আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

১১. নবীজী ﷺ থেকে বিবাহ শাদী সম্পর্কিত বর্ণনা

হাদীস নং: ১০৯৯
আন্তর্জাতিক নং: ১০৯৯
বিনা দাওয়াতে ওয়ালীমা খেতে আসা।
১০৯৯. হান্নাদ (রাহঃ) ...... আবু মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু শুআয়ব নামে এক ব্যক্তি তার গোশত ওয়ালা গোলামকে গিয়ে বলল, পাঁচ জনের জন্য যথেষ্ট হয় সে পরিমাণ খাবার তৈরী কর। কারণ, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন (দাওয়াতে যাওয়ার জন্য) উঠলেন তখন এক ব্যক্তি যে দাওয়াত করার সময় তাদের সঙ্গে ছিল না, তাদের পিছনে পিছনে চলল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন তার দরজায় এসে পৌঁছেলেন, তখন বাড়ীওয়ালাকে বললেন, একজন লোক আমাদের অনুসরণ করেছে, যে দাওয়াতের সময় আমাদের সঙ্গে ছিল না। এখন যদি অনুমতি দাও তবে সে প্রবেশ করতে পারে। আবু শুআয়ব বললেন, আমি তাকে অনুমতি দিলাম, সে প্রবেশ করুক। - বুখারি, মুসলিম

ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান-সহীহ। এই বিষয়ে ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
باب مَا جَاءَ فِيمَنْ يَجِيءُ إِلَى الْوَلِيمَةِ مِنْ غَيْرِ دَعْوَةٍ
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ أَبُو شُعَيْبٍ إِلَى غُلاَمٍ لَهُ لَحَّامٍ فَقَالَ اصْنَعْ لِي طَعَامًا يَكْفِي خَمْسَةً فَإِنِّي رَأَيْتُ فِي وَجْهِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْجُوعَ . قَالَ فَصَنَعَ طَعَامًا ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَدَعَاهُ وَجُلَسَاءَهُ الَّذِينَ مَعَهُ فَلَمَّا قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم اتَّبَعَهُمْ رَجُلٌ لَمْ يَكُنْ مَعَهُمْ حِينَ دُعُوا فَلَمَّا انْتَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْبَابِ قَالَ لِصَاحِبِ الْمَنْزِلِ " إِنَّهُ اتَّبَعَنَا رَجُلٌ لَمْ يَكُنْ مَعَنَا حِينَ دَعَوْتَنَا فَإِنْ أَذِنْتَ لَهُ دَخَلَ " . قَالَ فَقَدْ أَذِنَّا لَهُ فَلْيَدْخُلْ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, দাওয়াতদাতা ছিলেন হযরত আবূ শু‘আয়ব রাযি.। এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, দাওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজ ইচ্ছামতো কাউকে সঙ্গে নিয়ে দাওয়াতের খাবারে শরীক করাতে পারবে না। কেউ তার সঙ্গে গেলে বা নিজ ইচ্ছায় কাউকে নিয়ে গেলে গৃহকর্তার অনুমতি নিতে হবে। গৃহকর্তা অনুমতি দিলে সে খেতে পারবে, অন্যথায় নয়। অতিথি ব্যস অতিথিই। সে খাবারের মালিক নয় যে, যাকে ইচ্ছা তাকে খাওয়াবে। তার সামনে যে খাবার পরিবেশন করা হয়, তা থেকে কেবল সে নিজেই খেতে পারবে। গৃহকর্তার পক্ষ থেকে তার জন্য কেবল খাওয়ারই অনুমতি থাকে, দান করার নয়। অনেকে দাওয়াতের খানা নিজ ইচ্ছামতো সঙ্গে করে নিয়েও যায়। গৃহকর্তার অনুমতি ছাড়া এটা কিছুতেই জায়েয নয়।

প্রকাশ থাকে যে, যাকে দাওয়াত করা হয়, সাধারণ নিয়ম অনুসারে দাওয়াতে সে একাই যেতে পারে। সঙ্গে অন্য কাউকে নিতে পারে না। তবে হাঁ, দাওয়াতদাতার সঙ্গে যদি তার ঘনিষ্ঠতা থাকে এবং বুঝতে পারে সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ কাউকে নিয়ে গেলে তাতে সে নারাজ হবে না; বরং খুশিই হবে, তবে এ অবস্থায় সেরকম কাউকে সঙ্গে নেওয়া যাবে। এক বর্ণনায় আছে, একবার এক দর্জির দাওয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আনাস রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানো সুন্নত।

খ. যারা খুশিমনে দাওয়াত দেয়, তাদের দাওয়াত কবুল করা উচিত।

গ. দাওয়াতী মেহমানের সঙ্গে অতিরিক্ত কেউ গেলে তার কর্তব্য গৃহকর্তার কাছে তার জন্য অনুমতি চাওয়া।

ঘ. দাওয়াতী মেহমানের সঙ্গে অতিরিক্ত কেউ আসলে এবং তার জন্য অনুমতি চাওয়া হলে গৃহকর্তার তা মঞ্জুর করা উচিত।

ঙ. দাওয়াতদাতা সাধারণ পর্যায়ের কেউ হলে তার দাওয়াত অবজ্ঞা করা উচিত নয়।

চ. দাওয়াতের খাবার মেহমানের জন্য কেবল খাওয়ারই অনুমতি থাকে, দান করার বা সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার নয়। তাই বিনা অনুমতিতে এটা করা যাবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন