কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৩৫. যুহদ-দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তির বর্ণনা

হাদীস নং: ৪১৮২
আন্তর্জাতিক নং: ৪১৮২
লজ্জাশীলতা
৪১৮২। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সাঈদ (রাহঃ)....ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই প্রত্যেক দ্বীনেরই একটি চরিত্র (বৈশিষ্ট্য) রয়েছে। আর ইসলামের চরিত্র হচ্ছে লজ্জাশীলতা।
بَاب الْحَيَاءِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْوَرَّاقُ، حَدَّثَنَا صَالِحُ بْنُ حَسَّانَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ الْقُرَظِيِّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ إِنَّ لِكُلِّ دِينٍ خُلُقًا وَإِنَّ خُلُقَ الإِسْلاَمِ الْحَيَاءُ ‏"‏ ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে ঈমানের মধ্যবর্তী শাখাসমূহের মধ্য থেকে কেবল লজ্জার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। লজ্জার এমন কী বিশেষত্ব, যে কারণে অন্যসব শাখা থেকে বাছাই করে কেবল এর কথাই উল্লেখ করা হল? এর উত্তর মেলে অন্য এক হাদীছে। তাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- إن ما أدرك الناس من كلام النبوة الأولى: «إذا لم تستحي فاصنع ما شئت» “মানুষ পূর্ববর্তী নবুওয়াতের যে বাণী লাভ করেছে (অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবীদের যে শিক্ষা এ পর্যন্ত পৌঁছেছে) তা হচ্ছে- তুমি যদি লজ্জাই না কর তবে যা চাও করতে পার।”
অর্থাৎ যে ব্যক্তির লজ্জা নেই সে হেন কাজ নেই যা করতে পারে না। যে-কোনও অন্যায়-অপরাধ লজ্জাহীন মানুষ অবলীলায় করতে পারে। কিন্তু যে ব্যক্তির লজ্জা আছে, সে সহজে অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত হতে পারে না। লজ্জা তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যখনই কোনও মন্দ কাজ করার ইচ্ছা জাগে, তখন লোকে দেখলে কী বলবে এই অনুভূতি তাকে সে কাজ করতে দেয় না। সে মনের ইচ্ছা মনেই দমন করে ফেলে। মানুষকে লজ্জা করার কারণেই যখন মানুষ এভাবে পাপ কাজ থেকে দূরে থাকে, তখন যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলাকে লজ্জা করবে সে তো কোনওক্রমেই পাপ কাজের ধারেকাছে যাবে না। মূলত আল্লাহ তা'আলাকে লজ্জা করাই প্রকৃত লজ্জা। তাই “উলামায়ে কিরাম লজ্জার ব্যাখ্যা দেনঃ- الحياء أن لا يرى مولاك فيما نهاك عنه “লজ্জা হল এই যে, তোমার মাওলা যেন তোমাকে এমন কাজে না দেখেন, যা করতে তিনি তোমাকে নিষেধ করেছেন'।এ হাদীছে সে লজ্জার কথাই বলা হয়েছে।
লজ্জা একটি অতি মূল্যবান সৎগুণ। এটা মূলত একটি স্বভাবগত বিষয়। এ স্বভাবগুণের বাস্তব প্রয়োগ শরী'আতে কাম্য। মানুষ চাইলেই এর বাস্তব প্রয়োগ করতে পারে। এর ব্যবহার দ্বারা মানুষ তাকওয়া-পরহেযগারীর উচ্চ শিখরে পৌছতে পারে।নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও অত্যন্ত লাজুক ছিলেন। এক হাদীছে বলা হয়েছেঃ- كان أشد حياء من العذراء في خدرها “তিনি পর্দানশীন কুমারী নারী অপেক্ষাও বেশি লাজুক ছিলেন।”
যার অন্তরে এ গুণ থাকবে সে শরী'আতের সমস্ত আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে মেনে চলবে আর এভাবে তার ঈমানের সবগুলো শাখা সংরক্ষিত থাকবে। এ কারণেই ঈমানের বাকি সব শাখাসমূহের মধ্য থেকে বিশেষভাবে লজ্জাশীলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, শরীয়াতের আদেশ নিষেধ পালনে যে লজ্জা বাধা হয় তা আদৌ লজ্জা নয়; তা ঈমানের দুর্বলতা। প্রকৃত লজ্জা তো তা-ই, যা লোকে কী বলবে-না বলবে তা উপেক্ষা করে মানুষকে শরী'আতের হুকুম মানতে উৎসাহিত করে। তাই তো হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছেঃ- قال رسول اللہ ﷺ ذات يوم: «استحيوا من الله حق الحياء»، قال: قلنا يا رسول الله! إنا نستحي والحمد لله، قال: «ليس ذاك، ولكن الاستحياء من الله حق الحياء أن تحفظ الرأس وما وعى، والبطن وما حوى، ولتذكر الموت والبلى، ومن أراد الأخرة ترك زينة الدنيا، فمن فعل ذلك فقد استحيى من الله حق الحياء».“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন বললেন, তোমরা আল্লাহকে লজ্জা কর যথার্থ লজ্জার সাথে। হযরত ইব্ন মাসউদ রাযি. বলেন, আমরা বললাম,ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শোকর যে, আমরা লজ্জা করি। তিনি বললেন, ওই লজ্জা নয়; বরং আল্লাহ তা'আলাকে যথার্থ লজ্জা করা হল এই যে, তুমি হেফাজত করবে নিজ মাথা এবং মাথা যা চিন্তাভাবনা করে, নিজ উদর এবং উদর যা ধারণ করে। আর স্মরণ করবে মৃত্যু এবং মৃত্যুর পর পচে-গলে যাওয়াকে। যে ব্যক্তি আখিরাত কামনা করে সে দুনিয়ার সাজসজ্জা পরিত্যাগ করে। যে ব্যক্তি এসব করল, সে-ই আল্লাহকে যথার্থভাবে লজ্জা করল। "
বস্তুত লজ্জা মু'মিনের শোভা। এটা কেবল নারীর নয়; নর-নারী সকলের মধ্যেই থাকা উচিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীছে ইরশাদ করেনঃ- ما كان الحياء في شيء إلا زانه، ولا كان الفحش في شيء إلا شانه “যে-কোনও বস্তুতে লজ্জা থাকে, তা তাকে শোভা দান করে। আর যে বস্তুতেই নির্লজ্জতা থাকে, তা তাকে অশোভন করে তোলে।
সুনানে ইবনে মাজা - হাদীস নং ৪১৮২ | মুসলিম বাংলা