আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৮- নবীগণের আঃ আলোচনা
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩৩২৬
২০০০. নবীগণের আলোচনা অধ্যায়ঃ আদম (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সন্তানদের সৃষ্টির বর্ণনা।
আল্লাহর বাণীঃ স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফিরিশতাগণকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলীফা সৃষ্টি করছি। (২ঃ ৩০) صَلْصَالٌ বালি মিশ্রিত শুকনো মাটি যা শব্দ করে যেমন আগুনে পোড়া মাটি শব্দ করে। আরো বলা হয়, তা হলো দুর্ঘন্ধযুক্ত মাটি। আরবরা এ দিয়ে صَلَّ এর অর্থ নিয়ে থাকে, যেমন তারা দরজা বন্ধ করার শব্দের ক্ষেত্রে صَرَّ الْبَابُ এবং صَرْصَرَ শব্দদ্বয় ব্যবহার করে থাকে। অনুরূপ كَبْكَبْتُهُ এর অর্থ كَبَبْتُهُ নিয়ে থাকে। فَمَرَّتْ بِهِ তার গর্ভ স্থিতি লাভ করল এবং এর মেয়াদ পূর্ণ করল। أَنْ لاَ تَسْجُدَ এর لاَ শব্দটি অতিরিক্ত। أَنْ تَسْجُدَ অর্থ সিজদা করতে হবে। মহান আল্লাহর বাণীঃ এবং স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফিরিশতাগণকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করছি। (২ঃ ৩০) ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, لَمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ এর অর্থ কিন্তু তার উপর রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক। فِي كَبَدٍ সৃষ্টিগত ক্লেশের মধ্যে وَرِيشا -এর অর্থ সম্পদ। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) ছাড়া অন্যরা বলেন, الرِّيَاشُ এবং الرِّيشُ উভয়ের একই অর্থ। আর তা হল পরিচ্ছেদের বাহ্যিক দিক। مَا تُمْنُونَ স্ত্রীলোকদের জরায়ুতে পতিত বীর্য। আর মুজাহিদ (রাহঃ) আল্লাহর বাণীঃ إِنَّهُ عَلَى رَجْعِهِ لَقَادِرٌ এর অর্থ বলেছেন, পুরুষের লিঙ্গ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ সক্ষম। আল্লাহ সকল বস্তুকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন। আকাশেরও জোড়া আছে, কিন্তু আল্লাহ বেজোড়। فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ উত্তম আকৃতিতে। যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত সকলেই হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে। خُسْرٍ পথভ্রষ্ট। এরপর استثناء করে আল্লাহ বলেন, কিন্তু যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত। لاَزِبٍ অর্থ আঠালো। نُنْشِئَكُمْ অর্থ যে কোন আকৃতিতে আমি ইচ্ছা করি তোমাদেরকে সৃষ্টি করব। نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ অর্থ আমরা প্রশংসার সাথে আপনার মহিমা বর্ণনা করব। আর আবুল আলীয়া (রাহঃ) বলেন, অতঃপর আদম (আলাইহিস সালাম) যা শিক্ষা করলেন তা হল তার উক্তি “হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের উপর যুলুম করেছি।” তিনি আরো বলেন, فَأَزَلَّهُمَا শয়তান তাঁদের উভয়কে পদস্খলিত করল। يَتَسَنَّهْ পরিবর্তিত হবে। آسِنٌ পরিবর্তিত। الْمَسْنُونُ পরিবর্তিত। حَمَإٍ শব্দটি حَمْأَةٍ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ গলিত কাদা মাটি। يَخْصِفَانِ তারা উভয়ে (আদম ও হাওয়া) জান্নাতের পাতাগুলো জোড়া দিতে লাগলেন। (জোড়া দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান ঢাকতে শুরু করলেন) سَوْآتُهُمَا দ্বারা তাঁদের উভয়ের লজ্জাস্থানের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আর مَتَاعٌ إِلَى حِينٍ এর অর্থ এখানে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত। আর আরববাসীগণ الْحِينُ শব্দ দ্বারা কিছু সময় থেকে অগণিত সময়কে বুঝিয়ে থাকেন। قَبِيلُهُ এর অর্থ তার ঐ দল যাদের মধ্যে সেও শামিল।
