আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৬- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
২৯২৯। উসমান ইবনে আবু শাইবা (রাহঃ) .... আবুদল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের দিনে নবী (ﷺ) কোন কোন লোককে বন্টনে অন্যদের উপর প্রাধান্য দেন। তিনি আকরা ইবনে হাবিছকে একশ’ উট দিলেন। উয়াইনাকেও এ পরিমাণ দেন। সম্ভ্রান্ত আরব ব্যক্তিদের দিলেন। এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম। এখানে সুবিচার করা হয়নি। অথবা সে বলল, এতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি। (রাবী বলেন), তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নবী (ﷺ)- কে অবশ্যই জানিয়ে দিব। তখন আমি তাঁর কাছে এলাম এবং তাঁকে একথা জানিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) যদি সুবিচার না করেন, তবে কে সুবিচার করবে? আল্লাহ তাআলা মুসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি রহমত নাযিল করুন, তাঁকে এ চাইতেও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সবর করেছেন।’
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
এ হাদীছে হুনায়নের যুদ্ধে যে গনীমতের মাল অর্জিত হয়েছিল, তা বণ্টনের ব্যাপারে কারও আপত্তিকর একটি উক্তি এবং সে প্রসঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন তা বিবৃত হয়েছে। সংক্ষেপে হুনায়ন যুদ্ধের ঘটনা নিম্নরূপ : মক্কা মুকাররামায় জয়লাভ করার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ পেলেন মালিক ইবনে আউফের নেতৃত্বে বনু হাওয়াযিন তাঁর বিরুদ্ধে সৈন্য সংগ্রহ করছে। বনু হাওয়াযিন এক বিশাল জনগোষ্ঠীর নাম। এর অনেকগুলো শাখা-প্রশাখা ছিল। তায়েফের প্রসিদ্ধ ছাকীফ গোত্রও এ গোষ্ঠীরই শাখা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুপ্তচর পাঠিয়ে সংবাদটির সত্যতা যাচাই করলেন। জানা গেল, সংবাদ সত্য এবং তারা জোরে-শোরে বিপুল উত্তেজনায় যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ইবনে হাজার রহ.-এর বর্ণনা অনুযায়ী বনু হাওয়াযিনের লোকসংখ্যা ছিল চব্বিশ হাজার থেকে আটাশ হাজারের মাঝামাঝি। সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দ হাজার সাহাবায়ে কিরামের এক বাহিনী নিয়ে রওয়ানা হলেন। এ যুদ্ধ হয়েছিল হুনায়ন নামক স্থানে, যা মক্কা মুকাররামা থেকে আনুমানিক দশ মাইল দূরে অবস্থিত মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী একটা উপত্যকার নাম। এ যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যসংখ্যা ছিল চৌদ্দ হাজার। এর আগে অন্য কোনও যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যদের সংখ্যা এত বিপুল ছিল না। মুসলিমগণ সর্বদা নিজেদের সৈন্যসংখ্যা অল্প হওয়া সত্ত্বেও বেশি সৈন্যের মুকাবিলায় জয়লাভ করেছেন। এবার যেহেতু তাদের সৈন্যসংখ্যাও বিপুল, তাই তাদের কারও কারও মুখ থেকে বের হয়ে গেল যে, আজ আমাদের সংখ্যা অনেক বেশি। সুতরাং আজ আমরা কারও কাছে পরাস্ত হতেই পারি না। মুসলিমগণ আল্লাহ তা'আলার পরিবর্তে নিজেদের সংখ্যার উপর নির্ভর করবে, এটা আল্লাহ তা'আলার পসন্দ হল না। সুতরাং তিনি এর ফল দেখালেন। মুসলিম বাহিনী এক সংকীর্ণ গিরিপথ অতিক্রম করছিল। এ সময় বনু হাওয়াযিনের তীরন্দাজ বাহিনী অকস্মাৎ তাদের উপর বৃষ্টির মত তার ছুঁড়তে শুরু করল। তা এতটাই প্রচণ্ড ছিল যে, মুসলিম বাহিনী তার সামনে দৃঢ়পদ থাকতে পারছিল না। তাদের বহু সদস্য পালাতে শুরু করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্য কতিপয় নিবেদিতপ্রাণ সাহাবীসহ অবিচলিত থাকলেন। তিনি হযরত আব্বাস রাযি.-কে হুকুম দিলেন, যেন পলায়নরতদেরকে উচ্চস্বরে ডাক দেন। হযরত আব্বাস রাযি. এর আওয়াজ খুব উঁচু ছিল। তিনি ডাক দিলেন এবং মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে তা বিজলির মত ছড়িয়ে পড়ল। যারা ময়দান ত্যাগ করছিল, তারা নতুন উদ্যমে ফিরে আসল। দেখতে না দেখতে দৃশ্যপট পাল্টে গেল এবং মুসলিমদের বিজয় অর্জিত হল। বনু হাওয়াযিনের সত্তর জন নেতা নিহত হল। দলপতি মালিক ইবনে আউফ তার পরিবার-পরিজন ও অর্থ-সম্পদ ছেড়ে পালিয়ে গেল এবং তায়েফের দূর্গে গিয়ে আশ্রয় নিল। তাদের ছয় হাজার সদস্য বন্দী হল। বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু ও চার হাজার উকিয়া রূপা গনীমত হিসেবে মুসলিমদের হস্তগত হল। এ যুদ্ধ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ فِي مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ ۙ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ ۙ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُم مُّدْبِرِينَ (25) ثُمَّ أَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَنزَلَ جُنُودًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ وَذَٰلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِينَ (26) ثُمَّ يَتُوبُ اللَّهُ مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (27) অর্থ : বস্তুত আল্লাহ বহু ক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করেছেন এবং বিশেষ করে হুনাইনের দিন, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে আত্মপ্রসাদে লিপ্ত করেছিল। কিন্তু সে সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোনও কাজে আসেনি এবং যমীন তার প্রশস্ততা সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) পলায়ন করছিলে। অতঃপর আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল ও মু'মিনদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং এমন এক বাহিনী অবতীর্ণ করলেন, যা তোমরা দেখতে পাওনি। আর যারা কুফর অবলম্বন করেছিল, আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিলেন। আর এটাই কাফিরদের কর্মফল। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাওবার সুযোগ দান করেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এ যুদ্ধের গনীমত বণ্টনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নওমুসলিমদের প্রাধান্য দিয়েছিলেন। বিশেষত যারা নেতৃস্থানীয় ও অভিজাত ছিল তাদের। যুদ্ধে মুসলিমপক্ষে তিন শ্রেণীর যোদ্ধা ছিলেন। মুহাজিরগণ, আনসারগণ এবং মক্কা বিজয়কালে যারা নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছে। নওমুসলিমদের অনেকেরই অন্তরে তখনো ইসলাম পরিপূর্ণ বদ্ধমূল হয়নি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মনোরঞ্জন করে ইসলামের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করে তুলতে চাচ্ছিলেন। সে কারণেই তাদেরকে বেশি বেশি দান করলেন। আনসার ও মুহাজিরদেরকে এতটা দিলেন না। তাদের অন্তরে ঈমানের আলো সঞ্চারিত ছিল, ছিল দীনের প্রতি প্রবল ভালোবাসা এবং তারা ছিলেন ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত। তাদের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ আস্থা ছিল। সেই আস্থার ভিত্তিতেই তাদের গনীমতের অংশ দেওয়া হতে বিরত থাকেন। এ সম্পর্কে তিনি এক হাদীছে ইরশাদ করেন- إني لأعطي الرجل - وغيرہ أحب إلي منه - مخافة أن يكبه الله في النار على وجهه ‘আমি কাউকে কাউকে অর্থ-সম্পদ দান করি। অথচ অন্য লোক আমার কাছে তারচে' বেশি প্রিয়। তা দান করি এই আশংকায় যে, (কুফরের দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে) আল্লাহ তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। তাঁর এ বণ্টনে সাহাবীগণ সন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁর কোনও কাজেই সাহাবায়ে কিরামের মনে কখনও আপত্তি দেখা দিত না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি প্রশ্ন তুলে বসল। সে এক কঠিন মন্তব্য করল। বলে ফেলল, এ বণ্টন ইনসাফসম্মত নয় এবং এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লক্ষ্য রাখা হয়নি। নবী সম্পর্কে এমন মন্তব্য চরম ধৃষ্টতা এবং দৃশ্যত এটা কুফরী। এরকম কঠিন মন্তব্য সেকালে মুনাফিকরাই করত। এ ব্যক্তি মুনাফিক কিনা তা জানা যায় না। কোনও কোনও বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে মুআত্তিব ইবন কুশায়র। সে আনসারদের আওস শাখার লোক ছিল। হযরত যুবায়র রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, এই লোকই উহুদ যুদ্ধের সময় আরেকটি কঠিন মন্তব্য করেছিল, যা কুরআন মাজীদে এভাবে বর্ণিত হয়েছে- لو كان لنا من الأمر شيء ما قتلنا ههنا ‘তারা বলে, আমাদের যদি কিছু এখতিয়ার থাকত, তবে আমরা এখানে নিহত হতাম না। কুরআন মাজীদে উহুদ যুদ্ধে মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণনাপ্রসঙ্গে এ উক্তিটি উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় এ লোকও মুনাফিক । কারও কারও মতে পরে সে তাওবা করেছিল। তাওবা করে থাকলে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে গণ্য হবে। ইবনে হাজার আসকালানী রাহঃ অবশ্য 'আল-ইসাবা' গ্রন্থে সাহাবায়ে কিরামের তালিকায় তার উল্লেখ করেছেন। তার উক্তিটি যেহেতু অত্যন্ত ধৃষ্টতামূলক ছিল, তাই হযরত ইবন মাসউদ রাযি.-এর পক্ষে তা বরদাশত করা সম্ভব হল না। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তা বলে দিলেন। এ বলে দেওয়াটা দোষের ছিল না। এক হাদীছে আছে- المجالس بالأمانة ‘মজলিসের কথাবার্তা আমানতস্বরূপ।” অর্থাৎ মজলিসে যেসব কথাবার্তা হয়, তা অন্যের কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়। কিন্তু এ কথাটি সে রকমের নয়। কেননা একে তো এটি কোনও মজলিসী কথা নয়, প্রকাশ্য জনসম্মুখে দেওয়া বক্তব্য। দ্বিতীয়ত এটি কুফরী কথা, যা দ্বারা নবীর অসম্মান করা হয়েছে। নবীপ্রেমিকের কর্তব্য এ সম্পর্কে নবীকে অবহিত করা, যাতে তিনি তার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে পারেন। কেননা এ শ্রেণীর লোকের দ্বারা দীনের যথেষ্ট ক্ষতির আশংকা থাকে। তাই দীনের স্বার্থেই তা প্রকাশ করা জরুরি। অপর এক হাদীছে আছে– الدين النصيحة ، قلنا : لمن؟ قال لله ولكتابه ولرسوله ولأئمة المسلمين وعامتهم ‘দীন কল্যাণকামিতারই নাম। (হযরত তামীম দারী রাযি. বলেন) আমরা বললাম, কার জন্য কল্যাণকামিতা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর জন্য (তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে), তাঁর কিতাবের জন্য (কিতাবের হেফাজত, অনুসরণ ও প্রচারের মাধ্যমে), তাঁর রাসূলের জন্য (তাঁর আনুগত্য, অনুসরণ ও সহযোগিতার মাধ্যমে), মুসলিম নেতৃবর্গের জন্য (তাদের প্রতি আনুগত্য ও তাদের সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে) এবং জনসাধারণের জন্য (তাদেরকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের মাধ্যমে)। তো রাসূলের কল্যাণকামিতার দাবি ছিল কথাটি তাঁকে জানানো এবং এটা ওই ব্যক্তির প্রতিও কল্যাণকামিতার দাবি। হযরত ইবন মাসউদ রাযি. সে দাবিই পূরণ করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে রাগ তো করেছেন, কিন্তু ওই ব্যক্তিকে হত্যার হুকুম দেননি, যদিও অপরাধটি হত্যারই উপযুক্ত ছিল। তিনি তার প্রতি অন্যান্য মুনাফিকদের মত আচরণ করলেন। অনেকে চাচ্ছিল মুনাফিকদেরকে হত্যা করা হোক। কিন্তু তিনি এই বলে তা করা হতে বিরত থাকলেন যে, লোকে বলবে, উনি তাঁর সঙ্গীদেরও হত্যা করেন। ফলে তারা ইসলামগ্রহণে অনাগ্রহী হয়ে পড়বে। তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনসাফ না করলে আর কে ইনসাফ করতে পারে? অর্থাৎ আমার বণ্টন সম্পূর্ণই ইনসাফসম্মত। তুমি বুঝতে না পারলে তা তোমার নিতান্তই অজ্ঞতা। সে অজ্ঞতা থেকেই তুমি এমন পীড়াদায়ক কথা বলেছ। এমন পীড়াদায়ক কথা ও কষ্টদায়ক আচরণ সবকালেই নবী-রাসূলের সংগে করা হয়েছে। হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে এর চেয়ে আরও বেশি কষ্ট দেওয়া হয়েছে। তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল, তারাও মাঝেমধ্যেই তাঁকে উত্ত্যক্ত করেছে। তাঁর যে-কোনও হুকুমেই তারা নানারকম খুঁত ধরার চেষ্টা করেছে। নবীর খুঁত ধরার দিক থেকে তারা অন্যসব জাতির দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তাই আল্লাহ তা'আলা তাদের দ্বারা অন্যদের উপদেশ দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- يأيها الذين امنوا لا تكونوا كالذین اذوا موسى 'হে মুমিনগণ! তাদের মত হয়ো না, যারা মুসা আঃ কে কষ্ট দিয়েছিল, অতঃপর আল্লাহ তারা যা রটনা করেছিল, তা হতে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করেন। তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মর্যাদাবান। তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কথা স্মরণ করে একদিকে নিজে সান্ত্বনা লাভ করেন, অন্যদিকে মানুষকে সতর্ক করে দেন, যেন তারা তাঁর উম্মতের মত নবীকে কষ্ট না দেয় এবং তাঁর সম্পর্কে অপ্রীতিকর মন্তব্য না করে। তা করলে কেবল নিজেকেই ধ্বংস করা হবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদের হেফাজত করুন। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. এ হাদীছ দ্বারাও সবর সম্পর্কে মূল্যবান শিক্ষা পাওয়া যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং অপরাপর আম্বিয়া 'আলাইহিমুস সালাম স্বজাতির আচার-আচরণে যেমন ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন, তেমনি আমাদেরও কর্তব্য অন্যদের আচার-আচরণে চরম ধৈর্যশীল হওয়া। খ. সম্পদ বণ্টনসহ নবীর প্রতিটি কাজে উম্মতের কর্তব্য তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ আস্থা রাখা ও সর্বান্তকরণে তাঁর হুকুম মেনে নেওয়া। গ. যে-কোনও কষ্টে নবী-রাসূলগণের ঘটনা স্মরণ সান্ত্বনা লাভে সহায়ক হয়।

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন