আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ
৬. সফর-মুসাফিরের অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৮৩
আন্তর্জাতিক নং: ৫৮৩
নিজে ফরয আদায় করার পর কেউ যদি লোকদের ইমামতি করে
৫৮৩. কুতায়বা (রাহঃ) ..... জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, মু’আয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) রাসূল (ﷺ) এর সঙ্গে মাগরিবের নামায আদায় করতেন, পরে স্বীয় কওমের কাছে ফিরে যেতেন এবং তাদের ইমামতি করতেন।
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান-সহীহ। ইমাম শাফিঈ, আহমদ, ইসহাক (রাহঃ) প্রমুখ আমাদের ফকীহ আলিমগণ এই হাদীস অনুসারে আমলের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেনঃ কোন ব্যক্তি যদি পূর্বে নামায আদায় করে পরে সেই ফরয নামাযের ক্ষেত্রে কোন জামাআতের ইমামতি করে, তবে যারা তার ইক্তিদায় নামায আদায় করবে, তাদের নামায আদায হয়ে যাবে। এই ফকীহগণ মু’আয (রাযিঃ) সম্পর্কে জাবির (রাযিঃ)-এর হাদীসটি প্রমাণ হিসাবে পেশ করেন। এই হাদীসটি সহীহ। একাধিক সূত্রে জাবির (রাযিঃ) থেকে এটির রিওয়ায়াত আছে।
আবু দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এক ব্যক্তি সমজিদে আসল। এ সময় লোকেরা সালাতুল আসর আদায় করছিল কিন্তু সে এটিকে যোহরের নামায মনে করে ইক্তিদা শুরু করে দিল। এটা কি জায়েয হবে? তিনি উত্তরে বললেনঃ এ ব্যক্তির নামায জায়েয হয়ে যাবে। কুফাবাসী একদল আলিম বলেনঃ কেউ যদি যোহরের নামায আদায় করছে বলে মনে করে এমন এক ইমামের ইক্তিদা করে যিনি আসলে আসরের নামায আদায় করছেন, তবে মুক্তাদির নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। কারণ এখানে ইমাম ও মুক্তাদীর নিয়তের মধ্যে বৈপরীত্য বিদ্যমান।
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান-সহীহ। ইমাম শাফিঈ, আহমদ, ইসহাক (রাহঃ) প্রমুখ আমাদের ফকীহ আলিমগণ এই হাদীস অনুসারে আমলের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেনঃ কোন ব্যক্তি যদি পূর্বে নামায আদায় করে পরে সেই ফরয নামাযের ক্ষেত্রে কোন জামাআতের ইমামতি করে, তবে যারা তার ইক্তিদায় নামায আদায় করবে, তাদের নামায আদায হয়ে যাবে। এই ফকীহগণ মু’আয (রাযিঃ) সম্পর্কে জাবির (রাযিঃ)-এর হাদীসটি প্রমাণ হিসাবে পেশ করেন। এই হাদীসটি সহীহ। একাধিক সূত্রে জাবির (রাযিঃ) থেকে এটির রিওয়ায়াত আছে।
আবু দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এক ব্যক্তি সমজিদে আসল। এ সময় লোকেরা সালাতুল আসর আদায় করছিল কিন্তু সে এটিকে যোহরের নামায মনে করে ইক্তিদা শুরু করে দিল। এটা কি জায়েয হবে? তিনি উত্তরে বললেনঃ এ ব্যক্তির নামায জায়েয হয়ে যাবে। কুফাবাসী একদল আলিম বলেনঃ কেউ যদি যোহরের নামায আদায় করছে বলে মনে করে এমন এক ইমামের ইক্তিদা করে যিনি আসলে আসরের নামায আদায় করছেন, তবে মুক্তাদির নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। কারণ এখানে ইমাম ও মুক্তাদীর নিয়তের মধ্যে বৈপরীত্য বিদ্যমান।
باب مِنْهُ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ، كَانَ يُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَغْرِبَ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى قَوْمِهِ فَيَؤُمُّهُمْ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَصْحَابِنَا الشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ قَالُوا إِذَا أَمَّ الرَّجُلُ الْقَوْمَ فِي الْمَكْتُوبَةِ وَقَدْ كَانَ صَلاَّهَا قَبْلَ ذَلِكَ أَنَّ صَلاَةَ مَنِ ائْتَمَّ بِهِ جَائِزَةٌ . وَاحْتَجُّوا بِحَدِيثِ جَابِرٍ فِي قِصَّةِ مُعَاذٍ وَهُوَ حَدِيثٌ صَحِيحٌ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ جَابِرٍ . وَرُوِيَ عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ رَجُلٍ دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَالْقَوْمُ فِي صَلاَةِ الْعَصْرِ وَهُوَ يَحْسَبُ أَنَّهَا صَلاَةُ الظُّهْرِ فَائْتَمَّ بِهِمْ قَالَ صَلاَتُهُ جَائِزَةٌ . وَقَدْ قَالَ قَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ إِذَا ائْتَمَّ قَوْمٌ بِإِمَامٍ وَهُوَ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهَا الظُّهْرُ فَصَلَّى بِهِمْ وَاقْتَدَوْا بِهِ فَإِنَّ صَلاَةَ الْمُقْتَدِي فَاسِدَةٌ إِذِ اخْتَلَفَ نِيَّةُ الإِمَامِ وَنِيَّةُ الْمَأْمُومِ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীসে এটা পরিস্কার যে, হযরত মুআয রা. রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে নামায পড়ে কওমে এসে আবার ঐ নামায পড়াতেন। তবে এটা পরিস্কার নয় যে, হযরত মুআয রা. রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে ফরয পড়তেন আর কওমে এসে নফল পড়তেন। বরং পূর্ববর্ণিত সহীহ হাদীসে একই নামায এক দিনে দু’বার পড়ার নিষেধাজ্ঞা দ্বারা এটা পরিস্কার হয় যে, হযরত মুআয রা. ইশার নামায একবারই পড়েছেন; যে নামাযে তিনি তাঁর কওমের ইমামতি করেছেন। আর রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়া নামায তাঁর নফল ছিলো। এ ব্যাখ্যা মেনে নেয়া হলে মারফু’ হাদীস এবং সাহাবার আমলের মধ্যে কোন বিরোধ থাকে না। আর সঙ্গত কারণে নফল নামায আদায়কারীর পেছনে ফরয আদায়কারীর ইক্তিদা বৈধ হওয়ার দলীলও এ হাদীস দ্বারা চলে না। এ ব্যাখ্যার বিপরীতে যে সব হাদীসে বর্ণিত রয়েছে: هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ , وَلَهُمْ فَرِيضَةٌ “হযরত মুআয রা. যে নামায তাঁর কওমে গিয়ে পড়াতেন তা তাঁর জন্য ছিলো নফল, আর কওমের জন্য ছিলো ফরয”। (ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৭৩, হাদীস নং-২৩৬০) এটা মূলত হযরত মুআয রা.-এর নিজের মন্তব্য নয়; বরং এটা অন্যদের ধারণা প্রসূত মন্তব্য যা অপরের অনত্মরের নিয়তের ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু, আমর বিন দীনার সূত্রে আইয়ূব সিখতিয়ানী, (বুখারী: ৬৭৬) মানসুর বিন মু’তামির (মুসলিম: ৯২৬) এবং সুফিয়ান বিন উইয়াইনাও উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম: ৯২৪) কিন্তু তাঁদের কারো বর্ণনায় ঐ শব্দটি (هِيَ لَهُ تَطَوُّعٌ..) নেই। আবার যদি মেনেও নেয়া হয় যে, হযরত মুআয রা. ইশার ফরয নামায রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়ে নিতেন, আর দ্বিতীয়বার ঐ একই নামাযের ইমামতি করতেন তাহলে প্রশ্ন উঠবে যে, এটা রসূলুল্লাহ স. থেকে অনুমোদিত কি না? অনুমোদিত হওয়ার কোন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং মুসনাদে আহমাদের এক বর্ণনায় বেশ পরিস্কারভাবে উলেস্নখ আছে যে, রসূলুল্লাহ স. হযরত মুআয রা.কে বলেছেন, إِمَّا أَنْ تُصَلِّيَ مَعِي، وَإِمَّا أَنْ تُخَفِّفَ عَلَى قَوْمِكَ “হয়তো আমার সাথে নামায পড়ো অথবা কওমের জন্য সহজ করো”। (মুসনাদে আহমাদ: ২০৬৯৯, ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪, হাদীস নং-২৩৬২) মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ লিগাইরিহী বলেছেন। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন:فَقَوْلُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذَا لِمُعَاذٍ , يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ أَحَدَ الْأَمْرَيْنِ , إِمَّا الصَّلَاةَ مَعَهُ , أَوْ بِقَوْمِهِ , وَأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ يَجْمَعُهَا “রসূলুল্লাহ স. কর্তৃক মুআয রা.কে এ কথা বলায় এটাই বুঝায় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর নিকট তাঁর দুটি বিষয়ের যে কোন একটির অনুমতি রয়েছে। হয়তো রসূলুল্লাহ স.-এর সাথে নামায পড়া। নয়তো তাঁর কওমের নামায পড়ানো। এ দু’টিকে একত্রিত করতে পারবে না। (ত্বহাবী: খ--১, পৃষ্ঠা-২৬৪)
এ হাদীস দ্বারা এটাই পরিস্কার বুঝে আসে যে, হযরত মুআয রা. ইশার ফরয নামায রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়ে দ্বিতীয়বার ঐ একই নামাযে ইমামতি করার অনুমতি রসূলুল্লাহ স. দেননি। তাহলে এটা কীভাবে ফরয নামাযের মতো গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ের দলীল হতে পারে? সর্বোপরি কথা হলো উপরিউক্ত দলীলের ভিত্তিতে যদি কারো নিকট এটা বৈধ মনে হয়, তাহলেও সতর্কতার চাহিদা হবে এ জাতীয় বিতর্কিত বিষয় থেকে ফরয নামাযকে বাঁচিয়ে রাখা।
এ হাদীস দ্বারা এটাই পরিস্কার বুঝে আসে যে, হযরত মুআয রা. ইশার ফরয নামায রসূলুল্লাহ স.-এর পেছনে পড়ে দ্বিতীয়বার ঐ একই নামাযে ইমামতি করার অনুমতি রসূলুল্লাহ স. দেননি। তাহলে এটা কীভাবে ফরয নামাযের মতো গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ের দলীল হতে পারে? সর্বোপরি কথা হলো উপরিউক্ত দলীলের ভিত্তিতে যদি কারো নিকট এটা বৈধ মনে হয়, তাহলেও সতর্কতার চাহিদা হবে এ জাতীয় বিতর্কিত বিষয় থেকে ফরয নামাযকে বাঁচিয়ে রাখা।
