আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৯. হজ্ব - উমরার অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৪৯
আন্তর্জাতিক নং: ৮৪৯
মুহরিমের জন্য শিকারের গোশত আহার করা না জায়িজ।*
৮৫১. কুতায়বা (রাহঃ) ..... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাব ইবনে জাছছামা (রাযিঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) একবার আবওয়া বা ওয়াদদান নামক স্থানের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি রাসূল (ﷺ) কে একটি বন্য গাধা হাদিয়া হিসাবে পেশ করেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। অনন্তর রাসূল (ﷺ) তার চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, তোমার এই হাদিয়া আমি প্রত্যাখ্যান করতাম না। কিন্তু বর্তমানে আমি যে ইহরামরত। -

ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান-সহীহ। সাহাবী এবং অপরাপর আলিমগণ এই হাদীস অনুসারে আমলের অভিমত গ্রহণ করেছেন মুহরিমের জন্য শিকারের গোশত আহার করা পছন্দনীয় নয় বলে তারা মনে করেন। ইমাম শাফেঈ (রাহঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) কর্তৃক এই হাদিয়া প্রত্যাখ্যান করার কারণ হল, তিনি ধারণা করেছিলেন যে, এটিকেই তার উদ্দেশ্যেই হয়ত শিকার করা হয়েছে। ফলে এটি থেকে বেঁচে থাকতে গিয়ে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইমাম যুহরী (রাহঃ) এর কতক শাগরিদ যুহরী (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) কে বন্য গাধার গোশত হাদিয়া প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু এই রিওয়ায়াতটি মাহফুয বা সংরক্ষিত নয়। এই বিষয়ে আলী ও যায়দ ইবনে আরকাম (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।

*যদি মুহরিম নিজে তা শিকার করে বা তাতে কোনরূপ সহযোগিতা করে বা তার জন্য যদি শিকার করা হয় তবে তা মুহরিমের জন্য আহার করা জায়িয নয়।
باب مَا جَاءَ فِي كَرَاهِيَةِ لَحْمِ الصَّيْدِ لِلْمُحْرِمِ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّ الصَّعْبَ بْنَ جَثَّامَةَ أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ بِهِ بِالأَبْوَاءِ أَوْ بِوَدَّانَ فَأَهْدَى لَهُ حِمَارًا وَحْشِيًّا فَرَدَّهُ عَلَيْهِ فَلَمَّا رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا فِي وَجْهِهِ مِنَ الْكَرَاهِيَةِ قَالَ " إِنَّهُ لَيْسَ بِنَا رَدٌّ عَلَيْكَ وَلَكِنَّا حُرُمٌ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَقَدْ ذَهَبَ قَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَغَيْرِهِمْ إِلَى هَذَا الْحَدِيثِ وَكَرِهُوا أَكْلَ الصَّيْدِ لِلْمُحْرِمِ . وَقَالَ الشَّافِعِيُّ إِنَّمَا وَجْهُ هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَنَا إِنَّمَا رَدَّهُ عَلَيْهِ لَمَّا ظَنَّ أَنَّهُ صِيدَ مِنْ أَجْلِهِ وَتَرَكَهُ عَلَى التَّنَزُّهِ . وَقَدْ رَوَى بَعْضُ أَصْحَابِ الزُّهْرِيِّ عَنِ الزُّهْرِيِّ هَذَا الْحَدِيثَ وَقَالَ أَهْدَى لَهُ لَحْمَ حِمَارِ وَحْشٍ . وَهُوَ غَيْرُ مَحْفُوظٍ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ وَزَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সফরে ছিলেন। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ সময় হযরত সা'ব ইবন জাছ্ছামা রাযি. একটি বন্য গাধা, সম্ভবত জেব্রা, তাঁকে হাদিয়া দিলেন। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায় সেটি জবাই করা ছিল এবং তিনি তার গোশত হাদিয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় থাকার কারণে তা গ্রহণ করলেন না। এতে হযরত সা'ব রাযি. দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তবে কি কোনও কারণে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি নারাজ? না হয় তার হাদিয়া ফেরত দিলেন কেন? খুবসম্ভব তখনও পর্যন্ত তার এ মাসআলা জানা ছিল না যে, মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা কিংবা শিকারের কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নয়। এমনিভাবে এভাবে পশু শিকার করে তার গোশত খাওয়াও তার জন্য হালাল নয়।

যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন হাদিয়া ফেরত দেওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তার চেহারা মলিন হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য সাহাবায়ে কেরাম যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন, তেমনি তিনিও তাদেরকে গভীরভাবে স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। প্রিয় সাহাবীর মনোবেদনা দীর্ঘ হতে দিলেন না। তিনি তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, দেখো, আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি। কেবল এ কারণেই তোমার এ হাদিয়া ফেরত দিয়েছি, অন্য কোনও কারণে নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মুহরিম ব্যক্তির জন্য পশু শিকার করা ও শিকারকৃত পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয়।

খ. বুনো গাধা খাওয়া জায়েয।

গ. হাদিয়া দেওয়া ও গ্রহণ করা সুন্নত, যদি না তাতে নিষিদ্ধতার কোনও কারণ থাকে।

ঘ. অকারণে হাদিয়া ফেরত দেওয়া উচিত নয়। তাতে হাদিয়াদাতা মনে কষ্ট পায়।

ঙ. কারও দিক থেকে কেউ মনে কষ্ট পেলে যত দ্রুত সম্ভব তার সে কষ্ট দূর করে দেওয়া উচিত।

চ. কারও আচরণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তার উচিত সে ভুল ভাঙ্গিয়ে দেওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন