আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৯. হজ্ব - উমরার অধ্যায়

হাদীস নং: ৯১২
আন্তর্জাতিক নং: ৯১২
মাথার কোন্ পাশ দিয়ে মুণ্ডন শুরু করবে।
৯১৪. আবু আম্মার (রাহঃ) ...... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কংকর মারার পর, পশুর কুরবানী করলেন এপর তাঁর মাথা মূন্ডনকারীকে ডান র্পাশ্ব বাড়িয়ে দিলেন সে তা মুণ্ডন করলো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ চুলগুলো আবু তালহা (রাযিঃ)-কে দিয়ে দিলেন। এরপর বাম পার্শ্ব বাড়িয়ে দিলে তা মুণ্ডন করা হলো। তিনি বললেন, এগুলো লোকজনের মধ্যে বন্টন করে দাও। - আবু দাউদ, মুসলিম

ইবনে আবী উমর (রাহঃ) হিমাশ (রাহঃ) থেকেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান- সহীহ্।
باب مَا جَاءَ بِأَىِّ جَانِبِ الرَّأْسِ يَبْدَأُ فِي الْحَلْقِ
حَدَّثَنَا أَبُو عَمَّارٍ الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنِ ابْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ لَمَّا رَمَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْجَمْرَةَ نَحَرَ نُسُكَهُ ثُمَّ نَاوَلَ الْحَالِقَ شِقَّهُ الأَيْمَنَ فَحَلَقَهُ فَأَعْطَاهُ أَبَا طَلْحَةَ ثُمَّ نَاوَلَهُ شِقَّهُ الأَيْسَرَ فَحَلَقَهُ فَقَالَ " اقْسِمْهُ بَيْنَ النَّاسِ " .
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ هِشَامٍ، نَحْوَهُ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজ্জ পালনের অংশবিশেষ বর্ণিত হয়েছে। তিনি মিনার জামারাতে আসেন এবং জামারাতুল কুবরায় পাথর নিক্ষেপ করেন। তারপর কুরবানী করেন। তারপর মাথা মুণ্ডন করেন। তিনি মাথা মুণ্ডন কীভাবে করেছেন তাও হাদীছটিতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি প্রথমে মাথার ডানদিক পেতে দেন এবং ক্ষৌরকারকে সেদিক মুণ্ডাতে বলেন। সেদিক মুণ্ডানো শেষ হলে বামদিক পেতে দেন। এভাবে তিনি মাথা মুণ্ডানোর কাজ শেষ করেন।

হাদীছটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুণ্ডিত চুল সাহাবীদের মধ্যে বিতরণ করা। হাদীসে আছে, তাঁর মাথার ডানদিক মুণ্ডন করা শেষ হলে তিনি হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-কে ডাকলেন এবং পবিত্র সেই চুল তাঁকে দিলেন। তারপর মাথার বামদিক কামানো হল। তিনি সেদিকের চুল আবূ তালহা আনসারী রাযি.-কে দিয়ে বললেন, এগুলো লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দাও। তিনি তা বিতরণ করে দিলেন।

কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, ডানদিকের চুল সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল আর বাম দিকেরগুলো হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-কে দেওয়া হয়েছিল।

এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন। বলা যায় আনসারদের মধ্যে তিনি তাঁর সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়দের একজন ছিলেন। তাঁর অতটা ঘনিষ্ঠতা হয়তো বহু মুহাজিরও লাভ করতে পারেননি। সে ঘনিষ্ঠতার নিদর্শন যে, পবিত্র মাথার ডানদিকের মুবারক চুল বিশেষভাবে তাঁকেই দিলেন। তারপর বাম দিকেরগুলো সাধারণভাবে সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

তবে হাঁ, কাউকে বিশেষ কোনও ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়ার দ্বারা সামগ্রিকভাবে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না। এটা একটা শাখাগত শ্রেষ্ঠত্ব। নয়তো আশারায়ে মুবাশশারাসহ বহু সাহাবী মর্যাদায় আরও অনেক উপরে রয়েছেন।

এ হাদীছটি দ্বারা তাবাররুকের প্রমাণ পাওয়া যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি জিনিসই ছিল বরকতময়। তাঁর চুল, তাঁর থুথু, তাঁর ঘাম, তাঁর জামা, তাঁর জুতো সবই বরকতময়। কেউ যদি বরকতের উদ্দেশ্যে এসব নিজের কাছে রাখে, তবে এ হাদীছ দ্বারা তা বৈধ প্রমাণিত হয়। বরং এর বৈধতায় কোনও সন্দেহ নেই, যেহেতু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তাঁর মুণ্ডিত চুল বিতরণ করেছেন, যাতে সাহাবায়ে কেরাম তা দ্বারা বরকত গ্রহণ করতে পারেন।

বস্তুত নিজের কাছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত রাখতে পারাটা অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। এর দ্বারা বুযুর্গানে দীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনওকিছুকে তাবাররুক হিসেবে সংরক্ষণ করার বৈধতাও প্রমাণিত হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. জামারায় পাথর নিক্ষেপ করা হজ্জের একটি অবশ্যপালনীয় বিধান (ওয়াজিব)।

খ. কিরান বা তামাত্তু' হজ্জকারীর জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব। একে 'দমে শোকর' বলে

গ. হজ্জের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছাঁটা জরুরি।

ঘ. মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটা ডানদিক থেকে শুরু করা সুন্নত।

ঙ. এ হাদীছ দ্বারা তাবাররুকের বৈধতা প্রমাণিত হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ৯১২ | মুসলিম বাংলা