কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ
৩৫. যুহদ-দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তির বর্ণনা
হাদীস নং: ৪১১০
আন্তর্জাতিক নং: ৪১১০
দুনিয়ার উপমা
৪১১০। হিশাম ইবন আম্মার, ইবরাহীম ইবন মুনযির হিযামী এবং মুহাম্মাদ ইবন সাববাহ (রাহঃ).... সাহল ইব্ন সা'দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে যুল-হোলায়ফা নামক স্থানে ছিলাম। হঠাৎ একটি মৃত বকরী দেখতে পেলাম, যার পা উপরে দিকে ছিল। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের কি ধারণা এই বকরীটা তার মালিকের কাছে তাচ্ছিল্যের বস্তু কি ? সেই মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই দুনিয়া আল্লাহর কাছে, এই বকরীর মালিকের নিকট মৃত বকরীটা যত তাচ্ছিল্য, এর চাইতে অধিক তাচ্ছিল্যের বস্তু। যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহর কাছে একটা মশার ডানা বরাবরও হতো, তাহলে তিনি কাফিরকে কখনো এক ফোঁটা পানি পান করতে দিতো না।
بَاب مَثَلُ الدُّنْيَا
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ الْحِزَامِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ، قَالُوا حَدَّثَنَا أَبُو يَحْيَى، زَكَرِيَّا بْنُ مَنْظُورٍ حَدَّثَنَا أَبُو حَازِمٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ بِذِي الْحُلَيْفَةِ فَإِذَا هُوَ بِشَاةٍ مَيِّتَةٍ شَائِلَةٍ بِرِجْلِهَا فَقَالَ " أَتُرَوْنَ هَذِهِ هَيِّنَةً عَلَى صَاحِبِهَا فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ هَذِهِ عَلَى صَاحِبِهَا وَلَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَزِنُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا قَطْرَةً أَبَدًا " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার তুচ্ছতা ও হীনতাকে মশার ডানার সঙ্গে তুলনা করেছেন। মশা এমনিতেই অতি ক্ষুদ্র প্রাণী। কোনও বস্তুকে মশার সঙ্গে তুলনা করলেও তা সে বস্তুটির চরম হীনতা প্রমাণ করে। কিন্তু দুনিয়া আল্লাহর কাছে এমনই তুচ্ছ যে, তাকে মশার সঙ্গেও তুলনা করা যায় না। কেননা তাতে তার প্রকৃত হীনতা ফুটে ওঠে না। তাই মশার সঙ্গে তুলনা না করে তার ডানার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এবার বুঝুন কোন দুনিয়ার পেছনে আমরা ছুটছি।
হাদীছটিতে বর্ণিত তুলনা দ্বারা দুনিয়ার হীনতা স্পষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহ তা'আলার কাছে কাফের ও অবিশ্বাসী যে কতটা হীন তাও পরিষ্কার হয়ে গেছে। বলা হয়েছে, যদি দুনিয়া আল্লাহ তা'আলার কাছে একটা মশার ডানা পরিমাণ মূল্যও রাখত, তবে কোনও কাফেরকে এক চুমুক পানিও পান করাতেন না। অর্থাৎ জান্নাতে মুমিনদের জন্য যে অকল্পনীয় সুখ-শান্তির উপকরণ রাখা হয়েছে, সে তুলনায় সমগ্র দুনিয়া একটা মশার ডানার সমতুল্যও নয়। সে কারণেই কাফের ও অমুসলিমনের পানি পান করতে দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় তা দেওয়া হতো না। তার মানে আল্লাহ তা'আলার কাছে কাফের ও অমুসলিম আরও বেশি হীন, আরও বেশি মূল্যহীন। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
{إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ} [البينة: 6]
“নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে সেই কিতাবী ও মুশরিকগণ জাহান্নামের আগুনে যাবে, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম।
অন্য আয়াতে ইরশাদ-
{إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الَّذِينَ كَفَرُوا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ }
“নিশ্চয়ই (ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী প্রাণীদের মধ্যে) আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীব হল তারা যারা কুফর অবলম্বন করেছে, যে কারণে তারা ঈমান আনয়ন করছে না।
জনৈক বিজ্ঞজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আল্লাহ তা'আলার সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র সৃষ্টি কী? তিনি বললেন, দুনিয়া, যেহেতু এটা আল্লাহর কাছে মশার ডানার বরাবরও মূল্য রাখে না। তখন প্রশ্নকর্তা বলে উঠল, তাহলে তো যে ব্যক্তি এই ডানাকে বড় করে দেখে সে এরচে'ও বেশি ক্ষুদ্র ও হীন।
এই যখন দুনিয়ার অবস্থা, তখন বান্দার কর্তব্য – কথায় কাজে, সংকটে সচ্ছলতায় সর্বাবস্থায় এ কথা স্মরণ রাখা। এতে করে সে দুনিয়ার আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে পারবে, যা কিনা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের শ্রেষ্ঠতম উপায়। কেননা যে দুনিয়াকে আল্লাহ তা'আলা এতটা অপসন্দ করেন, তার আসক্তি থেকে যে ব্যক্তি নিজেকে বাঁচিয়ে চলবে, স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির দৃষ্টি থাকবে।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াকে মানুষের জন্য জীবনের লক্ষ্যবস্তু বানাননি। বরং জীবনের যা মূল লক্ষ্যবস্তু, দুনিয়াকে তা অর্জনের অসিলা ও অবলম্বন বানিয়েছেন। দুনিয়া স্থায়ী থাকার ঠিকানা নয়। এটা নয় কর্মফলেরও জায়গা। এটা অস্থায়ী ঠিকানা। এখান থেকে সকলকে চলে যেতে হয়। আল্লাহ তা'আলা সাধারণভাবে কাফের ও ফাসেককে এর মালিক বানিয়ে থাকেন। তিনি নবী-রাসূল ও তাদের ওয়ারিশদেরকে এর মন্দ প্রেম-ভালোবাসার স্পর্শ থেকে রক্ষা করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যে দুনিয়া আল্লাহ তা'আলার কাছে এতটাই মর্যাদাহীন, আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমাদের কর্তব্য তাকে মর্যাদাহীন গণ্য করা ও কিছুতেই তার মোহে না পড়া।
খ. আল্লাহ তা'আলার কাছে কুফর ও অবাধ্যতার কাজ কতটা ঘৃণ্য, তা হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল। তাই কোনও অবস্থায়ই যাতে আমরা কুফর ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে না পড়ি সে বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
হাদীছটিতে বর্ণিত তুলনা দ্বারা দুনিয়ার হীনতা স্পষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহ তা'আলার কাছে কাফের ও অবিশ্বাসী যে কতটা হীন তাও পরিষ্কার হয়ে গেছে। বলা হয়েছে, যদি দুনিয়া আল্লাহ তা'আলার কাছে একটা মশার ডানা পরিমাণ মূল্যও রাখত, তবে কোনও কাফেরকে এক চুমুক পানিও পান করাতেন না। অর্থাৎ জান্নাতে মুমিনদের জন্য যে অকল্পনীয় সুখ-শান্তির উপকরণ রাখা হয়েছে, সে তুলনায় সমগ্র দুনিয়া একটা মশার ডানার সমতুল্যও নয়। সে কারণেই কাফের ও অমুসলিমনের পানি পান করতে দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় তা দেওয়া হতো না। তার মানে আল্লাহ তা'আলার কাছে কাফের ও অমুসলিম আরও বেশি হীন, আরও বেশি মূল্যহীন। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
{إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ} [البينة: 6]
“নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে সেই কিতাবী ও মুশরিকগণ জাহান্নামের আগুনে যাবে, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম।
অন্য আয়াতে ইরশাদ-
{إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الَّذِينَ كَفَرُوا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ }
“নিশ্চয়ই (ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী প্রাণীদের মধ্যে) আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীব হল তারা যারা কুফর অবলম্বন করেছে, যে কারণে তারা ঈমান আনয়ন করছে না।
জনৈক বিজ্ঞজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আল্লাহ তা'আলার সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র সৃষ্টি কী? তিনি বললেন, দুনিয়া, যেহেতু এটা আল্লাহর কাছে মশার ডানার বরাবরও মূল্য রাখে না। তখন প্রশ্নকর্তা বলে উঠল, তাহলে তো যে ব্যক্তি এই ডানাকে বড় করে দেখে সে এরচে'ও বেশি ক্ষুদ্র ও হীন।
এই যখন দুনিয়ার অবস্থা, তখন বান্দার কর্তব্য – কথায় কাজে, সংকটে সচ্ছলতায় সর্বাবস্থায় এ কথা স্মরণ রাখা। এতে করে সে দুনিয়ার আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে পারবে, যা কিনা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের শ্রেষ্ঠতম উপায়। কেননা যে দুনিয়াকে আল্লাহ তা'আলা এতটা অপসন্দ করেন, তার আসক্তি থেকে যে ব্যক্তি নিজেকে বাঁচিয়ে চলবে, স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির দৃষ্টি থাকবে।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াকে মানুষের জন্য জীবনের লক্ষ্যবস্তু বানাননি। বরং জীবনের যা মূল লক্ষ্যবস্তু, দুনিয়াকে তা অর্জনের অসিলা ও অবলম্বন বানিয়েছেন। দুনিয়া স্থায়ী থাকার ঠিকানা নয়। এটা নয় কর্মফলেরও জায়গা। এটা অস্থায়ী ঠিকানা। এখান থেকে সকলকে চলে যেতে হয়। আল্লাহ তা'আলা সাধারণভাবে কাফের ও ফাসেককে এর মালিক বানিয়ে থাকেন। তিনি নবী-রাসূল ও তাদের ওয়ারিশদেরকে এর মন্দ প্রেম-ভালোবাসার স্পর্শ থেকে রক্ষা করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. যে দুনিয়া আল্লাহ তা'আলার কাছে এতটাই মর্যাদাহীন, আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমাদের কর্তব্য তাকে মর্যাদাহীন গণ্য করা ও কিছুতেই তার মোহে না পড়া।
খ. আল্লাহ তা'আলার কাছে কুফর ও অবাধ্যতার কাজ কতটা ঘৃণ্য, তা হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল। তাই কোনও অবস্থায়ই যাতে আমরা কুফর ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে না পড়ি সে বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
