কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ
৩৪. ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতপূর্ব আলামতের বর্ণনা
হাদীস নং: ৪০৭৭
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৭৭
দাজ্জালের ফিতনা, ঈসা ইবন মারইয়ামের অবতরণ ও ইয়াজুজ-মাজুজের বের হওয়া
৪০৭৭। আলী ইবন মুহাম্মাদ (রাহঃ)...... আবু উমামাহ্ বাহিলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। তিনি তাঁর অধিকাংশ ভাষণে যা তিনি আমাদের সামনে দিলেন, তা ছিল দাজ্জালের প্রসঙ্গে। তিনি আমাদিগকে তার সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করলেন। এ পর্যায়ে তিনি বললেনঃ যখন থেকে আল্লাহ আদম সন্তানকে সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে দাজ্জালের ফিতনার চাইতে আর কোন বড় ফিতনা যমীনে সংঘটিত হয়নি। নিশ্চয় আল্লাহ কোন নবী পাঠাননি, যিনি তার উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখাননি। আর আমি সর্বশেষ নবী এবং তোমরা সবশেষ উম্মাত। সে অবশ্যই তোমাদের মাঝে প্রকাশ পাবে। আমি তোমাদের মাঝে বর্তমান থাকাকালীন সময়ে যদি সে বের হয়, তাহলে আমি প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষে যুক্তি উত্থাপন করবো। আর যদি সে আমার পরে বের হয়, তাহলে প্রত্যেককে নিজের পক্ষে দলীল পেশ করতে হবে। আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক মুসলিমের উপর নেগাহবান। নিশ্চয় সিরিয়া ও ইরাকের ‘খুল্লাহ' নামক স্থান থেকে বের হবে। আর সে তার ডান ও বামে সর্বত্র বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ঈমানের উপর দৃঢ়পদে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। কেননা, আমি তোমাদের নিকট তার এমন সব অবস্থা বর্ণনা করবো, যা আমার পূর্বে কোন নবী তার উম্মাতের কাছে বলেননি। প্রথমে সে বলবে যে, আমি নবী এবং আমার পরে কোন নবী নেই। এরপর সে দাবী করে বলবে, আমি তোমাদের রব! অথবা তোমরা তোমাদের প্রভুকে মরার পূর্বে দেখবে না। সে হবে কানা। আর তোমাদের রব তো কানা নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে (কপালে) লেখা থাকবে 'কাফির'। এই লেখাটি প্রত্যেক মু'মিন ব্যক্তিই পড়তে পারবে, সে লেখা পড়া জানুক বা নিরক্ষর হোক। তার ফিতনা হবে এই যে, তার সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। তবে তার জাহান্নাম হবে জান্নাত, এবং তার জান্নাত হবে জাহান্নাম। সুতরাং যে কেউ তার জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, সে যেন আল্লাহর কাছে পানাহ চায় এবং সূরা কাহফ-এর প্রথমাংশ তিলাওয়াত করে। তখন সেই জাহান্নাম তার জন্য ঠাণ্ডা-শান্তিময় স্থানে পরিণত হবে। যে হয়েছিল আগুন ইবরসহীম (আ)-এর উপর।
দাজ্জালের অন্যতম এক ফিতনা হবে এই যে, সে এক বেদুইনকে বলবেঃ যদি আমি তোমার জন্য তোমার পিতামাতাকে জীবিত করতে পারি, তবে কি তুমি এরূপ সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় আমি তোমার রব! তখন সে বলবেঃ হ্যাঁ, তখন তার জন্য (দাজ্জালের নির্দেশে) দুইটি শয়তান তার পিতা ও মাতার আকৃতি ধারণ করবে। তারা বলবেঃ হে বৎস! তার আনুগত্য কর। নিশ্চয় সে তোমার রব।
দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হবে এই যে, সে জনৈক ব্যক্তিকে পরাভূত করে তাকে হত্যা করবে, এমন কি তাকে করাত দিয়ে দু'টুকরো করে নিক্ষেপ করবে। এরপর সে বলবেঃ তোমরা আমার এই বান্দার দিকে লক্ষ্য কর, আমি একে এখনই জীবিত করছি। এরপরও কি কেউ বলবে যে, আমি ব্যতীত অন্য কেউ তার রব আছেন? এরপর আল্লাহ তা'আলা সে লোকটিকে জীবিত করবেন। তখন (দাজ্জাল) খবীস তাকে বলবেঃ তোমার রব কে? সে বলবেঃ আমার রব আল্লাহ। আর তুই তো আল্লাহর দুশমন। তুই তো দাজ্জাল! আল্লাহর শপথ! আজ আমি তোর সম্পর্কে ভাল করে বুঝতে পারছি যে, (তুই-ই দাজ্জাল)
আবুল হাসান তানফিসী (রাহঃ)....আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ সেই ব্যক্তির মর্যাদা জান্নাতে আমার উম্মাতের মধ্যে বুলন্দ হবে।
রাবী বলেন, আবু সাঈদ (রাযিঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ শপথ! আমরা ধারণা করছি যে, ব্যক্তি উমার ইবন খাত্তাব (রাযিঃ)-ই হবে। এমন কি তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
মুহারিবী (রাহঃ) বলেন, এরপর আমরা আবু রাফি (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস আলোচনা করবো। তিনি বলেন, দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হবে এই যে, সে আসমানকে বৃষ্টিপাতের জন্য নির্দেশ দিবে, তখনই বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হবে। সে যমীনকে ফসল উৎপাদনের নির্দেশ দিবে, তখন সেও ফসলাদি উদগত করবে। দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হবে এই যে, সে একটি গোত্রের কাছে যাবে। তখন তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে। ফলে তাদের গৃহপালিত পশু ধ্বংস হয়ে যাবে। দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হবে এই যে, আরেকটি গোত্রের কাছে যাবে। তারা তাকে সত্য বলে মেনে নিবে। তখন সে আসমানকে বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দিবে, তখন বৃষ্টি বর্ষিত হবে। অতপর সে যমীনকে শস্য উৎপাদনের নির্দেশ দিবে, তখন যমীন তা উদগত করবে। যমীন এমনভাবে ফসলাদি ও ঘাস তৃণ লতাপাতা উদ্গত করবে যে, এমনকি তাদের গৃহ-পালিত পশুগুলো সেদিন সন্ধ্যায় অত্যন্ত মোটা-তাজা, এবং উদরপূর্তি করে দুধে স্তন ফুলিয়ে ফিরে আসবে। অবস্থা এই হবে যে, দুনিয়ার কোন ভূখণ্ড বাকী থাকবে না, যেখানে দাজ্জাল গমন না করবে এবং তা তার পদানত হচ্ছে। তবে মক্কা মোয়াযযমা ও মদীনা মুনাওয়ারা ব্যতীত (অর্থাৎ এই দুই শহরে সে প্রবেশ করতে পারেবে না)। এই দুই শহরের প্রবেশ দ্বারে উন্মুক্ত তলোয়ার হাতে ফিরিশতা মোতায়েন থাকবেন। এমন কি সে একটি ছোট লাল পাহাড়ের নিকট অবতরণ করবে, যা হবে তৃণলতা শূন্য স্থানের শেষ ভাগ। এরপর মদীনা তার অধিবাসীদের সহ তিনবার প্রকম্পিত হবে। ফলে মুনাফিক পুরুষ ও মহিলারা মদীনা থেকে বের হয়ে দাজ্জালের সাথে মিলিত হবে। এরূপে মদীনা তার ভেতরকার ময়লা বিদূরীত করবে, যেমনিভাবে লোহার মরিচা হাপর দূর করে। সে দিনের নাম হবে 'নাজাত দিবস'।
অতঃপর উম্মু শারীক বিনতে আবুল আকর (রাযিঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আরবের লোকেরা সেদিন কোথায় থাকবে? তিনি বললেনঃ সেদিন তাদের সংখ্যা হবে খুবই নগন্য। তাদের অধিকাংশ (ঈমানদার) বান্দা সে সময় বায়তুল মুকাদ্দাসে অবস্থান করবেন। তাদের ইমাম হবেন একজন নেককার ব্যক্তি। এমতাবস্থায় একদিন তাদের ইমাম তাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করবেন। সে সময় ঈসা ইবন মারইয়াম (আ) সকাল বেলা (আকাশ থেকে) অবতরণ করবেন। তখন উক্ত ইমাম (তাঁকে দেখে) পেছন দিকে হটবেন, যাতে ঈসা ইবন মারইয়াম (আ) সামনে অগ্রসর হয়ে লোকদের সালাতে ইমামতি করতে পারেন। তখন ঈসা (আ) তাঁর হাতে উক্ত ইমামের দু'কাধের উপর রাখবেন এবং তাঁকে বলবেনঃ আপনি সামনে যান এবং সালাতে ইমামতি করুন। কেননা, এই সালাত আপনার জন্যই কায়েম হয়েছিল। (অর্থাৎ আপনার ইমামতির নিয়্যাত করা হয়েছিল)।
তখন তাদের ইমাম তাদের নিয়ে সালাত আদায় করবেন। যখন তিনি সালাত শেষ করবেন, তখন ঈসা (আ) বলবেনঃ দরজা খুলে দাও। তখন দরজা খুলে দেয়া হবে। আর দরজার পেছনে থাকবে দাজ্জাল। তার সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইয়াহুদী। এদের প্রত্যেকের কাছে তলোয়ার থাকবে, যা হবে কারুকার্যখচিত এবং থাকবে চাদরে আবৃত। যখন দাজ্জাল তাঁকে (ঈসা ইবন মারইয়াম (আ) কে) দেখবে, তখনই সে বিগলিত হয়ে যাবে, যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। সে পালাতে থাকবে। তখন ঈসা (আ) বলবেনঃ তোর প্রতি আমার একটি আঘাত আছে। এর থেকে বাঁচবার তোর কোন উপায় নেই। পরিশেষে তিনি তাঁকে ‘বাবে লুদের' পূর্ব দিকে পাবেন এবং তাকে কতল করে ফেলবেন। আর আল্লাহ ইয়াহুদীদের পরাভূত করবেন। তখন ইয়াহুদীরা আল্লাহর সৃষ্ট যে কোন জিনিসের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকুক না কেন, সে বস্তুকে আল্লাহ তা'আলা বাকশক্তি দান করবেন, চাই তা পাথর হোক, গাছপালা হোক, প্রাচীন হোক অথবা জানোয়ার। তবে একটি গাছ হবে ভিন্নতর, যার নাম হবে (গারকাদাহ) এটা এক ধরনের কাটাযুক্ত বৃক্ষ। একে ইয়াহুদীদের গাছ বলা হয়, সে কথা বলবে না); তবে সে বলবেঃ হে আল্লাহর মুসলিম বান্দা। এই তো ইয়াহুদী। তুমি এসো এবং একে হত্যা কর।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ দাজ্জালের সময় হবে চল্লিশ বছর। তবে তার এক বছর হবে অর্ধ বছরের সমান। আরেক বছর হবে- এক মাসের সমান এবং এক মাস এক সপ্তাহের বরাবর হবে। তার শেষ দিনগুলো এমন ভয়াবহ হবে, যেমন অগ্নিস্ফুলিংগ বায়ুমণ্ডলে উড়ে বেড়ায়। তোমাদের কেউ মদীনার এক ঘটকে সকাল যাপন করলে, অন্য ফটকে যেতে না যেতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এত ছোট দিনে আমরা সালাত কিভাবে আদায় করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা অনুমান করে সালাতের সময় নির্ধারণ করবে, যেমন তোমরা লম্বা দিনে অনুমান করে সালাতের সময় নির্ধারণ করে থাকে এবং এভাবে সালাত আদায় করবে।
রাসূলুল্লাহ বললেনঃ ঈসা ইব্ন মারইয়াম (আ) আমার উম্মাতের একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও ইনসাফগার ইমাম হবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন। শূকর হত্যা করবেন, (শূকর ভক্ষণ করা হারাম করবেন এবং এমনভাবে হত্যা করবেন যে, তা একটাও অবশিষ্ট থাকবে না)। তিনি জিযিয়া মাউকুফ করবেন, সাদাকা উসূল করা বন্ধ করবেন, না বকরীর উপর যাকাত ধার্য করা হবে, আর না উটের উপর। লোকদের মাঝে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার অবসান হবে। প্রত্যেক বিষাক্ত জন্তু-জানোয়ারের বিষ দূরীভূত হয়ে যাবে। এমন কি দুগ্ধপোষ্য শিশু তার হাত সাপের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিবে, কিন্তু সে তার কোন ক্ষতি করবে না। একজন ক্ষুদ্র মানব শিশু সিংহকে তাড়া করবে। সেও তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। নেকড়ে বাঘ বকরীর পালে এমনভাবে থাকবে, যেন তা তার কুকুর অর্থাৎ রক্ষক। পৃথিবী শান্তিপূর্ণ হয়ে যাবে, যেমন পানিতে বরতন পরিপূর্ণ হয়। সকলের কলেমা এক হয়ে যাবে। আল্লাহ ব্যতীত কারোর ইবাদত করা হবে না। যুদ্ধ-বিগ্রহ তার সাজ সরঞ্জাম রেখে দিবে। কুরায়শদের রাজত্বের অবসান হবে। যমীন রৌপ্য নির্মিত তশতরীর মত হয়ে যাবে। সে এমন সব ফলমূল উৎপন্ন করবে, যেমনিভাবে আদম (আ)-এর যামানায় উদ্গত হতো। এমনকি কয়েকজন লোক একটি আংগুরের খোসার মধ্যে একত্র হতে পারবে এবং তা সকলকে পরিতৃপ্ত করবে। অনেক লোক একটি ডালিমের জন্য একত্র হবে এবং তা সকলকে পরিতৃপ্ত করবে। তাদের বলদ গরু হবে এই, এই মূল্যের এবং ঘোড়া স্বল্প মূল্যে বিক্রি হবে। তারা বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ঘোড়া সস্তা হবে কেন? তিনি বললেনঃ কারণ লড়াই এর জন্য কেউ অশ্বারোহী হবে না। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ গরু অতি মূল্যবান হবে কেন? তিনি বললেনঃ সারা ভূ-খণ্ডে কৃষিকাজ সম্প্রসারিত হবে।
দাজ্জালের আবির্ভাবের তিন বছর পূর্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। যাতে মানুষে চরমভাবে ক্ষুধায় কষ্ট পাবে। প্রথম বছর আল্লাহ তা'আলা আসমানকে তিনভাগের এক ভাগ বৃষ্টি আটকে রাখার নির্দেশ দিবেন এবং যমীনকে নির্দেশ দিবেন, তখন তা এক তৃতীয়াংশ ফসল কম উৎপাদন করবে। এরপর তিনি আসমানকে দ্বিতীয় বছর একই নির্দেশ দিবেন, তখন তা দুই তৃতীয়াংশ বৃষ্টি বন্ধ করে দিবে এবং যমীনকে হুকুম করবেন, তখন তাও দুই তৃতীয়াংশ ফসলাদি কম উৎপন্ন করবে। এরপর আল্লাহ তা'আলা আকাশকে তৃতীয় বছরে একই নির্দেশ দিবেন, তখন তা সম্পূর্ণভাবে বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দিবে। ফলে, এক ফোঁটা বৃষ্টি ও বর্ষিত হবে না। আর তিনি যমীনকে নির্দেশ দিবেন, তখন সে সম্পূর্ণভাবে শস্য উৎপাদন বন্ধ করবে। ফলে যমীনে কোন ঘাস জন্মাবে না, আর কোন সব্জি অবশিষ্ট থাকবে না, বরং তা ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যা চাইবেন। তখন জিজ্ঞাসা করা হলোঃ এ সময় লোকেরা কিরূপে বেঁচে থাকবে? তিনি বললেনঃ যারা তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু), তাকবীর (আল্লাহ আকবর) তাসবীহ্ (সুবহানাল্লাহ) তাহমীদ (আলহামদুল্লিাহ) বলতে থাকে, এসব তাদের খাদ্য নালিতে প্রবাহিত করে দেওয়া হবে।
আবু আব্দুল্লাহ (রাহঃ) বলেনঃ আমি আবুল হাসান তানাফিসী (রাহঃ) থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ আমি আব্দুর রহমান মুহারিবী (রাহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, এই হাদীসখানি মকতবের উস্তাদের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন, যাতে তারা বাচ্চাদের এটা শিক্ষা দিতে পারেন।
দাজ্জালের অন্যতম এক ফিতনা হবে এই যে, সে এক বেদুইনকে বলবেঃ যদি আমি তোমার জন্য তোমার পিতামাতাকে জীবিত করতে পারি, তবে কি তুমি এরূপ সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় আমি তোমার রব! তখন সে বলবেঃ হ্যাঁ, তখন তার জন্য (দাজ্জালের নির্দেশে) দুইটি শয়তান তার পিতা ও মাতার আকৃতি ধারণ করবে। তারা বলবেঃ হে বৎস! তার আনুগত্য কর। নিশ্চয় সে তোমার রব।
দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হবে এই যে, সে জনৈক ব্যক্তিকে পরাভূত করে তাকে হত্যা করবে, এমন কি তাকে করাত দিয়ে দু'টুকরো করে নিক্ষেপ করবে। এরপর সে বলবেঃ তোমরা আমার এই বান্দার দিকে লক্ষ্য কর, আমি একে এখনই জীবিত করছি। এরপরও কি কেউ বলবে যে, আমি ব্যতীত অন্য কেউ তার রব আছেন? এরপর আল্লাহ তা'আলা সে লোকটিকে জীবিত করবেন। তখন (দাজ্জাল) খবীস তাকে বলবেঃ তোমার রব কে? সে বলবেঃ আমার রব আল্লাহ। আর তুই তো আল্লাহর দুশমন। তুই তো দাজ্জাল! আল্লাহর শপথ! আজ আমি তোর সম্পর্কে ভাল করে বুঝতে পারছি যে, (তুই-ই দাজ্জাল)
আবুল হাসান তানফিসী (রাহঃ)....আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ সেই ব্যক্তির মর্যাদা জান্নাতে আমার উম্মাতের মধ্যে বুলন্দ হবে।
রাবী বলেন, আবু সাঈদ (রাযিঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ শপথ! আমরা ধারণা করছি যে, ব্যক্তি উমার ইবন খাত্তাব (রাযিঃ)-ই হবে। এমন কি তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
মুহারিবী (রাহঃ) বলেন, এরপর আমরা আবু রাফি (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস আলোচনা করবো। তিনি বলেন, দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হবে এই যে, সে আসমানকে বৃষ্টিপাতের জন্য নির্দেশ দিবে, তখনই বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হবে। সে যমীনকে ফসল উৎপাদনের নির্দেশ দিবে, তখন সেও ফসলাদি উদগত করবে। দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হবে এই যে, সে একটি গোত্রের কাছে যাবে। তখন তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে। ফলে তাদের গৃহপালিত পশু ধ্বংস হয়ে যাবে। দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হবে এই যে, আরেকটি গোত্রের কাছে যাবে। তারা তাকে সত্য বলে মেনে নিবে। তখন সে আসমানকে বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দিবে, তখন বৃষ্টি বর্ষিত হবে। অতপর সে যমীনকে শস্য উৎপাদনের নির্দেশ দিবে, তখন যমীন তা উদগত করবে। যমীন এমনভাবে ফসলাদি ও ঘাস তৃণ লতাপাতা উদ্গত করবে যে, এমনকি তাদের গৃহ-পালিত পশুগুলো সেদিন সন্ধ্যায় অত্যন্ত মোটা-তাজা, এবং উদরপূর্তি করে দুধে স্তন ফুলিয়ে ফিরে আসবে। অবস্থা এই হবে যে, দুনিয়ার কোন ভূখণ্ড বাকী থাকবে না, যেখানে দাজ্জাল গমন না করবে এবং তা তার পদানত হচ্ছে। তবে মক্কা মোয়াযযমা ও মদীনা মুনাওয়ারা ব্যতীত (অর্থাৎ এই দুই শহরে সে প্রবেশ করতে পারেবে না)। এই দুই শহরের প্রবেশ দ্বারে উন্মুক্ত তলোয়ার হাতে ফিরিশতা মোতায়েন থাকবেন। এমন কি সে একটি ছোট লাল পাহাড়ের নিকট অবতরণ করবে, যা হবে তৃণলতা শূন্য স্থানের শেষ ভাগ। এরপর মদীনা তার অধিবাসীদের সহ তিনবার প্রকম্পিত হবে। ফলে মুনাফিক পুরুষ ও মহিলারা মদীনা থেকে বের হয়ে দাজ্জালের সাথে মিলিত হবে। এরূপে মদীনা তার ভেতরকার ময়লা বিদূরীত করবে, যেমনিভাবে লোহার মরিচা হাপর দূর করে। সে দিনের নাম হবে 'নাজাত দিবস'।
অতঃপর উম্মু শারীক বিনতে আবুল আকর (রাযিঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আরবের লোকেরা সেদিন কোথায় থাকবে? তিনি বললেনঃ সেদিন তাদের সংখ্যা হবে খুবই নগন্য। তাদের অধিকাংশ (ঈমানদার) বান্দা সে সময় বায়তুল মুকাদ্দাসে অবস্থান করবেন। তাদের ইমাম হবেন একজন নেককার ব্যক্তি। এমতাবস্থায় একদিন তাদের ইমাম তাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করবেন। সে সময় ঈসা ইবন মারইয়াম (আ) সকাল বেলা (আকাশ থেকে) অবতরণ করবেন। তখন উক্ত ইমাম (তাঁকে দেখে) পেছন দিকে হটবেন, যাতে ঈসা ইবন মারইয়াম (আ) সামনে অগ্রসর হয়ে লোকদের সালাতে ইমামতি করতে পারেন। তখন ঈসা (আ) তাঁর হাতে উক্ত ইমামের দু'কাধের উপর রাখবেন এবং তাঁকে বলবেনঃ আপনি সামনে যান এবং সালাতে ইমামতি করুন। কেননা, এই সালাত আপনার জন্যই কায়েম হয়েছিল। (অর্থাৎ আপনার ইমামতির নিয়্যাত করা হয়েছিল)।
তখন তাদের ইমাম তাদের নিয়ে সালাত আদায় করবেন। যখন তিনি সালাত শেষ করবেন, তখন ঈসা (আ) বলবেনঃ দরজা খুলে দাও। তখন দরজা খুলে দেয়া হবে। আর দরজার পেছনে থাকবে দাজ্জাল। তার সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইয়াহুদী। এদের প্রত্যেকের কাছে তলোয়ার থাকবে, যা হবে কারুকার্যখচিত এবং থাকবে চাদরে আবৃত। যখন দাজ্জাল তাঁকে (ঈসা ইবন মারইয়াম (আ) কে) দেখবে, তখনই সে বিগলিত হয়ে যাবে, যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। সে পালাতে থাকবে। তখন ঈসা (আ) বলবেনঃ তোর প্রতি আমার একটি আঘাত আছে। এর থেকে বাঁচবার তোর কোন উপায় নেই। পরিশেষে তিনি তাঁকে ‘বাবে লুদের' পূর্ব দিকে পাবেন এবং তাকে কতল করে ফেলবেন। আর আল্লাহ ইয়াহুদীদের পরাভূত করবেন। তখন ইয়াহুদীরা আল্লাহর সৃষ্ট যে কোন জিনিসের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকুক না কেন, সে বস্তুকে আল্লাহ তা'আলা বাকশক্তি দান করবেন, চাই তা পাথর হোক, গাছপালা হোক, প্রাচীন হোক অথবা জানোয়ার। তবে একটি গাছ হবে ভিন্নতর, যার নাম হবে (গারকাদাহ) এটা এক ধরনের কাটাযুক্ত বৃক্ষ। একে ইয়াহুদীদের গাছ বলা হয়, সে কথা বলবে না); তবে সে বলবেঃ হে আল্লাহর মুসলিম বান্দা। এই তো ইয়াহুদী। তুমি এসো এবং একে হত্যা কর।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ দাজ্জালের সময় হবে চল্লিশ বছর। তবে তার এক বছর হবে অর্ধ বছরের সমান। আরেক বছর হবে- এক মাসের সমান এবং এক মাস এক সপ্তাহের বরাবর হবে। তার শেষ দিনগুলো এমন ভয়াবহ হবে, যেমন অগ্নিস্ফুলিংগ বায়ুমণ্ডলে উড়ে বেড়ায়। তোমাদের কেউ মদীনার এক ঘটকে সকাল যাপন করলে, অন্য ফটকে যেতে না যেতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এত ছোট দিনে আমরা সালাত কিভাবে আদায় করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা অনুমান করে সালাতের সময় নির্ধারণ করবে, যেমন তোমরা লম্বা দিনে অনুমান করে সালাতের সময় নির্ধারণ করে থাকে এবং এভাবে সালাত আদায় করবে।
রাসূলুল্লাহ বললেনঃ ঈসা ইব্ন মারইয়াম (আ) আমার উম্মাতের একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও ইনসাফগার ইমাম হবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন। শূকর হত্যা করবেন, (শূকর ভক্ষণ করা হারাম করবেন এবং এমনভাবে হত্যা করবেন যে, তা একটাও অবশিষ্ট থাকবে না)। তিনি জিযিয়া মাউকুফ করবেন, সাদাকা উসূল করা বন্ধ করবেন, না বকরীর উপর যাকাত ধার্য করা হবে, আর না উটের উপর। লোকদের মাঝে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার অবসান হবে। প্রত্যেক বিষাক্ত জন্তু-জানোয়ারের বিষ দূরীভূত হয়ে যাবে। এমন কি দুগ্ধপোষ্য শিশু তার হাত সাপের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিবে, কিন্তু সে তার কোন ক্ষতি করবে না। একজন ক্ষুদ্র মানব শিশু সিংহকে তাড়া করবে। সেও তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। নেকড়ে বাঘ বকরীর পালে এমনভাবে থাকবে, যেন তা তার কুকুর অর্থাৎ রক্ষক। পৃথিবী শান্তিপূর্ণ হয়ে যাবে, যেমন পানিতে বরতন পরিপূর্ণ হয়। সকলের কলেমা এক হয়ে যাবে। আল্লাহ ব্যতীত কারোর ইবাদত করা হবে না। যুদ্ধ-বিগ্রহ তার সাজ সরঞ্জাম রেখে দিবে। কুরায়শদের রাজত্বের অবসান হবে। যমীন রৌপ্য নির্মিত তশতরীর মত হয়ে যাবে। সে এমন সব ফলমূল উৎপন্ন করবে, যেমনিভাবে আদম (আ)-এর যামানায় উদ্গত হতো। এমনকি কয়েকজন লোক একটি আংগুরের খোসার মধ্যে একত্র হতে পারবে এবং তা সকলকে পরিতৃপ্ত করবে। অনেক লোক একটি ডালিমের জন্য একত্র হবে এবং তা সকলকে পরিতৃপ্ত করবে। তাদের বলদ গরু হবে এই, এই মূল্যের এবং ঘোড়া স্বল্প মূল্যে বিক্রি হবে। তারা বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ঘোড়া সস্তা হবে কেন? তিনি বললেনঃ কারণ লড়াই এর জন্য কেউ অশ্বারোহী হবে না। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ গরু অতি মূল্যবান হবে কেন? তিনি বললেনঃ সারা ভূ-খণ্ডে কৃষিকাজ সম্প্রসারিত হবে।
দাজ্জালের আবির্ভাবের তিন বছর পূর্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। যাতে মানুষে চরমভাবে ক্ষুধায় কষ্ট পাবে। প্রথম বছর আল্লাহ তা'আলা আসমানকে তিনভাগের এক ভাগ বৃষ্টি আটকে রাখার নির্দেশ দিবেন এবং যমীনকে নির্দেশ দিবেন, তখন তা এক তৃতীয়াংশ ফসল কম উৎপাদন করবে। এরপর তিনি আসমানকে দ্বিতীয় বছর একই নির্দেশ দিবেন, তখন তা দুই তৃতীয়াংশ বৃষ্টি বন্ধ করে দিবে এবং যমীনকে হুকুম করবেন, তখন তাও দুই তৃতীয়াংশ ফসলাদি কম উৎপন্ন করবে। এরপর আল্লাহ তা'আলা আকাশকে তৃতীয় বছরে একই নির্দেশ দিবেন, তখন তা সম্পূর্ণভাবে বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দিবে। ফলে, এক ফোঁটা বৃষ্টি ও বর্ষিত হবে না। আর তিনি যমীনকে নির্দেশ দিবেন, তখন সে সম্পূর্ণভাবে শস্য উৎপাদন বন্ধ করবে। ফলে যমীনে কোন ঘাস জন্মাবে না, আর কোন সব্জি অবশিষ্ট থাকবে না, বরং তা ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যা চাইবেন। তখন জিজ্ঞাসা করা হলোঃ এ সময় লোকেরা কিরূপে বেঁচে থাকবে? তিনি বললেনঃ যারা তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু), তাকবীর (আল্লাহ আকবর) তাসবীহ্ (সুবহানাল্লাহ) তাহমীদ (আলহামদুল্লিাহ) বলতে থাকে, এসব তাদের খাদ্য নালিতে প্রবাহিত করে দেওয়া হবে।
আবু আব্দুল্লাহ (রাহঃ) বলেনঃ আমি আবুল হাসান তানাফিসী (রাহঃ) থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ আমি আব্দুর রহমান মুহারিবী (রাহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, এই হাদীসখানি মকতবের উস্তাদের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন, যাতে তারা বাচ্চাদের এটা শিক্ষা দিতে পারেন।
بَاب فِتْنَةِ الدَّجَالِ وَخُرُوجِ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَخُرُوجِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ الْمُحَارِبِيُّ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ رَافِعٍ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ السَّيْبَانِيِّ، يَحْيَى بْنِ أَبِي عَمْرٍو عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ، قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَكَانَ أَكْثَرُ خُطْبَتِهِ حَدِيثًا حَدَّثَنَاهُ عَنِ الدَّجَّالِ وَحَذَّرَنَاهُ فَكَانَ مِنْ قَوْلِهِ أَنْ قَالَ " إِنَّهُ لَمْ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الأَرْضِ مُنْذُ ذَرَأَ اللَّهُ ذُرِّيَّةَ آدَمَ أَعْظَمَ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ وَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَبْعَثْ نَبِيًّا إِلاَّ حَذَّرَ أُمَّتَهُ الدَّجَّالَ وَأَنَا آخِرُ الأَنْبِيَاءِ وَأَنْتُمْ آخِرُ الأُمَمِ وَهُوَ خَارِجٌ فِيكُمْ لاَ مَحَالَةَ وَإِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا بَيْنَ ظَهْرَانَيْكُمْ فَأَنَا حَجِيجٌ لِكُلِّ مُسْلِمٍ وَإِنْ يَخْرُجْ مِنْ بَعْدِي فَكُلُّ امْرِئٍ حَجِيجُ نَفْسِهِ وَاللَّهُ خَلِيفَتِي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ وَإِنَّهُ يَخْرُجُ مِنْ خَلَّةٍ بَيْنَ الشَّامِ وَالْعِرَاقِ فَيَعِيثُ يَمِينًا وَيَعِيثُ شِمَالاً . يَا عِبَادَ اللَّهِ أَيُّهَا النَّاسُ فَاثْبُتُوا فَإِنِّي سَأَصِفُهُ لَكُمْ صِفَةً لَمْ يَصِفْهَا إِيَّاهُ نَبِيٌّ قَبْلِي إِنَّهُ يَبْدَأُ فَيَقُولُ أَنَا نَبِيٌّ وَلاَ نَبِيَّ بَعْدِي ثُمَّ يُثَنِّي فَيَقُولُ أَنَا رَبُّكُمْ . وَلاَ تَرَوْنَ رَبَّكُمْ حَتَّى تَمُوتُوا وَإِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ وَإِنَّهُ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ كَاتِبٍ أَوْ غَيْرِ كَاتِبٍ وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنَّ مَعَهُ جَنَّةً وَنَارًا فَنَارُهُ جَنَّةٌ وَجَنَّتُهُ نَارٌ فَمَنِ ابْتُلِيَ بِنَارِهِ فَلْيَسْتَغِثْ بِاللَّهِ وَلْيَقْرَأْ فَوَاتِحَ الْكَهْفِ فَتَكُونَ عَلَيْهِ بَرْدًا وَسَلاَمًا كَمَا كَانَتِ النَّارُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنْ يَقُولَ لأَعْرَابِيٍّ أَرَأَيْتَ إِنْ بَعَثْتُ لَكَ أَبَاكَ وَأُمَّكَ أَتَشْهَدُ أَنِّي رَبُّكَ فَيَقُولُ نَعَمْ . فَيَتَمَثَّلُ لَهُ شَيْطَانَانِ فِي صُورَةِ أَبِيهِ وَأُمِّهِ فَيَقُولاَنِ يَا بُنَىَّ اتَّبِعْهُ فَإِنَّهُ رَبُّكَ . وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنْ يُسَلَّطَ عَلَى نَفْسٍ وَاحِدَةٍ فَيَقْتُلَهَا وَيَنْشُرَهَا بِالْمِنْشَارِ حَتَّى يُلْقَى شِقَّتَيْنِ ثُمَّ يَقُولُ انْظُرُوا إِلَى عَبْدِي هَذَا فَإِنِّي أَبْعَثُهُ الآنَ ثُمَّ يَزْعُمُ أَنَّ لَهُ رَبًّا غَيْرِي . فَيَبْعَثُهُ اللَّهُ وَيَقُولُ لَهُ الْخَبِيثُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ رَبِّيَ اللَّهُ وَأَنْتَ عَدُوُّ اللَّهِ أَنْتَ الدَّجَّالُ وَاللَّهِ مَا كُنْتُ بَعْدُ أَشَدَّ بَصِيرَةً بِكَ مِنِّي الْيَوْمَ " . قَالَ أَبُو الْحَسَنِ الطَّنَافِسِيُّ فَحَدَّثَنَا الْمُحَارِبِيُّ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ الْوَلِيدِ الْوَصَّافِيُّ عَنْ عَطِيَّةَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " ذَلِكَ الرَّجُلُ أَرْفَعُ أُمَّتِي دَرَجَةً فِي الْجَنَّةِ " . قَالَ قَالَ أَبُو سَعِيدٍ وَاللَّهِ مَا كُنَّا نُرَى ذَلِكَ الرَّجُلَ إِلاَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ حَتَّى مَضَى لِسَبِيلِهِ . قَالَ الْمُحَارِبِيُّ ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَى حَدِيثِ أَبِي رَافِعٍ قَالَ " وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنْ يَأْمُرَ السَّمَاءَ أَنْ تُمْطِرَ فَتُمْطِرَ وَيَأْمُرَ الأَرْضَ أَنْ تُنْبِتَ فَتُنْبِتَ وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنْ يَمُرَّ بِالْحَىِّ فَيُكَذِّبُونَهُ فَلاَ تَبْقَى لَهُمْ سَائِمَةٌ إِلاَّ هَلَكَتْ وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنْ يَمُرَّ بِالْحَىِّ فَيُصَدِّقُونَهُ فَيَأْمُرَ السَّمَاءَ أَنْ تُمْطِرَ فَتُمْطِرَ وَيَأْمُرَ الأَرْضَ أَنْ تُنْبِتَ فَتُنْبِتَ حَتَّى تَرُوحَ مَوَاشِيهِمْ مِنْ يَوْمِهِمْ ذَلِكَ أَسْمَنَ مَا كَانَتْ وَأَعْظَمَهُ وَأَمَدَّهُ خَوَاصِرَ وَأَدَرَّهُ ضُرُوعًا وَإِنَّهُ لاَ يَبْقَى شَىْءٌ مِنَ الأَرْضِ إِلاَّ وَطِئَهُ وَظَهَرَ عَلَيْهِ إِلاَّ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةَ لاَ يَأْتِيهِمَا مِنْ نَقْبٍ مِنْ نِقَابِهِمَا إِلاَّ لَقِيَتْهُ الْمَلاَئِكَةُ بِالسُّيُوفِ صَلْتَةً حَتَّى يَنْزِلَ عِنْدَ الظُّرَيْبِ الأَحْمَرِ عِنْدَ مُنْقَطَعِ السَّبَخَةِ فَتَرْجُفُ الْمَدِينَةُ بِأَهْلِهَا ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ فَلاَ يَبْقَى مُنَافِقٌ وَلاَ مُنَافِقَةٌ إِلاَّ خَرَجَ إِلَيْهِ فَتَنْفِي الْخَبَثَ مِنْهَا كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَيُدْعَى ذَلِكَ الْيَوْمُ يَوْمَ الْخَلاَصِ " . فَقَالَتْ أُمُّ شَرِيكٍ بِنْتُ أَبِي الْعُكَرِ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَيْنَ الْعَرَبُ يَوْمَئِذٍ قَالَ " هُمْ يَوْمَئِذٍ قَلِيلٌ وَجُلُّهُمْ بِبَيْتِ الْمَقْدِسِ وَإِمَامُهُمْ رَجُلٌ صَالِحٌ فَبَيْنَمَا إِمَامُهُمْ قَدْ تَقَدَّمَ يُصَلِّي بِهِمُ الصُّبْحَ إِذْ نَزَلَ عَلَيْهِمْ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ الصُّبْحَ فَرَجَعَ ذَلِكَ الإِمَامُ يَنْكُصُ يَمْشِي الْقَهْقَرَى لِيَتَقَدَّمَ عِيسَى يُصَلِّي بِالنَّاسِ فَيَضَعُ عِيسَى يَدَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ ثُمَّ يَقُولُ لَهُ تَقَدَّمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ أُقِيمَتْ . فَيُصَلِّي بِهِمْ إِمَامُهُمْ فَإِذَا انْصَرَفَ قَالَ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ افْتَحُوا الْبَابَ . فَيُفْتَحُ وَوَرَاءَهُ الدَّجَّالُ مَعَهُ سَبْعُونَ أَلْفِ يَهُودِيٍّ كُلُّهُمْ ذُو سَيْفٍ مُحَلًّى وَسَاجٍ فَإِذَا نَظَرَ إِلَيْهِ الدَّجَّالُ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ وَيَنْطَلِقُ هَارِبًا وَيَقُولُ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ إِنَّ لِي فِيكَ ضَرْبَةً لَنْ تَسْبِقَنِي بِهَا . فَيُدْرِكُهُ عِنْدَ بَابِ اللُّدِّ الشَّرْقِيِّ فَيَقْتُلُهُ فَيَهْزِمُ اللَّهُ الْيَهُودَ فَلاَ يَبْقَى شَىْءٌ مِمَّا خَلَقَ اللَّهُ يَتَوَارَى بِهِ يَهُودِيٌّ إِلاَّ أَنْطَقَ اللَّهُ ذَلِكَ الشَّىْءَ لاَ حَجَرَ وَلاَ شَجَرَ وَلاَ حَائِطَ وَلاَ دَابَّةَ - إِلاَّ الْغَرْقَدَةَ فَإِنَّهَا مِنْ شَجَرِهِمْ لاَ تَنْطِقُ - إِلاَّ قَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ الْمُسْلِمَ هَذَا يَهُودِيٌّ فَتَعَالَ اقْتُلْهُ " . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " وَإِنَّ أَيَّامَهُ أَرْبَعُونَ سَنَةً السَّنَةُ كَنِصْفِ السَّنَةِ وَالسَّنَةُ كَالشَّهْرِ وَالشَّهْرُ كَالْجُمُعَةِ وَآخِرُ أَيَّامِهِ كَالشَّرَرَةِ يُصْبِحُ أَحَدُكُمْ عَلَى بَابِ الْمَدِينَةِ فَلاَ يَبْلُغُ بَابَهَا الآخَرَ حَتَّى يُمْسِيَ " . فَقِيلَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ نُصَلِّي فِي تِلْكَ الأَيَّامِ الْقِصَارِ قَالَ " تَقْدُرُونَ فِيهَا الصَّلاَةَ كَمَا تَقْدُرُونَهَا فِي هَذِهِ الأَيَّامِ الطِّوَالِ ثُمَّ صَلُّوا " . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " فَيَكُونُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فِي أُمَّتِي حَكَمًا عَدْلاً وَإِمَامًا مُقْسِطًا يَدُقُّ الصَّلِيبَ وَيَذْبَحُ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَيَتْرُكُ الصَّدَقَةَ فَلاَ يُسْعَى عَلَى شَاةٍ وَلاَ بَعِيرٍ وَتُرْفَعُ الشَّحْنَاءُ وَالتَّبَاغُضُ وَتُنْزَعُ حُمَةُ كُلِّ ذَاتِ حُمَةٍ حَتَّى يُدْخِلَ الْوَلِيدُ يَدَهُ فِي فِي الْحَيَّةِ فَلاَ تَضُرَّهُ وَتُفِرُّ الْوَلِيدَةُ الأَسَدَ فَلاَ يَضُرُّهَا وَيَكُونُ الذِّئْبُ فِي الْغَنَمِ كَأَنَّهُ كَلْبُهَا وَتُمْلأُ الأَرْضُ مِنَ السِّلْمِ كَمَا يُمْلأُ الإِنَاءُ مِنَ الْمَاءِ وَتَكُونُ الْكَلِمَةُ وَاحِدَةً فَلاَ يُعْبَدُ إِلاَّ اللَّهُ وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا وَتُسْلَبُ قُرَيْشٌ مُلْكَهَا وَتَكُونُ الأَرْضُ كَفَاثُورِ الْفِضَّةِ تُنْبِتُ نَبَاتَهَا بِعَهْدِ آدَمَ حَتَّى يَجْتَمِعَ النَّفَرُ عَلَى الْقِطْفِ مِنَ الْعِنَبِ فَيُشْبِعَهُمْ وَيَجْتَمِعَ النَّفَرُ عَلَى الرُّمَّانَةِ فَتُشْبِعَهُمْ وَيَكُونَ الثَّوْرُ بِكَذَا وَكَذَا مِنَ الْمَالِ وَتَكُونَ الْفَرَسُ بِالدُّرَيْهِمَاتِ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا يُرْخِصُ الْفَرَسَ قَالَ " لاَ تُرْكَبُ لِحَرْبٍ أَبَدًا " . قِيلَ لَهُ فَمَا يُغْلِي الثَّوْرَ قَالَ " تُحْرَثُ الأَرْضُ كُلُّهَا وَإِنَّ قَبْلَ خُرُوجِ الدَّجَّالِ ثَلاَثَ سَنَوَاتٍ شِدَادٍ يُصِيبُ النَّاسَ فِيهَا جُوعٌ شَدِيدٌ يَأْمُرُ اللَّهُ السَّمَاءَ فِي السَّنَةِ الأُولَى أَنْ تَحْبِسَ ثُلُثَ مَطَرِهَا وَيَأْمُرُ الأَرْضَ فَتَحْبِسُ ثُلُثَ نَبَاتِهَا ثُمَّ يَأْمُرُ السَّمَاءَ فِي السَّنَةِ الثَّانِيَةِ فَتَحْبِسُ ثُلُثَىْ مَطَرِهَا وَيَأْمُرُ الأَرْضَ فَتَحْبِسُ ثُلُثَىْ نَبَاتِهَا ثُمَّ يَأْمُرُ اللَّهُ السَّمَاءَ فِي السَّنَةِ الثَّالِثَةِ فَتَحْبِسُ مَطَرَهَا كُلَّهُ فَلاَ تَقْطُرُ قَطْرَةٌ وَيَأْمُرُ الأَرْضَ فَتَحْبِسُ نَبَاتَهَا كُلَّهُ فَلاَ تُنْبِتُ خَضْرَاءَ فَلاَ تَبْقَى ذَاتُ ظِلْفٍ إِلاَّ هَلَكَتْ إِلاَّ مَا شَاءَ اللَّهُ " . قِيلَ فَمَا يُعِيشُ النَّاسَ فِي ذَلِكَ الزَّمَانِ قَالَ " التَّهْلِيلُ وَالتَّكْبِيرُ وَالتَّسْبِيحُ وَالتَّحْمِيدُ وَيُجْرَى ذَلِكَ عَلَيْهِمْ مَجْرَى الطَّعَامِ " . قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ سَمِعْتُ أَبَا الْحَسَنِ الطَّنَافِسِيَّ يَقُولُ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ الْمُحَارِبِيَّ يَقُولُ يَنْبَغِي أَنْ يُدْفَعَ هَذَا الْحَدِيثُ إِلَى الْمُؤَدِّبِ حَتَّى يُعَلِّمَهُ الصِّبْيَانَ فِي الْكُتَّابِ .


বর্ণনাকারী: