কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৩৫. যুহদ-দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তির বর্ণনা

হাদীস নং: ৪১২৭
আন্তর্জাতিক নং: ৪১২৭
দরিদ্রদের সাথে উঠা-বসা
৪১২৭। আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ ইব্‌ন ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ কাত্তান (রাহঃ)....... খাববার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মহান আল্লাহর বাণী এ আয়াত সম্পর্কে বলেনঃ

ولا تطرد الذين يدعون ربهم بالغداة والعشي يريدون وجـهـه ماعليك من حسابهم من شيئ ومـا مـن حـسـابـك علـيـهـم مـن شـيـي فـتـطـردهـم فـتكون من الظالمين

“যারা তাদের প্রতিপালককে প্রাতে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ডাকে, তাদের তুমি তাড়িয়ে দিয়ো না। তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্বও তাদের উপর ন্যস্ত নয় যে, তুমি তাদের বিতাড়িত করবে। যদি তাড়িয়ে দাও, তাহলে তুমি যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হবে।" (৬ঃ৫২)

রাবী বলেন, আক্রা ইবন হাবিস তামিমী ও উয়ায়নাহ ইবন হিসন (এরা উভয়ে গোত্র প্রধান ও বিত্তবান ছিলেন) তারা রাসূলূল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আসলেন। তারা রাসূলূল্লাহ (ﷺ) কে সুহাইব (রাযিঃ), বিলাল (রাযিঃ), আম্মার (রাযিঃ) খাববার (রাযিঃ) প্রমুখ দরিদ্র অসহায় মু'মিনদের সাথে বসা পেলেন। তারা নবী (ﷺ) এর চার পাশে এঁদের বসা দেখেতে পেয়ে, তাদের হেয় জ্ঞান করলেন। তাঁরা রাসূলূল্লাহ (ﷺ) -এর নিকটকে এলেন এবং নির্জনে তাঁর সাথে আলাপ আলোচনা শুরু করলেন। তারা বললেন যে, আমরা চাই, আপনি আমাদের

জন্য স্বতন্ত্রভাবে বসার ব্যবস্থা করবেন, যাতে আরবরা আমাদের মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। কেননা, আপনার কাছে আরবের প্রতিনিধিদল আসে। সুতরাং এই দাসদের সাথে আরবরা আমাদেরকে বসা দেখলে এতে আমরা লজ্জাবোধ করি। তাই আমরা যখন আপনার কাছে আসি তখন আপনি এদেরকে আপনার নিকট থেকে উঠিয়ে দিবেন। আমরা আপনার কাছ থেকে বিদায় দিলে, আপনি ইচ্ছা করলে, তাদের সাথে বসতে পারেন। তিনি বললেনঃ ঠিক আছে। (নেতা গোছের লোকগুলোর চিত্তাকর্ষণের জন্য ইসলামের গৌরব বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এতে সম্মতি দান করলেন) তারা বললেনঃ আপনি আমাদের জন্য এই মর্মে একটি চুক্তি লিখে দিন। রাবী বলেনঃ তখন তিনি কাগজ আনালেন এবং আলী (রাযিঃ) কে লেখার জন্য ডাকলেন। আর আমরা এক পাশে বসা ছিলাম। তখন জিবরাঈল (আ) নাযিল হলেন এবং বললেনঃ

ولا تطرد الذين يدعون ربهم بالغداة والعشي يريدون وجـهـه مـاعليك من حـسـابـهـم مـن شـيئ ومـا مـن حـسـابـك علـيـهـم مـن شــي فـتـطـردهـم فتكون من الظالمين

“যারা তাদের রবকে সকাল ও সন্ধ্যায় ডাকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য, তাদের আপনি তাড়িয়ে দিবেন না। তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব আপনার নয় এবং আপনার কর্মের জাবাবদিহির দায়িত্বও তাদের নয় যে, আপনি তাদের বিতাড়িত করবেন। যদি আপনি তাদের সরিয়ে দিন, তাহলে যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হবেন"। (সূরা আনআম, ৬ঃ ৫২)

অতঃপর আল্লাহ তা'আলা আকরা ইবন হাবিস ও উয়ায়নাহ্ ইবন হিসন এর কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেনঃ

وكذالك فتنا بعضهم ببعض ليقولوا أهؤلاء من الله عليهم من بيننا أليس الله بأعلم بالشاكرين.

“এইভাবে আমি তাদের একদলকে অন্যদল দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যেন তারা বলেঃ আমাদিগের মধ্যে কি এদের প্রতিই আল্লাহ অনুগ্রহ করলেন? আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত নন"? (সূরা আনআম, ৬ঃ ৫৩)

এর পর আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ

وإذا جائك الذين يؤمنون بايـأتـنـا فـقـل سـلام عليكم كتب ربكم على نفسه الرحمة

"যারা আমার আয়াত সমূহের প্রতি ঈমান এনেছে, তারা যখন আপনার নিকটে আসে, তখন আপনি বলবে 'তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক 'তোমাদের রব (তোমাদের জন্য) রহমত বর্ষণ করা তার উপর স্থির করেছেন"। (সূরা আনআম, ৬৪৫৪)

রাবী বলেন, তখন আমরা তাঁর নিকটবর্তী হলাম, এমনকি আমাদের জানু তাঁর জানুর সাথে লাগিয়ে বসলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের সাথে বসতেন এবং যখন উঠার ইচ্ছা করতেন, তখন আমাদের ছেড়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। তখন আল্লাহ তা'আলা এই আয়াত নাযিল করলেন واصبر نفسك مع الذين يدعون ربهم بالغداة والعشي يريدون وجهه ولا تعد عيناك عنهم

“আপনি নিজকে ধৈর্য সহকারে রাখবেন তাদেরই সংঙ্গে, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে ডাকে তাঁদের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং আপনি পার্থিব জীবনের শোভা কামান করে তাদের থেকে আপনার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবেন না।"- (কাহফ, ১৮ঃ ২৮)

আর আপনি অভিজাতদের সাথে বসবে না। “আপনি তার অনুগত্য করো না, যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছিল (অর্থাৎ উয়ায়নাহ ও আকরা ইবনে হাবিস-এর কথায় কান দিবেন না), যে তার খেয়াল-খুলীর অনুসরণ করেও যার কাজ কর্ম সীমা অতিক্রম করে। (রাবী বলেনঃ সে ধ্বংস হয়েছে)। তিনি বলেনঃ উরায়নাহ ও আকরা ইবন হারিস-এর কর্মকান্ড বরবাদ হয়েছে। অতঃপর তিনি তাদের সামনে দুই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত পার্থিক জীবনের উপমা পেশ করলেন (সূরা কাফ্ফের ৩২ নং ও ৪৫ নং আয়াতে এর উল্লেখ রয়েছে)। খাব্বাব (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর এমন অবস্থা হয়ে গেল যে, আমরা নবী (ﷺ) এর সাথে উঠা-বাস করতাম। যখন তাঁর উঠার সময় হতো, তখন আমরা উঠে দাঁড়াতাম এবং তাঁকে উঠার জন্য সুযোগ করে দিতাম।
بَاب مُجَالَسَةِ الْفُقَرَاءِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ الْقَطَّانِ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مُحَمَّدٍ الْعَنْقَزِيُّ، حَدَّثَنَا أَسْبَاطُ بْنُ نَصْرٍ، عَنِ السُّدِّيِّ، عَنْ أَبِي سَعْدٍ الأَزْدِيِّ، وَكَانَ، قَارِئَ الأَزْدِ عَنْ أَبِي الْكَنُودِ، عَنْ خَبَّابٍ، فِي قَوْلِهِ تَعَالَى ‏(وَلاَ تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ)‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏(فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ)‏ قَالَ جَاءَ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ التَّمِيمِيُّ وَعُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنٍ الْفَزَارِيُّ فَوَجَدُوا رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ مَعَ صُهَيْبٍ وَبِلاَلٍ وَعَمَّارٍ وَخَبَّابٍ قَاعِدًا فِي نَاسٍ مِنَ الضُّعَفَاءِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَلَمَّا رَأَوْهُمْ حَوْلَ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ حَقَرُوهُمْ فَأَتَوْهُ فَخَلَوْا بِهِ وَقَالُوا إِنَّا نُرِيدُ أَنْ تَجْعَلَ لَنَا مِنْكَ مَجْلِسًا تَعْرِفُ لَنَا بِهِ الْعَرَبُ فَضْلَنَا فَإِنَّ وُفُودَ الْعَرَبِ تَأْتِيكَ فَنَسْتَحْيِي أَنْ تَرَانَا الْعَرَبُ مَعَ هَذِهِ الأَعْبُدِ فَإِذَا نَحْنُ جِئْنَاكَ فَأَقِمْهُمْ عَنْكَ فَإِذَا نَحْنُ فَرَغْنَا فَاقْعُدْ مَعَهُمْ إِنْ شِئْتَ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ نَعَمْ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا فَاكْتُبْ لَنَا عَلَيْكَ كِتَابًا ‏.‏ قَالَ فَدَعَا بِصَحِيفَةٍ وَدَعَا عَلِيًّا لِيَكْتُبَ وَنَحْنُ قُعُودٌ فِي نَاحِيَةٍ فَنَزَلَ جِبْرَائِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَقَالَ ‏(وَلاَ تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِنْ شَىْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِنْ شَىْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ)‏ ثُمَّ ذَكَرَ الأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ وَعُيَيْنَةَ بْنَ حِصْنٍ فَقَالَ ‏(وَكَذَلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لِيَقُولُوا أَهَؤُلاَءِ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنْ بَيْنِنَا أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ)‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏(وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلاَمٌ عَلَيْكُمْ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ )‏ ‏.‏ قَالَ فَدَنَوْنَا مِنْهُ حَتَّى وَضَعْنَا رُكَبَنَا عَلَى رُكْبَتِهِ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَجْلِسُ مَعَنَا فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقُومُ قَامَ وَتَرَكَنَا فَأَنْزَلَ اللَّهُ ‏(وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلاَ تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ)‏ وَلاَ تُجَالِسِ الأَشْرَافَ ‏(تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلاَ تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا)‏ - يَعْنِي عُيَيْنَةَ وَالأَقْرَعَ - ‏(وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا )‏ - قَالَ هَلاَكًا - قَالَ أَمْرُ عُيَيْنَةَ وَالأَقْرَعِ ‏.‏ ثُمَّ ضَرَبَ لَهُمْ مَثَلَ الرَّجُلَيْنِ وَمَثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ‏.‏ قَالَ خَبَّابٌ فَكُنَّا نَقْعُدُ مَعَ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَإِذَا بَلَغْنَا السَّاعَةَ الَّتِي يَقُومُ فِيهَا قُمْنَا وَتَرَكْنَاهُ حَتَّى يَقُومَ ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি ইসলামের একদম সূচনাকালীন, যখন নগণ্য সংখ্যক লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাদেরও অধিকাংশ অতি সাধারণ স্তরের লোক। এটা সব যুগেরই এক সাধারণ অবস্থা যে, নবী-রাসূলগণের ডাকে বেশিরভাগ সাধারণ স্তরের লোকই সাড়া দিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ও তাই হয়েছে।
সমাজের অভিজাত ও মোড়ল শ্রেণীর লোক অহমিকাবশত সবসময়ই সত্যের ডাকে সাড়া দিতে হয় অস্বীকার করেছে, নয়তো সবশেষে পরিস্থিতির কারণে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েছে। মক্কার যারা অভিজাত ও মোড়ল ছিল, যেমন আবূ জাহল, উমাইয়া, উকবা প্রমুখ, তারা বরাবরই ইসলামের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। গরীব ও সাধারণ স্তরের লোকদের ইসলামগ্রহণ এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্যে তাদের অবস্থানকে মোড়লগণ নিজেদের ইসলাম অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাত। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায় এ প্রস্তাবটি করেছিল উমাইয়া ইবন খাল্‌ফ।
আসলে তারা কখনওই শুনবার ছিল না। তাদের এ প্রস্তাব ছিল ভাওতামাত্র। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ইসলাম গ্রহণের বড় আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তাই তাদের প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি চিন্তা-ভাবনা করছিলেন।

হাদীছে আছে—

فَوَقَعَ فِي نَفْسِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَقَعَ فَحَدَّثَ نَفْسَهُ

(তাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তরে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় যা উদয় হওয়ার তা উদয় হল। তিনি আপন মনে (তা নিয়ে) ভাবলেন'। অর্থাৎ যে গরীব মুমিনদেরকে তাড়ানোর প্রস্তাব তারা দিয়েছিল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানা ছিল যে, তারা সবাই পরিপক্ক মুমিন। ঈমান তাদের অন্তরের পরতে পরতে মিশে গিয়েছে। শত নির্যাতনেও তারা ঈমান ছাড়েনি। ভবিষ্যতেও কোনও পরিস্থিতিতেই তারা তা ছাড়বার নয়। ঈমানের আলোয় তাদের গোটা অস্তিত্ব উদ্ভাসিত। এখন আর তাদের কোনওরকম মনোরঞ্জনেরও প্রয়োজন নেই। কাজেই ঈমানের আশায় ধনী মোড়লদের মনোরঞ্জনার্থে যদি সাময়িক কালের জন্য এ সাহাবীদেরকে দূরে থাকতে বলা হয়, তাতে তাদের কোনও ক্ষতিও নেই এবং তাতে তাদের মর্যাদাও কোনও অংশে কমবে না। পক্ষান্তরে এর দ্বারা যদি মক্কার নেতৃবর্গের মন জয় করা যায় আর খুশি হয়ে তারা ঈমান আনে, তবে তাদের নাজাতের ব্যবস্থা হয়ে যাবে এবং তা ইসলামের প্রচার-প্রসারেও সহায়ক হবে।
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তারা বলেছিল, আপনি অন্ততপক্ষে দিন ভাগ করে দিন। একদিন তাদের জন্য রাখুন, একদিন আমাদের জন্য। আর এটা লিখিত আকারে চূড়ান্ত করুন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃহত্তর স্বার্থে এটা করবেন বলে ভাবছিলেন। এমনকি এটা লেখার জন্য হযরত আলী রাযি.-কে ডেকেওছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করেন-

وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ

(যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সকাল ও সন্ধ্যায় তাকে ডাকে, তাদেরকে তুমি তাড়িয়ে দিও না)। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর ভাবনাটি নাকচ করে দেন। অর্থাৎ তিনি যে তাদেরকে সাময়িক কালের জন্য দূরে থাকতে বলবেন বলে মনস্থির করেছিলেন তা নিষেধ করে দেন। উল্টো হুকুম দেন যেন তিনি ধৈর্যসহকারে তাদেরকে সঙ্গদান করেন এবং তাদেরকেও তাঁর সঙ্গগ্রহণের সুযোগ দেন। ইরশাদ হয়েছে-

وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا

‘ধৈর্য-স্থৈর্যের সাথে নিজেকে সেইসকল লোকের সংসর্গে রাখ, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় নিজেদের প্রতিপালককে এ কারণে ডাকে যে, তারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায় তোমার দৃষ্টি যেন তাদের থেকে সরে না যায়।২৭৮
সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা মনস্থ করেছিলেন তাতে নিবৃত্ত হন। অতঃপর তিনি যখনই এ গরীব সাহাবীদেরকে দেখতেন, বলে উঠতেন, মুবারকবাদ ওইসব লোকদের, যাদের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা আমাকে তিরস্কার করেছেন। এরপর থেকে তিনি তাদেরকে সঙ্গদান আরও বৃদ্ধি করে দেন। তাদের সঙ্গে যখন বসতেন, তখন যতক্ষণ না তারা মজলিস থেকে উঠা শুরু করত, ততক্ষণ তিনি উঠতেন না, তাদের সঙ্গেই বসে থাকতেন।

হাদীছটির শিক্ষা

ক. ধনীদের খাতিরে কখনও গরীবদের প্রতি মনোযোগ কমানো উচিত নয়। অবহেলার তো প্রশ্নই আসে না।

খ. ধন-সম্পদ ও আভিজাত্যের অহমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ অহমিকা ঈমান ও সত্যগ্রহণের পক্ষে অনেক বড় বাধা।

গ. ইসলামের শুরুকালটা ছিল গরীব ও সাধারণ স্তরের লোকদের। কাজেই নিজের আশপাশে বেশিরভাগ এ শ্রেণীর লোক দেখলে কোনও হকপন্থীর দমে যাওয়া ঠিক নয়; বরং এটাকে তার হকপন্থী হওয়ার এক নিদর্শন গণ্য করা উচিত।

২৭৮. সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ২৮
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
rabi
বর্ণনাকারী:
সুনানে ইবনে মাজা - হাদীস নং ৪১২৭ | মুসলিম বাংলা