আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৬. সফর-মুসাফিরের অধ্যায়

হাদীস নং: ৬১৬
আন্তর্জাতিক নং: ৬১৬
এই বিষয়ে আর একটি অনুচ্ছেদ।
৬১৬. মুসা ইবনে আব্দি্র রহমান আল-কূফী (রাহঃ) ...... আবু উমামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ﷺ)-কে আমি বিদায় হজ্জের খুতবায় বলতে শুনেছিঃ তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তো তোমাদের রব। তোমরা পাঁচ ওয়ক্ত নামায আদায় করবে, তোমরা রমযান মাসের রোযা পালন করবে, তোমাদের সম্পদের যাকাত দিবে, তোমাদের শাসনকর্তাদের আনুগত্য করবে, তা হলে তোমরা তোমাদের প্রভূর জান্নাতে দাখিল হতে পারবে। রাবী বলেনঃ আমি আবু উমামা (রাযিঃ) কে বললামঃ কতদিন আগে আপনি এই হাদীসটি শুনেছেন? তিনি বললেনঃ আমার বয়স যখন ত্রিশ বছর তখন আমি এই হাদীসটি শুনেছিলাম।

ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান-সহীহ।
باب مِنْهُ
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكِنْدِيُّ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، أَخْبَرَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، حَدَّثَنِي سُلَيْمُ بْنُ عَامِرٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا أُمَامَةَ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَقَالَ " اتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ " . قَالَ فَقُلْتُ لأَبِي أُمَامَةَ مُنْذُ كَمْ سَمِعْتَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم هَذَا الْحَدِيثَ قَالَ سَمِعْتُهُ وَأَنَا ابْنُ ثَلاَثِينَ سَنَةً . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে আরাফা ও মিনায় দীর্ঘ ভাষণ দিয়েছিলেন। এ হাদীছে সে দুই ভাষণের কোনও একটির অংশবিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মৌলিক পাঁচটি বিষয়ের হুকুম দেওয়া হয়েছে। সর্বপ্রথম হুকুম তাকওয়া ও আল্লাহভীতি সম্পর্কে।

তাকওয়া একটি ব্যাপক কথা। আল্লাহ তা'আলা যা কিছু করার আদেশ করেছেন তা করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে তাকওয়ার মূল কথা। এর ভেতর শরীআতের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ এসে যায়। সে হিসেবে এই হুকুমটি সর্বপ্রথম দেওয়া হয়েছে। বাকি চারটি হুকুমও মূলত এর অন্তর্ভুক্ত। তবে যেহেতু শরীআতের অন্যান্য বিধানের ভেতর এ চারটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, সেই বিবেচনায় এগুলো আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাকওয়ার হুকুমটি সর্বপ্রথম দেওয়ার কারণ এও হতে পারে যে, অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকলে শরীআতের সমস্ত হুকুম মানা সহজ হয়ে যায়। অনেক সময় অলসতার কারণে নামায পড়তে কষ্টবোধ হয়। রমযানে রোযা রাখতেও কিছু না কিছু কষ্ট হয়ই। অর্থ-সম্পদের যাকাত দিতে মনের উপর বেশ চাপ পড়ে। আমীরের আনুগত্য করতেও মনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়। অন্তরে আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া না থাকলে কেবলমাত্র কষ্ট-ক্লেশ বরদাশত করে এসব বিধান পালন করা সহজ হয় না। তাই প্রথমে তাকওয়া ও আল্লাহভীতির হুকুম দিয়ে মন-মানসিকতাকে পরবর্তী চার বিধান পালনে প্রস্তুত করা হয়েছে।

বলা হয়েছে- তোমাদের নামায, তোমাদের রোযা, তোমাদের যাকাত ইত্যাদি। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য, এ সকল বিধান পূর্ববর্তী উম্মতসমূহকেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে যে নিয়মে দেওয়া হয়েছিল, তোমাদেরকে ঠিক সে নিয়মে দেওয়া হয়নি। তাদের থেকে তোমাদের অনেক পার্থক্য রয়েছে। তোমাদের কর্তব্য এ সমস্ত বিধান তোমাদের শরীআতে যেভাবে বলা হয়েছে ঠিক সে নিয়মে পালন করা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

لِكُلٍ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَ مِنْهَاجًا

তোমাদের মধ্যে প্রত্যেক (উম্মত)-এর জন্য আমি এক (পৃথক) শরীয়ত ও পন্থা নির্ধারণ করেছি।

আমীরের আনুগত্য করা
এ হাদীছে পঞ্চম হুকুম আমীরের আনুগত্য সম্পর্কে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে তোমাদের আমীর ও নেতা বানিয়েছেন, তোমাদের কর্তব্য তাদের আনুগত্য করা ও তাদের আদেশ মানা। সবরকম আমীর ও নেতা এর অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রপ্রধান, তার প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিসহ যে কোনও দায়িত্বশীল কোনও আদেশ করলে তা মানা জরুরি। এবং তা মানাও শরীআতেরই হুকুম। শর্ত এই যে, আদেশটি নাজায়েয কাজের না হতে হবে। কেননা হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে-

لا طاعَةَ لِمَخْلُوقِ فِي مَعْصِيَةِ الخَالِقِ.

'আল্লাহর অবাধ্যতার কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য নেই”।

সুতরাং সরকারি যে সকল আদেশ কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নয়, তা মেনে চলা নাগরিকদের অবশ্যকর্তব্য। পাশাপাশি এ শর্তও প্রযোজ্য যে, সে আদেশ শাসকের স্বার্থসিদ্ধি ও জনকল্যাণবিরোধী না হতে হবে। হলে তা মান্যযোগ্য নয়।
প্রকাশ থাকে যে, আমীর বা শাসকের আদেশ পালনের জন্য তার মুত্তাকী- পরহেযগার হওয়া শর্ত নয়। সে নিজে শরীআতবিরোধী কাজ করলেও তার প্রদত্ত হুকুম যদি শরীআতবিরোধী না হয়, তবে তা মানা জরুরি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. তাকওয়া সকল আমলের প্রাণবস্তু। সর্বাবস্থায় এর প্রতি যত্নবান থাকা উচিত।

খ. জান্নাত লাভের জন্য নামায, রোযা প্রভৃতি ইসলামের রুকনসমূহ পালন করা অবশ্যকর্তব্য।

গ. আমীরের আনুগত্য করাও শরীআতের অপরিহার্য বিধান, যতক্ষণ না তার হুকুম কুরআন সুন্নাহবিরোধী হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান