আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৮. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ৭০৩
আন্তর্জাতিক নং: ৭০৩
বিলম্বে সাহরী খাওয়া।
৭০১. ইয়াহয়া ইবনে মুসা (রাযিঃ) ..... যায়দ ইবনে সাবিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে সাহরী খেলাম, এরপরই নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। রাবী বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই দুয়ের মাঝে কতটুকু ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পরিমাণ (তিলাওয়াতের সময়)। - বুখারি ও মুসলিম
باب مَا جَاءَ فِي تَأْخِيرِ السُّحُورِ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ الدَّسْتَوَائِيُّ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ، قَالَ تَسَحَّرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قُمْنَا إِلَى الصَّلاَةِ . قَالَ قُلْتُ كَمْ كَانَ قَدْرُ ذَلِكَ قَالَ قَدْرُ خَمْسِينَ آيَةً .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রোযার নিয়তে সুবহে সাদিকের পূর্বে যে খাবার গ্রহণ করা হয় তা হল সাহরী। সাহরী খাওয়া সুন্নত। সাহরীতে পেট ভরে খাওয়া আবশ্যক নয়; এক দুই ঢোক পানি পান করেও এ সুন্নত আদায় করা যায়।

সাহরীতে রয়েছে বরকত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

تَسَحّرُوا فَإِنّ فِي السّحُورِ بَرَكَةً.

তোমরা সাহরী কর। কেননা সাহরীর খাবারে বরকত রয়েছে। সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯২৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৫

অতএব সাহরীর খাবার রোযা রাখতে শক্তি যোগায়। তেমনি এতে খায়র ও বরকত এবং পুণ্য ও কল্যাণও নিহিত রয়েছে।

যারা সাহরী গ্রহণ করে তাদের উপর আল্লাহ্র রহমত বর্ষিত হয়

আরেক হাদীসে এসেছে

السّحُورُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ، فَلَا تَدَعُوهُ، وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ، فَإِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ.

সাহরী খাওয়াতে বরকত রয়েছে। অতএব তোমরা তা ছেড়ো না; এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী গ্রহণ কর। কেননা যারা সাহরী খায় আল্লাহ তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দুআ করতে থাকে। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১০৮৬, ১১৩৯৬

সাহরী : আমাদের রোযার একটি বৈশিষ্ট্য

পূর্বেই আমরা উল্লেখ করে এসেছি, রোযা বা সিয়ামের বিধান এ উম্মতের জন্য প্রথম নয়; পূর্ববর্তী উম্মতের উপরও রোযার বিধান ছিল। তবে আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের রোযার মাঝে সাহরী একটি বিশেষ পার্থক্যরেখা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ، أَكْلَةُ السّحَرِ.

আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের রোযার মাঝে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৬

অর্থাৎ আমাদের রোযায় সাহরী খাওয়ার যে গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তা নেই। আমাদের নিকট সাহরী করাটাই একটি স্বতন্ত্র আমল এবং বড় সওয়াবের কাজ।

শেষ ওয়াক্তে সাহরী গ্রহণ করা উত্তম

সাহরী করা যেমন মুস্তাহাব তেমনি তা ওয়াক্তের শেষ দিকে করাও উত্তম। অর্থাৎ সতর্কতামূলক সময় হাতে রেখে সুবহে সাদিকের পূর্ব-নিকটবর্তী সময়ে সাহরী করা ভালো। নবীজী বলেনঃ

إِنّا مَعَاشِرَ الْأَنْبِيَاءِ أُمِرْنَا أَنْ نُعَجِّلَ فِطْرَنَا، وَأَنْ نُؤَخِّرَ سَحُورَنَا.

আমরা নবীগণ এ মর্মে আদিষ্ট হয়েছি যে, সময় হওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করব এবং শেষ ওয়াক্তে সাহরী গ্রহণ করব। আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ১৮৮৪; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ৪৮৮০

সাহাবায়ে কেরামের আমলও এরকম ছিল। হযরত আমর ইবনে মাইমুন আলআউদী রাহ. বলেন

كَانَ أَصْحَابُ مُحَمّدٍ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَسْرَعَ النّاسِ إِفْطَارًا وَأَبْطَأَهُ سُحُورًا.

সাহাবায়ে কেরাম সময় হওয়ার সাথে সাথেই দ্রুত ইফতার করতেন আর শেষ ওয়াক্তে সাহরী করতেন। মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৭৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৮৯৩২
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন