আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৭- সৃষ্টি জগতের সূচনা

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩২৩১
১৯৮৯. যখন তোমাদের কেউ ‘‘আমীন” বলে আর আসমানের ফিরিশতাগণও আমীন বলেন এবং একের আমীন অন্যের আমীনের সাথে উচ্চারিত হয়, তখন সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়
৩০০৪। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) .... নবী (ﷺ)- এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার তিনি নবী (ﷺ)- কে জিজ্ঞাসা করলেন, উহুদের দিনের চাইতে কঠিন কোন দিন কি আপনার উপর এসেছিল? তিনি বললেন, আমি তোমার কওম থেকে যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, তা তো হয়েছি। তাদের থেকে সবচেয়ে বেশী কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, আকাবার দিন যখন আমি নিজেকে ইবনে আব্দে ইয়ালীল ইবনে আব্দে কুলালের নিকট পেশ করেছিলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তাঁর জবাব দেয়নি। তখন আমি এমন ভাবে বিষন্ন চেহারা নিয়ে ফিরে এলাম যে, কারনুস সাআলিবে পৌঁছা পর্যন্ত আমার চিন্তা লাঘব হয়নি। তখন আমি মাথা উপরে উঠালাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম এক টুকরা মেঘ আমাকে ছায়া দিচ্ছে। আমি সে দিকে দৃষ্টি দিলাম। তার মধ্যে ছিলেন জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)।
তিনি আমাকে ডেকে বললেন, আপনার কওম আপনাকে যা বলেছে এবং তারা প্রতি উত্তরে যা বলেছে তা সবই আল্লাহ শুনেছেন। তিনি আপনার কাছে পাহাড়ের (দায়িত্বে নিয়োজিত) ফিরিশতাকে পাঠিয়েছেন। এদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছা আপনি তাঁকে হুকুম দিতে পারেন। তখন পাহাড়ের ফিরিশতা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। তারপর বললেন, হে মুহাম্মাদ! এসব ব্যাপার আপনার ইচ্ছাধীন। আপনি যদি চান, তাহলে আমি তাদের উপর আখশাবাইন* কে চাপিয়ে দিব। উত্তরে নবী (ﷺ) বললেন, (না, তা হতে পারে না) বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন সন্তান জন্ম দেবেন যে, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে আর তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।
*আখশাবাইনঃ দু'টি কঠিন শিলার পাহাড়।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উহুদের যুদ্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। তাঁর পবিত্র চেহারা জখম হয়ে গিয়েছিল। তাঁর একটা দাঁতও শহীদ হয়ে গিয়েছিল। শিরস্ত্রাণ ভেঙে মাথায় বসে গিয়েছিল। শিরস্ত্রাণের একটা আংটা তাঁর চোয়ালে বিঁধে গিয়েছিল। আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রাযি. দাঁত দিয়ে কামড়ে সেটি বের করতে গেলে তাতে তাঁর নিজের দু'টি দাঁত ভেঙে গিয়েছিল। শত্রুরা তাঁর গায়ে পাথর মেরেছিল। পাথরের আঘাতে পাঁজরে মারাত্মক চোট লেগেছিল। তিনি একটা গর্তে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি এমন মারাত্মকভাবে আহত ও রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিলেন যে, কাফেররা ধরে নিয়েছিল তিনি শহীদ হয়ে গিয়েছেন। তারা এ কথা প্রচারও করে দিয়েছিল। মোটকথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতগুলো যুদ্ধ করেছেন, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি আহত হয়েছিলেন উহুদের যুদ্ধেই। এ যুদ্ধের মতো এতটা কষ্ট আর কোনও যুদ্ধে তিনি পাননি। সে কারণেই আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, উহুদের যুদ্ধের চেয়ে বেশি কষ্ট তিনি আর কখনও পেয়েছিলেন কি না। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফের ঘটনা উল্লেখ করে জানান যে, জীবনে সর্বাপেক্ষা বেশি কষ্ট তিনি পেয়েছিলেন তায়েফবাসীর হাতেই।

তায়েফের ঘটনা
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতপ্রাপ্তির ১০ম বছরে দুনিয়ায় তাঁর সর্বাপেক্ষা বড় আনুকূল্যদাতা তাঁর শ্রদ্ধেয় চাচা আবূ তালিবের ইন্তিকাল হয়ে যায়। এর মাত্র তিন দিনের মাথায় চিরবিদায় গ্রহণ করেন তাঁর সবচে' ঘনিষ্ঠজন ও সবচে' বড় সহমর্মী আম্মাজান খাদীজা রাযি.। এ কারণে বছরটির নামই হয়ে যায় 'আমুল হুযন' বা শোকের বছর। তাদের ইন্তিকালে বাহ্যিকভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় অসহায় হয়ে পড়েন। মুশরিকগণ তাঁকে নির্যাতন করার অবাধ সুযোগ পেয়ে যায়। তাঁর পক্ষে মক্কা মুকাররামায় অবস্থান দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। সবদিকে কেমন নৈরাশ্যকর পরিস্থিতি। এ অবস্থায় তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রমের জন্য কোনও উপযুক্ত ক্ষেত্রের প্রয়োজন দেখা দেয়।

কুরায়শের পর মক্কা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের মধ্যে সবচে' বড় ও শক্তিমান গোষ্ঠী ছিল বনূ ছাকীফ। তারা তায়েফে বাস করত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জনপদকেই নিজ দাওয়াতের ময়দানরূপে চিন্তা করলেন। তিনি ভাবলেন এখানকার লোক তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিতে পারে এবং তারা আল্লাহর দীনের সাহায্যকারী হতে পারে। সুতরাং নবুওয়াতের দশম বছর ২৬ বা ২৭ শাউওয়াল তিনি হযরত যায়দ ইবন হারিছা রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে তায়েফের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।

তায়েফে আবদে ইয়ালীল, মাসউদ ও হাবীব- এই তিন ব্যক্তি খুবই গণ্যমান্য ছিল। তারা ছিল তিন ভাই এবং আমর ইবন উমায়র ইবন আওফের পুত্র। তাদের একজন কুরায়শের শাখাগোত্র বনূ জুমাহের এক কন্যাকে বিবাহ করেছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তিনজনের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকলেন এবং তাঁর দীনের সাহায্য করার আহ্বান জানালেন। কিন্তু তারা তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করল না। উল্টো তাঁর মুখের উপর যাচ্ছেতাই বলে মন্তব্য করল।

তাদের একজন বলল, আল্লাহ যদি তোমাকে রাসূল করে পাঠিয়ে থাকেন, তবে আমি কা'বার গিলাফের অমর্যাদা করব।
দ্বিতীয়জন বলল, তোমাকে ছাড়া আল্লাহ বুঝি আর কাউকে রাসূল করে পাঠানোর মতো পাননি?
তৃতীয়জন বলল, তোমার সঙ্গে আমি কোনও কথাই বলব না। কারণ তুমি যদি নিজ দাবি অনুযায়ী সত্যিই রাসূল হয়ে থাক, তবে তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করা আমার জন্য বিপজ্জনক হবে। আর তুমি যদি মিথ্যুক হয়ে থাক, তবে তো তোমার সঙ্গে আমার কথা বলাই অনুচিত।

তারপর তারা তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা শুরু করে দিল। তাদের দৃষ্টিতে তিনি নবী হওয়ারই উপযুক্ত নন। নবী তো হবে মক্কা বা তায়েফের মোড়ল শ্রেণির কোনও ব্যক্তি। কুরআন মাজীদে তাদের মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে-
لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ
এ কুরআন দুই জনপদের কোনও বড় ব্যক্তির উপর নাযিল করা হল না কেন? (সূরা যুখরুফ (৪৩), আয়াত ৩১)

তারা তাঁকে যাচ্ছেতাই বলে ব্যঙ্গ করেই ক্ষান্ত হল না। উপরন্তু তারা তাদের গোলাম, বালক ও উচ্ছৃঙ্খল লোকদের তাঁর পেছনে লেলিয়ে দিল। তারা তাঁর পেছনে হল্লা-চিল্লা করতে লাগল। পরম আনন্দের সঙ্গে তাঁকে উত্যক্ত করতে থাকল। এভাবে রাস্তায় তাঁর পেছনে বহু লোক জড়ো হয়ে গেল। ভিড়ের ভেতর থেকে অনেকে তাঁর উপর পাথরও নিক্ষেপ করল। তিনি একমাত্র সঙ্গী যায়দ রাযি.-কে নিয়ে সামনের দিকে চলছিলেন আর পেছন দিক থেকে দুর্বৃত্তের দল তাঁর উপর বৃষ্টির মতো পাথর ছুঁড়ে যাচ্ছিল। এভাবে তিনি প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন। তাঁর পায়ের গোছা মারাত্মকভাবে জখম হয়ে যায়। তা থেকে অঝোরধারায় রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে। সঙ্গী যায়দ রাযি.-ও মারাত্মকভাবে ক্ষত-বিক্ষত হন। তাঁর মাথা ও চোখ ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তাঁর গোটা শরীর রক্তাক্ত।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় আশা নিয়ে তায়েফে এসেছিলেন। কিন্তু অচিরেই সে আশা দুরাশায় পরিণত হল। তিনি তায়েফবাসীকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনওকিছুতেই তারা কর্ণপাত করল না। শেষে বললেন, তোমরা যখন আমার দাওয়াত গ্রহণই করলে না, তখন অন্ততপক্ষে এতটুকু তো করো যে, তোমরা আমার কথা অন্য কারও কাছে প্রকাশ করবে না। তিনি ভাবছিলেন, মক্কাবাসী এ পরিণতির কথা শুনলে খুব উস্কানি পাবে। তারা মক্কার মুসলিমদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। কিন্তু পাষণ্ডের দল তাঁর কোনও কথাই শুনতে নারাজ। তারা সাফ বলে দিল, হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাদের শহর থেকে বের হয়ে যাও। যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যাও। এখানে থাকতে পারবে না।

তিনি দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সামনে চলতে থাকলেন। এরই মধ্যে রাস্তার পাশে একটি বাগান দেখতে পেলেন। উতবা ও শায়বা নামক কুরায়শী দুই ভাইয়ের ছিল এ বাগানটি। তিনি উপায়ান্তর না দেখে সেই বাগানে আশ্রয় নিলেন। একটি আঙ্গুর গাছের ছায়ায় গিয়ে তিনি বসলেন। তারপর একটু শান্ত হয়ে আল্লাহর কাছে দু'আ করলেন-
اللَّهُمَّ إِلَيْكَ أَشْكُو ضَعْفَ قُوَّتِيْ وَقِلَّةَ حِيْلَتِي وَهَوَانِي عَلَى النَّاسِ، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، أَنْتَ رَبُّ الْمُسْتَضْعَفِينَ وَأَنْتَ رَبِّي إِلَى مَنْ تَكِلنِي، إِلَى بَعِيدٍ يَتَجَهَّمُنِي، أَوْ إِلَى عَدُو مَلكْتَهُ أَمْرِي ، إِنْ لَمْ يَكُنْ بِكَ عَلَيَّ غَضَبٌ فَلَا أبَالِي، وَلَكِنَّ عَافِيَتَكَ هِيَ أَوْسَعُ لِي ، أَعُوْذُ بِنُوْرِ وَجْهِكَ الْكَرِيمُ الَّذِي أَشْرَقَتْ لَهُ الظُّلُمَاتُ، وَصَلحَ عَلَيْهِ أَمْرُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ مِنْ أَنْ تُنْزِلَ بِيْ غَضَبَكَ أَوْ يَحِلَّ عَلَيَّ سَخَطُكَ، لَكَ الْعُتْبَى حَتَّى تَرْضَى وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِكَ
‘হে আল্লাহ! আমার শক্তির দুর্বলতা, সম্বলহীনতা এবং মানুষের কাছে আমার নগণ্যতা ও তুচ্ছতার জন্য আমি আপনারই কাছে ফরিয়াদ করছি। হে শ্রেষ্ঠ দয়ালু! আপনি দুর্বলদের প্রতিপালক। আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি আমাকে কার হাতে সমর্পণ করছেন? আমার প্রতি যে নিষ্ঠুর আচরণ করে, সেই অনাত্মীয়ের হাতে? নাকি সেই শত্রুর হাতে, যাকে আমার উপর কর্তৃত্ব দান করেছেন? আমার প্রতি আপনার অসন্তুষ্টি না থাকলে আমি কোনওকিছুর তোয়াক্কা করি না। তবে আপনার দেওয়া নিরাপত্তাই আমার পক্ষে শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। আমার প্রতি আপনার ক্রোধবর্ষণ কিংবা আপনার অসন্তুষ্টির অবতরণ থেকে আমি আপনার চেহারার ওই নূরের আশ্রয় গ্রহণ করছি, যা দ্বারা সকল অন্ধকার আলোকিত হয়ে যায়, যার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় বিষয়ের সুরাহা হয়ে যায়। আপনার সন্তুষ্টিই আমার একমাত্র কামনা, যাতে আপনি খুশি হয়ে যান। আপনার সাহায্য ছাড়া আর কোনও উপায়ে শক্তি ও সামর্থ্য লাভ হতে পারে না।'

