আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৭- সৃষ্টি জগতের সূচনা

হাদীস নং: ২৯৮০
আন্তর্জাতিক নং: ৩২০৭
১৯৮৮. ফিরিশতার বিবরণ। আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাযিঃ) নবী (ﷺ)- এর নিকট বললেন, ফিরিশতাকূলের মধ্যে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) ইয়াহুদীদের শত্রু।* আর ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন لَنَحْنُ الصَّافُّونَ এই উক্তি ফিরিশতাদের।
*একথা বলার সময় আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা) ইয়াহুদী ছিলেন। এখানে তিনি শুধুমাত্র ইয়াহুদীদের ধারণাই ব্যক্ত করেছেন। কারণ ইয়াহুদীদের উপর সকল আযাবের সংবাদ জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-ই নিয়ে এসেছেন। কাজেই তারা তাঁর সম্বন্ধে এ ধারণা পোষণ করত।
২৯৮০। হুদবা ইবনে খালিদ ও খলীফা (ইবনে খাইয়াত) (রাহঃ) .... মালিক ইবনে সা‘সা‘আ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ-এ দু’ অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এরপর তিনি দু’ ব্যক্তির মাঝে অপর এক ব্যক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট স্বর্ণের একটি তশতরী নিয়ে আসা হল-যা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার বুক থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল। এরপর আমার পেটে যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলা হল।
তারপর তা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা চতুষ্পদ জন্তু আনা হল, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা থেকে বড় অর্থাৎ বুরাক। এরপর তাতে আরোহণ করে আমি জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেওয়া হল মুহাম্মাদ (ﷺ)। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে ধন্যবাদ, তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম।
তারপর আমি আদম (আলাইহিস সালাম)- এর কাছে গেলাম। তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নবী! তোমার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে গেলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ঈসা ও ইয়াহয়া (আলাইহিমুস সালাম)- এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ।
তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)- এর নিকট গেলাম। তাঁকে আমি সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইদ্রিস (আলাইহিস সালাম)- এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, প্রশ্ন করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমরা হারুন (আলাইহিস সালাম)- এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি মুসা (আলাইহিস সালাম)- এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর আমি যখন তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, হে রব! এ ব্যক্তি যে আমার পর প্রেরিত, তাঁর উম্মত আমার উম্মতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহেশতে যাবে। এরপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)- এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর বায়তুল মামুরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)- কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামুর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফিরিশতা নামায আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবার বের হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসে না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। তারপর আমাকে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন, হাজারা নামক স্থানের মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার মূল দেশে চারটি ঝরনা প্রবাহিত। দু’টি অভ্যন্তরে আর দু’টি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অভ্যন্তরে দু’টি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দু’টির একটি হল (ইরাকের) ফুরাত আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ।
তারপর আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মুসা (আলাইহিস সালাম)- এর কাছে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বনী ইসরাঈলের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আর আপনার উম্মত এত (নামায আদায়ে) সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর অনুরোধ করুন।
আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি নামায চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। পুনরায় অনুরূপ ঘটল। আর নামাযও ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেওয়া হল। পুনরায় অনুরূপ ঘটলে তিনি নামায বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার অনুরূপ হল। তিনি নামায কে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর আমি মুসা (আলাইহিস সালাম)- এর কাছে আসলাম। তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, এবার আল্লাহ নামায কে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মুসা (আলাইহিস সালাম)- এর নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কি করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন।
এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছি। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের থেকে হালকা করে দিয়েছে। আর আমি প্রতিটি পূণ্যের জন্য দশ গুণ সাওয়াব দিব।
আর বায়তুল মামুর সম্পর্কে হাম্মাম (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন।
باب ذِكْرِ الْمَلاَئِكَةِ وَقَالَ أَنَسٌ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ جِبْرِيلَ- عَلَيْهِ السَّلاَمُ- عَدُوُّ الْيَهُودِ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: {لَنَحْنُ الصَّافُّونَ} الْمَلاَئِكَةُ
3207 - حَدَّثَنَا هُدْبَةُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، ح وقَالَ لِي خَلِيفَةُ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، وَهِشَامٌ، قَالاَ: حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بَيْنَا أَنَا عِنْدَ البَيْتِ بَيْنَ النَّائِمِ، وَاليَقْظَانِ - وَذَكَرَ: يَعْنِي رَجُلًا بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ -، فَأُتِيتُ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ، مُلِئَ حِكْمَةً وَإِيمَانًا، فَشُقَّ مِنَ النَّحْرِ إِلَى مَرَاقِّ البَطْنِ، ثُمَّ غُسِلَ البَطْنُ بِمَاءِ زَمْزَمَ، ثُمَّ مُلِئَ حِكْمَةً وَإِيمَانًا، وَأُتِيتُ بِدَابَّةٍ أَبْيَضَ، دُونَ البَغْلِ وَفَوْقَ الحِمَارِ: البُرَاقُ، فَانْطَلَقْتُ مَعَ جِبْرِيلَ حَتَّى أَتَيْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ جِبْرِيلُ: قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ، وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى آدَمَ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنَ ابْنٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ الثَّانِيَةَ، قِيلَ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: أُرْسِلَ إِلَيْهِ، قَالَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ، وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى عِيسَى، وَيَحْيَى فَقَالاَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ الثَّالِثَةَ [ص:110]، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قِيلَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ، وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى يُوسُفَ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ قَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ الرَّابِعَةَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قِيلَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى إِدْرِيسَ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ الخَامِسَةَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْنَا عَلَى هَارُونَ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَأَتَيْنَا عَلَى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قِيلَ جِبْرِيلُ، قِيلَ: مَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ مَرْحَبًا بِهِ وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى مُوسَى، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ، فَلَمَّا جَاوَزْتُ بَكَى، فَقِيلَ: مَا أَبْكَاكَ: قَالَ: يَا رَبِّ هَذَا الغُلاَمُ الَّذِي بُعِثَ بَعْدِي يَدْخُلُ الجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِهِ أَفْضَلُ مِمَّا يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِي، فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ السَّابِعَةَ، قِيلَ مَنْ هَذَا؟ قِيلَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ مَنْ مَعَكَ؟ قِيلَ: مُحَمَّدٌ، قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ، مَرْحَبًا بِهِ وَلَنِعْمَ المَجِيءُ جَاءَ، فَأَتَيْتُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ: مَرْحَبًا بِكَ مِنَ ابْنٍ وَنَبِيٍّ، فَرُفِعَ لِي البَيْتُ المَعْمُورُ، فَسَأَلْتُ جِبْرِيلَ، فَقَالَ: هَذَا البَيْتُ المَعْمُورُ يُصَلِّي فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ، إِذَا خَرَجُوا لَمْ يَعُودُوا إِلَيْهِ آخِرَ مَا عَلَيْهِمْ، وَرُفِعَتْ لِي سِدْرَةُ المُنْتَهَى، فَإِذَا نَبِقُهَا كَأَنَّهُ قِلاَلُ هَجَرَ وَوَرَقُهَا، كَأَنَّهُ آذَانُ الفُيُولِ فِي أَصْلِهَا أَرْبَعَةُ أَنْهَارٍ نَهْرَانِ بَاطِنَانِ، وَنَهْرَانِ ظَاهِرَانِ، فَسَأَلْتُ جِبْرِيلَ، فَقَالَ: أَمَّا البَاطِنَانِ: فَفِي الجَنَّةِ، وَأَمَّا الظَّاهِرَانِ: النِّيلُ وَالفُرَاتُ، ثُمَّ فُرِضَتْ عَلَيَّ خَمْسُونَ صَلاَةً، فَأَقْبَلْتُ حَتَّى جِئْتُ مُوسَى، فَقَالَ: مَا صَنَعْتَ؟ قُلْتُ: فُرِضَتْ عَلَيَّ خَمْسُونَ صَلاَةً، قَالَ: أَنَا أَعْلَمُ بِالنَّاسِ مِنْكَ، عَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ المُعَالَجَةِ، وَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ، فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ، فَسَلْهُ، فَرَجَعْتُ، فَسَأَلْتُهُ، فَجَعَلَهَا أَرْبَعِينَ، ثُمَّ مِثْلَهُ، ثُمَّ ثَلاَثِينَ، ثُمَّ مِثْلَهُ فَجَعَلَ عِشْرِينَ، ثُمَّ مِثْلَهُ فَجَعَلَ عَشْرًا، فَأَتَيْتُ مُوسَى، فَقَالَ: مِثْلَهُ، فَجَعَلَهَا خَمْسًا، فَأَتَيْتُ مُوسَى فَقَالَ: مَا صَنَعْتَ؟ قُلْتُ [ص:111]: جَعَلَهَا خَمْسًا، فَقَالَ مِثْلَهُ، قُلْتُ: سَلَّمْتُ بِخَيْرٍ، فَنُودِيَ إِنِّي قَدْ أَمْضَيْتُ فَرِيضَتِي، وَخَفَّفْتُ عَنْ عِبَادِي، وَأَجْزِي الحَسَنَةَ عَشْرًا، وَقَالَ هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الحَسَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي البَيْتِ المَعْمُورِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইসরা ও মি'রাজের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে বায়তুল মাকদিসে গমন করেন। সেখানে নবীগণকে নিয়ে নামায পড়েন। তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁকে নিয়ে এক এক করে সাত আসমান পাড়ি দেন। প্রত্যেক আসমানে পৌঁছলে সে আসমানের দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করে, কে? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি জিবরীল। তারপর জিজ্ঞেস করে, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দেন, মুহাম্মাদ। এভাবে প্রত্যেকবার তিনি পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের নাম বলেছেন। বলেননি যে, আমি। নাম বলতে গিয়েও নিজের সুপরিচিত নাম 'জিবরীল' বলেছেন। অন্য কোনও নাম নয়। তাঁর এছাড়া আরও নাম আছে, যেমন আর-রূহুল আমীন, রূহুল কুদ্‌স। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় দিতে গিয়েও তিনি তাঁর সুপরিচিত নাম 'মুহাম্মাদ' উল্লেখ করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও আরও বহু নাম আছে, যেমন আহমাদ, আল-মাহী, আল-হাশির, আল-আকিব ইত্যাদি। তাঁর কুনয়াত বা উপনাম হল আবুল কাসিম। তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন। তিনি সায়্যিদুল বাশার। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসবের কোনওটিই না বলে উভয় প্রসিদ্ধ ও পরিচিত নামই বলেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল ঘরের ভেতর থেকে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তাকে যে নামে সবাই চেনে সেই নাম বলেই পরিচয় দিতে হবে। 'আমি' বলা কিংবা এমন কোনও নাম বা উপাধি বলাও ঠিক নয়, যা বললে জিজ্ঞাসাকারী তাকে ভালোভাবে চিনতে পারবে না। পরিচয় জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যই তো চিনতে পারা। যা বললে সে চিনতে পারবে না, তা বলার ফায়দা কী? তাতে বরং ঝামেলাই বাড়ে। কথা বেশি বলতে হয়, সময়ও নষ্ট হয়।

অনেক সময় বাক্তি বড় হলে নিজ নাম বলতে আত্মসম্মানে বাধে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বড় মাখলূক আর কে আছে? তাঁদেরই যখন পরিচয় দিতে গিয়ে নিজ নাম বলতে কুণ্ঠাবোধ হয়নি, তখন অন্যদের কেন এতে আপত্তি লাগবে? অকপটে নিজ নাম উচ্চারণ করার দ্বারা কেবল পরিচয়দানই সহজ হয় না; এটা বিনয়েরও পরিচায়ক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।

খ. আকাশ সাতটি। এতেও বিশ্বাস রাখতে হবে।

গ. প্রত্যেক আকাশে উপরে ওঠার দরজা আছে। আছে দরজার প্রহরীও। একেক ফিরিশতাকে আল্লাহ তা'আলা একেক দরজার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।

ঘ. দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ সদা সতর্ক ও সচেতন। দায়িত্বপালনে তাদের দ্বারা কখনও কোনও ত্রুটি হয় না।

ঙ. কারও দরজায় পৌঁছলে নিজের নাম-পরিচয় দেওয়া কর্তব্য।

চ. পরিচয় দিতে গিয়ে সবাই যে নামে চেনে সেটাই বলা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)