আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
১০. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়
হাদীস নং: ১০২১
আন্তর্জাতিক নং: ১০২১
মসিবতের ফযীলত, যদি তার উপর সাওয়াবের আশা করে।
১০২১. সুওয়ায়দ ইবনে নসর (রাহঃ) ...... আবু সিনান (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমার ছেলে সিনানকে দাফন করছিলাম। সে সময় আবু তালহা আল-খাওলানী কবরের কিনারায় বসা ছিলেন। পরে আমি যখন কবর থেকে বের হতে ইচ্ছা করলাম তখন তিনি আমার হাত ধরলেন এবং বললেন, হে আবু সিনান, আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দিব? আমি বললাম, অবশ্যই দিন। তিনি বললেন, যাহ্হাক ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আরযাব (রাহঃ) আমাকে আবু মুসা আল-আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায় তখন আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদের বলেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তান কবয করে নিয়ে এলে? তার বলে, হ্যাঁ। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, তোমরা তার হৃদয়ের ফল কবয করে নিয়ে এলে? তার বলে হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, আপনার হামদ করেছে এবং ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং তার নামকরণ কর ‘‘বায়তুল হামদ’ বা প্রশংসালয়।
ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান-গারীব।
ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান-গারীব।
باب فَضْلِ الْمُصِيبَةِ إِذَا احْتَسَبَ
حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي سِنَانٍ، قَالَ دَفَنْتُ ابْنِي سِنَانًا وَأَبُو طَلْحَةَ الْخَوْلاَنِيُّ جَالِسٌ عَلَى شَفِيرِ الْقَبْرِ فَلَمَّا أَرَدْتُ الْخُرُوجَ أَخَذَ بِيَدِي فَقَالَ أَلاَ أُبَشِّرُكَ يَا أَبَا سِنَانٍ . قُلْتُ بَلَى . فَقَالَ حَدَّثَنِي الضَّحَّاكُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَرْزَبٍ عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللَّهُ لِمَلاَئِكَتِهِ قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي . فَيَقُولُونَ نَعَمْ . فَيَقُولُ قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ . فَيَقُولُونَ نَعَمْ . فَيَقُولُ مَاذَا قَالَ عَبْدِي فَيَقُولُونَ حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ . فَيَقُولُ اللَّهُ ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَسَمُّوهُ بَيْتَ الْحَمْدِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে প্রিয়জনের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণের সুফল বর্ণিত হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- إِذا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ (বান্দার সন্তান যখন মারা যায়)। সে সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে। ছোট হোক বা বড়। এমনকি তার জন্মও যদি না হয়, মায়ের পেটে ভ্রুণ অবস্থায়ই মারা যায়। এ সকল অবস্থায়ই হাদীছটির বক্তব্য প্রযোজ্য। সর্বাবস্থায়ই তার রূহ কবজ করেন মালাকুল মাওত। তাঁর সঙ্গে থাকেন একদল সাহায্যকারী ফিরিশতা। আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাদের লক্ষ্য করে বলেন-
قبضتم ولد عبدي؟ (তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানকে কব্জা করেছ)? তারা যে এ কাজ করেছেন তা তো আল্লাহর জানাই আছে। বরং তাঁর হুকুমেই তারা এ কাজ করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন পরবর্তী বক্তব্যের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও তাদেরকে কৌতূহলী করে তোলার জন্য। তারা প্রশ্নের উত্তরে বলেন, হাঁ। অর্থাৎ আমরা আপনার বান্দার সন্তানের রূহ কবজ করেছি। তারপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-
قبضتم ثَمَرَة فؤاده؟ (তোমরা কি তার হৃদয়ের ফল কেড়ে নিয়েছ)? সন্তানকে হৃদয়ের ফল বলা হয়েছে এ কারণে যে, সন্তান মানুষের প্রাণের কামনা। মানুষ সন্তানকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। সর্বাবস্থায় তার মনপ্রাণ পড়ে থাকে সন্তানের উপর। প্রাণ যেমন মানুষের সবটা শরীরের মূল ও দেহের কেন্দ্র, তেমনি সন্তানও যেন তার সব কাজের মূল, তার যাবতীয় তৎপরতা যেন তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। তাই সন্তানকে কেড়ে নেওয়া যেন তার প্রাণের ফসল কেড়ে নেওয়া তুল্য। আল্লাহ তা'আলা এ কথা বলার দ্বারা ফিরিশতাদের সামনে তাদের কাজের গুরুত্ব ও গভীরতা তুলে ধরছেন। স্পষ্ট করছেন যে, বান্দার সন্তানের প্রাণ সংহার করার কাজটি সেই বান্দার পক্ষে কতটা কঠিন, কতটা হৃদয়বিদারক। উত্তরে ফিরিশতাগণ বলেন, হাঁ। অর্থাৎ আমরা আপনার বান্দার প্রাণের ফল কেড়ে নিয়ে এসেছি। আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন-
مَاذَا قَالَ عَبْدِي؟ (তখন বান্দা কী বলেছে)? অর্থাৎ এতটা কঠিন শোকতাপের সামনে আমার বান্দার আচরণ কেমন ছিল? তার মন এটাকে কীভাবে গ্রহণ করেছে? সে তার মনোভাব প্রকাশ করতে গিয়ে মুখ দিয়ে কী উচ্চারণ করেছে? বলাবাহুল্য বান্দা কী বলেছে তা আল্লাহ তা'আলা ভালোভাবেই জানেন। তা সত্ত্বেও তিনি ফিরিশতাদের তা জিজ্ঞেস করছেন সম্ভবত এ কারণে যে, তিনি তাদের সাক্ষী বানাতে চাচ্ছেন, যাতে যে পুরস্কার তিনি ঘোষণা করবেন তার সঙ্গে বান্দার আচরণ কতটা সঙ্গতিপূর্ণ তা তারা বুঝতে পারেন। ফিরিশতাগণ উত্তরে বলেন-
حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ (আপনার প্রশংসা করেছে এবং إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ পড়েছে) অর্থাৎ সে বলেছে আলহামদুলিল্লাহ এবং সে আপনার ফয়সালায় নিজ রাজিখুশি থাকার কথা প্রকাশ করেছে। সে إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ বলার মাধ্যমে স্বীকার করেছে যে, তার সন্তান, সে নিজে এবং জগতের সবকিছুর একমাত্র মালিক আপনিই। আপনিই সকলের সৃষ্টিকর্তা। ইহজগতে আপনিই সকলকে পাঠিয়েছেন এবং সকলকে আবার আপনার কাছেই ফিরে যেতে হবে। আজ তার সন্তান আপনার কাছে ফিরে এসেছে। একদিন তার নিজেকেও আপনার কাছে ফিরে আসতে হবে। কাজেই তার সন্তানের আপনার কাছে ফিরে আসায় তার কোনও আপত্তি নেই। আপত্তি থাকতে পারে না। সে তাতে পরিপূর্ণ রাজি ও খুশি। সে বিশ্বাস করে আপনার যাবতীয় কাজের মধ্যেই তার জন্য মঙ্গল নিহিত। তাই সে আলহামদুল্লিাহ বলে আপনার শোকর আদায় করেছে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বলেন-
أبْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، وَسَمّوهُ بَيْتَ الْحَمْدِ (তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করো এবং তার নাম দাও বায়তুল হামদ)। অর্থাৎ এত বড় শোকতাপেও সে যখন আমার ফয়সালায় সন্তুষ্ট, সে তার মসিবতকে প্রকৃত অর্থে মসিবতই মনে করেনি; বরং সে আমার প্রতি আত্মনিবেদন করেছে এবং আমার প্রশংসা করেছে, তাই আমার মহানুভবতা ও অসীম রহমতের দাবি আমি তাকে যথাযোগ্য পুরস্কার দিই; বরং আমি আমার শান মোতাবেক তাকে প্রতিদান দিই। সুতরাং তোমরা তার জন্য জান্নাতে একটা বিশেষ ঘর বানাও আর তার আমলের স্মারকরূপে ঘরটির নাম দাও বায়তুল হামদ-প্রশংসার ঘর।
এ হাদীছটি সন্তানহারা পিতা-মাতার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের এক সর্বোত্তম উপায়। তাদের জন্য এক চমৎকার সান্ত্বনাবাণী। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আবূ সিনান রহ.-কে অপর এক বুযুর্গ মুহাদ্দিছ আবু তালহা খাওলানী রহ. বড় চমৎকারভাবে এ হাদীছটি দ্বারা সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। সিনান নামে তার এক পুত্রসন্তান ছিল। শিশু অবস্থায়ই তার সে প্রিয় পুত্রটির মৃত্যু হয়ে গেল। আবু সিনান রহ. যথারীতি তাকে কবরে শোওয়ালেন। সেখানে মুহাদ্দিছ আবু তালহা রহ. উপস্থিত ছিলেন। আবু সিনান যখন কবর থেকে উঠতে যাবেন, তখন তিনি তার হাত ধরলেন। বললেন, হে আবু সিনান! তোমাকে একটা সুসংবাদ শোনাই? তিনি বললেন, অবশ্যই শোনান। আবূ তালহা হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. বর্ণিত এ হাদীছটি তাকে শোনালেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ছেলেমেয়ে সব সন্তানই আল্লাহ তা'আলার দান ও তাঁর নি'আমত। কাজেই আল্লাহ তা'আলার জন্য তাকে প্রাণভরে ভালোবাসা উচিত।
খ. পিতা-মাতা সন্তানের মালিক নয়; কেবলই পিতা-মাতা। তার মালিক আল্লাহ তা'আলা। তাই তিনি যখন চান তার মালিকানাধীন বস্তু ফিরিয়ে নিতে পারেন। তাতে আপত্তি চলে না।
গ. সন্তানের মৃত্যু হয় আল্লাহর ফয়সালায়। আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া জরুরি। তাই তার মৃত্যুতে অধৈর্য না হয়ে শান্ত ও স্থির থাকা উচিত।
ঘ. প্রিয় সন্তানের মৃত্যুতে আলহামদুলিল্লাহ ও ইন্না লিল্লাহ... পড়া চাই।
ঙ. জান্নাত মুমিনদের শেষ ঠিকানা। সন্তানের মৃত্যুতে আলহামদুলিল্লাহ ও ইন্না লিল্লাহ... পড়লে জান্নাতে বায়তুল হামদ নামে একটি ঘর পাওয়া যাবে।
قبضتم ولد عبدي؟ (তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানকে কব্জা করেছ)? তারা যে এ কাজ করেছেন তা তো আল্লাহর জানাই আছে। বরং তাঁর হুকুমেই তারা এ কাজ করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন পরবর্তী বক্তব্যের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও তাদেরকে কৌতূহলী করে তোলার জন্য। তারা প্রশ্নের উত্তরে বলেন, হাঁ। অর্থাৎ আমরা আপনার বান্দার সন্তানের রূহ কবজ করেছি। তারপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-
قبضتم ثَمَرَة فؤاده؟ (তোমরা কি তার হৃদয়ের ফল কেড়ে নিয়েছ)? সন্তানকে হৃদয়ের ফল বলা হয়েছে এ কারণে যে, সন্তান মানুষের প্রাণের কামনা। মানুষ সন্তানকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। সর্বাবস্থায় তার মনপ্রাণ পড়ে থাকে সন্তানের উপর। প্রাণ যেমন মানুষের সবটা শরীরের মূল ও দেহের কেন্দ্র, তেমনি সন্তানও যেন তার সব কাজের মূল, তার যাবতীয় তৎপরতা যেন তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। তাই সন্তানকে কেড়ে নেওয়া যেন তার প্রাণের ফসল কেড়ে নেওয়া তুল্য। আল্লাহ তা'আলা এ কথা বলার দ্বারা ফিরিশতাদের সামনে তাদের কাজের গুরুত্ব ও গভীরতা তুলে ধরছেন। স্পষ্ট করছেন যে, বান্দার সন্তানের প্রাণ সংহার করার কাজটি সেই বান্দার পক্ষে কতটা কঠিন, কতটা হৃদয়বিদারক। উত্তরে ফিরিশতাগণ বলেন, হাঁ। অর্থাৎ আমরা আপনার বান্দার প্রাণের ফল কেড়ে নিয়ে এসেছি। আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন-
مَاذَا قَالَ عَبْدِي؟ (তখন বান্দা কী বলেছে)? অর্থাৎ এতটা কঠিন শোকতাপের সামনে আমার বান্দার আচরণ কেমন ছিল? তার মন এটাকে কীভাবে গ্রহণ করেছে? সে তার মনোভাব প্রকাশ করতে গিয়ে মুখ দিয়ে কী উচ্চারণ করেছে? বলাবাহুল্য বান্দা কী বলেছে তা আল্লাহ তা'আলা ভালোভাবেই জানেন। তা সত্ত্বেও তিনি ফিরিশতাদের তা জিজ্ঞেস করছেন সম্ভবত এ কারণে যে, তিনি তাদের সাক্ষী বানাতে চাচ্ছেন, যাতে যে পুরস্কার তিনি ঘোষণা করবেন তার সঙ্গে বান্দার আচরণ কতটা সঙ্গতিপূর্ণ তা তারা বুঝতে পারেন। ফিরিশতাগণ উত্তরে বলেন-
حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ (আপনার প্রশংসা করেছে এবং إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ পড়েছে) অর্থাৎ সে বলেছে আলহামদুলিল্লাহ এবং সে আপনার ফয়সালায় নিজ রাজিখুশি থাকার কথা প্রকাশ করেছে। সে إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ বলার মাধ্যমে স্বীকার করেছে যে, তার সন্তান, সে নিজে এবং জগতের সবকিছুর একমাত্র মালিক আপনিই। আপনিই সকলের সৃষ্টিকর্তা। ইহজগতে আপনিই সকলকে পাঠিয়েছেন এবং সকলকে আবার আপনার কাছেই ফিরে যেতে হবে। আজ তার সন্তান আপনার কাছে ফিরে এসেছে। একদিন তার নিজেকেও আপনার কাছে ফিরে আসতে হবে। কাজেই তার সন্তানের আপনার কাছে ফিরে আসায় তার কোনও আপত্তি নেই। আপত্তি থাকতে পারে না। সে তাতে পরিপূর্ণ রাজি ও খুশি। সে বিশ্বাস করে আপনার যাবতীয় কাজের মধ্যেই তার জন্য মঙ্গল নিহিত। তাই সে আলহামদুল্লিাহ বলে আপনার শোকর আদায় করেছে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বলেন-
أبْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، وَسَمّوهُ بَيْتَ الْحَمْدِ (তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করো এবং তার নাম দাও বায়তুল হামদ)। অর্থাৎ এত বড় শোকতাপেও সে যখন আমার ফয়সালায় সন্তুষ্ট, সে তার মসিবতকে প্রকৃত অর্থে মসিবতই মনে করেনি; বরং সে আমার প্রতি আত্মনিবেদন করেছে এবং আমার প্রশংসা করেছে, তাই আমার মহানুভবতা ও অসীম রহমতের দাবি আমি তাকে যথাযোগ্য পুরস্কার দিই; বরং আমি আমার শান মোতাবেক তাকে প্রতিদান দিই। সুতরাং তোমরা তার জন্য জান্নাতে একটা বিশেষ ঘর বানাও আর তার আমলের স্মারকরূপে ঘরটির নাম দাও বায়তুল হামদ-প্রশংসার ঘর।
এ হাদীছটি সন্তানহারা পিতা-মাতার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের এক সর্বোত্তম উপায়। তাদের জন্য এক চমৎকার সান্ত্বনাবাণী। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আবূ সিনান রহ.-কে অপর এক বুযুর্গ মুহাদ্দিছ আবু তালহা খাওলানী রহ. বড় চমৎকারভাবে এ হাদীছটি দ্বারা সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। সিনান নামে তার এক পুত্রসন্তান ছিল। শিশু অবস্থায়ই তার সে প্রিয় পুত্রটির মৃত্যু হয়ে গেল। আবু সিনান রহ. যথারীতি তাকে কবরে শোওয়ালেন। সেখানে মুহাদ্দিছ আবু তালহা রহ. উপস্থিত ছিলেন। আবু সিনান যখন কবর থেকে উঠতে যাবেন, তখন তিনি তার হাত ধরলেন। বললেন, হে আবু সিনান! তোমাকে একটা সুসংবাদ শোনাই? তিনি বললেন, অবশ্যই শোনান। আবূ তালহা হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. বর্ণিত এ হাদীছটি তাকে শোনালেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ছেলেমেয়ে সব সন্তানই আল্লাহ তা'আলার দান ও তাঁর নি'আমত। কাজেই আল্লাহ তা'আলার জন্য তাকে প্রাণভরে ভালোবাসা উচিত।
খ. পিতা-মাতা সন্তানের মালিক নয়; কেবলই পিতা-মাতা। তার মালিক আল্লাহ তা'আলা। তাই তিনি যখন চান তার মালিকানাধীন বস্তু ফিরিয়ে নিতে পারেন। তাতে আপত্তি চলে না।
গ. সন্তানের মৃত্যু হয় আল্লাহর ফয়সালায়। আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া জরুরি। তাই তার মৃত্যুতে অধৈর্য না হয়ে শান্ত ও স্থির থাকা উচিত।
ঘ. প্রিয় সন্তানের মৃত্যুতে আলহামদুলিল্লাহ ও ইন্না লিল্লাহ... পড়া চাই।
ঙ. জান্নাত মুমিনদের শেষ ঠিকানা। সন্তানের মৃত্যুতে আলহামদুলিল্লাহ ও ইন্না লিল্লাহ... পড়লে জান্নাতে বায়তুল হামদ নামে একটি ঘর পাওয়া যাবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: