কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৩৫. যুহদ-দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তির বর্ণনা

হাদীস নং: ৪১৪৩
আন্তর্জাতিক নং: ৪১৪৩
কানা'আত (অল্পে তুষ্টি)
৪১৪৩। আহমাদ ইব্‌ন সিনান (রাহঃ)...... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে মারফু সনদে বর্ণিত। তিনি (ﷺ) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাহ্যিক আকৃতি ও ঐশ্বর্যের প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং তিনি তোমাদের আমল ও কাল্‌বের দিকে দেখে থাকেন।
بَاب الْقَنَاعَةِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ سِنَانٍ، حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ بُرْقَانَ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ الأَصَمِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رَفَعَهُ إِلَى النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَى أَعْمَالِكُمْ وَقُلُوبِكُمْ ‏"‏ ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছখানি বিশেষভাবে ইখলাসের গুরুত্ব প্রকাশ করে। এতে জানানো হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা মানুষের চেহারা-সুরত দেখেন না। অর্থাৎ কে কেমন সুদর্শন, কেমন স্বাস্থ্যবান, বংশ-মর্যাদা কেমন, দুর্বল না শক্তিমান, এসব বিষয় তার কাছে বিবেচ্য নয়। তিনি দেখেন মানুষের অন্তর। অর্থাৎ কে কোন্ নিয়তে আমল করছে, কার জন্য করছে আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার জন্যে, না মানুষকে খুশি করার জন্যে, আখিরাতের ছওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে, না দুনিয়ার টাকা-পয়সা ও সুনাম-সুখ্যাতি হাসিলের লক্ষ্যে সেটাই আল্লাহ লক্ষ করে থাকেন এবং সে হিসেবেই তিনি আমলের বদলা দেন।
সুতরাং প্রত্যেকের উচিত নিজ ইখলাস ও আমলের যত্ন নেওয়া। নিজের চেহারা, সৌন্দর্য, পোশাক-আশাক, শান-শওকত ও ধন-সম্পদের জন্য গর্বিত হওয়া উচিত নয়। আল্লাহর কাছে এসবের কোনও মূল্য নেই। আখিরাতে এসব দিয়ে কেউ পার পাবে না। বরং এসবের কারণে গর্ব করলে সে গর্ব ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সুন্দর চেহারার আবূ লাহাবকে জাহান্নামী হতে হয়েছে। অঢেল ধন-সম্পদের মালিক কারূনও জাহান্নামে গেছে। প্রচণ্ড ক্ষমতাধর ফির'আউন ও আবূ জাহলকে তাদের ক্ষমতা বাঁচাতে পারেনি। আল্লাহর আযাব ও গযব থেকে কোনও জিনিস যদি বাঁচাতে পারে, তা কেবলই আল্লাহর ভয় এবং তাকওয়া ও ইখলাস। ইখলাস ও সহীহ নিয়তের সাথে আমলে যত্নবান থাকলে একজন কালো গোলামও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং দোজাহানে হতে পারে অশেষ মর্যাদাবান। হাবশী বেলাল একজন কালো গোলাম হওয়া সত্ত্বেও ইখলাস ও সৎকর্মের বদৌলতে কতই না উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে গিয়েছেন। কৃশকায় ইবন মাস'উদ হাজারও সুদর্শন, স্বাস্থ্যবান পুরুষকে পেছনে ফেলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তোষভাজন হয়ে গিয়েছিলেন। বিখ্যাত তাবি'ঈ 'আতা ইব্‌ন আবূ রাবাহ নিতান্তই কদাকার চেহারার মানুষ ছিলেন, কিন্তু ইখলাস ও সাদাচারের কারণে কেবল সেকালেরই নয়, সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ মনীষীর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। এ কেবল ইখলাসেরই কারিশমা। যার অন্তরে তা থাকে, সে এই মাটির পৃথিবীর সাধারণ স্তরের একজন মানুষ হওয়া সত্ত্বেও মহান আরশের মালিকের কাছে অতি উঁচু মর্যাদার অধিকারী হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যার অন্তরে এই সম্পদ থাকে না, জাগতিক ঐশ্বর্যে ও চেহারা-সুরতে সে যতই অসাধারণ হোক না কেন, মহান আল্লাহর কাছে সে অতি সাধারণ এক জীব অপেক্ষাও নিকৃষ্ট হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত নিজ নিয়ত শুদ্ধ করে নেওয়া ও অন্তরে ইখলাস আনয়নের জন্য সচেষ্ট থাকা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও সুদর্শন ব্যক্তির নিজ চেহারার সৌন্দর্যে গর্বিত হওয়া উচিত নয়। এমনিভাবে টাকা-পয়সা ও বংশ মর্যাদার কারণেও গর্ব করা সমীচীন নয়।

খ. অন্যের চেহারা-সুরত আকর্ষণীয় না হলে কিংবা তার টাকা-পয়সা ও বংশীয় আভিজাত্য না থাকলে সেজন্যে তাকে ছোট মনে করার কোনও সুযোগ নেই।

গ. নিজ চেহারা আকর্ষণীয় না হলে, টাকা-পয়সা না থাকলে কিংবা উঁচু বংশের না হলে সেজন্যে হীনম্মন্যতায় ভোগা ভুল, যেহেতু আল্লাহ তা'আলা এসবের দিকে তাকান না ।

ঘ. আল্লাহ তা'আলা যেহেতু ইখলাস ও আমল দেখেন, তাই সর্বদা নিজের আমল ও ইখলাসের দিকেই নজর রাখা বাঞ্ছনীয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন