কিতাবুস সুনান- ইমাম ইবনে মাজা রহঃ

৩১. আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৭০৬
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭০৬
অনুমতি প্রার্থনা
৩৭০৬। আবু বাকর (রাহঃ) ) ...... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবু মুসা (রাযিঃ) তিনবার উমারের নিকট (সাক্ষাতের) অনুমতি চাইলেন, কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হলো না, তাই তিনি ফিরে চললেন। তখন উমর (রাযিঃ) তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ফিরে যাচ্ছো কেন ? রাবী বলেনঃ যে ভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে অনুমতি প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন, আমি সেভাবে তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করেছি। অতঃপর অনুমতি দেয়া হলে আমরা প্রবেশ করি, আর অনুমতি না দেয়া হলে ফিরে যাই। আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) বলেনঃ উমার (রাযিঃ) তখন বললেন, এ হাদীসের সপক্ষে সাক্ষী পেশ করবে, নইলে তোমাকে সাজা দিব। তিনি তখন আপন লোকদের মজলিসে এসে তাঁদেরকে সাক্ষী দেয়ার অনুরোধ করলেন, তারা তাঁর পক্ষে সাক্ষী দিলে উমার (রাযিঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন।
بَاب الِاسْتِئْذَانِ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَنْبَأَنَا دَاوُدُ بْنُ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ أَبَا مُوسَى، اسْتَأْذَنَ عَلَى عُمَرَ ثَلاَثًا فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ فَانْصَرَفَ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ عُمَرُ مَا رَدَّكَ قَالَ اسْتَأْذَنْتُ الاِسْتِئْذَانَ الَّذِي أَمَرَنَا بِهِ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ثَلاَثًا فَإِنْ أُذِنَ لَنَا دَخَلْنَا وَإِنْ لَمْ يُؤْذَنْ لَنَا رَجَعْنَا ‏.‏ قَالَ فَقَالَ لَتَأْتِيَنِّي عَلَى هَذَا بِبَيِّنَةٍ أَوْ لأَفْعَلَنَّ ‏.‏ فَأَتَى مَجْلِسَ قَوْمِهِ فَنَاشَدَهُمْ فَشَهِدُوا لَهُ فَخَلَّى سَبِيلَهُ ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে ইবনে মাজা - হাদীস নং ৩৭০৬ | মুসলিম বাংলা