আল্লাহর বাণীঃ স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফিরিশতাগণকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলীফা সৃষ্টি করছি। (২ঃ ৩০) صَلْصَالٌ বালি মিশ্রিত শুকনো মাটি যা শব্দ করে যেমন আগুনে পোড়া মাটি শব্দ করে। আরো বলা হয়, তা হলো দুর্ঘন্ধযুক্ত মাটি। আরবরা এ দিয়ে صَلَّ এর অর্থ নিয়ে থাকে, যেমন তারা দরজা বন্ধ করার শব্দের ক্ষেত্রে صَرَّ الْبَابُ এবং صَرْصَرَ শব্দদ্বয় ব্যবহার করে থাকে। অনুরূপ كَبْكَبْتُهُ এর অর্থ كَبَبْتُهُ নিয়ে থাকে। فَمَرَّتْ بِهِ তার গর্ভ স্থিতি লাভ করল এবং এর মেয়াদ পূর্ণ করল। أَنْ لاَ تَسْجُدَ এর لاَ শব্দটি অতিরিক্ত। أَنْ تَسْجُدَ অর্থ সিজদা করতে হবে। মহান আল্লাহর বাণীঃ এবং স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফিরিশতাগণকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করছি। (২ঃ ৩০) ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, لَمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ এর অর্থ কিন্তু তার উপর রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক। فِي كَبَدٍ সৃষ্টিগত ক্লেশের মধ্যে وَرِيشا -এর অর্থ সম্পদ। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) ছাড়া অন্যরা বলেন, الرِّيَاشُ এবং الرِّيشُ উভয়ের একই অর্থ। আর তা হল পরিচ্ছেদের বাহ্যিক দিক। مَا تُمْنُونَ স্ত্রীলোকদের জরায়ুতে পতিত বীর্য। আর মুজাহিদ (রাহঃ) আল্লাহর বাণীঃ إِنَّهُ عَلَى رَجْعِهِ لَقَادِرٌ এর অর্থ বলেছেন, পুরুষের লিঙ্গ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ সক্ষম। আল্লাহ সকল বস্তুকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন। আকাশেরও জোড়া আছে, কিন্তু আল্লাহ বেজোড়। فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ উত্তম আকৃতিতে। যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত সকলেই হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে। خُسْرٍ পথভ্রষ্ট। এরপর استثناء করে আল্লাহ বলেন, কিন্তু যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত। لاَزِبٍ অর্থ আঠালো। نُنْشِئَكُمْ অর্থ যে কোন আকৃতিতে আমি ইচ্ছা করি তোমাদেরকে সৃষ্টি করব। نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ অর্থ আমরা প্রশংসার সাথে আপনার মহিমা বর্ণনা করব। আর আবুল আলীয়া (রাহঃ) বলেন, অতঃপর আদম (আলাইহিস সালাম) যা শিক্ষা করলেন তা হল তার উক্তি “হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের উপর যুলুম করেছি।” তিনি আরো বলেন, فَأَزَلَّهُمَا শয়তান তাঁদের উভয়কে পদস্খলিত করল। يَتَسَنَّهْ পরিবর্তিত হবে। آسِنٌ পরিবর্তিত। الْمَسْنُونُ পরিবর্তিত। حَمَإٍ শব্দটি حَمْأَةٍ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ গলিত কাদা মাটি। يَخْصِفَانِ তারা উভয়ে (আদম ও হাওয়া) জান্নাতের পাতাগুলো জোড়া দিতে লাগলেন। (জোড়া দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান ঢাকতে শুরু করলেন) سَوْآتُهُمَا দ্বারা তাঁদের উভয়ের লজ্জাস্থানের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আর مَتَاعٌ إِلَى حِينٍ এর অর্থ এখানে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত। আর আরববাসীগণ الْحِينُ শব্দ দ্বারা কিছু সময় থেকে অগণিত সময়কে বুঝিয়ে থাকেন। قَبِيلُهُ এর অর্থ তার ঐ দল যাদের মধ্যে সেও শামিল।
৩০৯১। আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, আল্লাহ্ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম)- কে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। এরপর তিনি (আল্লাহ্) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফিরিশতা দলের প্রতি সালাম কর, এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিরূপে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কেননা এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। তারপর আদম (আলাইহিস সালাম) (ফিরিশতাদের) বললেন, “আসসালামু আলাইকুম”। ফিরিশতাগণ তার উত্তরে “আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহামাতুল্লাহ” বললেন। ফিরিশতারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রাহমাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম (আলাইহিস সালাম)- এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানদের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপ পর্যন্ত পোঁছেছে।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে সালামের সূচনা কীভাবে হল তা জানানো হয়েছে। জানানো হয়েছে যে, এর সূচনা প্রথম মানুষ হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- لَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ (আল্লাহ তা'আলা যখন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন)। হযরত আদম আলাইহিস সালাম প্রথম মানুষ। তিনি আমাদের আদি পিতা। আল্লাহ তা'আলা কোনও পিতা-মাতা ছাড়া তাঁকে সরাসরি সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
'সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদেরকে বলেছিলেন, আমি শুকনো কাদার ঠনঠনে মাটি দ্বারা এক মানব সৃষ্টি করতে চাই’। (সূরা হিজর, আয়াত ২৮)
আরও ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
'আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মতো। আল্লাহ তাঁকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন। তাকে বলেন 'হয়ে যাও', অমনি সে হয়ে যায়’। ( সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৫৯)
হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা'আলা তাঁকে একদল ফিরিশতাকে দেখিয়ে হুকুম দিলেন- اذْهَب فَسلم عَلَى أولئك (যাও, তাদেরকে সালাম দাও)। খানিকটা দূরে একদল ফিরিশতা বসা ছিলেন। তাদের কাছে গিয়ে সালাম দেওয়ার হুকুম দ্বারা তাঁকে সালামের বাস্তব প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল। যখন কেউ কারও কাছে যায় বা কারও সাথে সাক্ষাৎ হয়, তখনই অভিবাদন বা সালামের প্রয়োজন হয়। এখানে সেভাবেই সালাম শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সম্ভবত কী বাক্যে ফিরিশতাদেরকে সালাম দিতে হবে তাও আল্লাহ তা'আলা তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন কিংবা তাঁর অন্তরে সে বাক্য সঞ্চার করে দিয়েছিলেন। সেমতে তিনি তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন- - اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনাদের প্রতি সালাম)। উত্তরে ফিরিশতাগণ। বললেন-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ (আপনার প্রতি সালাম ও আল্লাহর রহমত)। ফিরিশতাগণ وَرَحْمَةُ اللَّهِ কথাটি অতিরিক্ত যোগ করলেন। শেখানো হল যে, সালামের চেয়ে সালামের জবাব উত্তম হতে হয়। অতিরিক্ত শব্দ যোগ করার দ্বারা জবাব উত্তম হয়।
ফিরিশতাগণ কয়েকজন থাকায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম বহুবচনে বলেছেন- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনাদের প্রতি সালাম)। অপরদিকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম একা হওয়ায় ফিরিশতাগণ একবচনে জবাব দিয়েছেন- السَّلَامُ عَلَيْك (আপনার প্রতি সালাম)। এখানে ফিরিশতাদের জবাবে السَّلَامُ শব্দ আগে বলা হয়েছে। এটাও জায়েয। তবে উত্তম হল এটা পরে ব্যবহার করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সেরকমই শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত আদম আলাইহিস সালাম একা হওয়ায় ফিরিশতাগণ একবচনের শব্দ عَلَيْك ব্যবহার করেছেন। এটাও জায়েয। তবে উত্তম একজনের বেলায়ও বহুবচনে عَلَيْكُمْ বলা। কারণ মানুষ সে একা হলেও তার সঙ্গে সবসময় দু'জন ফিরিশতা থাকে। তাই সালামে তাদেরকেও শামিল রাখা চাই।
যাহোক সালাম ও সালামের উত্তরের প্রশিক্ষণ হয়ে গেল। এই সালাম ও উত্তর সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে লক্ষ করে বলেছেন- فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتحِيَّةُ ذُرِّيتكَ (এটাই তোমার ও তোমার বংশধরদের অভিবাদন)। অর্থাৎ আমার দেওয়া বিধানরূপে এ সালামই হবে পারস্পরিক সাক্ষাৎকালে তোমার বংশধরদের অভিবাদন। বোঝা গেল অভিবাদনের ইসলামী রীতি হল সালামের আদান-প্রদান। সব যুগেই ইসলামই ছিল আল্লাহপ্রদত্ত একমাত্র দীন। প্রত্যেক নবীর প্রকৃত অনুসারীগণ ছিল মুসলিম। সব মুসলিমের জন্যই অভিবাদনরূপে সালামই ছিল বিধিসম্মত। কিন্তু অতীত জাতিসমূহ তাদের দীন বিকৃত করে ফেলেছে। কোনও সম্প্রদায় তাদের নবীর রেখে যাওয়া দীন সংরক্ষণ করেনি। তারা প্রতিনিয়ত তার মধ্যে সত্যদীন তথা ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়েছে। হারিয়ে ফেলেছে নবীর প্রকৃত শিক্ষা। সে ধারায় তাদের থেকে সালামের রেওয়াজও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ব্যতিক্রম কেবল আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত। তারা তাঁর রেখে যাওয়া দীনের পরিপূর্ণ হেফাজত করেছে। ফলে অন্যান্য বিধানের মতো সালামের বিধানটিও আজও পর্যন্ত এ উম্মতের মধ্যে চালু আছে। আজ এটা কেবলই সত্যদীন ইসলামের নিদর্শনরূপে প্রচলিত। এমনকি যারা ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধানে গাফলাতি করে, পারস্পরিক সাক্ষাৎকালে তাদেরও প্রথম কাজ হয় সালাম বিনিময়। পাশ্চাত্য সভ্যতার আগ্রাসনে এ উম্মত তাদের অনেক বিশেষত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সালাম বিনিময়ের মাধুর্যপূর্ণ অভিবাদন আজও স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামের আদর্শিক এ মীরাছ কেবল তাঁর আখেরী বংশধরগণই যত্নের সঙ্গে লালন করে চলেছে। উম্মত যদি এভাবে শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যাবতীয় শিক্ষার অনুসরণে যত্নবান হয়, তবে এর ভেতর দিয়ে আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামসহ পূর্ববর্তী অন্যসকল নবীর মৌলিক শিক্ষাসমূহও পুনর্জীবন লাভ করবে, যেমনটা একবার তা পুনর্জীবিত হয়েছিল এ উম্মতের শুরুর যমানায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. হযরত আদম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম মানুষ। আল্লাহ তা'আলা সরাসরি তাঁকে পূর্ণ মানুষরূপে সৃষ্টি করেছেন। তিনি প্রাণীর অন্য কোনও রূপ থেকে বিবর্তিত নন।
খ. সালাম বিনিময়ের সূচনা হয়েছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে।
গ. সালাম অপেক্ষা সালামের জবাবে অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করা উত্তম।
ঘ . আদব হল আগন্তুক ব্যক্তি অবস্থানকারীদেরকে সালাম দেবে।
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
'সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদেরকে বলেছিলেন, আমি শুকনো কাদার ঠনঠনে মাটি দ্বারা এক মানব সৃষ্টি করতে চাই’। (সূরা হিজর, আয়াত ২৮)
আরও ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
'আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মতো। আল্লাহ তাঁকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন। তাকে বলেন 'হয়ে যাও', অমনি সে হয়ে যায়’। ( সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৫৯)
হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা'আলা তাঁকে একদল ফিরিশতাকে দেখিয়ে হুকুম দিলেন- اذْهَب فَسلم عَلَى أولئك (যাও, তাদেরকে সালাম দাও)। খানিকটা দূরে একদল ফিরিশতা বসা ছিলেন। তাদের কাছে গিয়ে সালাম দেওয়ার হুকুম দ্বারা তাঁকে সালামের বাস্তব প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল। যখন কেউ কারও কাছে যায় বা কারও সাথে সাক্ষাৎ হয়, তখনই অভিবাদন বা সালামের প্রয়োজন হয়। এখানে সেভাবেই সালাম শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সম্ভবত কী বাক্যে ফিরিশতাদেরকে সালাম দিতে হবে তাও আল্লাহ তা'আলা তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন কিংবা তাঁর অন্তরে সে বাক্য সঞ্চার করে দিয়েছিলেন। সেমতে তিনি তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন- - اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনাদের প্রতি সালাম)। উত্তরে ফিরিশতাগণ। বললেন-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ (আপনার প্রতি সালাম ও আল্লাহর রহমত)। ফিরিশতাগণ وَرَحْمَةُ اللَّهِ কথাটি অতিরিক্ত যোগ করলেন। শেখানো হল যে, সালামের চেয়ে সালামের জবাব উত্তম হতে হয়। অতিরিক্ত শব্দ যোগ করার দ্বারা জবাব উত্তম হয়।
ফিরিশতাগণ কয়েকজন থাকায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম বহুবচনে বলেছেন- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনাদের প্রতি সালাম)। অপরদিকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম একা হওয়ায় ফিরিশতাগণ একবচনে জবাব দিয়েছেন- السَّلَامُ عَلَيْك (আপনার প্রতি সালাম)। এখানে ফিরিশতাদের জবাবে السَّلَامُ শব্দ আগে বলা হয়েছে। এটাও জায়েয। তবে উত্তম হল এটা পরে ব্যবহার করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সেরকমই শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত আদম আলাইহিস সালাম একা হওয়ায় ফিরিশতাগণ একবচনের শব্দ عَلَيْك ব্যবহার করেছেন। এটাও জায়েয। তবে উত্তম একজনের বেলায়ও বহুবচনে عَلَيْكُمْ বলা। কারণ মানুষ সে একা হলেও তার সঙ্গে সবসময় দু'জন ফিরিশতা থাকে। তাই সালামে তাদেরকেও শামিল রাখা চাই।
যাহোক সালাম ও সালামের উত্তরের প্রশিক্ষণ হয়ে গেল। এই সালাম ও উত্তর সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে লক্ষ করে বলেছেন- فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتحِيَّةُ ذُرِّيتكَ (এটাই তোমার ও তোমার বংশধরদের অভিবাদন)। অর্থাৎ আমার দেওয়া বিধানরূপে এ সালামই হবে পারস্পরিক সাক্ষাৎকালে তোমার বংশধরদের অভিবাদন। বোঝা গেল অভিবাদনের ইসলামী রীতি হল সালামের আদান-প্রদান। সব যুগেই ইসলামই ছিল আল্লাহপ্রদত্ত একমাত্র দীন। প্রত্যেক নবীর প্রকৃত অনুসারীগণ ছিল মুসলিম। সব মুসলিমের জন্যই অভিবাদনরূপে সালামই ছিল বিধিসম্মত। কিন্তু অতীত জাতিসমূহ তাদের দীন বিকৃত করে ফেলেছে। কোনও সম্প্রদায় তাদের নবীর রেখে যাওয়া দীন সংরক্ষণ করেনি। তারা প্রতিনিয়ত তার মধ্যে সত্যদীন তথা ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়েছে। হারিয়ে ফেলেছে নবীর প্রকৃত শিক্ষা। সে ধারায় তাদের থেকে সালামের রেওয়াজও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ব্যতিক্রম কেবল আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত। তারা তাঁর রেখে যাওয়া দীনের পরিপূর্ণ হেফাজত করেছে। ফলে অন্যান্য বিধানের মতো সালামের বিধানটিও আজও পর্যন্ত এ উম্মতের মধ্যে চালু আছে। আজ এটা কেবলই সত্যদীন ইসলামের নিদর্শনরূপে প্রচলিত। এমনকি যারা ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধানে গাফলাতি করে, পারস্পরিক সাক্ষাৎকালে তাদেরও প্রথম কাজ হয় সালাম বিনিময়। পাশ্চাত্য সভ্যতার আগ্রাসনে এ উম্মত তাদের অনেক বিশেষত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সালাম বিনিময়ের মাধুর্যপূর্ণ অভিবাদন আজও স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামের আদর্শিক এ মীরাছ কেবল তাঁর আখেরী বংশধরগণই যত্নের সঙ্গে লালন করে চলেছে। উম্মত যদি এভাবে শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যাবতীয় শিক্ষার অনুসরণে যত্নবান হয়, তবে এর ভেতর দিয়ে আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামসহ পূর্ববর্তী অন্যসকল নবীর মৌলিক শিক্ষাসমূহও পুনর্জীবন লাভ করবে, যেমনটা একবার তা পুনর্জীবিত হয়েছিল এ উম্মতের শুরুর যমানায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. হযরত আদম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম মানুষ। আল্লাহ তা'আলা সরাসরি তাঁকে পূর্ণ মানুষরূপে সৃষ্টি করেছেন। তিনি প্রাণীর অন্য কোনও রূপ থেকে বিবর্তিত নন।
খ. সালাম বিনিময়ের সূচনা হয়েছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে।
গ. সালাম অপেক্ষা সালামের জবাবে অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করা উত্তম।
ঘ . আদব হল আগন্তুক ব্যক্তি অবস্থানকারীদেরকে সালাম দেবে।
