আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৮. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ৭১৫
আন্তর্জাতিক নং: ৭১৫
গর্ভবর্তী ও দুগ্ধদানকারিণীর জন্য রোযা পালন না করার অনুমতি।
৭১৩. আবু কুরায়ব ও ইউসুফ ইবনে ঈসা (রাযিঃ) ..... বানু আব্দুল্লাহ ইবনে কা’ব গোত্রের আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাহিনী আমাদের কবীলায় অকস্মাৎ আক্রমণ করে। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট আসলাম। তখন তিনি তাঁকে সকালের আহারে রত পেলাম। তিনি বললেনঃ কাছে আস এবং খাও। আমি বললাম, আমি তো রোযাদার। তিনি বললেনঃ কাছে আস। তোমাকে আমি রোযা সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছি। আল্লাহ তাআলা মুসাফির থেকে অর্ধেক সালাম মাফ করে দিয়েছেন আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলাদের জন্য রোযা পালন মাফ করে দিয়েছেন। আনাস (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই উভয়টির অথবা এর একটির কথা বলেছেন। আমার আপেক্ষ এই যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে আহার করিনি। - ইবনে মাজাহ ১৬৬৭

এই বিষযে আবু উমাইয়া (রাযিঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা (রাযিঃ) বলেন, আনাস ইবনে মালিক আল-কাবী (রাযিঃ) বর্ণিত এই হাদীসটি হাসান। এই একটি হাদীস ছাড়া নবী (ﷺ) থেকে আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) এর কোন হাদীস আছে বলে আমাদের জানা নেই। কোন কোন আলিমের এই হাদীস অনুসারে আমল করেছে। আর কোন কোন আলিম বলেন, গর্ভবতী ও দুদ্ধদাকারিনী মহিলাগণ রোযা ভঙ্গ করবে, পরে কাযা আদায় করবে ও মিসকীনদের খাওয়াবে। এ হল সুফিয়ান, মালিক, শফিঈ ও আহমাদ (রাহঃ) এর অভিমত। কোন কোন আলিম বলেন, এরা রোযা ভঙ্গ করবে এবং মিসকীনদের খাওয়াবে। তাদের উপর কাযা নেই। চাইলে কাযা করবে, মিসকীন খাওয়াতে হবে না। এ হল ইমাম ইসহাক (রাহঃ) এর অভিমত।
باب مَا جَاءَ فِي الرُّخْصَةِ فِي الإِفْطَارِ لِلْحُبْلَى وَالْمُرْضِعِ
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، وَيُوسُفُ بْنُ عِيسَى، قَالاَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا أَبُو هِلاَلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَوَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، رَجُلٌ مِنْ بَنِي عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبٍ قَالَ أَغَارَتْ عَلَيْنَا خَيْلُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَوَجَدْتُهُ يَتَغَدَّى فَقَالَ " ادْنُ فَكُلْ " . فَقُلْتُ إِنِّي صَائِمٌ . فَقَالَ " ادْنُ أُحَدِّثْكَ عَنِ الصَّوْمِ أَوِ الصِّيَامِ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ الصَّوْمَ وَشَطْرَ الصَّلاَةِ وَعَنِ الْحَامِلِ أَوِ الْمُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ " . وَاللَّهِ لَقَدْ قَالَهُمَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم كِلْتَيْهِمَا أَوْ إِحْدَاهُمَا فَيَا لَهْفَ نَفْسِي أَنْ لاَ أَكُونَ طَعِمْتُ مِنْ طَعَامِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي أُمَيَّةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ الْكَعْبِيِّ حَدِيثٌ حَسَنٌ وَلاَ نَعْرِفُ لأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ هَذَا عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم غَيْرَ هَذَا الْحَدِيثِ الْوَاحِدِ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ . وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ الْحَامِلُ وَالْمُرْضِعُ تُفْطِرَانِ وَتَقْضِيَانِ وَتُطْعِمَانِ . وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ وَمَالِكٌ وَالشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ . وَقَالَ بَعْضُهُمْ تُفْطِرَانِ وَتُطْعِمَانِ وَلاَ قَضَاءَ عَلَيْهِمَا وَإِنْ شَاءَتَا قَضَتَا وَلاَ إِطْعَامَ عَلَيْهِمَا . وَبِهِ يَقُولُ إِسْحَاقُ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুসাফিরের জন্য সফরের হালতে রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে অস্বাভাবিক কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম। আর অস্বাভাবিক কষ্ট হলে রোযা রাখা মাকরূহ। এ অবস্থায় রোযা না রেখে পরে তা কাযা করবে।

আছিম রাহ. বলেন, আনাস রা.কে সফরকালে রোযা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘যে রোযা রাখবে না সে অবকাশ গ্রহণ করল। আর যে রোযা রাখল সে উত্তম কাজ করল।’-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৩২; রদ্দুল মুহতার ২/৪২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪০৩

গর্ভবতী নারীর যদি রোযা রাখলে গর্ভস্থ বাচ্চার ক্ষতির আশংকা হয়, বা গর্ভবতী নারী মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তাহলে রোযা রাখবে না। বরং রোযা ভাঙ্গা তার জন্য জায়েজ। তবে পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করতে হবে। {ফাতওয়ায়ে রহিমীয়া-৭/২৭০}

অনুরুপ ভাবে দুগ্ধদানকারিনী মা রোযা রাখলে যদি সন্তান দুধ না পায় আর ঐ সন্তান অন্য কোনো খাবারেও অভ্যস্ত না হয়, ফলে দুধ না পাওয়ার কারণে

সন্তানের মৃত্যুর বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা হয়, তাহলে তিনি রোযা ভাঙ্গতে পারবেন এবং পরে কাযা করে নিবেন। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, অর্থ : আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোযার হুকুম শিথিল করেছেন।-জামে তিরমিযী ১/১৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২২

#সংগৃহীত
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান