আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

১৪. ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যাবসা-বাণিজ্যের অধ্যায়

হাদীস নং: ১২১৫
আন্তর্জাতিক নং: ১২১৫
নির্ধারিত মেয়াদের শর্তে (বাকীতে) ক্রয়ের অনুমতি প্রসঙ্গে।
১২১৮. মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ........ আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যবের রুটি ও কিছু বাসী চর্বি নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট গেলাম তখন তাঁর বর্মটি এক ইয়াহুদীর কাছে বিশ সা’ খাদ্যের বিনিময়ে বন্ধক রাখা ছিল। তা তিনি পরিবারের জন্য এনেছিলেন। একদিন তাঁকে বলতে শুনেছি, মুহাম্মাদ (ﷺ) পরিবারের নিকট কোন সন্ধ্যায় এক সা’ খেজুর বা এক সা’ খাদ্য-শস্য রক্ষিত থাকেনি। অথচ তাঁর কাছে তখন নয়জন স্ত্রী ছিলেন। - ইবনে মাজাহ, বুখারি

ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসাছটি হাসান-সহীহ।
باب مَا جَاءَ فِي الرُّخْصَةِ فِي الشِّرَاءِ إِلَى أَجَلٍ .
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ هِشَامٍ الدَّسْتَوَائِيِّ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، ح قَالَ مُحَمَّدٌ وَحَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ مَشَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِخُبْزِ شَعِيرٍ وَإِهَالَةٍ سَنِخَةٍ وَلَقَدْ رُهِنَ لَهُ دِرْعٌ عِنْدَ يَهُودِيٍّ بِعِشْرِينَ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ أَخَذَهُ لأَهْلِهِ وَلَقَدْ سَمِعْتُهُ ذَاتَ يَوْمٍ يَقُولُ " مَا أَمْسَى فِي آلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم صَاعُ تَمْرٍ وَلاَ صَاعُ حَبٍّ " . وَإِنَّ عِنْدَهُ يَوْمَئِذٍ لَتِسْعُ نِسْوَةٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটির সঙ্গে অপর একটি বর্ণনাকে সাংঘর্ষিক মনে হয়। তাতে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারবর্গকে এক বছরের খাবার একসঙ্গে দিয়ে দিতেন। সে হিসেবে তো তাদের উপোস থাকার কথা নয়। অথচ এ হাদীছে বলা হয়েছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত পর্যন্ত কখনও পরপর দু'দিন যবের রুটিও পেট ভরে খেতে পাননি?

প্রকৃতপক্ষে উভয়ের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। কেননা বনূ নাযীর ও খায়বারের সম্পত্তি হাতে আসার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারবর্গের এক বছরের খাবার দিয়ে দিতেন বটে, কিন্তু তা যে এক বছর জমা থাকত এমন নয়। কেননা যখনই কোনও মেহমান আসত কিংবা অন্য কোনও জরুরত দেখা দিত, তখন তা থেকেই খরচ করতেন। আর মেহমান তো নিয়মিতই তাঁর কাছে আসত। বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধিবর্গ দলে দলেই তাঁর কাছে আসতে থাকত। তাদেরকে খাওয়ানো ছাড়াও বিদায়কালে তাদের পাথেয়ও দিয়ে দিতেন। তাতে দেখা যেত এক বছরের খাবার অল্প দিনেই শেষ হয়ে যেত। আর সে কারণেই তাদেরকে প্রায়ই অনাহারে দিন কাটাতে হতো।

বস্তুত তাঁর এ কৃচ্ছতা ছিল ইচ্ছাজনিত। আল্লাহ তা'আলা তো তাঁকে এই এখতিয়ার দিয়েওছিলেন যে, তিনি চাইলে মক্কার পাহাড়গুলোকে তাঁর জন্য সোনায় পরিণত করে দেওয়া হবে এবং তিনি যখন যেখানে যাবেন তা তার সঙ্গে চলতে থাকবে। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। দারিদ্র্যকেই বেছে নিয়েছেন। তারপরও যখন যা হাতে আসত তাতে অন্যদের প্রাধান্য দিতেন।

তাঁর এ কর্মপন্থার মূল কারণ ছিল দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তি। তাঁর চোখে দুনিয়া ছিল অতি তুচ্ছ। দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় আসবাব-উপকরণ তাঁর কাছে এমনকিছু মূল্যবান ছিল না, যার আকাঙ্ক্ষা করা যেতে পারে। এ জীবনপদ্ধতি দ্বারা তিনি উম্মতকেও দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত থাকার উৎসাহ যুগিয়েছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. অভাব-অনটনে কাতর হতে নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো অভাবের জীবনই বেছে নিয়েছিলেন।

খ. আমরা যে নিয়মিত দু'বেলা খাবার পাচ্ছি, সেজন্য প্রাণভরে শোকর আদায় করা উচিত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গ অনাহারের কত কষ্টই না সহ্য করেছেন!
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন