আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

২৪. পোশাক-পরিচ্ছদের বিধান

হাদীস নং: ১৭২০
আন্তর্জাতিক নং: ১৭২০
পুরুষদের রেশম ও স্বর্ণ ব্যবহার প্রসঙ্গে।
১৭২৬। ইসহাক ইবনে মানসুর (রাহঃ) ......... আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ ব্যবহার আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে এবং মেয়েদের জন্য তা হালাল করা হয়েছে। ইবনে মাজাহ ৩৫৯৫

এই বিষয়ে উমর, আলী, উকবা ইবনে আমির, আনাস, হুযাইফা, উম্মে হানী, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, ইমরান ইবনে হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবাইর, জাবির, আবু রায়হান, ইবনে উমর ও ওয়াছিলা ইবনুল-আসকা (রাযিঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, আবু মুসা আশারী (রাযিঃ) বর্ণিত এই হাদীসটি হাসান-সহীহ।
باب مَا جَاءَ فِي الْحَرِيرِ وَالذَّهَبِ
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " حُرِّمَ لِبَاسُ الْحَرِيرِ وَالذَّهَبِ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي وَأُحِلَّ لإِنَاثِهِمْ " . قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ عُمَرَ وَعَلِيٍّ وَعُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ وَأَنَسٍ وَحُذَيْفَةَ وَأُمِّ هَانِئٍ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَعِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ وَجَابِرٍ وَأَبِي رَيْحَانَةَ وَابْنِ عُمَرَ وَوَاثِلَةَ بْنِ الأَسْقَعِ . وَحَدِيثُ أَبِي مُوسَى حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে জানানো হয়েছে, মুসলিম পুরুষদের জন্য রেশমী পোশাক পরিধান করা ও সোনার অলংকার ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা জায়েয কেবল নারীদের জন্য। স্বামীর জন্য নারীর সাজসজ্জা পসন্দনীয়। এমনিতেও সাজসজ্জার প্রতি নারীদের স্বভাবগত আকর্ষণ পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতি বিধি-নিষেধ আরোপ করলে তাদের জন্য তা পালন করা কঠিন হত। এসব কারণে তাদের জন্য রেশমী পোশাক ও স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা জায়েয রাখা হয়েছে।

পুরুষদের ক্ষেত্রে এসব কারণ অনুপস্থিত। তাই তাদের জন্য এটা জায়েয রাখার কোনও প্রয়োজন ছিল না। বরং জায়েয রাখা হলে তা বহুবিধ ক্ষতির কারণ হত। রেশমী পোশাক ও স্বর্ণালংকার ব্যবহারের মধ্যে এক রকম অহমিকা আছে। যেসব কারণে অহংকার সৃষ্টি হয় তা থেকে দূরে থাকা একান্ত কর্তব্য। কেননা আল্লাহ তা'আলা অহংকারীকে পসন্দ করেন না। তাছাড়া এসব বস্তু ব্যবহার করার দ্বারা দুনিয়ার লোভ-লালসা বাড়ে এবং আখিরাতের প্রতি উদাসীনতা সৃষ্টি হয়। আখিরাতের জীবনই মানুষের সত্যিকারের জীবন। সে জীবনের প্রতি উদাসীনতা কিছুতেই কাম্য নয়। বরং এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, যা দ্বারা পরকালীন জীবনের প্রতি আগ্রহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাবে। স্বর্ণালংকার ও রেশমী পোশাক থেকে বিরত রাখাটা আখিরাতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিতে সহায়ক। হাদীছে জানানো হয়েছে, যারা দুনিয়ায় এসব ব্যবহার করে, তারা আখিরাতে এর থেকে বঞ্চিত থাকবে। আরও জানানো হয়েছে, এসব দামি ও বিলাসিতাপূর্ণ বস্তু দুনিয়ায় কাফেরদের জন্য এবং আখিরাতে মুমিনদের জন্য। কাজেই মুমিনগণ যখন দেখবে দুনিয়ায় কাফের-বেঈমানগণ এগুলো ব্যবহার করছে আর তারা নিজেরা এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের পরকালীন জীবনের কথা মনে পড়বে। তখন তারা জান্নাতলাভের আশায় দুনিয়ায় এসব বস্তুর ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে অধিকতর উৎসাহী হবে। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, দুনিয়ায় ভোগ-বিলাসিতা থেকে যত বেশি দূরে থাকা যায়, পরকালীন জীবনের কথা অন্তরে ততো বেশি জাগ্রত থাকে। পরকালীন জীবনের কথা মনে যত বেশি জাগ্রত থাকে, পাপকর্ম থেকে দূরে থাকা ও সৎকর্ম করা ততো বেশি সহজ হয়। পুরুষগণ যত বেশি আখিরাতমুখী থাকবে, তারা ততটাই নিজ পরিবারবর্গকে দীনের উপর পরিচালনায় সচেতন থাকবে। তাই বিলাসিতাপূর্ণ এসব বস্তু অর্থাৎ স্বর্ণালংকার ও রেশমী পোশাক পরিধান থেকে পুরুষদেরকে দূরে রাখার প্রয়োজন ছিল। এ দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষদের জন্য এগুলো হারাম করা খুবই যুক্তিযুক্ত। প্রকৃত বিষয় আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। তিনি যখন পুরুষদের জন্য এগুলো হারাম করেছেন, তখন প্রত্যেক মুমিন পুরুষকে অবশ্যই এর থেকে বিরত থাকতে হবে। হযরত উকবা ইবন আমির রাযি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُولِ اللهِ صَلى الله عَليه وسَلم أَنَّهُ كَانَ يَمْنَعُ أَهْلَهُ الْحِلْيَةَ وَالْحَرِيرَ وَيَقُولُ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ حِلْيَةَ الْجَنَّةِ وَحَرِيرَهَا فَلاَ تَلْبَسُوهَا فِي الدُّنْيَا
‘রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারবর্গকে গহনা ও রেশমী পোশাক ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। তিনি বলতেন, তোমরা যদি জান্নাতের গহনা ও রেশমী পোশাক কামনা কর, তবে পৃথিবীতে এসব পরিধান করো না’।
(সুনানে নাসাঈ ৫১৩৬; সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৪৮৬; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর:৮৩৫, হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৭৪০৩)

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত-
دَارُ الْمُؤْمِنِ فِي الْجَنَّةِ مِنْ لُؤْلُؤَةٍ فِيهَا أَرْبَعُونَ بَيْتًا فِي وَسَطِهَا شَجَرَةٌ تَنْبُتُ الْحُلَلُ فَيَأْتِيهَا فَيَأْخُذُ بِأُصْبُعِهِ سَبْعِينَ حُلَّةً مُمَنْطَقَةً بِاللُّؤْلُؤِ وَالْمَرْجَانِ
'জান্নাতে মুমিনদের বাড়ি হবে মণিমুক্তার। তাতে থাকবে চল্লিশটি ঘর। তার মাঝখানে এমন একটি গাছ, যা পোশাক উৎপাদন করবে। মুমিন ব্যক্তি তার কাছে এসে নিজ আঙ্গুল দ্বারা মণিমুক্তা খচিত সত্তর জোড়া পোশাক গ্রহণ করবে।
(মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩৪০৪০: ইবনুল মুবারক, আয-যুহদ ওয়ার-রাকাইক, ২ খণ্ড, ৭৪পৃষ্ঠা।)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ। জান্নাতবাসীদের কাপড় কেমন হবে, আমাদের বলে দিন। তা কি সৃষ্টি করা হবে, না বোনা হবে? এ কথা শুনে কিছু লোক হেসে দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা হাসছ কেন? একজন অজ্ঞ ব্যক্তি জ্ঞাত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করছে সেজন্য? তারপর তিনি বললেন, প্রশ্নকর্তা কোথায়? সে বলল, এই যে ইয়া রাসুলাল্লাহ। আমি। তিনি বললেন, না; বরং জান্নাতের ফল ফেটে তা বের হবে।
(মুসনাদে আহমাদ: ৭০৯৫; মুসনাদুল বাযযার: ২৪৩৪; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত: ২২১৩: বায়হাকী, আল বা'ছ ওয়ান নুশুর ২৯৫)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

পুরুষদের জন্য স্বর্ণালংকার ও রেশমী পোশাক পরা বৈধ নয়, নারীদের জন্য বৈধ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ১৭২০ | মুসলিম বাংলা