কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৩৫. যুহদ-দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তির বর্ণনা

হাদীস নং: ৪৩৩৬
আন্তর্জাতিক নং: ৪৩৩৬
জান্নাতের বর্ণনা
৪৩৩৬। হিশাম ইবন আম্মার (রাহঃ)..... সাঈদ ইবন মুসায়্যিব (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এর সাথে সাক্ষৎ করেন। তখন আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বললেনঃ আমি আল্লাহর দরগাহে মুনাজাত করছি, তিনি যেন আমাকেও তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্রিত করেন। সাঈদ (রাহঃ) বললেনঃ সেখানে কি থাকবে ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে জানিয়েছেন যে, জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তাদের নেক আমল অনুসারে তারা সেখানে মর্যাদা লাভ করবে। এরপর তাদের পৃথিবীর দিন অনুসারে জুমু'আর দিবসের পরিমাণ সময়ের জন্য আল্লাহ তা'আলার (দীদার লাভের) অনুমতি দেওয়া হবে। তখন তারা মহান আল্লাহকে দেখতে পাবে এবং তিনি তাদের জন্য তাঁর আরশ উন্মুক্ত করে দেবেন। এবং তিনি জান্নাতের বাগানগুলির মাঝে একটি বাগনে তাদের সামনে উদ্ভাসিত হবেন। জান্নাতীদের জন্য নূরের মিম্বরসমূহ সুসজ্জিত করে রাখা হবে, আর রাখা হবে হিরে, মোতি, পান্না, সোনা ও রূপার তৈরী আসন সমূহ। জান্নাতীদের কম মর্যাদার লোকেরা বসবে, (অথচ তাদের মানে কোন কম মর্যাদার লোক থাকবে না), কস্তুরী সুবাসিত ও কাফূর মিশ্রিত টিলার উপরে। চেয়ারে উপবিষ্ট জান্নাতীদের মর্যাদার দিক দিয়ে তাদের চেয় অধিক মর্যাদাবান বলে অনুভূত হবে না।
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ । তোমরা কি সূর্য ও পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখার ব্যাপারে সন্দীহান হয়ে একে অপরের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হও? আমরা বললামঃ না। তিনি বললেনঃ এভাবেই তোমরা তোমাদের মহান রবকে দেখার ব্যাপারে সন্দীহান হয়ে পরস্পর জগড়ায় লিপ্ত হবে না। যে মজলিসে এমন কোন লোক অবশিষ্ট থাকবে না, যার সামনে মহান আল্লাহ উদ্ভাসিত না হবেন (অর্থাৎ সবাই তাঁকে দেখতে পাবে)। এমনকি তিনি তোমাদের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেনঃ হে অমুক! তোমার কি মনে আছে, অমুক দিন তুমি এই এই কাজ করেছিলে ? তাকে তার দুনিয়ার জীবনে কৃত কতিপয় গুনাহের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। তখন সে বলবেঃ হে আমার রব! তুমি কি আমার (পাপরাশি) ক্ষমা করে দাওনি? তিনি বলবেনঃ হ্যাঁ, তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমার ক্ষমার ব্যাপক বিস্তৃতির বদৌলতে তুমি এ মর্যাদায় সমাসীন হতে পেরেছ। তারা এ অবস্থায় থাকবে, ইত্যবসরে তাদের উপর থেকে একখন্ড মেঘ তাদের ঢেকে ফেলবে। তা থেকে এমন সুগন্ধিযুক্ত বৃষ্টি বর্ষণ হবে, যে ধরনের সুরভিত সুবাস এর আগে তারা কখনো পায়নি। অতঃপর তিনি বলবেন (হে জান্নাতীরা)। তোমাদের জন্য যে বড় নিয়ামত আমি তৈরী করে রেখেছি সে দিকে এসো এবং তোমরা যা ইচ্ছা কর তা গ্রহণ কর। (রাবী বলেন) তারপরে আমরা (জান্নাতীরা) ফিরিশতা পরিবেষ্টিত একটি বাজারে যাব। সেই বাজারে এমন সব দ্রব্য সম্ভার রয়েছে যার দৃষ্টান্ত চক্ষুসমূহ কখনো দেখেনি, কান সমূহ শুনেনি, সর্বোপরি সে সম্পর্কে অন্তরে কল্পনার ও উদ্রেক হয়নি। (রাবী বলেন), আমরা যা চাইবো তাই আমাদের জন্য সরবরাহ করা হবে। এখানে কান জিনিস বেচা-কিনা হবে না। এই বাজারে সব জান্নাতীরা সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবে। এরপর একজন উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন জান্নাতী এগিয়ে আসবে এবং সেন তার চাইতে অপেক্ষাকৃত কমমর্যাদা সম্পন্ন জান্নাতীর সঙ্গে সাক্ষাত করবে। (অথচ সেখানকার কেউ-ই কম মর্যাদার হবে না)। উঁচুমর্যাদা সম্পন্ন জান্নাতী কমমর্যাদা সম্পন্ন জান্নাতীর পোশাক, বিব্রত করে তুলবে। এ অবস্থা শেষ হত না হতেই তাঁর পরিধানে যে বস্ত্র ছিল তা উন্নতমানের রূপ প্ররিগ্রহ করবে। তা এজন্য যে, সেখানে কারো জন্য চিন্তা ভাবনায় পতিত হওয়া শোভনীয় নয়।

রাবী বলেনঃ এরপর আমরা নিজনিজ বাসস্থানে ফিরে যাবো এবং আমাদের সহধর্মীনিরা আমাদের সাথে মিলিত হবে। তখন তারা বলতে থাকবেঃ মারহাবান ওয়া আহলান্, (অর্থাৎ স্বাগতম, সাদর আমন্ত্রণ)। তুমি তো এমন অবস্থায় ফিরে এসেছো যে, তোমার সৌন্দর্য ও সুগন্ধি পূর্বের চাইতে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন আমরা বলবোঃ আজ আমরা আমাদের মহিমান্বিত মহান রবের সান্নিধ্যে বসে ধন্য হয়ে এসছি। এ সুবাধে যতটা সৌন্দর্য ও সুরভিত হওয়া সমীচীন (ততটা হতে পেরেছি) এবং আমরা যেভাবে ফিরে এসেছি, এভাবে ফিরে আসাই আমাদের জন্য যথাযথ।
بَاب صِفَةِ الْجَنَّةِ
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ حَبِيبِ بْنِ أَبِي الْعِشْرِينَ، حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَمْرٍو الأَوْزَاعِيُّ، حَدَّثَنِي حَسَّانُ بْنُ عَطِيَّةَ، حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، أَنَّهُ لَقِيَ أَبَا هُرَيْرَةَ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَسْأَلُ اللَّهَ أَنْ يَجْمَعَ، بَيْنِي وَبَيْنَكَ فِي سُوقِ الْجَنَّةِ ‏.‏ قَالَ سَعِيدٌ أَوَفِيهَا سُوقٌ قَالَ نَعَمْ أَخْبَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ إِذَا دَخَلُوهَا نَزَلُوا فِيهَا بِفَضْلِ أَعْمَالِهِمْ فَيُؤْذَنُ لَهُمْ فِي مِقْدَارِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ مِنْ أَيَّامِ الدُّنْيَا فَيَزُورُونَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَيُبْرِزُ لَهُمْ عَرْشَهُ وَيَتَبَدَّى لَهُمْ فِي رَوْضَةٍ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ فَتُوضَعُ لَهُمْ مَنَابِرُ مِنْ نُورٍ وَمَنَابِرُ مِنْ لُؤْلُؤٍ وَمَنَابِرُ مِنْ يَاقُوتٍ وَمَنَابِرُ مِنْ زَبَرْجَدٍ وَمَنَابِرُ مِنْ ذَهَبٍ وَمَنَابِرُ مِنْ فِضَّةٍ وَيَجْلِسُ أَدْنَاهُمْ - وَمَا فِيهِمْ دَنِيءٌ - عَلَى كُثْبَانِ الْمِسْكِ وَالْكَافُورِ مَا يُرَوْنَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَرَاسِيِّ بِأَفْضَلَ مِنْهُمْ مَجْلِسًا ‏.‏ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا قَالَ ‏"‏ نَعَمْ هَلْ تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ‏"‏ ‏.‏ قُلْنَا لاَ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ كَذَلِكَ لاَ تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ وَلاَ يَبْقَى فِي ذَلِكَ الْمَجْلِسِ أَحَدٌ إِلاَّ حَاضَرَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مُحَاضَرَةً حَتَّى إِنَّهُ يَقُولُ لِلرَّجُلِ مِنْكُمْ أَلاَ تَذْكُرُ يَا فُلاَنُ يَوْمَ عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا - يُذَكِّرُهُ بَعْضَ غَدَرَاتِهِ فِي الدُّنْيَا - فَيَقُولُ يَا رَبِّ أَفَلَمْ تَغْفِرْ لِي فَيَقُولُ بَلَى فَبِسَعَةِ مَغْفِرَتِي بَلَغْتَ مَنْزِلَتَكَ هَذِهِ ‏.‏ فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ غَشِيَتْهُمْ سَحَابَةٌ مِنْ فَوْقِهِمْ فَأَمْطَرَتْ عَلَيْهِمْ طِيبًا لَمْ يَجِدُوا مِثْلَ رِيحِهِ شَيْئًا قَطُّ ثُمَّ يَقُولُ قُومُوا إِلَى مَا أَعْدَدْتُ لَكُمْ مِنَ الْكَرَامَةِ فَخُذُوا مَا اشْتَهَيْتُمْ ‏.‏ قَالَ فَنَأْتِي سُوقًا قَدْ حُفَّتْ بِهِ الْمَلاَئِكَةُ فِيهِ مَا لَمْ تَنْظُرِ الْعُيُونُ إِلَى مِثْلِهِ وَلَمْ تَسْمَعِ الآذَانُ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى الْقُلُوبِ ‏.‏ قَالَ فَيُحْمَلُ لَنَا مَا اشْتَهَيْنَا لَيْسَ يُبَاعُ فِيهِ شَىْءٌ وَلاَ يُشْتَرَى وَفِي ذَلِكَ السُّوقِ يَلْقَى أَهْلُ الْجَنَّةِ بَعْضُهُمْ بَعْضًا فَيُقْبِلُ الرَّجُلُ ذُو الْمَنْزِلَةِ الْمُرْتَفِعَةِ فَيَلْقَى مَنْ هُوَ دُونَهُ - وَمَا فِيهِمْ دَنِيءٌ - فَيَرُوعُهُ مَا يَرَى عَلَيْهِ مِنَ اللِّبَاسِ فَمَا يَنْقَضِي آخِرُ حَدِيثِهِ حَتَّى يَتَمَثَّلَ لَهُ عَلَيْهِ أَحْسَنُ مِنْهُ وَذَلِكَ أَنَّهُ لاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ أَنْ يَحْزَنَ فِيهَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ ثُمَّ نَنْصَرِفُ إِلَى مَنَازِلِنَا فَيَتَلَقَّانَا أَزْوَاجُنَا فَيَقُلْنَ مَرْحَبًا وَأَهْلاً لَقَدْ جِئْتَ وَإِنَّ بِكَ مِنَ الْجَمَالِ وَالطِّيبِ أَفْضَلَ مِمَّا فَارَقْتَنَا عَلَيْهِ فَنَقُولُ إِنَّا جَالَسْنَا الْيَوْمَ رَبَّنَا الْجَبَّارَ عَزَّ وَجَلَّ وَيَحِقُّنَا أَنْ نَنْقَلِبَ بِمِثْلِ مَا انْقَلَبْنَا ‏"‏ ‏.‏
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান