আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৭. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত যাকাত অধ্যায়
হাদীস নং: ৬১৯
আন্তর্জাতিক নং: ৬১৯
যাকাত আদায় করে দিলে তোমার (সম্পদ) উপর যা কর্তব্য ছিল তা তুমি পূর্ণ করলে।
৬১৯. মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) ...... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কামনা করতাম যদি কোন বুদ্ধিমান গ্রামবাসী আসত এবং আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর খেদমতে উপবিষ্ট অবস্থায় যদি সেটাকে কোন বিষয় প্রশ্ন করত। যাহোক, আমরা সেদিন এই অবস্থায় ছিলাম। হঠাৎ এক গ্রামবাসী আরব সেখানে এসে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সামনে হ্যাঁট মুড়ে বসল। বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার দূত আমাদের কাছে এসেছে; এবং আমাদের বলেছে যে, আপনি নাকি বলেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল, কসম সে সত্তার যিনি আকাশকে করেছেন সুঠাম, যমীনকে করেছেন বিস্তৃত, পাহাড় সমূহকে করেছেন দণ্ডায়মান, সত্যই কি আল্লাহ আপনাকে প্রেরণ করেছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, আপনার দূত আমাদের আরো বলেছে যে, আপনি নাকি বলেন, আমাদের উপর রাত-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায অবশ্য কর্তব্যরূপে নির্ধারণ করেছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এই বিষয়ে নিদের্শ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, আপনার দূত আমাদের আরো বলেছে যে, আপনি নাকি বলেন, বছরে এক মাস (রমযান) আমাদের জন্য রোযা পালন করা কর্তব্য? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ সত্য বলেছে। লোকটি বলল, কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহ কি আপনাকে এই বিষয়ে নিদের্শ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, আপনার দূত আমাদের বলেছে যে, আপনি নাকি বলেন যে, আমাদের সম্পদে নির্ধারিত যাকাত রয়েছে? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ সত্য বলেছে। লোকটি বলল, কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এই বিষয়ে নিদের্শ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, আপনার দূত আমাদের আরো আপনি নাকি বলেন আমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ যেতে সক্ষম তার জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা কর্তব্য? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল, কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এই বিষয়ে নিদের্শ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বললঃ কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন! আমি এগুলোর একটিকেও পরিত্যাগ করব না। আর এগুলোর সীমাও অতিক্রম করব না। এরপর লোকটি দ্রুত উঠে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ এই গ্রামবাসী লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তবে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। - বুখারি ও মুসলিম
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেন এই হাদীসটি হাসান ও এই সূত্রে গরীব। অন্য সূত্রে ও আনাস (রাযিঃ) থেকে এটি বর্ণিত আছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারী (রাহঃ) কে বলতে শুনেছি যে, কতক হাদীস বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, উস্তাদের নিকট পাঠকরা ও উপস্থাপন তার নিকট থেকে শ্রবণ করার ন্যায় গ্রহণযোগ্য। কেননা, উক্ত গ্রামবাসী নবী (ﷺ) এর কাছে উপস্থাপন করেন এবং নবী (ﷺ) এর স্বীকৃতি দেন।
লোকটি বলল, আপনার দূত আমাদের আরো বলেছে যে, আপনি নাকি বলেন, আমাদের উপর রাত-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায অবশ্য কর্তব্যরূপে নির্ধারণ করেছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এই বিষয়ে নিদের্শ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, আপনার দূত আমাদের আরো বলেছে যে, আপনি নাকি বলেন, বছরে এক মাস (রমযান) আমাদের জন্য রোযা পালন করা কর্তব্য? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ সত্য বলেছে। লোকটি বলল, কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহ কি আপনাকে এই বিষয়ে নিদের্শ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, আপনার দূত আমাদের বলেছে যে, আপনি নাকি বলেন যে, আমাদের সম্পদে নির্ধারিত যাকাত রয়েছে? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ সত্য বলেছে। লোকটি বলল, কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এই বিষয়ে নিদের্শ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, আপনার দূত আমাদের আরো আপনি নাকি বলেন আমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ যেতে সক্ষম তার জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা কর্তব্য? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল, কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এই বিষয়ে নিদের্শ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বললঃ কসম সে সত্তার যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন! আমি এগুলোর একটিকেও পরিত্যাগ করব না। আর এগুলোর সীমাও অতিক্রম করব না। এরপর লোকটি দ্রুত উঠে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেনঃ এই গ্রামবাসী লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তবে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। - বুখারি ও মুসলিম
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেন এই হাদীসটি হাসান ও এই সূত্রে গরীব। অন্য সূত্রে ও আনাস (রাযিঃ) থেকে এটি বর্ণিত আছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারী (রাহঃ) কে বলতে শুনেছি যে, কতক হাদীস বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেন, এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, উস্তাদের নিকট পাঠকরা ও উপস্থাপন তার নিকট থেকে শ্রবণ করার ন্যায় গ্রহণযোগ্য। কেননা, উক্ত গ্রামবাসী নবী (ﷺ) এর কাছে উপস্থাপন করেন এবং নবী (ﷺ) এর স্বীকৃতি দেন।
باب مَا جَاءَ إِذَا أَدَّيْتَ الزَّكَاةَ فَقَدْ قَضَيْتَ مَا عَلَيْكَ .
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ الْحَمِيدِ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كُنَّا نَتَمَنَّى أَنْ يَأْتِيَ، الأَعْرَابِيُّ الْعَاقِلُ فَيَسْأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ عِنْدَهُ فَبَيْنَا نَحْنُ عَلَى ذَلِكَ إِذْ أَتَاهُ أَعْرَابِيٌّ فَجَثَا بَيْنَ يَدَىِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ رَسُولَكَ أَتَانَا فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللَّهَ أَرْسَلَكَ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَبِالَّذِي رَفَعَ السَّمَاءَ وَبَسَطَ الأَرْضَ وَنَصَبَ الْجِبَالَ آللَّهُ أَرْسَلَكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرٍ فِي السَّنَةِ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " صَدَقَ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا فِي أَمْوَالِنَا الزَّكَاةَ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " صَدَقَ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا الْحَجَّ إِلَى الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . فَقَالَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لاَ أَدَعُ مِنْهُنَّ شَيْئًا وَلاَ أُجَاوِزُهُنَّ . ثُمَّ وَثَبَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنْ صَدَقَ الأَعْرَابِيُّ دَخَلَ الْجَنَّةَ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ هَذَا الْوَجْهِ عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ يَقُولُ قَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ فِقْهُ هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ الْقِرَاءَةَ عَلَى الْعَالِمِ وَالْعَرْضَ عَلَيْهِ جَائِزٌ مِثْلُ السَّمَاعِ . وَاحْتَجَّ بِأَنَّ الأَعْرَابِيَّ عَرَضَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَقَرَّ بِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীসের শুরু অংশে প্রশ্ন করার যে নিষেধাজ্ঞার কথাটি বলা হয়েছে, এর দ্বারা কোরআন পাকের ঐ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছেঃ হে মুমিনগণ! তোমরা এমন বিষয় জিজ্ঞাসা করো না, যা পরিবাক্ত হলে তোমাদের কাছেই খারাপ লাগবে।। (সূরা মায়েদাহ)
বাস্তব কথাও হচ্ছে এই যে, নতুন নতুন প্রশ্ন করা মানুষের একটি স্বভাব। কিন্তু এ অভ্যাসকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছেড়ে দিলে এই ফল হয় যে, মানুষের মন ও আকর্ষণ তখন চুলচেরা তর্ক-বিতর্কের দিকেই বেশী অগ্রসর হয়। আর এতে কথার বিশ্লেষণের প্রবণতাই বেশী সৃষ্টি হয় এবং এ তুলনায় কর্ম ও আমল খুব কমই হয়ে থাকে। তাছাড়া এতে সময়ও নষ্ট হয়। বিশেষ করে যুগের নবীর কাছে অধিক প্রশ্ন করার একটি ক্ষতিকর দিক এটাও যে, নবীর পক্ষ থেকে যখন উত্তর আসে, তখন দেখা যায়, উম্মতের অনেক পাবন্দীও বেড়ে যায়।
যা হোক, এ সকল কারণেই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা থেকে সাহাবায়ে কেরামকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তারা নিজেরা প্রশ্ন খুবই কম করতেন এবং এ আশায় থাকতেন যে, কোন গ্রাম্য বেদুঈন এসে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করুক, আর এ সুযোগে আমরা কিছু শুনে শিখে নেই। কারণ, বেদুঈনদের জন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে অনেক অবকাশ ছিল। এ হাদীসেরই এক বর্ণনায় হযরত আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত হয়েছে, “বেদুঈন লোকটি খুব দুঃসাহসের সাথে প্রশ্ন করে যাচ্ছিল এবং নির্দ্বিধায় যা মনে আসছিল তাই জিজ্ঞাসা করছিল।" — ফতহুল বারী।
বুখারী শরীফে এ হাদীসেরই বর্ণনায় রয়েছে যে, শেষে যাবার সময় এই বেদুঈন বলেছিল। আমি বনু সা'দ ইবনে বকর গোত্রের এক সদস্য, আমার নাম হচ্ছে যেমাম ইবনে সা'আলাবাহ। আমি আমার গোত্রের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলাম।
বুখারীর বর্ণনায় একথাও রয়েছে যে, এ লোকটি এসে প্রথমেই হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিল যে, আমি আপনার কাছে কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করব, তবে আমার প্রশ্নের ধরন কিছুটা শক্ত হবে। তাই বলে আপনি আমার উপর রাগ করবেন না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তোমার মনে যা আসে তাই জিজ্ঞাসা কর। তারপর ঐ প্রশ্নোত্তর হল, যা হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
প্রশ্নকারী বেদুঈন যাওয়ার সময় কসম খেয়ে যে কথাটি বলেছিল যে, "আমি এতে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি করব না", সম্ভবত তার এ কথার এ উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি আপনার এ শিক্ষা ও দিক নির্দেশনার সম্পূর্ণ অনুসরণ করব এবং আমার মনের চাহিদায় এতে কোন প্রকার কমবেশী করব না। দ্বিতীয় অর্থ এও হতে পারে যে, আমি আপনার এই পয়গাম ও বাণী অবিকল এভাবেই আমার গোত্রের কাছে পৌঁছে দিব এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন সংযোজন বা বিয়োজন করব না।
অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এ বেদুঈন লোকটি নিজ গোত্রের কাছে গিয়ে খুব উদ্যমের সাথে দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করে দিলেন। তিনি প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে লাগলেন যে, তার কোন কোন নিকটাত্মীয় ও আপনজন তাকে বলল হে যেমাম। কুষ্ঠরোগ উন্মাদ হওয়া থেকে সাবধান থাক। (অর্থাৎ, দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করে কুন্ঠরোগে যেন আক্রান্ত না হয়ে যাও অথবা তুমি যেন পাগল না হয়ে যাও)
কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা তার তবলীগ ও দ্বীন প্রচারে এমন বরকত দান করলেন যে, সকাল বেলা যারা তাকে কুষ্ঠরোগ ও পাগলামীতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল, সন্ধ্যা বেলায় তারাই মূর্তিপূজা থেকে তওবা করে তওহীদের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করল। ফলে সারা গোত্রে একটি প্রাাণীও আর অমুসলিম রইল না।
বাস্তব কথাও হচ্ছে এই যে, নতুন নতুন প্রশ্ন করা মানুষের একটি স্বভাব। কিন্তু এ অভ্যাসকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছেড়ে দিলে এই ফল হয় যে, মানুষের মন ও আকর্ষণ তখন চুলচেরা তর্ক-বিতর্কের দিকেই বেশী অগ্রসর হয়। আর এতে কথার বিশ্লেষণের প্রবণতাই বেশী সৃষ্টি হয় এবং এ তুলনায় কর্ম ও আমল খুব কমই হয়ে থাকে। তাছাড়া এতে সময়ও নষ্ট হয়। বিশেষ করে যুগের নবীর কাছে অধিক প্রশ্ন করার একটি ক্ষতিকর দিক এটাও যে, নবীর পক্ষ থেকে যখন উত্তর আসে, তখন দেখা যায়, উম্মতের অনেক পাবন্দীও বেড়ে যায়।
যা হোক, এ সকল কারণেই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা থেকে সাহাবায়ে কেরামকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তারা নিজেরা প্রশ্ন খুবই কম করতেন এবং এ আশায় থাকতেন যে, কোন গ্রাম্য বেদুঈন এসে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করুক, আর এ সুযোগে আমরা কিছু শুনে শিখে নেই। কারণ, বেদুঈনদের জন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে অনেক অবকাশ ছিল। এ হাদীসেরই এক বর্ণনায় হযরত আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত হয়েছে, “বেদুঈন লোকটি খুব দুঃসাহসের সাথে প্রশ্ন করে যাচ্ছিল এবং নির্দ্বিধায় যা মনে আসছিল তাই জিজ্ঞাসা করছিল।" — ফতহুল বারী।
বুখারী শরীফে এ হাদীসেরই বর্ণনায় রয়েছে যে, শেষে যাবার সময় এই বেদুঈন বলেছিল। আমি বনু সা'দ ইবনে বকর গোত্রের এক সদস্য, আমার নাম হচ্ছে যেমাম ইবনে সা'আলাবাহ। আমি আমার গোত্রের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলাম।
বুখারীর বর্ণনায় একথাও রয়েছে যে, এ লোকটি এসে প্রথমেই হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিল যে, আমি আপনার কাছে কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করব, তবে আমার প্রশ্নের ধরন কিছুটা শক্ত হবে। তাই বলে আপনি আমার উপর রাগ করবেন না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তোমার মনে যা আসে তাই জিজ্ঞাসা কর। তারপর ঐ প্রশ্নোত্তর হল, যা হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
প্রশ্নকারী বেদুঈন যাওয়ার সময় কসম খেয়ে যে কথাটি বলেছিল যে, "আমি এতে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি করব না", সম্ভবত তার এ কথার এ উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি আপনার এ শিক্ষা ও দিক নির্দেশনার সম্পূর্ণ অনুসরণ করব এবং আমার মনের চাহিদায় এতে কোন প্রকার কমবেশী করব না। দ্বিতীয় অর্থ এও হতে পারে যে, আমি আপনার এই পয়গাম ও বাণী অবিকল এভাবেই আমার গোত্রের কাছে পৌঁছে দিব এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন সংযোজন বা বিয়োজন করব না।
অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, এ বেদুঈন লোকটি নিজ গোত্রের কাছে গিয়ে খুব উদ্যমের সাথে দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করে দিলেন। তিনি প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে লাগলেন যে, তার কোন কোন নিকটাত্মীয় ও আপনজন তাকে বলল হে যেমাম। কুষ্ঠরোগ উন্মাদ হওয়া থেকে সাবধান থাক। (অর্থাৎ, দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করে কুন্ঠরোগে যেন আক্রান্ত না হয়ে যাও অথবা তুমি যেন পাগল না হয়ে যাও)
কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা তার তবলীগ ও দ্বীন প্রচারে এমন বরকত দান করলেন যে, সকাল বেলা যারা তাকে কুষ্ঠরোগ ও পাগলামীতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল, সন্ধ্যা বেলায় তারাই মূর্তিপূজা থেকে তওবা করে তওহীদের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করল। ফলে সারা গোত্রে একটি প্রাাণীও আর অমুসলিম রইল না।
