কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৩৫. যুহদ-দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তির বর্ণনা

হাদীস নং: ৪৩১২
আন্তর্জাতিক নং: ৪৩১২
শাফা’আতের আলোচনা
৪৩১২। নসর ইবন আলী (রাহঃ)..... আনাস ইব্‌ন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলছেনঃ কিয়ামতের দিন ঈমানদার বান্দারা জমায়েত হবে। তখন তাদের অন্তরে ঢেলে দেওয়া হবে (অথবা তাদের অন্তরে এই বিষয়টি বদ্ধমূল করে দিবেন রাবী সাঈদ-এর সন্দেহ) এ সময় তারা বলবেঃ কেউ যদি আমার রবের কাছে আমাদের (নাজাতের) জন্য শাফা'আত করতেন, তাহলে (ময়দানে হাশরের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে) আমাদের শান্তি দিতে পারতেন। এরপর তারা আদম আলাইহিস্ সালামের কাছে উপস্থিত হয়ে বলবেঃ আপনি তো মানব জাতির পিতা আদম (আলাইহিস সালাম)। আল্লাহ আপন কুদরতী হাতে আপনাকে পয়দা করেছেন এব তাঁর ফিরিশতাদের দ্বারা আপনাকে সম্মানজনক সিজ্দা করিয়েছেন। আপনি আমাদের (নাজাতের) জন্য আপনার রবের নিকেট শাফা'আত করুন, যাতে তিনি আমাদের এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে শান্তি দেন। তখন তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের এ বিষয়ের উপযুক্ত নই। (তিনি তাদের কাছে সেই গুনাহের কথা তুলে ধরবেন, যা তিনি করে বসেছিলেন এবং এ কারণে তিনি লজ্জাবোধ করবেন)। নবী-রাসূলগণ নিষ্পাপ এবং আদম (আ)-এর তাওবা কবুল হয়েছিল) বরং তোমরা নূহ (আলাইহিস সালামের) কাছে যাও। কেননা, তিনি ছিলেন যমীনবাসীর প্রতি আল্লাহ প্রেরিত প্রথম রাসূল। তখন তারা তাঁরা কাছে উপস্থিত হবে এবং শাফা'আতের জন্য নিবেদন করবে। তিনি বলবেনঃ তোমাদের এ বিষয়ে আমি উপযুক্ত নই। (তিনি সেই প্রশ্নের কথা স্মরণ করবেন, যা অজ্ঞাতসারে আল্লাহর কাছে নিবেদন করেছিলেন। তিনি এই কারণে লজ্জাবোধ করবেন)। (নূহ আলাইহিস সালাম তার পুত্র কেনান-এর জন্য আল্লাহর নাজাত চাইছিলেন অথচ সে মন্দ স্বভাবের ছিল)। বরং তোমরা আল্লাহর খলীল ইবরাহীম (আলাইহিস্ সালাম)-এর কাছে যাও। তখন তারা তাঁর নিকট হাযির হবে। তিনি বলবেন ঃ আমি তোমাদের এ বিষয়ের জন্য যোগ্য নই। বরং তোমরা মুসা (কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন, যার সাথে আল্লাহ তা'আলা কথা বলছেন এবং তাঁকে তাওরাত দান করেছেন। তখন তাঁর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি আমি এ বিষয়ে তোমাদের যোগ্য নই। (এবং তিনি দুনিয়াতে একটি অন্যায় খুনের জন্য নিজের অপরাধের কথা স্মরণ করবেন। অথচ এই খুন ইচ্ছাকৃত ছিল না তিনি ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার খাতিরে ধমকানোর জন্য একটি ঘুষি মেরেছিলেন। ফলে সে কিবতী মারা গিয়েছিল)। তোমরা বরং ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে যাও। তিনি ছিলেন আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল, আল্লাহর কালিমা এবং তাঁর রুহ্। তখন লোকেরা তাঁর কাছে এসে হাযির হবে। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের এ বিষয়ের জন্য যোগ্য নই বরং তোমরা মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর কাছে যাও। এমন বান্দা আল্লাহ তা'আলা তাঁর আগের ও পরের যাবতীয় ত্রুটি বিচ্যুতি মাফ করে দিয়েছেন। তিনি সে বলেনঃ তখন তারা আমার নিকটে হাযির হবে। আমি তাদের সহ বেরিয়ে পড়বো। (রাবী বলেন, হাসান (রাহঃ) এর সূত্রে তিনি এই শব্দাবলী বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন । এরপর আমি মু'মিনদের দুইটি সারির মাঝখান দিয়ে চলতে থাকবো)।

রাবী কাতাদাহ্ (রাহঃ) বলেনঃ তারপর তিনি আনাস (রাযিঃ) এর বর্ণিত হাদীসের প্রতি ফিরে এসেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তখন আমি আমার রবের নিকট শাফা'আতের অনুমতি চাইব। আর আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি তাঁকে দেখামাত্রই সিজ্দায় পড়ে যাব। তিনি (আল্লাহ) যতক্ষণ চাইবেন আমাকে সিজদায় নত রাখবেন। অতঃপর নির্দেশ দেওয়া হবেঃ হে মুহাম্মাদ মাথা উঠান। আপনি বলুন। শোনা হবে; আপনি চান তা দেওয়া হবে এবং আপনি শাফা'আত করুন, সে শাফা'আত কবুল করা হবে। এরপর আমি মাথা উঠাব)। আর তিনি যেভাবে আমাকে শিখিয়েছেন, সেভাবে তাঁর তারীফ ও প্রশংসা করবো। তারপর আমি শাফা'আত করব। তবে আমার শাফা'আতের জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। আল্লাহ তা'আলা শাফা'আত প্রাপ্তদের জান্নাতে দাখিল করবেন। এরপর আমি দ্বিতীয়বার আমার (রবের কাছে ফিরে আসবো। আমি তাঁকে দেখা মাত্রই সিজদায় পতিত হবো। আল্লাহ তা'আলা যতক্ষণ চাইবেন, ততক্ষণ আমাকে সিজ্দায় নত রাখবেন। অতঃপর আমাকে বলা হবেঃ হে মুহাম্মাদ! আপনি মাথা উঠান। আপনি বলুন, শোনা হবে, আপনি চান, আপনাকে তা দেওয়া হবে এবং আপনি শাফা'আত করুন, আপনার শাফা'আত কবুল করা হবে। এরপর আমি আমার মাথা উঠাব। অতঃপর তাঁর শিক্ষা মাফিক আমি তাঁর তা'রীফ ও প্রশংসা করবো। তারপর আমি শাফা'আত করব। তবে আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অতঃপর তিনি শাফা'আত প্রাপ্তদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এরপর তৃতীয় বারের মত আমি (রবের কাছে) ফিরে যাব। আর যখন আমি আমার রবকে দেখব, তখনই সিজ্দায় পতিত হবো। আর আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন, আমাকে সিজদায় নত রাখবেন। তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠান। আপনি বলুন, শোনা হবে; আপনি চান, তা দান করা হবে। আপনি শাফা'আত করুন, আপনার শাফা'আত কবুল করা হবে। এরপর আমি মাথা উঠাব। এবং তাঁর তারীফ ও প্রশংসা করবো, যেবাবে তিনি আমাকে শিখিয়েছেন। তারপর আমি শাফা'আত করব। কিন্তু এবারেও একটা নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারন করে দেওয়া হবে। তখন আল্লাহ্ তা'আলা তাদের (সুপারিশকৃতদের) জান্নাতে দাখিল করবেন। অতঃপর আমি চতুর্থ পর্যায়ে (রবের) কাছে ফিরে যাব এবং বলবঃ হে আমার রব। এখন তো আর কেউ অবশিষ্ট নেই। তবে কুরআন যাদের আটক রেখেছে। (অর্থাৎ কুরআনের দৃষ্টিতে যারা জাহান্নামী তারাই অবশিষ্ট রয়েছে।

রাবী বলেন, কাতাদা (রাহঃ) এই হাদীস বর্ণনাকালে বলেছেনঃ আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ পরিশেষে সেই ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে, বলেছেঃ 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু' (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই) এবং যার অন্তরে একটি গমের দানা পরিমাণ নেক আমল ছিল। আর সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে বলেছেঃ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু", এবং যার কালবে এক রতি পরিমাণ নেক আমল (ঈমান) ছিল। সেই ব্যক্তিও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে বলেছেঃ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু" এবং যার অন্তরে অণু পরিমাণ নেক আমল (ঈমান) ছিল।
بَاب ذِكْرِ الشَّفَاعَةِ
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ الْحَارِثِ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏"‏ يَجْتَمِعُ الْمُؤْمِنُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُلْهَمُونَ - أَوْ يَهُمُّونَ شَكَّ سَعِيدٌ - فَيَقُولُونَ لَوْ تَشَفَّعْنَا إِلَى رَبِّنَا فَأَرَاحَنَا مِنْ مَكَانِنَا فَيَأْتُونَ آدَمَ فَيَقُولُونَ أَنْتَ آدَمُ أَبُو النَّاسِ خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ وَأَسْجَدَ لَكَ مَلاَئِكَتَهُ فَاشْفَعْ لَنَا عِنْدَ رَبِّكَ يُرِحْنَا مِنْ مَكَانِنَا هَذَا ‏.‏ فَيَقُولُ لَسْتُ هُنَاكُمْ - وَيَذْكُرُ وَيَشْكُو إِلَيْهِمْ ذَنْبَهُ الَّذِي أَصَابَ فَيَسْتَحْيِي مِنْ ذَلِكَ - وَلَكِنِ ائْتُوا نُوحًا فَإِنَّهُ أَوَّلُ رَسُولٍ بَعَثَهُ اللَّهُ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ فَيَأْتُونَهُ فَيَقُولُ لَسْتُ هُنَاكُمْ - وَيَذْكُرُ سُؤَالَهُ رَبَّهُ مَا لَيْسَ لَهُ بِهِ عِلْمٌ وَيَسْتَحْيِي مِنْ ذَلِكَ - وَلَكِنِ ائْتُوا خَلِيلَ الرَّحْمَنِ إِبْرَاهِيمَ فَيَأْتُونَهُ فَيَقُولُ لَسْتُ هُنَاكُمْ وَلَكِنِ ائْتُوا مُوسَى عَبْدًا كَلَّمَهُ اللَّهُ وَأَعْطَاهُ التَّوْرَاةَ ‏.‏ فَيَأْتُونَهُ فَيَقُولُ لَسْتُ هُنَاكُمْ - وَيَذْكُرُ قَتْلَهُ النَّفْسَ بِغَيْرِ النَّفْسِ - وَلَكِنِ ائْتُوا عِيسَى عَبْدَ اللَّهِ وَرَسُولَهُ وَكَلِمَةَ اللَّهِ وَرُوحَهُ ‏.‏ فَيَأْتُونَهُ فَيَقُولُ لَسْتُ هُنَاكُمْ وَلَكِنِ ائْتُوا مُحَمَّدًا عَبْدًا غَفَرَ اللَّهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ ‏.‏ قَالَ فَيَأْتُونِي فَأَنْطَلِقُ - قَالَ فَذَكَرَ هَذَا الْحَرْفَ عَنِ الْحَسَنِ ‏.‏ قَالَ فَأَمْشِي بَيْنَ السِّمَاطَيْنِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ ‏.‏ قَالَ ثُمَّ عَادَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ - قَالَ ‏"‏ فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فَيُؤْذَنُ لِي فَإِذَا رَأَيْتُهُ وَقَعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي ثُمَّ يُقَالُ ارْفَعْ يَا مُحَمَّدُ وَقُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَحْمَدُهُ بِتَحْمِيدٍ يُعَلِّمُنِيهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُودُ الثَّانِيَةَ فَإِذَا رَأَيْتُهُ وَقَعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي ثُمَّ يُقَالُ لِي ارْفَعْ مُحَمَّدُ قُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأَحْمَدُهُ بِتَحْمِيدٍ يُعَلِّمُنِيهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُودُ الثَّالِثَةَ فَإِذَا رَأَيْتُ رَبِيِّ وَقَعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي ثُمَّ يُقَالُ ارْفَعْ مُحَمَّدُ قُلْ تُسْمَعْ وَسَلْ تُعْطَهْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأَحْمَدُهُ بِتَحْمِيدٍ يُعَلِّمُنِيهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُودُ الرَّابِعَةَ فَأَقُولُ يَا رَبِّ مَا بَقِيَ إِلاَّ مَنْ حَبَسَهُ الْقُرْآنُ ‏"‏ ‏.‏
قَالَ يَقُولُ قَتَادَةُ عَلَى أَثَرِ هَذَا الْحَدِيثِ وَحَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَكَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ ‏"‏ ‏.‏
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে ইবনে মাজা - হাদীস নং ৪৩১২ | মুসলিম বাংলা