আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৭. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত যাকাত অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৮১
আন্তর্জাতিক নং: ৬৮১
ভিক্ষা করা নিষিদ্ধ।
৬৭৮. মাহমুদ ইবনে গায়লান (রাহঃ) ..... সামুরা ইবনে জুনদুর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ যাঞ্ছা হল একটি হীন শ্রান্তিকর কাজ: এর দ্বারা মানুষ তার চেহারাকেই শ্রান্ত করে ফেলে। তবে শাসকের নিকট কিছু দাবী করা বা এমন অবস্থায় চাওয়া যা ছাড়া গত্যন্তর নেই, তা হল ভিন্ন কথা।
ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ্।
ইমাম আবু ঈসা (রাহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ্।
باب مَا جَاءَ فِي النَّهْىِ عَنِ الْمَسْأَلَةِ
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا وَكِيِعٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ الْمَسْأَلَةَ كَدٌّ يَكُدُّ بِهَا الرَّجُلُ وَجْهَهُ إِلاَّ أَنْ يَسْأَلَ الرَّجُلُ سُلْطَانًا أَوْ فِي أَمْرٍ لاَ بُدَّ مِنْهُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে প্রথমত কোনও মানুষের কাছে কিছু চাওয়ার নিন্দা করা হয়েছে। তারপর কার কাছে চাওয়া যাবে কিংবা কোন অবস্থায় চাওয়া যাবে তা বলে দেওয়া হয়েছে। চাওয়ার নিন্দা করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إن المسألةَ كَدٌّ يَكُدُّ بِهَا الرجلُ وجهَه (নিশ্চয়ই অন্যের কাছে চাওয়াটা আঁচড়, যা দ্বারা ব্যক্তি নিজ চেহারা আঁচড়ায়)। অন্যের কাছে চাওয়া বলতে মানুষের কাছে অর্থ-সম্পদ চাওয়াকে বোঝানো হয়েছে। দীনী বিষয় চাওয়া এর অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন কারও কাছে কোনও মাসআলা জানতে চাওয়া। এতে কোনও দোষ নেই। দুনিয়াবী বিষয় চাওয়ার দ্বারা ব্যক্তির মান-সম্মান নষ্ট হয়। চেহারা আঁচড়ানো দ্বারা মান-সম্মান নষ্ট করা বোঝানো হয়েছে। যে ব্যক্তির কারও কাছে কিছু চাওয়ার জরুরত নেই, তার জন্য চাওয়া জায়েয নয়। এতে মান-সম্মান নষ্ট হয়। অপর এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَسْأَلَةُ الْغَنِيِّ شَيْنٌ فِي وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
সচ্ছল ব্যক্তির চাওয়াটা কিয়ামত দিবসে তার চেহারায় দাগ হয়ে থাকবে।(মুসনাদে আহমাদ: ১৯৮২১; মুসনাদুল বাযযার: ৩৫৭২; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৩৫৬)
অপর এক হাদীছে আছে-
من سأل مسألةً وهو عنها غنيٌ جاءت يوم القيامة كُدُوحاً في وجهه
যে ব্যক্তি এমন কিছু চায়, যা চাওয়ার কোনও প্রয়োজন তার ছিল না, কিয়ামতের দিন তার সে চাওয়াটা তার চেহারায় আঁচড় হয়ে থাকবে।(মুসনাদে আহমাদ: ৪৪৪০; মুসনাদুল বাযযার: ৪১৫৫; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর : ১০১৯৯; মুসনাদে দারিমী: ১৬৮৫)
প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়, অন্য এক হাদীছে সে সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া যায়। হাদীছটি দীর্ঘ। তার শেষে আছে-
وَمَا الْغِنَى الَّذِي لَا تَنْبَغِي مَعَهُ الْمَسْأَلَةُ؟ قَالَ : قَدْرُ مَا يُغَدِّيهِ وَيُعَشِّيهِ
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কী পরিমাণ সচ্ছলতা থাকলে অন্যের কাছে চাওয়া উচিত নয়? তিনি বললেন, সকাল-সন্ধ্যা খাওয়া যায় এ পরিমাণ।(সুনানে আবূ দাউদ: ১৬২৯; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৪৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৩২১২)
কার কাছে চাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে হাদীছটিতে বলা হয়েছে- إِلَّا أَنْ يَسْأَلَ الرَّجُلُ سُلْطَانًا (তবে কোনও লোক ক্ষমতাসীনের কাছে চাইলে তা ব্যতিক্রম)। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সম্পদে যার যে হক আছে তা চাওয়াতে কোনও দোষ নেই। কেউ যদি যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত হয়, তবে যাকাত ফান্ড থেকে সে সাহায্য চাইতে পারবে। এমনিভাবে কোনও সূত্রে কারও যদি ভাতা নির্ধারিত থাকে, তবে তা চাইতেও কোনও সমস্যা নেই।
কোন অবস্থায় চাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- أَوْ فِي أَمْرٍ لَا بُدَّ مِنْهُ (অথবা যা না হলেই নয় এমন বিষয়ে চাইলে তা ব্যতিক্রম)। অর্থাৎ কেউ যদি নিরুপায় অবস্থায় পৌছে যায় এবং চাওয়া ছাড়া গত্যান্তর না থাকে, সে অবস্থায় চাইতে পারবে। যেমন ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছে অথচ নিজের কাছে খাবার নেই, এ ক্ষেত্রে সে ক্ষুধা মেটানোর জন্য কারও কাছে সাহায্য চাইলে তাতে দোষ নেই। এমনিভাবে দেনাদার ব্যক্তি যদি তার দেনা পরিশোধের কোনও ব্যবস্থা করতে না পারে কিংবা বিশেষ কোনও কারণে কেউ যদি অর্থদণ্ডের সম্মুখীন হয় আর তার নিজের পক্ষে তা আদায় করা সম্ভব না হয়, তবে সেও অন্যের কাছে অর্থসাহায্য চাইতে পারবে। এক হাদীছে আছে-
إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لاَ تَصْلُحُ إِلاَّ لِثَلاَثَةٍ لِذِى فَقْرٍ مُدْقِعٍ أَوْ لِذِى غُرْمٍ مُفْظِعٍ أَوْ لِذِى دَمٍ مُوجِعٍ
তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও অর্থসাহায্য চাওয়া ঠিক নয়। সে তিনজন হল- চরম দারিদ্র্যক্লিষ্ট ব্যক্তি, নিরুপায় ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি এবং হত্যার দায়ে অর্থদণ্ডে ভারাক্রান্ত ব্যক্তি।(সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪১; মুসনাদে আহমাদ: ১৫৯১৬; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৩২১৩; শু'আবুল ঈমান : ১১৫৬; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ১৫৯১৬)
অপর এক হাদীছে এ বিষয়টি আরও ব্যাখ্যার সঙ্গে এসেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইছি ওয়াসাল্লাম বিশিষ্ট সাহাবী কাবীসা ইবনুল মুখারিক রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলেন
يا قَبِيصَةُ، إنَّ المَسْأَلَةَ لا تَحِلُّ إلَّا لأَحَدِ ثَلاثَةٍ: رَجُلٍ تَحَمَّلَ حَمَالَةً، فَحَلَّتْ له المَسْأَلَةُ حتَّى يُصِيبَها، ثُمَّ يُمْسِكُ، ورَجُلٌ أصابَتْهُ جائِحَةٌ اجْتاحَتْ مالَهُ، فَحَلَّتْ له المَسْأَلَةُ حتَّى يُصِيبَ قِوامًا مِن عَيْشٍ -أوْ قالَ: سِدادًا مِن عَيْشٍ- ورَجُلٌ أصابَتْهُ فاقَةٌ حتَّى يَقُومَ ثَلاثَةٌ مِن ذَوِي الحِجا مِن قَوْمِهِ: لقَدْ أصابَتْ فُلانًا فاقَةٌ، فَحَلَّتْ له المَسْأَلَةُ حتَّى يُصِيبَ قِوامًا مِن عَيْشٍ -أوْ قالَ: سِدادًا مِن عَيْشٍ- فَما سِواهُنَّ مِنَ المَسْأَلَةِ -يا قَبِيصَةُ- سُحْتًا، يَأْكُلُها صاحِبُها سُحْتًا
‘হে কাবীসা! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারও জন্য সওয়াল করা জায়েয নয়। এক. ওই ব্যক্তি, যে দেনার ভারে আক্রান্ত। দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা জায়েয। এ পরিমাণ ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পর সে সওয়াল করা থেকে ক্ষান্ত হবে। দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি, যে কোনও দুর্যোগে আক্রান্ত। দুর্যোগ তার সব মাল নিঃশেষ করে ফেলেছে। জীবনধারণের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তার জন্যও সওয়াল করা জায়েয। তৃতীয় ওই ক্ষুধার্ত ব্যক্তি, যার সম্পর্কে তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর তিনজন বোধ- বুদ্ধিসম্পন্ন লোক সাক্ষ্য দেয় যে, সে অনাহারক্লিষ্ট হয়ে পড়েছে। তার জন্যও জীবনধারণের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সওয়াল করা জায়েয। হে কাবীসা! এছাড়া অন্য যে-কারও পক্ষে সওয়াল করাটা হারাম। সওয়াল করে খেলে সে হারামই খায়।’(সহীহ মুসলিম: ১০৪৪; সুনানে নাসাঈ ২৫৮০; সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪০)
তবে এরূপ নিরুপায় অবস্থায়ও যে-কারও কাছে না চাওয়াই ভালো। অন্যের কাছে চাওয়া যেহেতু অসম্মানজনক কাজ, তাই যতদূর সম্ভব এমন লোকের কাছে চাওয়া উচিত, যে চাওয়ার কারণে তাকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখবে না; বরং বিপন্ন হওয়ায় সওয়ালকারীর প্রতি সহানুভূতিশীল হবে এবং তার সাহায্য করতে পারায় নিজেকে ধন্য মনে করবে। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَإِنْ كُنْتَ سَائِلًا لَا بُدَّ، فَاسْأَلِ الصَّالِحِيْنَ
তোমার যদি একান্ত চাইতেই হয়, তবে সালিহীন অর্থাৎ নেককার লোকদের কাছে চাও।(সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪৬; সুনানে নাসাঈ ২৫৮৭; মুসনাদে আহমাদ: ১৮৯৪৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৬৯৬; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৭৮৭৭; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর: ১০০৪)
প্রকাশ থাকে যে, অন্যের কাছে চাওয়া কখনও হারাম হয়, কখনও মাকরূহ হয় এবং কখনও হয় মুবাহ।
চাওয়া হারাম ওই ব্যক্তির জন্য, যে ধনী হওয়া সত্ত্বেও যাকাতের খাত থেকে টাকা-পয়সা চায় অথবা নিজ সচ্ছলতার কথা গোপন রেখে অন্যের সামনে দারিদ্র্য প্রকাশ করে এবং সেই মিথ্যা দারিদ্র্য দূর করার জন্য অন্যের কাছে সাহায্য চায়।
মাকরূহ হল ওই ব্যক্তির চাওয়া, যার কাছে নিজ জরুরত পূরণের সামর্থ্য আছে, তা সত্ত্বেও অন্যের কাছে সাহায্য চায়। আবার সে নিজ সামর্থ্যের কথা গোপনও করে না।
আর মুবাহ বা নির্দোষ চাওয়া হল ওই ব্যক্তির চাওয়া, যে তার কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে কোনও বৈধ ও হালাল বস্তু চায়।
বিনা চাওয়ায় ও বিনা লোভে যদি কারও কাছ থেকে কিছু পাওয়া যায়, তবে তা নিতে কোনও দোষ নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের কাছে সওয়াল করা নিতান্ত অসম্মানজনক কাজ। এর থেকে বিরত থাকা চাই।
খ. সরকারের কাছে নিজ অধিকার চাওয়াতে কোনও দোষ নেই।
গ. নিতান্ত ঠেকা অবস্থায় অন্যের কাছে চাওয়ার অবকাশ আছে।
إن المسألةَ كَدٌّ يَكُدُّ بِهَا الرجلُ وجهَه (নিশ্চয়ই অন্যের কাছে চাওয়াটা আঁচড়, যা দ্বারা ব্যক্তি নিজ চেহারা আঁচড়ায়)। অন্যের কাছে চাওয়া বলতে মানুষের কাছে অর্থ-সম্পদ চাওয়াকে বোঝানো হয়েছে। দীনী বিষয় চাওয়া এর অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন কারও কাছে কোনও মাসআলা জানতে চাওয়া। এতে কোনও দোষ নেই। দুনিয়াবী বিষয় চাওয়ার দ্বারা ব্যক্তির মান-সম্মান নষ্ট হয়। চেহারা আঁচড়ানো দ্বারা মান-সম্মান নষ্ট করা বোঝানো হয়েছে। যে ব্যক্তির কারও কাছে কিছু চাওয়ার জরুরত নেই, তার জন্য চাওয়া জায়েয নয়। এতে মান-সম্মান নষ্ট হয়। অপর এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَسْأَلَةُ الْغَنِيِّ شَيْنٌ فِي وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
সচ্ছল ব্যক্তির চাওয়াটা কিয়ামত দিবসে তার চেহারায় দাগ হয়ে থাকবে।(মুসনাদে আহমাদ: ১৯৮২১; মুসনাদুল বাযযার: ৩৫৭২; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর: ৩৫৬)
অপর এক হাদীছে আছে-
من سأل مسألةً وهو عنها غنيٌ جاءت يوم القيامة كُدُوحاً في وجهه
যে ব্যক্তি এমন কিছু চায়, যা চাওয়ার কোনও প্রয়োজন তার ছিল না, কিয়ামতের দিন তার সে চাওয়াটা তার চেহারায় আঁচড় হয়ে থাকবে।(মুসনাদে আহমাদ: ৪৪৪০; মুসনাদুল বাযযার: ৪১৫৫; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর : ১০১৯৯; মুসনাদে দারিমী: ১৬৮৫)
প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়, অন্য এক হাদীছে সে সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া যায়। হাদীছটি দীর্ঘ। তার শেষে আছে-
وَمَا الْغِنَى الَّذِي لَا تَنْبَغِي مَعَهُ الْمَسْأَلَةُ؟ قَالَ : قَدْرُ مَا يُغَدِّيهِ وَيُعَشِّيهِ
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কী পরিমাণ সচ্ছলতা থাকলে অন্যের কাছে চাওয়া উচিত নয়? তিনি বললেন, সকাল-সন্ধ্যা খাওয়া যায় এ পরিমাণ।(সুনানে আবূ দাউদ: ১৬২৯; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫৪৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৩২১২)
কার কাছে চাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে হাদীছটিতে বলা হয়েছে- إِلَّا أَنْ يَسْأَلَ الرَّجُلُ سُلْطَانًا (তবে কোনও লোক ক্ষমতাসীনের কাছে চাইলে তা ব্যতিক্রম)। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সম্পদে যার যে হক আছে তা চাওয়াতে কোনও দোষ নেই। কেউ যদি যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত হয়, তবে যাকাত ফান্ড থেকে সে সাহায্য চাইতে পারবে। এমনিভাবে কোনও সূত্রে কারও যদি ভাতা নির্ধারিত থাকে, তবে তা চাইতেও কোনও সমস্যা নেই।
কোন অবস্থায় চাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- أَوْ فِي أَمْرٍ لَا بُدَّ مِنْهُ (অথবা যা না হলেই নয় এমন বিষয়ে চাইলে তা ব্যতিক্রম)। অর্থাৎ কেউ যদি নিরুপায় অবস্থায় পৌছে যায় এবং চাওয়া ছাড়া গত্যান্তর না থাকে, সে অবস্থায় চাইতে পারবে। যেমন ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছে অথচ নিজের কাছে খাবার নেই, এ ক্ষেত্রে সে ক্ষুধা মেটানোর জন্য কারও কাছে সাহায্য চাইলে তাতে দোষ নেই। এমনিভাবে দেনাদার ব্যক্তি যদি তার দেনা পরিশোধের কোনও ব্যবস্থা করতে না পারে কিংবা বিশেষ কোনও কারণে কেউ যদি অর্থদণ্ডের সম্মুখীন হয় আর তার নিজের পক্ষে তা আদায় করা সম্ভব না হয়, তবে সেও অন্যের কাছে অর্থসাহায্য চাইতে পারবে। এক হাদীছে আছে-
إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لاَ تَصْلُحُ إِلاَّ لِثَلاَثَةٍ لِذِى فَقْرٍ مُدْقِعٍ أَوْ لِذِى غُرْمٍ مُفْظِعٍ أَوْ لِذِى دَمٍ مُوجِعٍ
তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও অর্থসাহায্য চাওয়া ঠিক নয়। সে তিনজন হল- চরম দারিদ্র্যক্লিষ্ট ব্যক্তি, নিরুপায় ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি এবং হত্যার দায়ে অর্থদণ্ডে ভারাক্রান্ত ব্যক্তি।(সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪১; মুসনাদে আহমাদ: ১৫৯১৬; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১৩২১৩; শু'আবুল ঈমান : ১১৫৬; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ১৫৯১৬)
অপর এক হাদীছে এ বিষয়টি আরও ব্যাখ্যার সঙ্গে এসেছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইছি ওয়াসাল্লাম বিশিষ্ট সাহাবী কাবীসা ইবনুল মুখারিক রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলেন
يا قَبِيصَةُ، إنَّ المَسْأَلَةَ لا تَحِلُّ إلَّا لأَحَدِ ثَلاثَةٍ: رَجُلٍ تَحَمَّلَ حَمَالَةً، فَحَلَّتْ له المَسْأَلَةُ حتَّى يُصِيبَها، ثُمَّ يُمْسِكُ، ورَجُلٌ أصابَتْهُ جائِحَةٌ اجْتاحَتْ مالَهُ، فَحَلَّتْ له المَسْأَلَةُ حتَّى يُصِيبَ قِوامًا مِن عَيْشٍ -أوْ قالَ: سِدادًا مِن عَيْشٍ- ورَجُلٌ أصابَتْهُ فاقَةٌ حتَّى يَقُومَ ثَلاثَةٌ مِن ذَوِي الحِجا مِن قَوْمِهِ: لقَدْ أصابَتْ فُلانًا فاقَةٌ، فَحَلَّتْ له المَسْأَلَةُ حتَّى يُصِيبَ قِوامًا مِن عَيْشٍ -أوْ قالَ: سِدادًا مِن عَيْشٍ- فَما سِواهُنَّ مِنَ المَسْأَلَةِ -يا قَبِيصَةُ- سُحْتًا، يَأْكُلُها صاحِبُها سُحْتًا
‘হে কাবীসা! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারও জন্য সওয়াল করা জায়েয নয়। এক. ওই ব্যক্তি, যে দেনার ভারে আক্রান্ত। দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা জায়েয। এ পরিমাণ ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পর সে সওয়াল করা থেকে ক্ষান্ত হবে। দ্বিতীয় ওই ব্যক্তি, যে কোনও দুর্যোগে আক্রান্ত। দুর্যোগ তার সব মাল নিঃশেষ করে ফেলেছে। জীবনধারণের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তার জন্যও সওয়াল করা জায়েয। তৃতীয় ওই ক্ষুধার্ত ব্যক্তি, যার সম্পর্কে তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর তিনজন বোধ- বুদ্ধিসম্পন্ন লোক সাক্ষ্য দেয় যে, সে অনাহারক্লিষ্ট হয়ে পড়েছে। তার জন্যও জীবনধারণের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সওয়াল করা জায়েয। হে কাবীসা! এছাড়া অন্য যে-কারও পক্ষে সওয়াল করাটা হারাম। সওয়াল করে খেলে সে হারামই খায়।’(সহীহ মুসলিম: ১০৪৪; সুনানে নাসাঈ ২৫৮০; সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪০)
তবে এরূপ নিরুপায় অবস্থায়ও যে-কারও কাছে না চাওয়াই ভালো। অন্যের কাছে চাওয়া যেহেতু অসম্মানজনক কাজ, তাই যতদূর সম্ভব এমন লোকের কাছে চাওয়া উচিত, যে চাওয়ার কারণে তাকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখবে না; বরং বিপন্ন হওয়ায় সওয়ালকারীর প্রতি সহানুভূতিশীল হবে এবং তার সাহায্য করতে পারায় নিজেকে ধন্য মনে করবে। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَإِنْ كُنْتَ سَائِلًا لَا بُدَّ، فَاسْأَلِ الصَّالِحِيْنَ
তোমার যদি একান্ত চাইতেই হয়, তবে সালিহীন অর্থাৎ নেককার লোকদের কাছে চাও।(সুনানে আবু দাউদ: ১৬৪৬; সুনানে নাসাঈ ২৫৮৭; মুসনাদে আহমাদ: ১৮৯৪৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৬৯৬; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৭৮৭৭; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর: ১০০৪)
প্রকাশ থাকে যে, অন্যের কাছে চাওয়া কখনও হারাম হয়, কখনও মাকরূহ হয় এবং কখনও হয় মুবাহ।
চাওয়া হারাম ওই ব্যক্তির জন্য, যে ধনী হওয়া সত্ত্বেও যাকাতের খাত থেকে টাকা-পয়সা চায় অথবা নিজ সচ্ছলতার কথা গোপন রেখে অন্যের সামনে দারিদ্র্য প্রকাশ করে এবং সেই মিথ্যা দারিদ্র্য দূর করার জন্য অন্যের কাছে সাহায্য চায়।
মাকরূহ হল ওই ব্যক্তির চাওয়া, যার কাছে নিজ জরুরত পূরণের সামর্থ্য আছে, তা সত্ত্বেও অন্যের কাছে সাহায্য চায়। আবার সে নিজ সামর্থ্যের কথা গোপনও করে না।
আর মুবাহ বা নির্দোষ চাওয়া হল ওই ব্যক্তির চাওয়া, যে তার কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে কোনও বৈধ ও হালাল বস্তু চায়।
বিনা চাওয়ায় ও বিনা লোভে যদি কারও কাছ থেকে কিছু পাওয়া যায়, তবে তা নিতে কোনও দোষ নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের কাছে সওয়াল করা নিতান্ত অসম্মানজনক কাজ। এর থেকে বিরত থাকা চাই।
খ. সরকারের কাছে নিজ অধিকার চাওয়াতে কোনও দোষ নেই।
গ. নিতান্ত ঠেকা অবস্থায় অন্যের কাছে চাওয়ার অবকাশ আছে।