আল্লাহ তা'আলা তাঁর এ কাতর ডাকে সাড়া দিলেন। পাহাড়-পর্বতের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতার কাছে তাঁর ফরমান পৌঁছে গেল। ফিরিশতা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আরয করল, আপনি হুকুম করলে এক্ষণই আখশাবায়ন (মক্কার দু'দিকের দুই পাহাড়)-কে পরস্পর মিশিয়ে দেব, পাহাড়গুলোর মধ্যে পড়ে সমস্ত কাফের পিষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বললেন, না, হয়তো তাদের পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে ঈমানদার সন্তান জন্ম নেবে, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে।

এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তায়েফবাসীগণ যে নির্মম আচরণ করেছিল, বাগানটির মালিক উতবা ও শায়বা তা লক্ষ করেছিল। তাদের মনে দয়া লাগল। তাদের ছিল এক খ্রিষ্টান গোলাম। তার নাম আদ্দাস। তারা তাদের সেই গোলামের হাতে কিছু আঙ্গুর দিয়ে বলল, এগুলো নিয়ে ওই লোকটিকে খেতে দাও।

সে তা নিয়ে গেল এবং তাঁকে খেতে বলল। তিনি বিসমিল্লাহ বলে খেতে শুরু করলেন। গোলামটি অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকাল। সে বলল, আল্লাহর কসম! এ দেশের মানুষ তো এ বাক্য কখনও বলে না! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তবে তুমি কোন দেশের লোক হে আদ্দাস? সে বলল, আমি নীনাওয়ার অধিবাসী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা! তুমি তাহলে নেককার বান্দা ইয়ূনুস ইবন মাত্তার এলাকার লোক? সে বলল, ইয়ূনুস ইবন মাত্তা সম্পর্কে আপনি কী করে জানেন? তিনি বললেন, ইয়ূনুস তো আমার ভাই। তিনি নবী ছিলেন। আমিও একজন নবী। এ কথা শোনামাত্র আদ্দাস মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথায় ও হাতে-পায়ে চুমু খেল। তারপর সে ইসলাম গ্রহণ করল।

দূর থেকে উতবা ও শায়বা এ দৃশ্য দেখছিল। তারা খুব বিস্মিত হল। আদ্দাস তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি ওই লোকটির মাথায় ও হাতে-পায়ে চুমু খেলে কেন? সে বলল, এ সময় দুনিয়ায় তাঁরচে' উত্তম কোনও লোক নেই। তিনি আমাকে এমন কথা বলেছেন, যা নবী ছাড়া কেউ বলতে পারে না। বস্তুত তিনি আল্লাহর একজন নবী। তার মুখে এ কথা শুনে তারা তাকে ধমক দিল এবং বলল, সাবধান! সে তোমাকে ধর্মান্তরিত না করে ফেলে! আসলে তোমার ধর্মই তার ধর্ম অপেক্ষা উত্তম।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফে ১০ দিন অবস্থান করেছিলেন। তারপর তিনি মক্কায় ফিরে আসেন। তিনি ফিরিশতার কাছে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, তা সত্যে পরিণত হয়েছিল। হিজরী ৮ম সনে মক্কাবিজয়ের পর তায়েফ ও হুনায়নের যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জয়লাভ করেন। তারপর তায়েফের সমস্ত মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে জুলুম-নিপীড়নের সম্মুখীন হওয়া অনিবার্য। দীনের দা'ঈকে সেজন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে।

খ. দীন প্রচারের কাজে ধৈর্য হারানোর কোনও সুযোগ নেই।

গ. দীনের জন্য যে কুরবানী দেওয়া হয়, তা কখনও বৃথা যায় না।

ঘ. বিশ্বপরিচালনায় আল্লাহ তা'আলা একেক কাজের জন্য একেক ধরনের ফিরিশতা নিয়োজিত করে রেখেছেন।

ঙ. দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যারা বাধা দেয়, কালে তারাও হতে পারে দীনের সেবক। তাই অভিশাপ না দিয়ে দা'ঈর কর্তব্য তাদের সুপথে ফিরে আসার জন্য আশাবাদী থাকা এবং সেজন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করা।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন