস্থায় আল্লাহর রহমত ও তাঁর হেফাজতের মধ্যে থাকবে এবং আল্লাহ তা'আলা তার দোষ গোপন রাখবেন।
(জামে' তিরমিযী: ৩৫৬০; সুনানে ইবন মাজাহ ৩৫৭৭; মুসনাদে আহমাদ: ৩০৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫০৮৮; মুসনাদে আবু ইয়া'লা ৩২৭; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওম ওয়াল-লায়লা: ২৭২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক ৭৪১০; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৫৮৭৪; তাবারানী, মাকারিমুল আখলাক: ১৯১)

হযরত মু'আয ইবন আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
من لبس ثوبا فقال الحمد لله الذي كساني هذا ورزقنيه من غير حول مني ولا قوة غفر له ما تقدم من ذنبه وما تأخر
'যে ব্যক্তি কোনও কাপড় পরিধান করে এবং বলে- الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هُذَا الثَّوْبَ، وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ পোশাক পরিয়েছেন এবং আমার কোনও শক্তি ও ক্ষমতা ছাড়াই এটা আমাকে দান করেছেন), তার আগের-পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
(সুনানে আবূ দাউদ: ৪০২৩; জামে তিরমিযী: ৩৪৫৮; সুনানে ইবন মাজাহ: ৩২৮৫; মুসনাদে আহমাদ: ১৫৬৩২; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওম ওয়াল লায়লা: ২৭১)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কাপড় আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নি'আমত। এর জন্য শোকর আদায় করা জরুরি।

খ. যে-কোনও বস্তুর ভেতর উপকার ও অপকার দুয়েরই অবকাশ থাকে। তাই সে বস্তুর উপকার লাভ ও অপকার থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করা চাই।

গ. আমরা কাপড় পরার সময় হাদীছে বর্ণিত দু'আ অবশ্যই পাঠ করব।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ১৭৬৭ | মুসলিম বাংলা