আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

১০. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়

হাদীস নং: ১০৬০
আন্তর্জাতিক নং: ১০৬০
যে তার সন্তানকে অগ্রে পাঠিয়ে দেয়* তার সাওয়াব।
১০৬০. কুতায়বা ও আনসারী (রাহঃ) ...... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, কোন মুসলিমের যদি তিনটি সন্তান মারা যায় তবে তাকে অগ্নি স্পর্শ করতে পারে না। তবে শপথ পূরণ মাত্র।** - ইবনে মাজাহ

এই বিষয়ে উমর, মুআয, কা’ব ইবনে মালিক, উতবা ইবনে আব্দ, উম্মে সুলায়ম, জাবির, আনাস আবু যরর, ইবনে মাসউদ, আবু ছালাবা আল-আশজাঈ, ইবনে আব্বাস, উকবা ইবনে আমির, আবু সাঈদ ও কুররা ইবনে ইয়াস মুযানী (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ছালাবা (রাহঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে এই একটি হাদীসই বর্ণিত আছে। ইনি খুশানী নন। ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, আবু হুরায়রা (রাযিঃ)ম বর্ণিত হাদীসটি হাসান-সহীহ।

* অর্থাৎ যার সন্তান মারা যায় আর সে ধৈর্যধারণ করে তবে এর ছওয়াব।
**কুরআনের সিদ্ধান্ত— তোমাদের প্রত্যেককেই তা অতিক্রম করতে হবে (১৯: ৭১)- অনুযায়ী সকলকেই জাহান্নাম অতিক্রম করেই জান্নাতে প্রবেশ করতে হবে।
باب مَا جَاءَ فِي ثَوَابِ مَنْ قَدَّمَ وَلَدًا
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، ح وَحَدَّثَنَا الأَنْصَارِيُّ، حَدَّثَنَا مَعْنٌ، حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ يَمُوتُ لأَحَدٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ ثَلاَثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ إِلاَّ تَحِلَّةَ الْقَسَمِ " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عُمَرَ وَمُعَاذٍ وَكَعْبِ بْنِ مَالِكٍ وَعُتْبَةَ بْنِ عَبْدٍ وَأُمِّ سُلَيْمٍ وَجَابِرٍ وَأَنَسٍ وَأَبِي ذَرٍّ وَابْنِ مَسْعُودٍ وَأَبِي ثَعْلَبَةَ الأَشْجَعِيِّ وَابْنِ عَبَّاسٍ وَعُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ وَأَبِي سَعِيدٍ وَقُرَّةَ بْنِ إِيَاسٍ الْمُزَنِيِّ . قَالَ وَأَبُو ثَعْلَبَةَ الأَشْجَعِيُّ لَهُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَدِيثٌ وَاحِدٌ هُوَ هَذَا الْحَدِيثُ وَلَيْسَ هُوَ الْخُشَنِيَّ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে সাধারণভাবে সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, যার তিনটি সন্তান মারা যায়, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। অর্থাস সে অবশ্যই জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকবে এবং জান্নাত লাভ করবে। অবশ্য যারা জান্নাত লাভ করবে, তাদেরকেও জান্নাতে যেতে হবে জাহান্নামের উপর দিয়েই। সে সম্পর্কেই এ হাদীছটির শেষে বলা হয়েছে-
إلا تحلة القسم (তবে কসম পূরণ করার বিষয়টা ভিন্ন।) ইমাম নববী রহ. এর ব্যাখ্যা করেছেন, কসম পূরণ করার দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর দিকে যে- وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا (তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তা (অর্থাৎ জাহান্নাম) অতিক্রম করবে না)। এ অতিক্রম দ্বারা পুলসিরাত অতিক্রম করার কথা বোঝানো হয়েছে। এটা জাহান্নামের উপর স্থাপিত একটি সেতু।

হাদীছটিতে বোঝানো হয়েছে যে, যার তিনটি সন্তান মারা যায় আর তাতে সে ধৈর্যধারণ করে, সে অবশ্যই জান্নাতবাসী হবে। সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তবে জাহান্নামে প্রবেশ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার যে কসম রয়েছে, সে কসম পূরণের জন্য তাকে ক্ষণিকের জন্য অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। সে প্রবেশ এভাবে যে, জাহান্নামের উপর যে পুলসিরাত আছে সে পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলকেই যেতে হবে। যারা জাহান্নামী, তারা সেই ক্ষুরধার পুলসিরাতে কাটা পড়বে এবং জাহান্নামের গর্তে পতিত হবে। আর যারা জান্নাতবাসী, তারা বিভিন্ন গতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
يَرِدُ النَّاسُ النَّارَ، ثُمَّ يَصْدُرُونَ مِنْهَا بِأَعْمَالِهِمْ فَأَوَّلُهُمْ كَلَمْحِ الْبَرْقِ، ثُمَّ كَالرِّيحِ، ثُمَّ كَحُضْرِ الْفَرَسِ، ثُمَّ كَالرَّاكِبِ فِي رَحْلِهِ، ثُمَّ كَشَدِّ الرَّجُلِ، ثُمَّ كَمَشْيِهِ
'সমস্ত মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তারপর তারা নিজ নিজ আমল অনুযায়ী তা থেকে বের হবে। সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি বের হবে, সে বের হবে বিদ্যুৎগতিতে। তার পরের ব্যক্তি বের হবে বায়ুর গতিতে। তার পরের ব্যক্তি বের হবে ঘোড়ার গতিতে। তারপর পরের ব্যক্তি বের হবে উষ্ট্রারোহীর গতিতে। তার পরের ব্যক্তি বের হবে দৌড়ের গতিতে। তারপর হেঁটে চলার গতিতে।’ (জামে' তিরমিযী: ২১৫৯; সুনানে দারিমী: ২৮৫২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৪২১)

যদিও মুমিনদেরকে জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুলসিরাত অতিক্রম করতে হবে, আল্লাহ তা'আলার রহমত ও কুদরতে তারা সম্পূর্ণ অক্ষত থাকবে। এমনকি জাহান্নামের আগুনের উত্তাপও তাদের গায়ে লাগবে না। তাদের কাছে সে আগুনের উত্তাপ শীতল বোধ হবে। যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَبْقَى بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ إِلَّا دَخَلَهَا، فَتَكُونُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ بَرْدًا وَسَلَامًا كَمَا كَانَتْ عَلَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
'পুণ্যবান ও পাপী সকলকেই জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। তবে মুমিনদের জন্য তা শীতল ও শান্তিদায়ক হবে, যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের উপর শীতল ও শান্তিদায়ক হয়েছিল।’ (বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৩৬৪; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৮৭৪৪)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সন্তানের মৃত্যুতে পিতা-মাতার সবরের পরিচয় দেওয়া উচিত।

খ. সন্তানের মৃত্যু বাহ্যত মসিবত হলেও প্রকৃতপক্ষে পিতা-মাতার জন্য তা আল্লাহর রহমত এবং তা তাদের জন্য জান্নাতলাভের অসিলা।

গ. জান্নাতবাসীদেরকেও জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুলসিরাত পার হতে হবে।

ঘ. জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রমকালে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ জান্নাতবাসীদের গায়ে লাগবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন